লন্ডন থিয়েটারের মঞ্চে উঠছেন টম হল্যান্ড। এ খবর রটে যেতেই থিয়েটারের বাইরে জমে গেল শত শত মানুষের ভিড়। স্পাইডারম্যান খ্যাত টম হল্যান্ডকে ভক্ত অনুরাগীরা এক নজর দেখতে চাইবেন সেটাই স্বাভাবিক। তবে থিয়েটারের ভেতরে সমালোচকদের ভেতর দেখা গেল মিশ্র প্রতিক্রিয়া।
উইলিয়াম শেক্সপিয়রের কালজয়ী নাটক রোমিও-জুলিয়েট। পৃথিবীর বহু দেশের বহু ভাষায় আজও মঞ্চস্থ হয়ে যাচ্ছে এই নাটক। জেমি লয়েডের নির্দেশনায় এই মঞ্চ নাটকে রোমিওর চরিত্রে অভিনয় করছেন টম হল্যান্ড।
টেলিগ্রাফে প্রকাশিত এক পর্যালোচনা বলছে, রোমিও হিসেবে টম হল্যান্ডের অভিনয় ‘মনমুগ্ধকর’ এবং ‘নজরকাড়া’।
যদিও ডেইলি এক্সপ্রেসে প্রকাশিত এক সমালোচকের লেখায় পাওয়া গেল একেবারে বিপরীত মত। তিনি লিখেছেন, হল্যান্ডের অভিনয় এই নাটকে ‘যাচ্ছেতাই’ হয়েছে।
হল্যান্ডের অভিনয়ের ব্যাপারে মতামত দিয়ে টাইম আউট লিখেছে এমন অভিনয় নাকি তার নামের সঙ্গে একেবারেই যায়নি।
অন্যদিকে গার্ডিয়ান বলছে ‘ভালো পারফর্ম্যান্স’।
সত্যিটা হলো, হল্যান্ডকে নিয়ে খুব বেশি বাক্য ব্যয় করতে কাউকেই দেখা যায়নি। বেশিরভাগ সমালোচকই রোমিও হিসেবে হল্যান্ডের অভিনয়কে ‘ভালো’, ‘ঠিকঠাক’ এবং ‘খুবই ভালো’ ইত্যাদি শব্দবন্ধেই প্রকাশ করেছেন।
মঞ্চে রোমিও চরিত্রে টম হল্যান্ড। ছবি- সংগৃহীত
আসলে সবার আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলেন জুলিয়েটের চরিত্রে অভিনয় করা ফ্রেঞ্চেস্কা অ্যামেউদা রিভার্স। টাইম আউটের লেখক আন্দ্রে লুকোভস্কির চোখে তার অভিনয় পেয়েছে ‘গ্রেইট’ অভিধা।
তিনি লিখেছেন, “মঞ্চে হল্যান্ডের বিপরীতে তার পেলব উপস্থিতি বেশ চোখে পড়ার মতো”।
এই মঞ্চ নাটকটিকে চার তারকা রেটিং দিয়ে তিনি আরও লিখছেন, নাট্য নির্দেশক জেমি লয়েডের এই প্রোডাকশন ‘একেবারে অপ্রথাগত’।
ব্রিটিশ পত্রিকা টাইমস অবশ্য খুব বেশি মুগ্ধ হতে পারেনি। নাটকটিকে তারা বলছে ‘সময়পোযোগী’ তবে ‘পানসে’।
সমালোচক ক্লাইভ ডেভিস হল্যান্ডের প্রশংসার বেলায় ছিলেন সতর্ক। তিন তারকা রেটিং দিয়ে তিনি লিখেছেন মঞ্চে হল্যান্ডকে ‘বেশ নবীন এবং সংবেদনশীল’ মনে হয়েছে।
তিনি লিখেছেন, “একেবারে শুরুর দৃশ্যেই হল্যান্ডের অভিনয়ে আপনার মনে হবে যে সে আসলেই একজন কিশোর যে নিজেকে এক সর্বনাশা প্রেমের দিকে ভাসিয়ে নেওয়ার জন্য উদগ্রীব।”
যদিও শেষ পর্যন্ত নাটকটিকে তার ‘প্রথাগত’ মনে হয়েছে। তার মতে, নাটকটি দর্শকদের ‘স্থির হবার পরিবর্তে বিভ্রান্তিকর’ অবস্থার দিকে ঠেলে দেয়।
