মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুইজ্জু ২০২৩ সালের শেষ দিকে ভারতের জন্য সমস্যা হয়ে ওঠেন। প্রেসিডেন্ট হয়েই দীর্ঘ ভাষণে মুইজ্জু মালদ্বীপ থেকে ভারতীয় সেনাবাহিনীকে তাড়ানোর ঘোষণা দেন। একই সঙ্গে তিনি ভারতের আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বী চীনের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ার কথা বলেন। জানান যে তিনি বেইজিংয়ের সঙ্গে একটি সামরিক সহায়তা চুক্তিতে স্বাক্ষর করতে চান।
২০২৪ সালের জানুয়ারিতে ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালাইসিস উইংয়ের (আরএডব্লিউ) এজেন্টরা মালদ্বীপের বিরোধী নেতাদের সঙ্গে গোপনে আলোচনা শুরু করেন। লক্ষ্য ক্ষমতা থেকে মুইজ্জুকে সরানো। কয়েক সপ্তাহের মধ্যে এনিয়ে একটি পরিকল্পনা তৈরি হয়।
ওয়াশিংটন পোস্ট সেই ‘ডেমোক্র্যাটিক রিনিউয়াল ইনিশিয়েটিভ’ শিরোনামের পরিকল্পনার গোপন নথি হাতে পায়। এতে দেখা যায়, মালদ্বীপের বিরোধী রাজনীতিকরা দেশটির পার্লামেন্টের ৪০ সংসদ সদস্যকে ঘুষ দেওয়ার প্রস্তাব দেন। এদের মধ্যে মুইজ্জুর দলের কয়েকজন সদস্যও ছিলেন। লক্ষ্য ছিল, মুইজ্জুকে অভিশংসন করতে যাতে ওই সংসদ সদস্যরা ভোট দেয়।
নথিতে আরও দেখা যায়, মুইজ্জুর অপসারণ নিশ্চিতে ১০ উচ্চপদস্থ সামরিক ও পুলিশ কর্মকর্তা এবং তিনটি শক্তিশালী অপরাধী চক্রকে অর্থ দেওয়ার প্রস্তাব ছিল। এসব পক্ষকে অর্থ দিতে ষড়যন্ত্রকারীরা ৬০ লাখ ডলার একাট্টা করতে চেয়েছিল। মালদ্বীপের দুই কর্মকর্তার মতে, এই অর্থ ভারত থেকে সংগ্রহ করার পরিকল্পনা ছিল।
কয়েক মাসের গোপন আলোচনার পর ষড়যন্ত্রকারীরা মুইজ্জুকে অভিশংসন করতে প্রয়োজনীয় ভোট সংগ্রহ করতে ব্যর্থ হয়। ভারত তাকে অপসারণের জন্য কোনও প্রচেষ্টা বা অর্থায়ন করেনি।
তবে মালদ্বীপের ষড়যন্ত্র ও এর পটভূমি ভারত ও চীনের মধ্যে প্রভাব বিস্তার নিয়ে চলমান একটি বিস্তৃত ও গোপন লড়াইয়ের এক বিরল চিত্র সামনে আনে। এই প্রতিদ্বন্দ্বিতা বিশেষত ভারত মহাসাগরের চারপাশে ছোট দেশগুলোতে লক্ষ্য করা গেছে। দেশগুলোতে এশিয়ার দুই বৃহত্তম শক্তি তাদের পছন্দের রাজনীতিবিদদের সমর্থনের জন্য উদার ঋণ, অবকাঠামো প্রকল্প ও রাজনৈতিক সহায়তা প্রকাশ্য ও গোপনে দিচ্ছে।
চীনের সঙ্গে বাড়তে থাকা প্রতিদ্বন্দ্বিতা নয়া দিল্লির দীর্ঘদিনের পররাষ্ট্র নীতির জটিল সমস্যাকে আরও তীব্র করেছে। দশকের পর দশক ধরে, ভারত দক্ষিণ এশিয়ায় মানবিক সহায়তা দিচ্ছে। পাশাপাশি নয়া দিল্লির প্রতি অনুগত নেতাদের গড়ে তুলতে ধর্মনিরপেক্ষ ও গণতান্ত্রিক আন্দোলনকে সমর্থন করেছে।
তবে ভারত প্রায়ই সেই গণতান্ত্রিক আদর্শের বিপরীতে কাজ করেছে এবং নির্বাচিত নেতাদের বিরুদ্ধে আক্রমণাত্মক পদক্ষেপ নিয়ে স্থানীয় অসন্তোষ উসকে দিয়েছে। বিশেষত সেই নেতারা যদি পাকিস্তান কিংবা চীন ঘনিষ্ঠ বলে বিবেচিত হয়।
