Beta
রবিবার, ৭ জুলাই, ২০২৪
Beta
রবিবার, ৭ জুলাই, ২০২৪

হয়রানির শেষ নেই, বাড়তি টাকায় মিলছে টিকেট 

কষ্ট করে হলেও প্রিয়জনের কাছে ফিরতে চান অনেকে। ছবি : সকাল সন্ধ্যা
কষ্ট করে হলেও প্রিয়জনের কাছে ফিরতে চান অনেকে। ছবি : সকাল সন্ধ্যা
Picture of সাজ্জাদ হোসেন

সাজ্জাদ হোসেন

‘ভাই দেখেন না একটা টিকেট দেওয়া যায় কিনা? আমার বাড়িত যাওয়া খুব দরকার।’ এ আকুতি জাকির হোসেনের। শনিবার বিকালে ঢাকার গাবতলী বাস টার্মিনালে হানিফ পরিবহনের কাউন্টারে একটি টিকেট পেতে এভাবেই অনুরোধ জানাচ্ছিলেন এই যুবক।

জাকিরের বাড়ি দিনাজপুর। চাকরি করেন চট্টগ্রামে, একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে। ভোরে চট্টগ্রামে থেকে ট্রেনে রওনা হয়ে দুপুরে ঢাকা পৌঁছান। এরপর আসেন কল্যাণপুর। তবে শত চেষ্টাতেও মেলেনি টিকেট।

দেশে সোমবার উদযাপিত হবে ঈদুল আজহা। মাঝে আর আছে একদিন। যেতে হবে বাড়ি। বাসের টিকেট জোগারে জাকির হন্তদন্ত হয়ে গাবতলীর বাস টার্মিনালে ঘুরছিলন। সেখানেই তার সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের।

সকাল সন্ধ্যাকে জাকির বলেন, “একটা বোন ছিল, বিয়া হয়া গেছে। আর আমি চাকরির জন্য চট্টগ্রাম থাকি। বাপ মরার পর থাইকা বাড়িত মা একলাই থাকে। তাই ঈদের মধ্যে যত কষ্টই হোক, বাড়িত যামুই।

“আমি চট্টগ্রামে থাকায় অগ্রিম টিকেট কাটতে পারিনি। আজ (শনিবার) ঢাকা আসার পর দুপুর থাইকা টিকেটের জন্য ঘুরতেছি। প্রথমে কল্যাণপুর গেছিলাম, কারও কাছে পাইনি। এরপর গাবতলীতে এসে ঘুরতেছি, কিন্তু টিকেট নাই।”

শুধু জাকির নয়, তার মতো অনেকের দেখা মিলল, যারা টিকেট পাননি। ঘুরছেন এক কাউন্টার থেকে আরেক কাউন্টারে। শত কষ্ট হলেও ঈদের আগে গ্রামের বাড়িতে যাওয়া চান তারা।

শনিবার দুপুর ১২টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত কল্যাণপুর ও গাবতলীতে এমন দৃশ চোখে পড়ে।

অনেকের অভিযোগ, ঈদের ছুটি শুরুর পর সরাসরি বাস কাউন্টারে যেয়েও টিকেট পাওয়া যায়নি।

বাড়তি ভাড়া দিতে চেয়েও টিকেট মেলাতে পারেনি মনির আহমেদ। অগত্যা ঈদের দিন রাতে বাড়ি যাওয়ার টিকেট পেতে চেষ্টা করছেন তিনি।

মনির বলেন, “ঈদের আগে কুড়িগ্রাম যেতে টিকেট পাইনি। এখন চেষ্টা করছি ঈদের রাতের টিকেট পেতে। নাবিল, হানিফ, এনাসহ আরও কয়েকটি পরিবহনের কাউন্টারে গিয়েও টিকেট পাইনি।

“তবে অন্য সময়ের চেয়ে কয়েকশ টাকা বেশি দিয়ে একটি টিকেট পাওয়ার আশ্বাস পেয়েছি। এখনও হাতে পাইনি। কুড়িগ্রামে ভাড়া ৮৫০ টাকা হলেও আমাকে টিকেট কিনতে হচ্ছে ১২৫০ টাকা দিয়ে।”

ঈদের দুদিন আগে গাবতলী হয়ে ঢাকা ছাড়ছেন অসংখ্য মানুষ। যারা অগ্রিম টিকেট কাটতে পারেননি তাদের টিকেট পেতে হয়রানির শিকার হতে দেখা গেছে।

