Beta
রবিবার, ৭ জুলাই, ২০২৪
Beta
রবিবার, ৭ জুলাই, ২০২৪

প্রত্যয় স্কিম : সোমবার থেকে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের সর্বাত্মক কর্মবিরতি

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) কলাভবন ফটকে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলন থেকে সর্বাত্মক কর্মবিরতির ঘোষণা দেওয়া হয়। ছবি : সকাল সন্ধ্যা
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) কলাভবন ফটকে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলন থেকে সর্বাত্মক কর্মবিরতির ঘোষণা দেওয়া হয়। ছবি : সকাল সন্ধ্যা
Picture of প্রতিবেদক, সকাল সন্ধ্যা

প্রতিবেদক, সকাল সন্ধ্যা

নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থার প্রত্যয় স্কিম বাতিল না হওয়ায় কর্মবিরতিতে যাচ্ছেন দেশের ৩৫টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা।

সোমবার থেকে শুরু হবে এই কর্মবিরতি।

রবিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) কলাভবন ফটকে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এই ঘোষণা দেন বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের মহাসচিব অধ্যাপক ড. নিজামুল হক ভূঁইয়া।

এর আগে প্রত্যয় স্কিম বাতিলে সরকারকে ৩০ জুন পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়েছিলেন শিক্ষকরা। এই সময়ের মধ্যে তা বাতিল না হওয়ায় পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী সর্বাত্মক কর্মবিরতি পালন করবেন তারা।

গত বছরের আগস্টে বাংলাদেশে চালু করা হয় সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা। শুরুতে প্রবাস, প্রগতি, সুরক্ষা ও সমতা স্কিম নিয়ে এ ব্যবস্থা চালু হলেও ঘোষণার সাত মাস পর যুক্ত হয় নতুন স্কিম প্রত্যয়।

জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষ জানিয়েছিলে, দেশের চারশ বেশি স্ব-শাসিত, স্বায়ত্তশাসিত, রাষ্ট্রায়ত্ত, সংবিধিবদ্ধ বা সমজাতীয় প্রতিষ্ঠানের ভবিষ্যৎ কর্মীদের বাধ্যতামূলকভাবে এই কর্মসূচির অন্তর্ভুক্ত করা হবে। ফলে এ সব প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অবসরের পর মাসিক ভাতা পাবেন।

কিন্তু শুরু থেকেই এর বিরোধিতা করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা। তাদের দাবি, এই স্কিমে বর্তমান ব্যবস্থার মতো অবসরের পর এককালীন অর্থ পাওয়া যাবে না। সরকারি কর্মকর্তাদের তুলনায় বৈষম্যের শিকার হবেন তারা।

প্রত্যয়ের বিরোধিতা করে গত ২৫, ২৬ ও ২৭ জুন অর্ধদিবস কর্মবিরতি পালন করেন শিক্ষকরা। রবিবার ছিল পূর্ণদিবস কর্মবিরতি। তার মধ্যেই দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে নতুন কর্মসূচির ঘোষণা আসে।

লিখিত বিজ্ঞপ্তিতে অধ্যাপক নিজামুল হক ভূঁইয়া বলেন, “পেনশন সংক্রান্ত ‘বৈষম্যমূলক’ প্রজ্ঞাপন প্রত্যাহার, সুপার গ্রেডে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের অন্তর্ভুক্তি এবং স্বতন্ত্র বেতন স্কেল প্রবর্তনের দাবিতে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশন তিন মাসেরও অধিক সময় ধরে বিভিন্ন শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করে আসছে। ১৩ মার্চ অর্থ মন্ত্রণালয়ের এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারির পর থেকে বিবৃতি প্রদান, গণস্বাক্ষর সংগ্রহ, মানববন্ধন, প্রতীকী কর্মবিরতি, স্মারকলিপি প্রদান এবং অবস্থান কর্মসূচির মতো শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ কর্মসূচি পালিত হয়।”

তবে এর জবাবে সরকারের পক্ষ থেকে কোনও ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি জানিয়ে তিনি গত কয়েকদিনের অর্ধদিবস ও পূর্ণদিবস কর্মবিরতির কথা বলেন।

নিজামুল হক ভূঁইয়া বলেন, “আমরা আশা করি সরকার অনতিবিলম্বে এই যৌক্তিক দাবি মেনে নেবে, যাতে আমরা ক্লাসে ফিরে যেতে পারি। অন্যথায় বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী ১ জুলাই থেকে দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত সারা দেশের সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে সর্বাত্মক কর্মবিরতি পালিত হবে।”

সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক আখতারুল ইসলাম বলেন, “আমরা দীর্ঘদিন থেকে আন্দোলন করছি। এতদিনেও কেন আমাদের আলোচনার জন্য ডাকা হয়নি। আমাদের যে প্রত্যয় স্কিম অফার করা হয়েছে, তা চরম অপরিপক্ব হাতের কাজ। তারা জাতির সঙ্গে প্রতারণা করছে।

“যারা প্রত্যয় স্কিমের প্রবর্তক, তাদের শিক্ষকদের সামনে নিয়ে আসা হোক। আমরা আমাদের যুক্তি দেব। তারা তাদের যুক্তি দেবে। দেশে এত দুর্নীতি হয়েছে, সেসব কি শিক্ষকরা করেছেন? তাহলে কেন আমাদের সুবিধা বাতিল করা হলো?”