মালদ্বীপ ভারত মহাসাগরে ১২০০ দ্বীপ নিয়ে গঠিত একটি রাষ্ট্র। দেশটিতে মুসলিম জনসংখ্যা ৫ লাখ হলেও তারাই সংখ্যাগরিষ্ঠ। গত ১০ বছরে মালদ্বীপের সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিমপ্রধান এলাকাগুলোই সবচেয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হয়ে উঠেছে। দেশটির দ্বীপগুলোর অধিকাংশই আয়তনে ছোট। তবে এগুলো মধ্যপ্রাচ্য ও এশিয়ার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ শিপিং লাইনের উপর অবস্থিত। ভারতীয় কর্মকর্তাদের শঙ্কা, চীন সেখানে এমন সুবিধা পেতে পারে, যা দিয়ে দেশটি নৌযান চলাচল পর্যবেক্ষণ করতে পারে। একই সঙ্গে চীনা যুদ্ধজাহাজ ও সাবমেরিনের জোগান নিশ্চিত করতে পারে।
আরএডব্লিউর সাবেক প্রধান হরমিস থারাকান মনে করেন, মালদ্বীপে প্রভাব প্রতিষ্ঠা করা ভারত বা চীনের ভারত মহাসাগর ও আরব সাগরের একটি বড় অংশে ক্ষমতা বাড়াতে সহায়তা করবে। ভারতের নিকটতম প্রতিবেশী দেশগুলোর, যেমন মালদ্বীপের সঙ্গে নিরাপদ ও স্থিতিশীল সম্পর্ক বজায় রাখা ভারতের জন্য অত্যন্ত জরুরি বলেও তিনি মনে করেন।
ঘটনার সংবেদনশীলতার কারণে নাম প্রকাশ না করে ভারত ও মালদ্বীপের একাধিক কর্মকর্তা বর্ণনা করেন, চীন যখন মালদ্বীপের সাবেক প্রেসিডেন্ট আব্দুল্লাহ ইয়ামিন আবদুল গাইয়ুম ও তার শিষ্য বর্তমান প্রেসিডেন্ট মুইজ্জুর দলের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলে, তখন ভারত মালদ্বীপ ডেমোক্রেটিক পার্টিকে (এমডিপি) সমর্থন দিতে কতদূর পর্যন্ত গিয়েছিল।
এমডিপির নেতা ও নির্বাচনী প্রার্থীদের নির্বাচনে বছরের পর বছর ধরে ভারতের ভূমিকা ছিল বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। ২০২৩ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে মুইজ্জু যখন ভারতের প্রভাবের বিরুদ্ধে প্রচার চালান এবং ‘ইন্ডিয়া আউট’ স্লোগান তোলেন, তখন ভারতের থেকে ভোট বিশ্লেষক ও প্রচারকর্মীরা এমডিপির প্রচারকে সমর্থন করতে মালদ্বীপে যান। এ ঘটনাটি মালদ্বীপের কিছু প্রতিরক্ষা কর্মকর্তার মধ্যে উদ্বেগ সৃষ্টি করে।
জানুয়ারিতে মুইজ্জু প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর তার একজন উপদেষ্টা জানান, ওয়াশিংটনে ভারতের দূতাবাসের একজন জ্যেষ্ঠ গোয়েন্দা কর্মকর্তা মালদ্বীপে প্রেসিডেন্টকে ক্ষমতাচ্যুত করার পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা করেন। এই আলোচনায় অংশ নেন দুই ভারতীয় মধ্যস্থতাকারী, যারা মালদ্বীপে রাজনৈতিক ও ব্যবসায়িক সংযোগ রেখেছিলেন।
এদের মধ্যে একজন ছিলেন শিরীষ থোরাট। তিনি একজন সাবেক ভারতীয় পুলিশ কর্মকর্তা এবং বেসরকারি সামরিক উপদেষ্টা। তিনি মালদ্বীপের সাবেক প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ নাশিদের ইসলামপন্থী উগ্রপন্থা দমন বিষয়ে পরামর্শ দিয়েছিলেন। অন্যজন ছিলেন সাভিও রড্রিগেজ। তিনি ভারতের গোয়া রাজ্যের একজন প্রকাশক। তিনি আগে ভারতীয় জনতা পার্টির মুখপাত্র হিসাবে কাজ করেছেন। মুইজ্জুর উপদেষ্টা দ্য পোস্টকে ভারতীয় গোয়েন্দা কর্মকর্তার সঙ্গে শিরীষ থোরাটের ফোনালাপ ও বৈঠকের নজরদারি নথি দেন। বর্তমানে থোরাট ওয়াশিংটনে বাস করছেন। তবে উপদেষ্টা এই নথি কীভাবে সংগ্রহ করেছেন, তা ব্যাখ্যা করেননি।