অভিযোগ পাওয়া গেল, কোনও কোনও কাউন্টারের কর্মীদের কাছে টিকেট আছে। তবে তারা জোট হয়ে বেশি দামে টিকেট বিক্রি করছেন।

ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, কোনও কোনও ক্ষেত্রে প্রশাসনের সামনেই টিকেটের বাড়তি দাম নেওয়া হচ্ছে। কিন্তু তাদের কোনও ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি।

তবে প্রশাসন ও বাস মালিকদের পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছে, বাড়তি দামে কোথাও টিকেট বিক্রি হচ্ছে না।

বিভিন্ন স্পট ঘুরে সকাল সন্ধ্যার এই প্রতিবেদক দেখেছেন, টার্মিনাল বা কাউন্টারগুলোতে প্রশাসন বা মালিক সমিতির পক্ষ থেকে তদারকি নেই। এই সুযোগেই টিকেট কারসাজি চলছে।

টিকেট না পেয়ে কেউ কেউ অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করেও বাড়ির পথে যাত্রা করছেন। তাদের একজন মিজানুর রহমান। তিনি পরিবারসহ যাচ্ছিলেন গাইবান্ধা। তিনি সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “২৫ হাজার টাকায় ভাড়া করেছেন অ্যাম্বুলেন্সটি। স্বাভাবিক সময়ে যেটি ১২-১৪ হাজার টাকায় রোগী বহন করে।”

উত্তরাঞ্চল থেকে গরু নিয়ে গাবতলীতে আসা ট্রাকগুলোতেও নিম্ন আয়ের মানুষদের চড়ে বসতে দেখা গেছে। কষ্ট করে হলেও তারা বাড়ি যেতে চান।

রহমত আলী বগুড়া যাবেন। বাসের টিকেট না পেয়ে তিনি একটি ফিরতি গরুর ট্রাকে উঠেছেন ৫০০ টাকা ভাড়ায়। নোংরা সহ্য করেও বাড়ি ফিরবেন তিনি।

এমনও দেখা গেছে মোটরসাইকেলে বাড়িফেরা চালকের পিছে চড়ে যাত্রা করেছেন কেউ কেউ।

সোহান নামের বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করা এক যুবক এভাবেই যাচ্ছিলেন সিরাজগঞ্জ। তিনি যাচ্ছিলেন গাবতলী থেকে ৮০০ টাকা ভাড়ায়।

হাতে বড় ব্যাগ ও বস্তা নিয়ে কাউন্টারে কাউন্টারে ঘুরছিলেন যশোরের মো. কবীর। সঙ্গে ছিলেন তার খালাও। কবীর বলেন, “চুরির ভয়ে মালামাল কোথাও রেখে দূরে যাওয়ার সাহস পাচ্ছি না। তাই সঙ্গে নিয়েই ঘুরছি। কিন্তু এত কষ্ট করেও কোনও লাভ হচ্ছে না। কোথাও টিকেট পেলাম না। এখন বাড়িতে যাব কীভাবে বুঝতে পারছি না।”

নুরুন্নাহার নামে এক নারী টিকেট না পেয়ে হতাশ হয়ে বসে ছিলেন গাবতলী টার্মিনালে। তিনি বলেন, “আমি যাব নওগাঁ। তবে বাসের টিকেট পাইনি।”

ভুক্তভোগীদের অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে টিকেট সংকটের কথেই বলেন বাস কাউন্টারের লোকজনও।

গাবতলীর সোহাগ পরিবহনের কাউন্টারের টিকেট বিক্রেতা নয়ন বলেন, “সব টিকেটই অগ্রিম বিক্রি হয়ে গেছে। তাই এখন যাত্রীরা কাউন্টারে আসলেও টিকেট দিতে পারছি না। যাদের অগ্রিম টিকেট কাটা আছে, তারাই শুধু যেতে পারছেন।”

কল্যাণপুরের শাহ ফতেহ আলী পরিবহনের কাউন্টারের দায়িত্বে ছিলেন মো. রানা। তিনি বলেন, “এখন আর কোনও বাসেরই টিকেট নেই। যাদের অগ্রিম টিকেট কাটা আছে, তারা যেতে পারছেন। সড়কে তেমন যানজট নেই। শিডিউল অনুযায়ীই সব বাস গন্তব্যে ছেড়ে যাচ্ছে।” 

সঙ্গে বস্তাবোঝাই মালামাল নিয়ে এক কাউন্টার থেকে আরেক কাউন্টারে এভাবে অনেকে ছুটছিলেন বাসের টিকেট পেতে। ছবি : সকাল সন্ধ্যা

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

ad

সর্বাধিক পঠিত