Beta
বুধবার, ১ জানুয়ারি, ২০২৫
Beta
বুধবার, ১ জানুয়ারি, ২০২৫

জুলাই থেকে ভাতা ৩৫ হাজার টাকা, মানছেন না ট্রেইনি চিকিৎসকরা

সরকারের সিদ্ধান্তে নারাজ 
আন্দোলনকারী ট্রেইনি চিকিৎসকরা রবিবার সন্ধ্যার পর শাহবাগে অবস্থান নিয়ে মোমবাতি প্রজ্জ্বলন কর্মসূচি পালন করেন। ছবি : সকাল সন্ধ্যা
সরকারের সিদ্ধান্তে নারাজ আন্দোলনকারী ট্রেইনি চিকিৎসকরা রবিবার সন্ধ্যার পর শাহবাগে অবস্থান নিয়ে মোমবাতি প্রজ্জ্বলন কর্মসূচি পালন করেন। ছবি : সকাল সন্ধ্যা
[publishpress_authors_box]

অন্তর্বর্তী সরকার আগামী বছরের জুলাই থেকে ভাতা ৩৫ হাজার টাকা করার সিদ্ধান্ত নিলেও তা মানতে নারাজ পোস্ট গ্রাজুয়েট প্রাইভেট ট্রেইনি চিকিৎসকরা। তারা জানুয়ারি থেকেই ওই অঙ্কের ভাতা চান।

রবিবার দুপুরে ঢাকার শাহবাগ অবরোধ করে ভাতা বাড়ানোর দাবিতে জোর আওয়াজ তোলে ট্রেইনি চিকিৎসকরা। এরপর আন্দোলনকারী চিকিৎসকদের প্রতিনিধিদের নিয়ে বসেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ডা. সায়েদুর রহমান। তার হেয়ার রোডের বাসায় বৈঠকে ভাতা ২৫ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে জানুয়ারি থেকে ৩০ হাজার টাকা করার সিদ্ধান্ত জানানো হয়। আর আগামী বছরের জুলাই মাস থেকে সেই ভাতা ৩৫ হাজার টাকা হবে বলেও জানানো হয়।

সরকারের এই সিদ্ধান্ত আন্দোলনকারী চিকিৎসকদের প্রতিনিধিরা মেনে নিয়ে কাজে ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর এখন পর্যন্ত শাহহবাগ থেকে সরেনি আন্দোলনকারীরা।

বৈঠকে ছিলেন জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্য ডা. মোহাম্মদ আব্দুল আহাদ, ড্যাবের কোষাধ্যক্ষ ডা. মো. জহিরুল হক শাকিল, এনডিএফের ভাইস প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক ডা. আতিয়ার রহমান, যুগ্ম সম্পাদক ডা. রুহুল কুদ্দুস বিপ্লব, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরো সায়েন্সেস অ্যান্ড হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক ডা. হুমায়ুন কবির হিমু। আন্দোলনকারীদের পক্ষে ছিলেন ডা. জাবির হোসেন, ডা. নুরন্নবী ও ডা. ইমরান শিকদার।

ডা. হুমায়ুন কবির হিমু সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “আগামী বছরের জানুয়ারি থেকে ৩০ হাজার আর আগামী জুলাই থেকে তারা (ট্রেইনি চিকিৎসকরা) ভাতা হিসেবে ৩৫ হাজার টাকা পাবেন।”

তবে এ নিয়ে পোস্ট গ্রাজুয়েট প্রাইভেট ট্রেইনি ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ডা. জাবির হোসেনকে মোবাইল ফোনে কল করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি। আর শাহবাগে অবস্থান নেওয়া একজন বলেন, তারা এখনও শাহবাগেই অবস্থান করছেন।

সন্ধ্যায় আন্দোলনকারীরা ঘোষণা দেন, জুলাই নয়, জানুয়ারি থেকেই তারা ৩৫ হাজার টাকা ভাতা চান। নয়তো তারা মাঠ ছাড়বেন না।

তবে জুলাই থেকে ৩৫ হাজার টাকার ভাতার বিষয়ে সোমবার প্রজ্ঞাপন দেওয়া হবে বলে জানান ডা. হুমায়ুন কবির হিমু।  

সরকার ও আন্দোলনকারীদের মধ্যে মধ্যস্থতা করেছেন অধ্যাপক ডা. আতিয়ার রহমান। আন্দোলনকারীরা এখনও শাহবাগেই রয়েছেন জানালে তিনি বলেন, “এটা এখন তাদের ( আন্দোলনকারী চিকিৎসক) মেনে নেওয়া উচিত। ৩৫ হাজার টাকা মেনে নিয়ে হাসপাতালে ফিরে যাক, কাজে ফিরে যাক।