শিরীষ থোরাট ও সাভিও রড্রিগেজ আলাদাভাবে মুইজ্জুকে অপসারণের পরিকল্পনার বিষয়টি ওয়াশিংটন পোস্টকে নিশ্চিত করেন। তবে তারা এই পরিকল্পনায় ভারতের সরকারের পক্ষে কাজ করেছেন কি না, তা বলতে অস্বীকৃতি জানান। একজন ভারতীয় গোয়েন্দা কর্মকর্তার সঙ্গে বৈঠক সম্পর্কে জানতে চাইলে থোরাট জানান, তিনি কখনও কখনও দূতাবাসে কর্মরত বন্ধুদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। নজরদারি সম্পর্কে তিনি বলেন, “আমার কাজের কারণে এটি অপ্রত্যাশিত নয়।”
থোরাট এবং রড্রিগেজ তাদের পরিকল্পনার বিস্তারিত আলোচনা করতে অস্বীকৃতি জানান। তবে থোরাট বলেন, “গোয়েন্দা কার্যক্রম হলো পররাষ্ট্রনীতির একটি সম্প্রসারণ। আর পররাষ্ট্রনীতিতে সবসময় পরিকল্পনা এ, পরিকল্পনা বি ও পরিকল্পনা সি থাকে। কখনও একটি কাজ না করলে অন্যটি চেষ্টা করতে হয়।”
মুইজ্জুকে অভিশংসনের এই পরিকল্পনাকে ভারত কতটা গুরুত্বসহ বিবেচনা করেছে কিংবা নয়া দিল্লির শীর্ষ কর্মকর্তারা এই পরিকল্পনায় অনুমোদন দিয়েছেন কি না, তা স্পষ্ট নয়।
মালেতে ভারতীয় দূতাবাসের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষাকারী মালদ্বীপের এক রাজনীতিক জানান, স্থানীয় আরএডব্লিউ কর্মকর্তা ব্যক্তিগতভাবে অভিশংসন পরিকল্পনা সম্পর্কে সন্দেহ প্রকাশ করেছিলেন। এই প্রচেষ্টায় জড়িত অন্য ব্যক্তিরা বলেন, ভারতীয় কর্মকর্তারা উদ্বিগ্ন ছিলেন যে, সদ্য নির্বাচিত প্রেসিডেন্টকে অপসারণ করলে মালদ্বীপের স্থিতিশীলতা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। কারণ দেশটি এমনিতেই অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল এবং রাজনৈতিকভাবে অস্থিতিশীল দেশ। আর সেখানে ধর্মীয় উগ্রবাদের প্রবণতাও রয়েছে।
এবিষয়ে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ওয়াশিংটন পোস্টকে মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানায়। মুইজ্জুর যোগাযোগ মন্ত্রী ইব্রাহিম খালিলও মন্তব্য করেননি।
প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী
মধুচন্দ্রিমার গন্তব্য হিসেবে মালদ্বীপের পাম গাছের ছায়ায় ঘেরা সৈকত এবং সবুজ নীল জলাশয়ের পোস্টকার্ড চিত্র দেশটির ক্ষমতাকেন্দ্রিক সংগ্রাম, ধর্মীয় উত্তেজনা এবং আর্থিক চ্যালেঞ্জগুলোকে আড়াল করে।
ভারত দশকের পর দশক ধরে মালদ্বীপের নাগরিকদের জন্য খাবার ও চিকিৎসা সেবা দিয়েছে। ভারত মালদ্বীপের সেনা ও পুলিশ কর্মকর্তাদের ভারতীয় একাডেমিগুলোতে প্রশিক্ষণ দিয়েছে। ১৯৮৮ সালে ভারতীয় সেনা মালদ্বীপের নেতাকে শ্রীলঙ্কার তামিল বিদ্রোহীদের চালানো এক বিপ্লব প্রতিরোধে সাহায্য করে।
