ভ্যাট বাড়ানোর উদ্যোগ প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ রেস্তোরাঁ মালিক সমিতি। বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলনে করে এ দাবি জানিয়ে সংগঠনটি বলছে, অন্যথায় সারাদেশে অনির্দিষ্টকালের জন্য রেস্তোরাঁ বন্ধ করে দেওয়া হবে।
রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে এ সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ভ্যাট বৃদ্ধির প্রস্তাব প্রত্যাহার করে আগের মতো ৫ শতাংশ করা না হলে রেস্তোরাঁ ব্যবসায়ীরা প্রথমে মানববন্ধন করবেন। তাতে দাবি মানা না হলে সারাদেশে এক দিনের জন্য রেস্তোরাঁ বন্ধ রাখা হবে। এরপরও দাবি মানা না হলে অনির্দিষ্টকালের জন্য রেস্তোরাঁ বন্ধ করে দেওয়া হবে।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির মহাসচিব ইমরান হাসান বলেন, রেস্তোরাঁ ব্যবসার ওপর ভ্যাট ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করা হচ্ছে। সম্পূরক শুল্ক (এসডি) নামে আরেকটি ১০ শতাংশ কর আগে থেকেই আছে। অর্থাৎ ভ্যাট ১৫ শতাংশ ও সম্পূরক শুল্ক (এসডি) ১০ শতাংশ যোগ করা হলে ভোক্তাদের মোট ২৫ শতাংশ কর দিতে হবে।
“গুলশান ও বনানীর মানুষেরা এই ভ্যাট দিতে পারেন, কিন্তু সাধারণ মানুষের পক্ষে এটা দেওয়া সম্ভব নয়, বিষয়টি অবাস্তব। পৃথিবীর কোথাও খাবারে এত ভ্যাট নেই।”
রেস্তোরাঁ মালিক সমিতি মনে করছে, গত দুই বছরের বেশি সময় দেশে যেখানে উচ্চ মূল্যস্ফীতি বিরাজ করছে, সেখানে ভোক্তার কাছ থেকে কোনোভাবেই ২৫ শতাংশ কর আদায় করা সম্ভব নয়। চাইলেই খাবারের দাম বাড়ানো যায় না। অথচ গত সরকারের আমলে পরিষেবা ব্যয় প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে; বেড়েছে শ্রমিকদের মজুরি। খাদ্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির জের তো আছেই।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে এমনিতেই রেস্তোরাঁ ব্যবসা ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ কমে গেছে। এ অবস্থায় ভ্যাট বাড়লে পরিস্থিতির আরও অবনতি হবে।
রাজস্ব আদায় বাড়াতে হঠাৎ করেই ৪৩ ধরনের পণ্য ও সেবার ওপর ভ্যাট বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ আরোপের প্রস্তাব করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। নতুন বছরের প্রথম দিন ১ জানুয়ারি উপদেষ্টা পরিষদের সভায় এ প্রস্তাব অনুদোমন দেওয়া হয়েছে। জাতীয় সংসদ ছাড়া কর বাড়ানোর সুযোগ নেই। নতুন ভ্যাট হার রাষ্ট্রপতির জারি করা অধ্যাদেশের মাধ্যমেই কার্যকর করা হবে। যেকোনো মুহূর্তে এই অধ্যাদেশ জারি করা হবে বলে এনবিআর কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
ওষুধ, গুঁড়ো দুধ, বিস্কুট, জুস, ফলমুল, সাবান, মিষ্টি, মোবাইলে কথা বলা, ইন্টারনেট ব্যবহার, হোটেল-রেস্তোরাঁয় খাওয়া, বিমানের টিকেটসহ সিগারেট ও তামাকপণ্য রয়েছে বাড়তি ভ্যাট ও শুল্ক-করের তালিকায়। এসব পণ্যে মোট ১৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপের প্রস্তাব করা হয়েছে, যা এখন ৫ থেকে সাড়ে ৭ শতাংশ।
