দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) কর্মকর্তা পরিচয়ে দুর্নীতিবিরোধী অভিযানের নামে প্রতারণা ও চাঁদাবাজির অভিযোগে সংস্থাটির প্রধান কার্যালয়ের সামনে থেকে একটি চক্রের তিন সদস্যকে আটক করা হয়েছে।
কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, তারা রাজধানী ঢাকার সেগুনবাগিচায় দুদক কার্যালয়ের সামনে নিজেদের দুদকের সহায়ক কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে ফেইসবুকে লাইভ করতেন। সোমবার দুদকের প্রধান কার্যালয়ের গেইট থেকে তাদের আটক করা হয়েছে। তাদের কাছে দুর্নীতি নিবারণ সহায়ক সংস্থা নামে একটি ভুয়া সংস্থার পরিচয়পত্র পাওয়া গেছে।
আটককৃতরা হলেন- কথিত দুর্নীতি নিবারণ সহায়ক সংস্থার নির্বাহী পরিচালক মো. রফিকুল ইসলাম সম্রাট, পরিচালক (অপারেশন) মো. রায়হান ওরফে সৈয়দ রায়হান ও নেত্রকোনার সাইফুল ইসলাম।
আটকের পর তাদের বিরুদ্ধে পল্টন থানায় প্রতারণার অভিযোগ এনে মামলা করেন দুদকের সহকারী পরিচালক সাজ্জাদ হোসেন। মামলায় পটুয়াখালীর সোলাইমান মুফতি, সিয়াম মাহমুদ মোবারক, হবিগঞ্জের রনি আহেমদ পায়েল এবং অজ্ঞাতপরিচয় আরও আটজনকে আসামি করা হয়েছে।
এ বিষয়ে কমিশনের মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) মো. আক্তার হোসেন বলেন, “ভুয়া পরিচয়দানকারী দুদক কর্মকর্তাদের আটকের পর তাদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে অভিযোগের সত্যতা স্বীকার করে নেয় প্রতারক চক্রের দুই সদস্য। পরে তাদের স্বীকারোক্তি রেকর্ড করে অজ্ঞাত আট আসামিসহ ১৪ জনের নামে প্রতারণার অভিযোগে পল্টন থানায় একটি মামলা করা হয়।”
দুদক কর্মকর্তারা জানান, প্রতারক চক্রের সদস্যরা দুদকের আশপাশে থেকে দুদকের সহায়ক কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে দেশের বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি দপ্তরে অভিযানের নামে মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করে আসছিলেন। সোমবারও চক্রের সদস্যরা দুদকে সামনে এসে ফেইসবুক লাইভে নিজেদের আসল দুদক কর্মকর্তার সহায়ক কর্মকর্তা হিসেবে দর্শকের কাছে পরিচয় দেওয়ার চেষ্টা করেন। বিষয়টি দুদকের নিরাপত্তাকর্মীরা টের পেয়ে কৌশলে তাদেরকে আটক করেন। পরে তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করে সত্যতা জানা যায়।
দুদকের এক কর্মকর্তা জানান, তারা জিজ্ঞাসাবাদে ১৮ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে নগদ ও বাকিতে প্রায় ৫ লাখ টাকা চাঁদাবাজি করার কথা স্বীকার করেছেন।
দুদক মহাপরিচালক আক্তার হোসেন বলেন, “সরকারি কর্মচারী না হয়েও পরস্পর যোগসাজশে সরকারি কর্মচারীর ছদ্মবেশ ধারণ করে প্রতারণার আশ্রয়ে দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে- এমন ব্যক্তিদের ভয়-ভীতি প্রদর্শন করে বিভিন্ন সরকারি দপ্তরসহ দুই শতাধিক বেসরকারি স্থানে আইনবহির্ভূত অভিযান পরিচালনা করেন।
“তারা জরিমানা ধার্য ও আদায়, চাঁদাবাজি, জোরপূর্বক মীমাংসার নামে অনৈতিক সুবিধা গ্রহণ এবং ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহার করে তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মিথ্যা, বিকৃত ও মানহানিকর তথ্য প্রকাশ ও প্রচার করে আসছিলেন।”
মামলায় বলা হয়েছে, সৈয়দ রায়হানের নেতৃত্বাধীন একটি সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্র ‘দুর্নীতি নিবারণ সহায়ক সংস্থা’ (৮৫ নয়া পল্টন, ৪র্থ তলা) নামে দুর্নীতি দমন কমিশনের মতো প্রতিষ্ঠান তৈরি করে দুদকের সহযোগী বাহিনী পরিচয় দিয়ে প্রতারণা করে আসছে।
দুদকের মতো তাদের নিজস্ব লোগো সম্বলিত ইউনিফর্ম, ছবিযুক্ত আইডি কার্ড রয়েছে। সেগুলো পরে বিভিন্ন সরকারি দপ্তরসহ দুই শতাধিক বেসরকারি স্থানে আইনবহির্ভূত অভিযান পরিচালানা করেছে তারা।
ওইসব অভিযানে চাঁদা দাবি, না দিলে দুদকে অভিযোগ দেওয়ার এবং অভিযানকালে বিনা অনুমতিতে ধারণকৃত ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দিত তারা। বিকৃত তথ্য প্রচার করে ক্ষতিগ্রস্ত করার হুমকিও দিয়ে আসছে তারা।