“এখন তাদের ওঠা (অবরোধ কর্মসূচি) উচিত বলে আমি মনে করি।”

প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ডা. সায়েদুর রহমানের বাসায় হওয়া বৈঠক থেকে বের হয়ে আন্দোলনের সমন্বয়কারী ডা. নুরুন্নবী শাহবাগে আন্দোলনকারীদের কাছে এসে জুলাই থেকে ৩৫ হাজার টাকা ভাতার কথা জানালে আন্দোলনকারীরা সম্বস্বরে ‘মানি না, মানি না’ বলে প্রতিবাদ করেন।

জুলাইয়ের আগে এটা সম্ভব না বললেও একইভাবে ‘মানি না, মানি না’ বলে আওয়াজ তোলে বিক্ষোভকারীরা। তাদের একজন মুগদা মেডিকেল কলেজের তানভীর রহমান দ্বীপ সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “আমাদের দাবি ছিল ন্যূনতম ৩৫ হাজার টাকা জানুয়ারি থেকে। কিন্তু সরকার থেকে বলা হয়েছে জুলাই থেকে। এটা আমরা মানছি না, জানুয়ারি থেকে ৩৫ হাজার টাকা না দেওয়া হলে আন্দোলন চলবে, মাঠ ছাড়ছি না।”

ভাতা বাড়ানোর দাবি নিয়ে ২০২২ সাল থেকে আন্দোলন করে আসছে পোস্ট গ্রাজুয়েট ট্রেইনি চিকিৎসকরা। ২০২৩ সালের জুন মাসে এ নিয়ে বিএসএমএমইউ উপাচার্যের কার্যালয়ের সামনেও অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেছেন অনেকেই।

এরপর থেকেই শাহবাগ, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার এবং হাসপাতালে তারা বিক্ষোভ করেছেন, নিয়েছে গণঅনশন কর্মসূচিও। তখন আন্দোলনের প্রেক্ষিতে জুলাইতে তাদের ভাতা পাঁচ হাজার টাকা বাড়ানো হয়।

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ফের আন্দোলনে নামেন তারা। গত ১৪ ডিসেম্বর ডক্টরস মুভমেন্ট ফর জাস্টিস সোসাইটি শহীদ মিনার থেকে রাজু ভাস্কর্য পর্যন্ত মশাল মিছিল করে ৪৮ ঘণ্টার আলটিমেটাম দেয়।  পরদিন ১৫ ডিসেম্বর চিকিৎসকদের প্রতিনিধি, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক ও বর্তমানে জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখ্য সংগঠক সারজিস আলমসহ অর্থ মন্ত্রণালয়ে একটি বৈঠক হয়। সেখানে নথিটি অনুমোদন দিয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর কথা জানানো হয়।

তবে সেটি আর হয়নি। এরপর গত ২২ ডিসেম্বর প্রথমে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে এ নিয়ে তারা জড়ো হন। পরে দুপুরে শাহবাগের সড়কে অবস্থান নিয়ে দাবি আদায় না হলে অবস্থান কর্মসূচিরও ঘোষণা দেন। সেদিন শাহবাগে অবস্থানকালে সারজিস আলম সেখানে গিয়ে চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলেন। দাবি পূরণ করা হবে বলে সারজিস আলমের আশ্বাসে রাস্তা ছাড়েন চিকিৎসকরা। তবে জানান, তাদের কর্মবিরতি চলবে।

চিকিৎসকদের এ ঘোষণার পর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে তাদের ডাকা হয়, ছয় সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল সেখানে গিয়ে কথাও বলেন। তাদের দাবি মেনে নেওয়া হবে বলেও আশ্বাস দেওয়া হয়।

পরে ২৩ ডিসেম্বর মধ্যরাতে এই চিকিৎসকদের ভাতা পাঁচ হাজার টাকা বৃদ্ধি করে প্রজ্ঞাপন দেয় সরকার। তাতে করে তাদের ভাতা হয় ৩০ হাজার টাকা। কিন্তু এই প্রজ্ঞাপনকে প্রত্যাখ্যান করেন সারজিস আলম ও আন্দোলনরত চিকিৎসকরা।

সেদিন পোস্ট গ্রাজুয়েট প্রাইভেট ট্রেইনি ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ডা. জাবির হোসেন বলেন, “আমাদের দাবি ছিল ভাতা ২৫ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ৫০ হাজার টাকা করা। আশ্বাসও দেওয়া হয়েছিল সুযোগ-সুবিধাসহ নবম গ্রেড দেবে। কিন্তু সেটা হয়নি।”