ভারত রাজনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে মোহাম্মদ নাশিদকে সমর্থন দিয়ে। অক্সফোর্ডে শিক্ষিত নাশিদ দীর্ঘদিন মালদ্বীপের ক্ষমতায় থাকা গাইয়ুম পরিবারকে চ্যালেঞ্জ করেছিলেন। ২০০৮ সালে নাশিদ দেশের প্রথম উন্মুক্ত নির্বাচনে জয়ী হন এবং দেশে একটি রাজনৈতিক বিভাজন তৈরি হয়। দেশের শীর্ষস্থানীয় একটি গোষ্ঠী নাশিদ ও তার দল এমডিপিকে অনুসরণ করেছিল। অন্য গোষ্ঠীর নেতৃত্বে ছিল গাইয়ুম পরিবারের সদস্য আব্দুল্লাহ ইয়ামিন। তিনি প্রায়ই নাশিদকে ভারত ও পশ্চিমা বিশ্বের সমর্থনে একজন উত্থানকারী হিসেবে সমালোচনা করতেন।
২০১৩ সালে ইয়ামিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়ী হওয়ার আগেই আরেকটি বিদেশি শক্তি ভারত মহাসাগরে প্রবেশ করে। ইয়ামিন তার সহযোগীদের বলেছিলেন, চীন মালদ্বীপের ভারতীয় নির্ভরতাকে কমাতে পারে। ২০১৪ সালের রাষ্ট্রীয় সফরে, ইয়ামিন চীনের নেতা শি জিনপিং ও তার স্ত্রী পেং লিয়ুয়ানকে প্যারাডাইজ আইল্যান্ড রিসোর্টে আতিথেয়তা দেন। তিনি তার দেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দিয়ে দম্পতিকে মুগ্ধ করেন এবং অর্থনৈতিক সম্ভাবনা তুলে ধরেন। এরপরই মালদ্বীপে বিনিয়োগ আসতে শুরু করে।
চীন মালদ্বীপকে ২০০ মিলিয়ন ডলারের একটি সেতু উপহার দেয়। এটি রাজধানী মালেকে বিমানবন্দরের সঙ্গে যুক্ত করে। চীনের আগমনের ফলে ইয়ামিনের সহযোগীরাও সুবিধা পেতে থাকেন। মালদ্বীপ মুদ্রা পাচার প্রতিরেধ দপ্তরের একটি তদন্তে পাওয়া যায়, চীনা রাষ্ট্র-সংযুক্ত কোম্পানিগুলো মুইজ্জুর ব্যক্তিগত ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ২ লাখ ১৪ হাজার ডলার জমা করেছে। আর মুইজ্জু বলছেন, এই অর্থ তার ব্যক্তিগত সম্পত্তি ভাড়া দিয়ে পেয়েছেন।
তখন শি জিনপিংয়ের বেল্ট অ্যান্ড রোড অবকাঠামো উদ্যোগ পুরোপুরি চালু ছিল। এটি দক্ষিণ এশিয়ায় চীনের বাড়তে থাকা প্রভাব নিয়ে নয়া দিল্লিকে উদ্বিগ্ন করেছিল। ২০১৭ সালে শ্রীলঙ্কার বেইজিংপন্থী শাসক পরিবার চীনকে একটি কৌশলগত বন্দর ৯৯ বছরের জন্য ভাড়া দেয়। তখন মনে হয়েছিল মালদ্বীপ পরবর্তী দেশ হিসেবে চীনের প্রভাবের অধীনে চলে যাবে।
দক্ষিণ এশিয়ার রাজনৈতিক নেতারা মূলত এক পক্ষকে আরেকটির বিরুদ্ধে ব্যবহার করছিলেন। তাদের সংযোগের ভিত্তিতে বেইজিং বা নয়া দিল্লি থেকে সুবিধা লাভ করছিলেন। কথাগুলো বলেন ভারতের সাবেক পররাষ্ট্র সচিব হর্ষবর্ধন শ্রিংলা। তিনি আরও বলেন, “ভারত অন্য কোনো বিকল্প না পেয়ে ‘সম্পদ সমান করতে’ চেষ্টা করত।”
ইয়ামিনের শাসনকালে, ভারত তার সমর্থন তীব্রভাবে বাড়িয়ে দিয়েছিল।
স্বৈরশাসক ছিলেন ইয়ামিন। তিনি নাশিদকে কারাগারে পাঠান। এমডিপি নেতা ভারতকে ইয়ামিনের উপর চাপ প্রয়োগ করতে অনুরোধ করেন। ইয়ামিন যখন ভারতীয় দাবি অগ্রাহ্য করেন যাতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি নাশিদকে কারাগারে দেখতে পারেন রাষ্ট্রীয় সফরের সময়। কিন্তু ভারত মোদির সফর বাতিল করে দেয়।
২০১৮ সালে ইয়ামিন দাবি করেন, ভারত তাকে উৎখাতের চেষ্টা করছে। তিনি হঠাৎ তার প্রধান পুলিশ কর্মকর্তা আহমেদ আরিফকে আটক করেন। এই কর্মকর্তা নয়া দিল্লিতে প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন এবং থোরাটের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছিলেন। পরে অবশ্য আরিফকে মুক্তি দেওয়া হয়।