সংবাদ সম্মেলনে রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির মহাসচিব ইমরান অভিযোগ করেন, আগের সরকারের মতো এই সরকারও ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা ও ভোক্তাদের ওপর চাপ বাড়াচ্ছে। আগেও বড় ব্যবসায়ীদের সুবিধা দেওয়া হতো, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের স্বার্থ রক্ষা করা হতো না; এখনও তার ধারাবাহিকতা বজায় আছে।
ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের দিকেও অভিযোগের আঙুল তোলেন তিনি।
ইমরান হাসান বলেন, “তারাও কেবল বড় ব্যবসায়ীদের স্বার্থ রক্ষা করেছে। শুধু গত ১৫ বছরে নয়, স্বাধীনতার পর থেকেই এই পরিস্থিতি বিরাজ করছে। সরকারের ভ্যাট বৃদ্ধির সিদ্ধান্তে বিপুলসংখ্যক ক্ষুদ্র প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হবে, নেতিবাচক প্রভাব পড়বে মূল্যস্ফীতি ও কর্মসংস্থানে।”
তিনি বলেন, “বিগত দুই বছরের বেশি সময় ধরে যেখানে উচ্চ মূল্যস্ফীতি বিরাজ করছে, সেখানে অন্তর্বর্তী সরকার করের আওতা না বাড়িয়ে বা কর ফাঁকি রোধ করার ব্যবস্থা না করে অর্থবছরের মাঝামাঝি সময়ে হঠাৎ ভ্যাট বাড়িয়ে তিন গুণ করার উদ্যোগ নিয়েছে।”
ভ্যাটের হার বাড়িয়ে কাজ হয় না মন্তব্য করে রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির মহাসচিব বলেন, রেস্তোরাঁ ব্যবসার ভ্যাট একসময় ১৫ শতাংশ ছিল, সংগঠনের দাবির কারণে তা ধাপে ধাপে কমিয়ে ৫ শতাংশ করা হয়। এতে ভ্যাট আদায় ১৯ শতাংশ বেড়েছিল।
“এখন ভ্যাট হার আবার বৃদ্ধি করা হলে ব্যবসায় প্রভাব পড়বে, পরিণামে ভ্যাট আদায়ও কমে যাবে।”
লিখিত বক্তব্যের পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ইমরান হাসান সরকারের নীতির সমালোচনা করে বলেন, আইএমএফের পরামর্শে পৃথিবীর কোথাও দারিদ্র্য বিমোচন হয়নি।
‘অন্তর্বর্তী সরকারকে এনজিও সরকার’ আখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, এই সরকার দারিদ্র্য পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটাতে চায়। তাতে এনজিও ব্যবসা বাড়বে।
ইমরান হাসান বলেন, “দেশে রাজনৈতিক দলের চেয়ে আমলাতন্ত্র বেশি শক্তিশালী হয়ে গেছে। আগের সরকারের আমলেও এমন অনেক অজনপ্রিয় কাজ করেছে, এখনও করছে। এখন পর্যন্ত তাদের বিরুদ্ধে বিশেষ ব্যবস্থা নিতে পারেনি অন্তর্বর্তী সরকার।”
সংবাদ সম্মেলনে রেস্তোরাঁ মালিকরা বলেন, দেশের সব রেস্তোরাঁ ভ্যাটের আওতায় আনতে তারা এনবিআরকে সহায়তা করতে প্রস্তুত। বর্তমানে দেশে ভ্যাট নিবন্ধন নেওয়া প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৫ লাখ ২৫ হাজার, যদিও নিয়মিত ভ্যাট দিচ্ছে সাড়ে তিন লাখ।
ভ্যাট হার না বাড়িয়ে সবাইকে ভ্যাটের আওতায় নিয়ে আসার দাবি জানান তারা।
সংবাদ সম্মেলনে রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির উপদেষ্টা খন্দকার রুহুল আমিনসহ সংগঠনের অন্য নেতারা উপস্থিত ছিলেন।