এই আন্দোলন ব্যক্তিস্বার্থে নয়, আগামী প্রজন্মের জন্য এবং শিক্ষাব্যবস্থা টিকিয়ে রাখার জন্য, যোগ করেন এই শিক্ষক নেতা।

এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. জিনাত হুদা, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক মো. মিজানুর রহমান, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি ড. মোতাহের হোসেন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. মমিন উদ্দিনসহ অন্যরা।

গত ১৩ মার্চ প্রত্যয় স্কিম ঘোষণার সঙ্গেসঙ্গেই এর বিরোধিতা করা শুরু করেন দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। সেদিন সর্বজনীন পেনশন স্কিমে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের অন্তর্ভুক্ত করার পর ১৯ মার্চ তা প্রত্যাখ্যান করে বিজ্ঞপ্তি দেয় বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশন।

এরপর ৩ এপ্রিল এক সভায় ‘সর্বজনীন পেনশন স্কিম’ প্রত্যাখ্যান করে প্রতিবাদ জানানো হয়।

সর্বজনীন পেনশন স্কিম বাতিল না করায় ৩০ এপ্রিল থেকে ৭ মে পর্যন্ত দাবির পক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের স্বাক্ষর গ্রহণ করা হয়। ১ হাজার ৬১ জন শিক্ষক প্রত্যয় স্কিমে অন্তর্ভুক্তি বাতিলের পক্ষে স্বাক্ষর দেয় বলে জানায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি।

প্রত্যয় স্কিম সম্পর্কে

সরকারি সংস্থা ও তাদের অধীন অঙ্গ প্রতিষ্ঠানগুলোয় কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থায় অন্তর্ভুক্ত করতে চালু করা হয় প্রত্যয় স্কিম। এ নিয়ে অর্থ মন্ত্রণালয় ২০ মার্চ দুটি প্রজ্ঞাপন জারি করে।

এক প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, স্বশাসিত, স্বায়ত্তশাসিত, রাষ্ট্রায়ত্ত, সংবিধিবদ্ধ বা সমজাতীয় সংস্থা এবং এদের অধীন অঙ্গপ্রতিষ্ঠানে আগামী ১ জুলাই থেকে নিয়োগ পাওয়া কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সরকার পেনশন ব্যবস্থাপনার আওতাভুক্ত করল।

একই দিন সর্বজনীন পেনশন স্কিম বিধিমালা সংশোধন করে আরেক প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, সংস্থাগুলোর কর্মকর্তা-কর্মচারীর ওপর ১ জুলাইয়ের পর থেকে ‘প্রত্যয়’ কর্মসূচি বাধ্যতামূলক। ২০২৩ সালের ১৭ আগস্টে চালু হওয়া ‘প্রগতি’, ‘প্রবাস’, ‘সুরক্ষা’ ও ‘সমতা’ —এই চার সর্বজনীন পেনশন কর্মসূচি ঐচ্ছিক হলেও নতুন স্কিম বাধ্যতামূলক।

সংশোধিত প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, প্রত্যয় প্রায় ৪০০ সংস্থার ওপর কার্যকর হবে। যেসব সংস্থা ৫০ শতাংশের বেশি সরকারি অর্থায়নে চলে, সেগুলোকে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে প্রজ্ঞাপনে। আর স্বশাসিত বা স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা বোঝানো হয়েছে সেগুলোকে, যারা কোনও আইনের মাধ্যমে গড়ে ওঠা। এর মধ্যে কোনও কর্তৃপক্ষ, করপোরেশন, কমিশন, সংস্থা, সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, ইনস্টিটিউশন, কাউন্সিল, একাডেমি, ট্রাস্ট, বোর্ড, ফাউন্ডেশন ইত্যাদি রয়েছে।

এর বাইরে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ), জীবন বীমা করপোরেশন, বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড, পাট গবেষণা ইনস্টিটিউট, বাংলা একাডেমি, বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্ট, ঢাকা শিক্ষা বোর্ড, পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ) ইত্যাদি রয়েছে এ তালিকায়।

বিদ্যমান কর্মসূচি ও ‘প্রত্যয়’

সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বর্তমানে সাধারণ ভবিষ্য তহবিল (জিপিএফ) এবং স্বায়ত্তশাসিত ও রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলো প্রদেয় ভবিষ্য তহবিলে (সিপিএফ) টাকা জমা রাখেন, যার বিনিময়ে সরকার ১১ থেকে ১৩ শতাংশ হারে সুদ দেয়। এ টাকা পেনশনে যাওয়ার পর অবসরভোগীরা পেয়ে থাকেন। যেসব সরকারি কর্মচারী রাজস্ব খাত থেকে বেতন পান, তারা টাকা রাখেন জিপিএফে। আর যারা রাজস্ব খাতের বাইরে থেকে বেতন পান, তারা টাকা রাখেন সিপিএফে। অল্প সংখ্যক প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা চাকরি শেষে বিদ্যমান কর্মসূচির আওতায় অবসর সুবিধা হিসেবে এককালীন অর্থ পেলেও মাসিক হারে তা পান না।

‘প্রত্যয়’ স্কিমে চাঁদার বিষয়ে প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, মূল বেতনের সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ বা সর্বোচ্চ ৫ হাজার টাকা– এ দুয়ের মধ্যে যেটি কম, সংশ্লিষ্ট সংস্থা তা চাকরিজীবীর বেতন থেকে কেটে রাখবে এবং সমপরিমাণ অর্থ সংস্থা দেবে। দুই অঙ্ক একত্রে চাকরিজীবীর পেনশন আইডির (পরিচয় নম্বর) বিপরীতে সর্বজনীন পেনশন তহবিলে জমা করবে। যেদিন প্রতি মাসের বেতন দেওয়া হয়, তার পরের কর্মদিবসের মধ্যেই কাজটি করতে হবে। এ জমা অর্থের পরিমাণ ও মেয়াদের ভিত্তিতে অবসরকালীন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারী মাসিক পেনশন ভোগ করবেন। 

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

ad

সর্বাধিক পঠিত