Beta
বৃহস্পতিবার, ২ জানুয়ারি, ২০২৫
Beta
বৃহস্পতিবার, ২ জানুয়ারি, ২০২৫

প্রজ্ঞাপন মেনে কাজে ফিরছেন ট্রেইনি চিকিৎসকরা, দিলেন হুমকিও

ভাতা বৃদ্ধির দাবিতে রবিবার ঢাকার শাহবাগ মোড় অবরোধ করেন ট্রেইনি চিকিৎসকরা। ছবি : সকাল সন্ধ্যা
ভাতা বৃদ্ধির দাবিতে রবিবার ঢাকার শাহবাগ মোড় অবরোধ করেন ট্রেইনি চিকিৎসকরা। ছবি : সকাল সন্ধ্যা
[publishpress_authors_box]

অন্তর্বর্তী সরকার আগামী বছরের জানুয়ারি থেকে ৩০ হাজার টাকা এবং জুলাই থেকে ৩৫ হাজার টাকা করে মাসিক ভাতা দেওয়ার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে তা মেনে নিয়েছেন আন্দোলনরত পোস্ট গ্রাজুয়েট ট্রেইনি চিকিৎসকরা।

মাসিক ভাতা ২৫ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে সোমবার এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারির পর বৈঠক করে আগামীকাল সকাল ৮টা থেকে হাসপাতালের কাজে ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্তও নিয়েছেন তারা। এসময় তারা তাদেরকে বারবার ‘ট্যাগ’ দেওয়ার নিন্দা জানিয়েছেন। সেইসঙ্গে জুলাই থেকে ভাতা না বাড়লে এবং নিয়মিত বেতনবৃদ্ধি না হলে ফের আন্দোলনের হুমকিও দিয়েছেন তারা।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের উপসচিব সৈয়দ বিন হাসান স্বাক্ষরিত ভাতা বৃদ্ধির ওই প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, পোস্ট গ্রাজুয়েট ট্রেইনি চিকিৎসকরা আগামী বছরের জানুয়ারি থেকে ৩০ হাজার টাকা এবং জুলাই থেকে ৩৫ হাজার টাকা করে মাসিক ভাতা পাবেন।

দেশে প্রায় ১০ হাজার পোস্ট গ্রাজুয়েট ট্রেইনি চিকিৎসক রয়েছেন, যারা উচ্চ শিক্ষায় যুক্ত থাকার পাশাপাশি বিভিন্ন হাসপাতালে রোগীদের সেবা দিয়ে থাকেন। এই চিকিৎসকরাই হাসপাতালের জরুরি বিভাগে রোগী ভর্তি, ভর্তি রোগীদের চিকিৎসা, ছাড়পত্র দেওয়ার কাজটি করেন।

প্রজ্ঞাপন জারির পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) আন্দোলনরত ট্রেইনি চিকিৎসকরা সভা করেন।

সভা শেষে পোস্ট গ্রাজুয়েট প্রাইভেট ট্রেইনি ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ডা. জাবির হোসেন সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “আমরা প্রজ্ঞাপন মেনে নিলাম। রোগীদের চিকিৎসার স্বার্থে হাসপাতালে কাজে ফিরে যাচ্ছি।”

অন্তর্বর্তী সরকার আগামী বছরের জুলাই থেকে ভাতা ৩৫ হাজার টাকা করার সিদ্ধান্ত নিলেও শুরুতে তা মানতে নারাজ ছিলেন পোস্ট গ্রাজুয়েট প্রাইভেট ট্রেইনি চিকিৎসকরা। তারা জানুয়ারি থেকেই ওই অঙ্কের ভাতার দাবিতে রবিবার দুপুরে শাহবাগ অবরোধ করেন।

এরপর আন্দোলনরত চিকিৎসকদের প্রতিনিধিদের নিয়ে বসেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ডা. সায়েদুর রহমান। তার হেয়ার রোডের বাসায় বৈঠকে ভাতা ২৫ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে জানুয়ারি থেকে ৩০ হাজার টাকা করার সিদ্ধান্ত জানানো হয়। আর আগামী জুলাই মাস থেকে সেই ভাতা ৩৫ হাজার টাকা হবে বলেও জানানো হয়।

সরকারের এই সিদ্ধান্ত আন্দোলনরত চিকিৎসকদের প্রতিনিধিরা মেনে নিয়ে কাজে ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরও শাহবাগে অবস্থান নিয়ে ছিলেন আন্দোলনকারীরা।

সোমবার প্রজ্ঞাপন জারির পর বিএসএমএমইউর ডা. মিলন হলে বিষয়টি নিয়ে সমাবেত হন ট্রেইনি চিকিৎসকরা। সেখানে ডা. জাবির হোসেন বলেন, “গত দুই বছর ধরে ভাতা বাড়ানোর জন্য সংগ্রাম করছি। সবার কাছে যৌক্তিক এই দাবি নিয়ে গিয়েছি। সবাই যৌক্তিক দাবিই বল্লেও তার বাস্তবায়ন হয়নি। পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।

“এবারেও গত চার মাস ধরে সবার কাছে যাই, কথা বলি। কিন্তু তাতেও সমাধান না হওয়াতে রাস্তায় নামতে বাধ্য হই এবং শাহবাগে অবস্থান কর্মসূচি পালন করি।”

তিনি বলেন, “আজ প্রজ্ঞাপন এসেছে। সেখানে জানুয়ারি থেকে ৩০ এবং জুলাই থেকে ৩৫ হাজার টাকার কথা বলা হয়েছে। আমাদের বলা হয়েছে, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির কথা বিবেচনা করে যদি প্রয়োজন মনে হয়, তাহলে নতুন করে ভাতা বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে।” 