গার্ডিয়ানের আরিফা আকবর তিন তারকা রেটিং দিয়ে লিখেছেন, “কাস্টিং একেবারে নিখুঁত, পাশাপাশি দুজনের অভিনয়ে কৈশোরিক চপলতা ঠিকড়ে পড়েছে, ফ্রেঞ্চেস্কার অভিনয়ে ছিল সরলতা এবং সময়োপযোগিতার ছাপ, অন্যদিকে হল্যান্ড তার ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বাক বদলের মধ্য দিয়ে মঞ্চে টেনশন ধরে রাখতে পারছিলেন পরম যত্নে।”
তিনি আরও লিখেছেন, “প্রশংসার অনেককিছুই আছে’’। তবে তিনি এ-ও যোগ করেছেন যে “ আবেগের অতি সংযত প্রকাশ নাটকের ট্র্যাজেডিকে বিকশিত হতে দেয়না।”
ভ্যারাইটি ম্যাগাজিনের লেখক ডেভিড বেনেডিক্ট এর মতে পুরো প্রোডাকশন কার্যত ‘অস্বাভাবিক কাটছাঁটের’ শিকার। যার কারণে পুরো কাজে “উদ্দাম ভালোবাসা এবং তারুণ্য অনুপস্থিত।”
বেনেডিক্ট আরও মনে করেন নাটকে চরিত্রগুলো এগিয়েছে হোঁচট খেতে খেতে। যা কিনা মঞ্চের ছন্দ পতন ঘটিয়েছে।
তবে তার মতে, “জুলিয়েট চরিত্রটিই ছিল কেবল ব্যতিক্রম…।”
অন্যদিকে দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্টে টিম বানো কোন রাখঢাক না রেখেই লিখেছেন হল্যান্ডের অভিনয় ছিল ‘হতাশাজনক’।
ব্যঙ্গ করে তিনি লিখেছেন, “মাঝ বিরতিতেই এটা শেষ হয়ে গেলে বরং দারুণ হতো। শুধু শুধুই টেনে নিয়ে এটার আবেদন হারালো।”
টিম বানো আরও লিখেছেন, “শেষটা খুব হতাশাজনক ছিল, এটা সত্য। রোমিও-জুলিয়েট মারা গেল, কিন্তু আসলে কী ঘটলো? আসল ঘটনা হলো, পুরো পারফরম্যান্স এতোই ম্যাড়মেড়ে ছিল যে, মনে হচ্ছিলো একটা জাঁকজমক পার্টির সামনের সারিতে বসে দর্শকরা ন্যাপ নিচ্ছে।”
বিবিসির হিউ মন্টগোমারি উল্লেখ করেছেন, নাটকটি পেয়েছে ‘গ্লোবাল ইভেন্ট’ এর সমান মনোযোগ।
তিনি উল্লেখ করেন, ডিউক অব ইয়র্ক থিয়েটারের বাইরে দেখা গেছে অভাবনীয় দৃশ্য। হল্যান্ডকে এক নজর দেখার জন্য ভিড় করে শত শত মানুষ। কিন্তু মঞ্চ নাটকটি সেই আগ্রহ উদ্দীপনার যথার্থ অনুবাদ করতে পারেনি।”
বিবিসির এই লেখকের কাছ থেকে নাটকটি পেয়েছে মোটে দুটো স্টার।
তিনি আরও উল্লেখ করেছেন, “সমস্যাটা হল্যান্ড কিংবা ফ্রেঞ্চেস্কার অভিনয়ে নয়। সমস্যাটা ওই লোক দেখানো, অপ্রয়োজনীয় রকমের স্বল্প আলোর মঞ্চের। যেটা অভিনেতাদের বিপক্ষে গেছে।”
বিনোদনভিত্তিক নিউজ পোর্টাল ডেডলাইনের লেখক বাজ বামিগবয়ে থিয়েটারের বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা লোকের ভিড়কে বলেছে ‘অবিস্মরণীয়’।
প্রোডাকশনের ব্যাপারে কিছু উল্লেখ করার বেলায় তিনি ছিলেন সাবধানী। টম হল্যান্ডের ব্যাপারে তার বক্তব্য- “দারুণভাবে মানিয়েছে। কিন্তু সমস্ত প্রশংসা ওই ১৩ বছরের কন্যাটিরই (জুলিয়েট চরিত্রে অভিনয়কারী ফ্রেঞ্চেস্কা) প্রাপ্য।”
তার মতে “ এটি এমন একটি প্রোডাকশন যেটি তরুণ দর্শকদের টানবে।”
“তরুণরা ঠাসাঠাসি করে বসে থিয়েটার দেখতে আগ্রহী নয়। এখন থিয়েটারের দরকার তরুণ দর্শক যারা নাটক দেখে উচ্ছাসে ভেসে যাবে। তবেই পুরোনো দিন ফিরে আসবে।”