পোস্ট গ্র্যাজুয়েট চিকিৎসকদের ভাতা বাড়ানোর দাবি ছিল ২০২২ সাল থেকে। দুই বছর বাদে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর তাদের সেই ভাতা ৫ হাজার টাকা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত এসেছে।
চিকিৎসকরা তা প্রত্যাখ্যান করেছেন। প্রত্যাখ্যান করেছেন জুলাই অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক সারজিস আলমও।
বেতন বাড়িয়ে ৩০ হাজার টাকা করার প্রজ্ঞাপন প্রত্যাখ্যান করে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে পোস্ট গ্র্যাজুয়েট চিকিৎসকরা।
ট্রেইনি হিসাবে কর্মরত ১০ হাজারের মতো পোস্ট গ্র্যাজুয়েট চিকিৎসকের কর্মবিরতিতে হাসপাতালগুলোতে এক ধরনের অচলাবস্থা চলছে।
দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে উচ্চ শিক্ষা নেওয়ার পাশাপাশি হাসপাতালে রোগীদের সেবা দিয়ে থাকে এই চিকিৎসকরা। হাসপাতালের জরুরি বিভাগে রোগী ভর্তি, ভর্তি রোগীদের চিকিৎসা, ছাড়পত্র দেওয়ার কাজটি মূলত তারাই করে।
ভাতা বাড়ানোর দাবি নিয়ে ২০২২ সাল থেকে আন্দোলন করে আছে এই চিকিৎসকরা। ২০২৩ সালের জুন মাসে বিএসএমএমইউ উপাচার্যের কার্যালয়ে সামনেও অবস্থান বিক্ষোভ করে তারা। এরপর নানা কর্মসূচি চালিয়ে যায় বিভিন্ন সময়।
মাসিক ভাতা ২৫ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ৫০ হাজার টাকা করার দাবিতে গত ২২ ডিসেম্বর কর্মবিরতি শুরু করে পোস্ট গ্রাজুয়েট ট্রেইনি চিকিৎসকরা।
সেদিন সকালে ঢাকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় সমাবেশ করে তারা। দুপুরে শাহবাগের সড়কে অবস্থান নিয়ে দাবি আদায় না হলে অবস্থান কর্মসূচিরও ঘোষণা দেয়।
রবিবার শাহবাগে অবস্থান নিয়ে পোস্ট গ্রাজুয়েট প্রাইভেট ট্রেইনি ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ডা. জাবির হোসেন বলেছিলেন, “আজ ১২টা পর্যন্ত সরকারকে সময় দিয়েছিলাম। এখন যদি সরকার আমাদের সঙ্গে বসতে চায়, তাহলে সেই দরজা খোলা, আর যদি বসতে না চায়, তাহলে সমাধান হবে রাস্তায়।”
এরপর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে আন্দোলনরত চিকিৎসকদের ছয়জনের একটি প্রতিনিধিদলকে ডাকা হয়।
সেদিন শাহবাগে গিয়ে সারজিস আলম চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলেছিলেন। তার আশ্বাসেই রাস্তা ছাড়ে চিকিৎসকরা। তবে কর্মবিরতি অব্যাহত রাখে।
ডা. জাবির বলেন, “তিনি (সারজিস) আমাদের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ট্রেইনি চিকিৎসকদের নবম গ্রেড দেওয়া হবে। এটা আগামী বৃহস্পতিবারের মধ্যে গেজেট আকারে প্রকাশিত হবে। এ কারণে আমরা অবস্থান কর্মসূচি প্রত্যাহার করেছি।”
২০২২ সালে চিকিৎসকদের আন্দোলনের পর ভাতা ৫ হাজার টাকা বাড়িয়ে ২৫ হাজার টাকা করা হয়েছিল। তখনও চিকিৎসকদের বক্তব্য ছিল, এটা যথেষ্ট নয়।
এবার আন্দোলনের পর সোমবার (২৩ ডিসেম্বর) অর্থ মন্ত্রণালয়ের উপসচিব সৈয়দ আলী বিন হাসান স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে ভাতা আরও ৫ হাজার টাকা বাড়ানোর ঘোষণা আসে।
তাতে বলা হয়, বাংলাদেশ কলেজ অব ফিজিসিয়ানস অ্যান্ড সার্জনস এর এফসিপিএস প্রথম পর্ব পাস করা অবৈতনিক প্রশিক্ষার্থীদের বিদ্যমান মাসিক পারিতোষিক ভাতার হার ২৫ হাজার টাকা থেকে ২০ শতাংশ বৃদ্ধি করে ৩০ হাজার টাকা বৃদ্ধি করা হলো।
এই প্রজ্ঞাপন প্রত্যাখ্যান করে সারজিস আলম মঙ্গলবার ফেইসবুকে লিখেছেন, দেশের আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় ভাতা বৃদ্ধির হার যৌক্তিক নয়।
“এটা অন্তত ৪০ হাজার টাকা অথবা নবম গ্রেড সমমান হওয়া উচিৎ। কোথায় কখন কতটুকু ইনভেস্ট করতে হবে, সেটা যতদিন আমরা না বুঝব, ততদিন দেশের প্রত্যাশিত উন্নতি সম্ভব না।”
ডক্টরস মুভমেন্ট ফর জাস্টিস সোসাইটি নামে চিকিৎসকদের সংগঠনও এই প্রজ্ঞাপন প্রত্যাখ্যান করেছে।
আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর গত ১৪ ডিসেম্বর এই সংগঠনটি ভাতা বাড়ানোর দাবিতে মশাল মিছিল করেছিল। পরদিন ১৫ ডিসেম্বর চিকিৎসকদের প্রতিনিধি, নাগরিক কমিটি, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখপাত্র সারজিস আলমকে নিয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ে একটি বৈঠক হয়।
মঙ্গলবার সংগঠনের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ট্রেইনি চিকিৎসকদের সঙ্গে ওয়াদার বরখেলাপ করা হয়েছে। বাংলাদেশে আর কোনও বৈষম্য মেনে নেওয়া হবে না।
“নবম গ্রেড সমপরিমাণ ভাতার ওয়াদা করে ৩০ হাজারের প্রজ্ঞাপন আমরা প্রত্যাখ্যান করলাম। আমরা এমন হঠকারী সিদ্ধান্তের তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি এবং আপনারা প্রস্তুত থাকেন আরও কঠোরভাবে আমাদের মোকাবেলা করার জন্য।”