‘ভারত ফার্স্ট’ বনাম ‘ভারত আউট’
সেই গ্রীষ্মে ভারতীয় কর্মকর্তারা এমডিপি নেতাদের জন্য শ্রীলঙ্কায় একটি ব্যক্তিগত সাক্ষাৎ আয়োজন করতে সহায়তা করেন বলে জানান পার্টির তিন নেতা। নাশিদের অনুরোধে পার্টির নেতারা সিদ্ধান্ত নেন যে, নাশিদের শ্বশুরবাড়ির আত্মীয় ইব্রাহিম সলিহ প্রেসিডেন্ট পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন ইয়ামিনের বিরুদ্ধে।
নির্বাচনে সলিহ জয়ী হন। তিনি তার পররাষ্ট্র নীতি হিসাবে ‘ভারত ফার্স্ট’ ঘোষণা করেন। নয়া দিল্লিও তার সরকারকে ৮০০ মিলিয়ন ডলার ঋণ এবং ৪০০ মিলিয়ন ডলার অনুদান দিয়ে পুরস্কৃত করে। চীন ইয়ামিনকে যা দিয়েছিল, এটি তারচেয়ে অনেক বেশি ছিল। সলিহ ভারতকে মালদ্বীপে হেলিকপ্টার বেস স্থাপনের অনুমতি দেন এবং নয়া দিল্লির দীর্ঘদিনের দাবি অনুযায়ী দেশের প্রথম বিশেষ নৌবন্দর নির্মাণ ও যৌথভাবে ব্যবস্থাপনার চুক্তি করেন।
ইয়ামিন ‘ভারত আউট’ আন্দোলন শুরু করেন এবং এমন ইসলামিক সংগঠনগুলোর সঙ্গে জোট গঠন করেন, যারা ভারতবিরোধী প্রচারে সক্রিয় ছিল। ২০২২ সালে যখন ভারতীয় দূতাবাস ‘ইয়োগা দিবস’ উদযাপন করছিল, বিক্ষোভকারীরা পতাকা হাতে ওই অনুষ্ঠানটি আক্রমণ করেন এবং একে অ-মুসলিম বলে দাবি করেন।
এমডিপি সভাপতি আব্দুল্লাহ শাহিদ বলেন, “যতবারই সংকট এসেছে, যতবারই মালদ্বীপ আন্তর্জাতিক ৯১১ নম্বরে কল করেছে, প্রথম প্রতিক্রিয়া জানানো দেশটি সব সময় ভারত। মালদ্বীপবাসীর এটি ভুলে যাওয়া উচিৎ নয়। কিন্তু মালদ্বীপে সব সময় একটি শক্তিশালী অতি জাতীয়তাবাদী ও মৌলবাদী প্রবণতা ছিল।”
গত বছর সলিহ যখন ইয়ামিনের নির্বাচিত প্রার্থী মুইজ্জুর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নামেন, ভারত তখন আবার হস্তক্ষেপ করে। ভারতীয় কর্মকর্তারা উদ্বিগ্ন ছিলেন যে, তাদের পছন্দের প্রার্থী সলিহ হয়তো হেরে যেতে পারেন। কারণ কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়া নাশিদ নিজেই ক্ষমতা পুনরুদ্ধারের চেষ্টা করছিলেন।
এমডিপি নেতারা জানান, ভারতীয় রাষ্ট্রদূত গোপনে নাশিদকে সলিহের পক্ষে দাঁড়ানোর জন্য অনুরোধ করেন। নাশিদ ও সলিহের মধ্যে উত্তেজনা চলতে থাকে। এক পর্যায়ে ভারতীয় কর্মকর্তারা একটি ভারতীয় সামরিক বিমানে মালদ্বীপে পৌঁছান এবং কুরুম্বা আইল্যান্ড রিসোর্টে এক গোপন বৈঠকে নাশিদের সঙ্গে তাদের বক্তব্য উপস্থাপন করেন।
২০২৩ সালের জুনে মালদ্বীপের পুলিশ এবং সামরিক গোয়েন্দা কর্মকর্তারা ভারতীয় কার্যকলাপ নিয়ে বাড়তি উদ্বেগ প্রকাশ করছিলেন। তারা জানতে পারেন, ভারতীয় একটি দল মালদ্বীপে এসে সলিহের প্রচারের জন্য মালে শহরের মুকাই হোটেলের একটি তলা বুক করেছিলেন এবং ভোট বিশ্লেষণে সহায়তা দিচ্ছিলেন। বিষয়টি মালদ্বীপের একজন প্রতিরক্ষা কর্মকর্তা জানিয়েছেন। তিনি বলেন, “আমাদের সরকারই তাদের সঙ্গে কাজ করছিল। তাহলে আমরা কীভাবে তাদের থামাতে পারব?”
তবুও সলিহ পরাজিত হন। নাশিদ শেষ পর্যন্ত সলিহের পক্ষে সমর্থন দেননি, যেমনটা ভারতীয় কর্মকর্তারা আশা করেছিলেন। এমডিপির সমর্থকরা তাদের মধ্যে বিভক্ত থাকায় ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৩ সালে মালদ্বীপের ভোটাররা একটি চমকপ্রদ ফলাফল দেন। নির্বাচিত হন মুইজ্জু। বিজয় ভাষণে মুইজ্জু বলেন, “আল্লাহর ইচ্ছায় আমরা মালদ্বীপ থেকে সব বিদেশি সেনাবাহিনী অপসারণ করব।”
সংকট
দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে বড় শক্তি হিসেবে ভারত ঐতিহাসিকভাবে তার বিশ্বাসযোগ্য সহযোগীদের — যেমন বাংলাদেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, যিনি আগস্টে পদত্যাগ করেছেন, এবং নেপালে ঐতিহ্যগতভাবে প্রভাবশালী কংগ্রেস পার্টিকে ক্ষমতায় রাখতে অনেক চেষ্টা করেছে।
তবে এই পন্থায় কিছু ঝুঁকি রয়েছে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
ওয়াশিংটনের ইস্ট-ওয়েস্ট সেন্টারের গবেষক নিলান্থি সামারানায়েক বলেন, “ভারত যখন ছোট দক্ষিণ এশীয় দেশগুলোতে ঘনিষ্ঠ, ব্যক্তিগত সম্পর্ক স্থাপন করে, তখন ক্ষোভ তৈরি হয়। বিরোধীরা এবং জনগণ এটি মনে রাখে।”
মালদ্বীপে মুইজ্জু বিজয়ী হওয়ার পরই ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক তলানিতে পৌঁছায়।
গত ৪ জানুয়ারি সোশাল মিডিয়ায় নরেন্দ্র মোদী ভারতীয়দের একটি ভারতীয় দ্বীপে ছুটি কাটানোর আহ্বান জানান। তার দলের বিশাল সোশাল মিডিয়া বাহিনী মালদ্বীপের বয়কটের ডাক দেয়।
মালদ্বীপ ভারতের ওপর নির্ভরশীল তার পর্যটন আয়ের এক-তৃতীয়াংশের জন্য। কয়েক সপ্তাহ পর, মালদ্বীপ ভারতীয় কোস্ট গার্ডের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে যে তারা মালদ্বীপের মৎসজীবী নৌকাগুলোর ওপর চড়াও হয়েছে এবং মৎসজীবীদের হুমকি দিয়েছে। ভারত কখনোই প্রকাশ্যে এই অভিযোগের বিরোধিতা করেনি।
একটি পূর্ণাঙ্গ কূটনৈতিক সঙ্কটের মধ্যে মুইজ্জু ভারতকে এড়িয়ে যান। তিনি তার আর্থিক সংকটে পড়া সরকারের জন্য তুরস্ক ও চীন থেকে আর্থিক সহায়তা প্রার্থনা করতে যান।
দেশে ফিরে প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রটি গড়ে উঠতে শুরু করে। দূরবর্তী দ্বীপগুলো, রাজনীতিবিদের বাসায়, এমনকি পার্লামেন্টের বাইরে অবকাশকালীন এলাকাতেও এমডিপি ও নাশিদের গঠিত ডেমোক্র্যাটস পার্টি তাদের মিত্রদের মুইজ্জুকে অভিশংসন করতে তৎপর হতে বলেন।
কিছু এমডিপি নেতা দ্বিধা প্রকাশ করে ষড়যন্ত্রকারীদের সতর্ক করে দেন যে, অভিশংসনের চেষ্টা সুপ্রিম কোর্ট বা মুইজ্জুর সেনাবাহিনীর অনুগতরা বাধা দিতে পারে। অন্যরা ভয় পেতেন যে, এটি ভোটারদের ক্ষুব্ধ করবে। কারণ তারা কয়েক সপ্তাহ আগে মুইজ্জুকে নির্বাচিত করেছিলেন। ষড়যন্ত্রকারীরা আরও একটি সমস্যার সম্মুখীন হন, তা হলো অর্থ। অনেক সংসদ সদস্য ভোটের জন্য রাজি হলেও ঘুষ দাবি করছিলেন। এমডিপি প্রায় দেউলিয়া হয়ে পড়েছিল, তবে একটি সম্ভাব্য সমাধান ছিল: ভারত।
গোপন ষড়যন্ত্র
জানুয়ারিতে এক গোপন বৈঠকে উপস্থিত দুই ব্যক্তি জানান, এমডিপির সংসদ সদস্য হুসেইন শাহীম পার্টি কর্মকর্তাদের জানান যে, বিরোধী দল যদি অভিশংসন পরিকল্পনার পক্ষে ঐক্যবদ্ধ হতে পারে, তাহলে তিনি ভারতীয় উৎস থেকে তহবিল সংগ্রহ করতে পারবেন। ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা পরামর্শ বোর্ডের একজন প্রাক্তন কর্মকর্তা শাহীমকে আরএডব্লিউর জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ যোগাযোগকারী হিসেবে চিহ্নিত করেছেন।
আরেকটি ধারণা তুলে ধরেন এমডিপির সদস্য ও থোরাটের বন্ধু আহমেদ ইসা। তিনি পার্টি নেতাদের জানান, বিরোধীরা মুইজ্জুকে অভিশংসিত করতে ব্যর্থ হলে তিনি আসন্ন সংসদীয় নির্বাচনে এমডিপির জন্য ভারতীয় তহবিল সংগ্রহ করতে পারবেন।
এক সাক্ষাৎকারে ইসা বলেন, তিনি ভারতের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের পক্ষে দৃঢ় বিশ্বাসী। তবে নির্বাচনের জন্য ভারতীয় অর্থ সংগ্রহের প্রস্তাব দেওয়ার বিষয়টি তিনি অস্বীকার করেছেন। শাহীম অভিশংসন ষড়যন্ত্রের অংশ হওয়ার কথা স্বীকার করেছেন, তবে এ বিষয়ে ভারতীয় তহবিল সংগ্রহের প্রস্তাব দেওয়ার বিষয়টি মন্তব্য করতে অস্বীকার করেছেন।
তিনি বলেন, “কিছু মালদ্বীপি হয়তো ভারতের কাছে প্রস্তাব দিতে যেতে পারে। তবে বাস্তবে আমরা কোনও দেশ থেকে অর্থ চাইনি। আমি ভারতীয় কর্মকর্তাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করি। ভারত কখনও মালদ্বীপের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া বিঘ্নিত করেনি।”
‘ডেমোক্র্যাটিক রিনিউয়াল ইনিশিয়েটিভ’ নথির পাশাপাশি ওয়াশিংটন পোস্ট এমডিপির একটি অভ্যন্তরীণ বিশ্লেষণও পেয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, দলটি ‘অতিরিক্ত সম্পদ ও প্রচার’ সাহায্য পেলে ৯৫টি সংসদীয় আসনের মধ্যে ৪৫টি জিততে সক্ষম হবে। এমডিপি ভারতের কাছ থেকে ৮০ লাখ ডলার পেতে চেয়েছিল। তবে তা কখনও পায়নি।
মুইজ্জুর এক উপদেষ্টা জানান, ওয়াশিংটনে থোরাট কমপক্ষে দুইবার ভারতীয় দূতাবাসে আরএডব্লিউ কর্মকর্তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। একবার জানুয়ারিতে গোয়েন্দা কর্মকর্তার বাড়িতে এবং আরেকবার মার্চে ডুপন্ট সার্কেলের কাছে একটি ভারতীয় রেস্তোরাঁয়।
থোরাট এক সামরিক ঠিকাদারকে নিয়ে আধা-আত্মজীবনীমূলক উপন্যাস প্রকাশ করেছিলেন। ওই ঠিকাদার সিরিয়ায় ইসলামিক স্টেট থেকে এক মালদ্বীপি মহিলাকে উদ্ধার করতে সাহায্য করেন। থোরাট ওয়াশিংটন পোস্টকে বলেন, তিনি ‘শুধু শান্তভাবে বই লিখছেন’। তিনি প্রশ্নগুলো রড্রিগেজের কাছে স্থানান্তর করেন। তিনি গোয়ার প্রকাশক ও মোদী ঘনিষ্ঠ। তার ওয়েবসাইট ‘গোয়া ক্রনিকলে’ ভারতীয় জাতীয় নিরাপত্তা এবং গোয়েন্দা বিষয়ক লেখা প্রায়ই প্রকাশ করেন।
এক সাক্ষাৎকারে রড্রিগেজ বলেন, তিনি ভারতীয় কর্মকর্তাদের সতর্ক করেছেন যে মুইজ্জু ভারতের জন্য হুমকি সৃষ্টি করতে পারে। রড্রিগেজ জানিয়েছেন, মুইজ্জুর শ্বশুরবাড়ির সদস্যরা মালদ্বীপের এক প্রভাবশালী ধর্মীয় গোষ্ঠীর নেতা। ওই গোষ্ঠীটি কট্টর পন্থায় বিশ্বাসী এবং মালদ্বীপের মুসলমানদের সিরিয়ায় ইসলামিক স্টেটে যোগ দিতে উৎসাহিত করার জন্য পরিচিত।
“একজন ইউনিফর্মবিহীন সৈন্য হিসেবে, আমি চাই আমরা কী করতে পারি সে বিষয়ে মুইজ্জু ভীত হোক,” বলছিলেন রড্রিগেজ।
মালদ্বীপের সাবেক প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ নাশিদ অবশ্য এই ধরনের ষড়যন্ত্রের কথা অস্বীকার করেছেন। ওয়াশিংটন পোস্টে প্রতিবেদনটি প্রকাশের পর তিনি এক্স-এ লিখেছেন, “আমি বেশ কৌতূহল নিয়েই এটি পড়েছি। তবে আমি এমন কিছু জানি না। ভারতেও এমন কিছু কথা করার কথা না। ভারত সব সময়ই মালদ্বীপে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখার পক্ষে।
ভারতের পরিবর্তনশীল দৃষ্টিভঙ্গি
মুলিয়াগে প্রেসিডেন্সিয়াল প্রাসাদে মুইজ্জু ষড়যন্ত্রের বিষয়টি জানতে পেরে আগে থেকেই ব্যবস্থা নেন। তিনি তার দুই বিশ্বস্ত আইনপ্রণেতাকে প্রায় ২ লাখ ডলার ঘুষ দেওয়ার নির্দেশ দেন, যাতে আইনপ্রণেতারা তার দলে যোগ দেন। মুইজ্জু ১১ জন সদস্যকে একত্রিত করতে সক্ষম হন। এতে বিরোধীরা ইমপিচমেন্টের জন্য মূল্যবান ভোট হারায়।
গোপন বৈঠকে প্রেসিডেন্ট তার মিত্রদের সোশাল মিডিয়ায় ভারতকে আক্রমণ করার জন্য রেগে নির্দেশ দেন, বলে বিষয়টি সংশ্লিষ্ট দুই ব্যক্তি জানান। জনসমক্ষে মুইজ্জু দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ছিলেন। একটি সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, “আমরা হয়ত ছোট, কিন্তু এর মানে এই নয় যে, আমাদের হয়রানি করার অধিকার আপনাদের আছে।”
অবশেষে তিনি বিজয়ী হন। এপ্রিলের সংসদ নির্বাচনে মুইজ্জুর দল বিপুল ভোটে জয়লাভ করে। এতে ইমপিচমেন্ট ভোট প্রায় অসম্ভব হয়ে যায়। ফলে বিরোধী দলের কিছু সদস্য তাদের হার, ইমপিচমেন্ট নিয়ে সময়ক্ষেপণ এবং ভারতের পক্ষ থেকে প্রতিশ্রুত অর্থ না আসার কারণে একে অপরকে দোষারোপ করতে শুরু করেন। ভারতের সঙ্গে সম্পর্কিত এক এমডিপি নেতা বলেছিলেন, ভারত বিরোধী দলকে বিভক্ত ও নির্ভরযোগ্য মনে করেনি।
এরপর ভারত তার প্রভাব বজায় রাখতে আরেকটি কৌশল গ্রহণ করে: মুইজ্জুকে সাহায্য করা। মুইজ্জু যখন দেশের ঋণের বোঝা নিয়ে আরও নিরাশ হয়ে পড়েন, ভারতীয় স্টেট ব্যাংক ১০০ মিলিয়ন ডলার ঋণ পরিশোধ এক বছর পিছিয়ে দেওয়ার জন্য সম্মত হয়। অন্যদিকে চীন সংকেত দেয় যে তারা এতটা সহানুভূতিশীল হবে না। মালদ্বীপের ঋণ ৮ বিলিয়ন ডলারের বেশি। এটি দেশের মোট জিডিপির ১২০ শতাংশ। আর চীন ও ভারত মালদ্বীপের সবচেয়ে বড় ঋণদাতা।
এমডিপি সদস্য ও সাবেক স্পিকার মোহাম্মদ আসলাম বলেন, “ভারত চায় না, প্রতিবেশী দেশ দেউলিয়া হয়ে যাক। যদি অর্থনীতি এবং সরকার পড়ে যায়, তবে অন্যান্য সমস্যা যেমন চরমপন্থা সৃষ্টি হতে পারে।”
অক্টোবরে মুইজ্জু অবশেষে ভারতে বহু প্রতীক্ষিত রাষ্ট্রীয় সফরে যান। দিল্লিতে তিনি ভারতকে ‘মূল্যবান অংশীদার’ হিসেবে উল্লেখ করেন এবং ঋণ সংক্রান্ত সাহায্যের জন্য ৭০০ মিলিয়ন ডলার মূল্যের মুদ্রা অদলবদলের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান।
একটি বিবৃতিতে ভারত জানায়, দুই দেশের সরকার মালদ্বীপে ভারতের ভূমিকা পুনর্ব্যক্ত করেছে। ভারত মালদ্বীপের সামরিক বাহিনীকে সমুদ্র বন্দরের নির্মাণ ও পরিচালনায় সহায়তা করবে। নতুন মালদ্বীপ প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের সদর দপ্তর উদ্বোধন করবে এবং মালদ্বীপের সামরিক ও পুলিশ বাহিনীকে প্রশিক্ষণ অব্যাহত রাখবে।
মুইজ্জুর দলের এক সদস্য জানান, ভারত কখনও মুইজ্জুকে গোপন উপায়ে চাপ দেওয়ার প্রয়োজন অনুভব করেনি। প্রেসিডেন্ট নিজের অবস্থান পরিবর্তন করেছে ‘ভয়’ থেকে নয়, বরং ‘আর্থিক বাস্তবতা’ থেকে।