ভাতা বাড়ানোর দাবিতে শাহবাগে অবরোধে ট্রেইনি চিকিৎসকর।
ভাতা বাড়ানোর দাবিতে রবিবার দুপুরে শাহবাগে অবরোধে ট্রেইনি চিকিৎসকর।

দেশে প্রায় ১০ হাজার পোস্ট গ্রাজুয়েট ট্রেইনি চিকিৎসক রয়েছেন, যারা উচ্চ শিক্ষায় যুক্ত থাকার পাশাপাশি বিভিন্ন হাসপাতালে রোগীদের সেবা দিয়ে থাকেন। এই চিকিৎসকরাই হাসপাতালের জরুরি বিভাগে রোগী ভর্তি, ভর্তি রোগীদের চিকিৎসা, ছাড়পত্র দেওয়ার কাজটি করে থাকেন।

২০২৩ সালে চিকিৎসকদের আন্দোলনের পর তখন পাঁচ হাজার টাকা বাড়িয়ে তাদের ভাতা ২৫ হাজার টাকা করা হয়। তখনও এই চিকিৎসকদের মাসিক ভাতা ২৫ হাজার টাকাকে অযৌক্তিক বলেও জানান তারা।

তারা বলছেন, ভাতা বাড়ানোর জন্য বাংলাদেশ কলেজ অব ফিজিশিয়ানস্ অ্যান্ড সার্জনস (বিসিপিএস), বিএসএমএমইউ, স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট সবার কথা সঙ্গে বলেছেন। সবাই তাদের দাবিকে যৌক্তিক বলে জানিয়ে ভাতা বাড়ানোর দাবি বাস্তবায়নের আশ্বাস দিলেও সেটা এখনও হয়নি।

এমনকি ভাতা বাড়ানোর সুপারিশ অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হলেও তার কোনও অগ্রগতি হয়নি। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়েও আসেনি সুপারিশের ফলাফল।

গত ২৩ ডিসেম্বর অর্থ মন্ত্রণালয়ের উপসচিব সৈয়দ আলী বিন হাসান স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, বাংলাদেশ কলেজ অব ফিজিসিয়ানস অ্যান্ড সার্জনসের প্রথম পর্ব পাস করা অবৈতনিক প্রশিক্ষার্থীদের বিদ্যামন মাসিক পারিতোষিক ভাতার হার বৃদ্ধি প্রসঙ্গে সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, তাদের মাসিক পারিতোষিক ভাতার হার ২৫ হাজার টাকা থেকে ২০ শতাংশ বৃদ্ধি করে ৩০ হাজার টাকা করা হলো, যা আদেশ জারির তারিখ থেকে কার্যকর হবে।

তবে এ প্রজ্ঞাপন প্রত্যাখ্যান করে পোস্ট গ্রাজুয়েট প্রাইভেট ট্রেইনি ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন থেকে বলা হয়, ট্রেইনি ডাক্তারদের সঙ্গে ওয়াদার বরখেলাপ নতুন কিছু না। কিন্তু এই নতুন বাংলাদেশে আর কোনও বৈষম্য মেনে নেওয়া হবে না।

বিজ্ঞপ্তিতে নবম গ্রেড সমপরিমাণ ভাতার ওয়াদা করে ৩০ হাজার টাকার প্রজ্ঞাপন তারা প্রত্যাখ্যান করার কথা জানিয়ে তারা বলেন, “আমরা এমন হঠকারী সিদ্ধান্তের তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি এবং আপনরা প্রস্তুত থাকেন আরও কঠোরভাবে আমাদের মোকাবিলা করার জন্য।”

উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ট্রেইনি চিকিৎসকদের কর্মবিরতিতে বিভিন্ন হাসপাতালে এক ধরনের অচলাবস্থা চলছে। এর মধ্যে রবিবার ফের ভাতা বাড়ানোর দাবিতে শাহবাগে ফের অরবোধ করেন ট্রেইনি চিকিৎসকরা। এদিন তারা বলেন, সরকারি চিকিৎসকরা নবম গ্রেডে বেতন পেলেও বৈষম্যের শিকার বেসরকারি ট্রেইনি চিকিৎসকরা।

‘চব্বিশের বাংলায় বৈষম্যের ঠাঁই নাই’, ‘দাবি মোদের একটাই, ৫০ হাজার টাকা ভাতা চাই’ ইত্যাদি স্লোগানে মুখর ছিলেন তারা।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত