রাজপথ-রেলপথ অবরোধ করে সংবাদমাধ্যমের শিরোনাম হওয়ার পরদিন নিঝর্ঞ্ঝাট দিন পার করল ঢাকার তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীরা।
পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের দাবিতে ‘তিতুমীর ঐক্য’ ব্যানারে মঙ্গলবার মহাখালীর ক্যাম্পাসেই সীমাবদ্ধ ছিল শিক্ষার্থীদের কর্মসূচি।
কলেজ ফটকের বাইরে দিনভর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর অবস্থান ছিল। মহাখালী রেলগেইটে পুলিশের পাশাপাশি সেনাবাহিনীও ছিল মোতায়েন।
শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসের বাইরে না যাওয়ায় সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়নি; ট্রেন চলাচলেও কোনও বিঘ্ন ঘটেনি।
ক্যাম্পাসে দিনভর অবস্থান কর্মসূচি পালনের পর বিকালে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ১৪ জনের একটি প্রতিনিধি দল শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে যায় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করতে।
ঢাকার এই সরকারি কলেজের শিক্ষার্থীরা সোমবার মহাখালীর আমতলীতে অবস্থান নিয়ে সড়কে যান চলাচল বন্ধ করে দিয়েছিল। তারা মহাখালী লেভেল ক্রসিং অবরোধ করলে ট্রেন চলাচলও বন্ধ হয়ে যায়। একটি ট্রেনে ঢিল ছুড়লে কয়েকজন যাত্রী আহতও হয়।
বিকালে শিক্ষার্থীরা অবরোধ ছাড়লেও সন্ধ্যার পর কলেজ ক্যাম্পাসের সামনে অবস্থান নিলে মহাখালী-গুলশান সড়ক আটকে যায়। রাতে অবস্থান ছাড়ার সময় জানিয়ে গিয়েছিল, মঙ্গলবার আবার তারা কর্মসূচি নিয়ে নামবে।
মঙ্গলবার সকাল ১১টায় গিয়ে দেখা যায়, কলেজ ফটকে অবস্থান নিয়ে শিক্ষার্থীরা স্লোগান দিচ্ছে।
কলেজ ফটকের বাইরে পুলিশ ছিল সতর্ক অবস্থানে, ফটকের বিপরীত পাশে একটি রায়টকারও রাখা ছিল। আশপাশের গলিতেও পুলিশের উপস্থিতি ছিল।
মহাখালী লেভেল ক্রসিংয়ে মহানগর পুলিশের পাশাপাশি জেলা পুলিশের সদস্যদেরও দেখা গেছে। অর্ধ শতাতিক সেনা সদস্যও ছিল।
তবে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসের ভেতরে এবং ফটকের মধ্যেই ছিল। কেউ ফটকের সামনে জড়ো হয়ে স্লোগান দিচ্ছিল, কেউ ক্যাম্পাসের ভেতরে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আড্ডা দিচ্ছিল। একদল আবার মাঠে ক্রিকেট খেলতেও নেমে যায়।
কলেজের ভবনগুলোর প্রধান ফটক খোলা থাকলেও ক্লাসরুমের দরজায় তালা ঝুলতে দেখা গেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষক সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, কলেজ খোলা থাকলেও শিক্ষার্থীরা ক্লাস-পরীক্ষায় অংশ নেয়নি।
কলেজের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী শাহানুর ইসলাম বলেন, মঙ্গলবার কলেজেই অবস্থান কর্মসূচি পালনের সিদ্ধান্ত ছিল তাদের। বাইরে অবরোধের কোনও কর্মসূচি ছিল না।
“এরপরও সকালে বিপুল পুলিশ ক্যাম্পাসের ফটকে ও আশপাশে অবস্থান নিয়েছে। আমরা পুলিশের এই আচরণের নিন্দা জানাই।”
মঙ্গলবার ক্যাম্পাসের ভেতরে থাকলেও দাবি পূরণ না হলে বুধবার আবার সড়কে নামার হুমকি দিয়েছে শিক্ষার্থীরা।
বিক্ষোভরত শিক্ষার্থীদের মধ্যে সমাজকল্যাণ বিভাগের রিফাত উল্লাহ সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “আমাদের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে গতকাল উপদেষ্টাদের কথা হয়েছে। তারা আমাদের দাবির বিষয়ে আজ জানাবেন বলেছিলেন।
“কিন্তু আমরা এখনও কোনও খবর পাইনি। সরকারের কাছ থেকে আমরা আজকের মধ্যে কোনও সাড়া না পেলে আগামীকাল আবারও সড়কে নামতে বাধ্য হব আমরা।”
আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক মতিউর রহমান জয় সাংবাদিকদের বলেন, “আজকে আমাদের দাবিগুলো নিয়ে শিক্ষা উপদেষ্টাসহ সরকারের শীর্ষ কর্মকর্তারা বসবেন বলে জেনেছি।
“সেখানে আমাদের প্রতিনিধি দলও থাকবে। এ বৈঠক থেকে দাবি মেনে নেওয়ার সুনির্দিষ্ট আশ্বাস না পেলে বুধবার বেলা ১১টা থেকে সড়ক ও রেলপথ অবরোধ করা হবে।”
সচিবালয়ে প্রতিনিধি দল
শিক্ষার্থীদের ১৪ জনের একটি প্রতিনিধি দল বিকালে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে যায় বলে এই আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক ও তিতুমীর কলেজ শিক্ষার্থী জাভেদ ইকবাল বিষয়টি জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের দাবিতে আমাদের ক্লোজডাউন কর্মসূচি চলছে। পরে সরকারের পক্ষ থেকে বিষয়টি নিয়ে আলোচনার আহ্বান জানানো হয়। সে ডাকে সাড়া দিয়ে আমাদের ১৪ জন শিক্ষার্থী শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে গেছেন।”
প্রতিনিধিদলে রয়েছেন- মাহমুদ হাসান মুক্তার, মোশাররফ রাব্বি, নূর মোহাম্মদ, আব্দুল হামিদ, নূরুদ্দিন জিসান, মতিউর রহমান জয়, জাহাঙ্গীর সানি, মেহেদী হাসান মাল, আমিনুল ইসলাম, মোহাম্মদ বেল্লাল, আল নোমান নিরব, হাবিবুল্লাহ রনি, মো. তোয়াহা ও কাউসার।
ট্রেনে ঢিল ছোড়ার ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ
সোমবার অবরোধ চলাকালে মহাখালীতে উপকূল এক্সপ্রেস ট্রেনে ঢিল ছোড়ার ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করেছে তিতুমীরের শিক্ষার্থীরা।
মঙ্গলবার দুপুরে ‘তিতুমীর ঐক্য’ থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, অবরোধের কর্মসূচি তারা আগেই রেলসহ সংশ্লিষ্ট সব কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে রেখেছিল।
“পূর্ব ঘোষিত ‘বারাসাত ব্যারিকেড টু মহাখালী’ কর্মসূচি চলাকালে রেলপথ এই ব্যারিকেডের আওতায় ছিল। বিষয়টি গত ১৪ নভেম্বর সংবাদ সম্মেলন এবং প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানিয়ে দেওয়া হয়। প্রশাসন ও গোয়েন্দা বিভাগকে এই বিষয়ে অবগত করা হয়। রেল কর্তৃপক্ষকেও এই বিষয়টি আগেই অবগত করা হয়।
“রেলগেটে শিক্ষার্থীরা অবস্থান নেওয়ার আগে ওইখানে দায়িত্বশীল কর্তৃপক্ষকে জানানো হয় বিকাল ৪টা পর্যন্ত কোনও রেল যোগাযোগ করবে না। এমনকি উপকূল এক্সপ্রেস যখন আসছিল, তখন ৪-৫ কিলোমিটার দূর থেকেই লাল কাপড় দিয়ে সংকেত দেওয়া হয় রেল থামানোর জন্য। কিন্তু রেলচালক না থামিয়ে বরং এর গতিবেগ বাড়িয়ে দেন। ওই সময় রেল লাইনে ২-৩ হাজার শিক্ষার্থী অবস্থান নিয়ে ছিল।”
রেল কর্তৃপক্ষকে দায়ী করে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “উপকূল এক্সপ্রেসের এমন খামখেয়ালি আচরণের কারণে অন্তত ১২ জন শিক্ষার্থী আহত হয়েছে। শিক্ষার্থীরা যখন আহত হয়, তখন ক্ষুব্ধ হয়ে কয়েকটি নুড়িপাথর ট্রেন লক্ষ্য করে ছুড়ে মারে। এর ফলে রেলের ভেতর শিশুসহ কয়েকজন আহত হয় বলে জানা যায়।
“এই ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত অপ্রীতকর ঘটনা রেল কর্তৃপক্ষের খামখেয়ালি সিদ্ধান্তের মাধ্যমে ওই সময় রেল চলাচল করার অনুমতি দেওয়ার জন্যই হয়েছে। তাই এই অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার দায়ভার কোনোভাবেই রেল কর্তৃপক্ষ এড়িয়ে যেতে পারে না।”
নিজেদের আচরণের জন্য দুঃখ প্রকাশ করে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “গতকাল ঘটে যাওয়া অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার জন্য তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীরা গভীরভাবে দুঃখ প্রকাশ করছে।”