ডা. জাবির বলেন, “সার্বিক দিক বিবেচনা করে প্রজ্ঞাপন মেনে নিচ্ছি এবং কাল সকাল ৮টা থেকে আমরা কাজে ফিরব। তবে কোনও কারণে যদি জুলাই থেকে এটি কার্যকর না হয় এবং পরবর্তীতে ইনক্রিমেন্ট না হয়, যদি আলোচনা না হয় তাহলে ফের রাস্তায় নামতে বাধ্য হব।

“কিন্তু আমরা চাই না প্রতিবার রাস্তায় নামতে। আমরা চাই না, আমাদের রাস্তায় নামানো হোক কিংবা আন্দোলন করানো হোক। প্রজ্ঞাপন আপাতত আমরা মেনে নিচ্ছি।”

‘তবে আরেকটি কথা’- একথা উল্লেখ করে ডা. জাবির হোসেন বলেন, “আমাদের এই দাবিকে বারবার ট্যাগ দেওয়া হয়েছে। আগে বলা হয়েছে জামাত-শিবির, এবার বলা হয়েছে আওয়ামী লীগের দোসর।”

জাতীয় নাগরিক কমিটির সমালোচনা

পোস্ট গ্রাজুয়েট ট্রেইনি চিকিৎসকদের সংগঠনের সভাপতি এসময় জাতীয় নাগরিক কমিটির সমালোচনা করে বলেন, “জাতীয় নাগরিক কমিটি বলেছে, ভাতা বাড়ানো হয়েছে ৩০ শতাংশ, যেটা মূলত ২০ শতাংশ। একইভাবে আমাদের রাষ্ট্র অস্থিতিশীল করার ট্যাগিং দেওয়া হয়েছে। একটা দায়িত্বশীল জায়গা থেকে তারা এটা বলতে পারেন না, চিকিৎসক সমাজ এর নিন্দা জানাচ্ছে।

“নাগরিক কমিটি থেকে যদি এই ৩০ শতাংশের কথা শোধরানো না হয় তাহলে পোস্ট গ্রাজুয়েট চিকিৎসকরা আবার বিদ্রোহ করবে। আমরা চাই তারা এর দ্রুত সংশোধনী দেবে এবং তাদের বক্তব্যের জন্য ক্ষমা চাইবে।”

ভাতা বাড়ানোর দাবি নিয়ে ২০২২ সাল থেকে আন্দোলন করে আসছে পোস্ট গ্রাজুয়েট ট্রেইনি চিকিৎসকরা। ২০২৩ সালের জুন মাসে এ নিয়ে বিএসএমএমইউ উপাচার্যের কার্যালয়ের সামনেও অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেছেন অনেকেই।

এরপর থেকেই শাহবাগ, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার ও হাসপাতালে তারা বিক্ষোভ করেছেন, নিয়েছে গণঅনশন কর্মসূচিও। তখন আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে জুলাইতে তাদের ভাতা পাঁচ হাজার টাকা বাড়ানো হয়।

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ফের আন্দোলনে নামেন তারা। গত ১৪ ডিসেম্বর ডক্টরস মুভমেন্ট ফর জাস্টিস সোসাইটি শহীদ মিনার থেকে রাজু ভাস্কর্য পর্যন্ত মশাল মিছিল করে ৪৮ ঘণ্টার আলটিমেটাম দেয়।

পরদিন ১৫ ডিসেম্বর চিকিৎসকদের প্রতিনিধি, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক ও বর্তমানে জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখ্য সংগঠক সারজিস আলমসহ অর্থ মন্ত্রণালয়ে একটি বৈঠক হয়। সেখানে নথিটি অনুমোদন দিয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর কথা জানানো হয়।

তবে সেটি আর হয়নি। এরপর গত ২২ ডিসেম্বর প্রথমে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে এ নিয়ে তারা জড়ো হন। পরে দুপুরে শাহবাগের সড়কে অবস্থান নিয়ে দাবি আদায় না হলে অবস্থান কর্মসূচিরও ঘোষণা দেন। সেদিন শাহবাগে অবস্থানকালে সারজিস আলম সেখানে গিয়ে চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলেন। দাবি পূরণ করা হবে বলে সারজিস আলমের আশ্বাসে রাস্তা ছাড়েন চিকিৎসকরা। তবে জানান, তাদের কর্মবিরতি চলবে।

চিকিৎসকদের এ ঘোষণার পর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে তাদের ডাকা হয়, ছয় সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল সেখানে গিয়ে কথাও বলেন। তাদের দাবি মেনে নেওয়া হবে বলেও আশ্বাস দেওয়া হয়।

পরে ২৩ ডিসেম্বর মধ্যরাতে এই চিকিৎসকদের ভাতা পাঁচ হাজার টাকা বৃদ্ধি করে প্রজ্ঞাপন দেয় সরকার। তাতে করে তাদের ভাতা হয় ৩০ হাজার টাকা। কিন্তু এই প্রজ্ঞাপনকে প্রত্যাখ্যান করেন সারজিস আলম ও আন্দোলনরত চিকিৎসকরা।

সেদিন পোস্ট গ্রাজুয়েট প্রাইভেট ট্রেইনি ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ডা. জাবির হোসেন বলেন, “আমাদের দাবি ছিল ভাতা ২৫ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ৫০ হাজার টাকা করা। আশ্বাসও দেওয়া হয়েছিল সুযোগ-সুবিধাসহ নবম গ্রেড দেবে। কিন্তু সেটা হয়নি।”

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত