আজকের দিনে সম্পর্কে থাকা যুগলেরা নিজেদের মধ্যে বোঝাপড়া ঝালিয়ে নিতে কোথাও ভ্রমণ করতে চলে যাচ্ছেন। বলিউডে তারকাদের অনেকে সম্পর্কের কথা গোপন রেখে ছুটি কাটাতে গিয়ে কোনো সৈকতে বা দ্বীপে ঠিকই কোনো পাপারাজ্জির চোখে ধরা পড়ে গেছেন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিয়ের ভাবনা চূড়ান্ত করতে দুজন মানুষের একে অন্যকে গভীর ভাবে জানার জন্য এক সঙ্গে কোথাও ভ্রমণে যাওয়া দারুণ এক উপায়।
নিজেকে জানতে একা ভ্রমণের সুফল টের পেয়েছেন অনেকেই। একই সূত্র কাজ করে কারও সঙ্গে ঘুরতে গেলেও। এ কারণেই এ যুগের যুগলরা বিয়ের আগেও ঘুরতে যান এক সঙ্গে। এতে করে তাদের সিদ্ধান্ত নেওয়া সহজ হয় এবং ভুল মানুষটিকে বিয়ে করার সম্ভাবনাও কমে আসে।
২৯ বছর বয়সী তানিশা (ছদ্মনাম) দিল্লি শহরে কাজ করে। ম্যাট্রিমোনিয়াল পোর্টাল থেকে ঋষিকেষের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। তানিশার মন বলছিল, ঋষিকেষ ভালো জীবনসঙ্গী হবে।
“দুই মাস ধরে ওর সঙ্গে আলাপ ও সাক্ষাতের পর আমার মনে হলো, আমি তাকে পছন্দ করি। কিন্তু এরপরও আমি আরেকটু বুঝে দেখতে চাইছিলাম। এক ছুটির দিনে ঘুরতে যাওয়ার পরিকল্পনা করি আমি। আমার মনে হয়েছিল, এভাবে ওকে আমি সবরকম কপট আচরণের বাইরে জানতে পারবো।”
“আর ওই দুদিনে আমার উপলব্ধি হলো, সে একজন ভালো জীবনসঙ্গী হবে। ভ্রমণের সময় সে আমার সঙ্গে অনেক নমনীয় ছিল। আমরা দুয়েকটা ঝামেলার পরিস্থিতিতে পড়লেও তাকে দেখলাম ঠাণ্ডা মাথায় সবকিছু সামাল দিলো।”
ইন্ডিয়া টুডের কাছে এসব বলছিলেন তানিশা।
ভ্রমণ থেকে ঘুরে এসে ঋষিকেশ ও তানিশা বিয়ে করেছিল। সামনেই তারা প্রথম বিবাহবার্ষিকী উদযাপন করবে।
তবে ওই ভ্রমণে যাওয়া খুব সহজ ছিল না তানিশার জন্য।
কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, “আমি আমার বাবামাকে এ কথা জানাতে পারিনি। তারা কখনই অনুমতি দিতেন না। যদিও ঋষিকেশের বাবামা জানতেন। নিরাপত্তার কথা ভেবে আমি অবশ্য আমার ঘনিষ্ঠ দুজন বন্ধুকে জানিয়েছিলাম।
“সবশেষে আমার মনে হয়েছে আমি খুব ভালো সিদ্ধান্ত নিতে পেরেছিলাম। সে আমার জন্য সঠিক মানুষ তো বটেই; ওই ভ্রমণের কারণে আমাদের মধ্যে বোঝাপড়া আরও গাঢ় হয়েছে।”
ভ্রমণে গেলে অনেক অপ্রত্যাশিত ঘটনার মুখোমুখি হতে হয়। যেমন হোটেলে জায়গা পাওয়া গেলো না, গাড়ির টায়ার ফেটে গেলো।
সম্পর্ক বিশেষজ্ঞ দিল্লির রুচি রুহ বলেন, “মুখের উপর থাকা মোড়কটা খসে যায় ভ্রমণে গেলে। মানুষ তার ভেতরটা প্রকাশ করে।”
যারা দীর্ঘ মেয়াদে লিভ-ইন সম্পর্কে জড়াতে চান না, তাদের জন্য দিন কয়েকের ভ্রমণ বেশ কাজে দেবে।
সামাজিক রক্ষণশীলতা কিংবা ধর্মীয় বিধির কারণে অনেকের কাছে লিভ-ইন সম্পর্কে থাকার জন্য খুব ভালো প্রক্রিয়া নয়।
“লিভ-ইন সম্পর্কে থাকা মানে বাজার করা থেকে বাসার অনেক খরচের ভাগীদার হতে হয়। সমাজে অনেকের কটু কথাও শুনতে হয়। বাবামায়ের অনুমতিরও বিষয় আছে। এরচেয়ে দুই-তিন দিনের ভ্রমণে গিয়ে আবার ফিরে আসা বরং সহজ। এরপর দুজনের বনিবনা না হলে বিচ্ছেদও খুব বেশি ঝক্কির হয়ে ওঠে না”, বললেন রুচি।
যারা বিয়ে করতে চান কিন্তু দুজন দুজনকে বুঝতে কয়েক বছর ধরে সম্পর্ক চালিয়ে যেতে চান না, তাদের জন্য দুয়েক দিনের ভ্রমণ অব্যর্থ পদ্ধতি হতে পারে।
হানিমুনেও দুজন এক সঙ্গে ঘুরতে গিয়ে একে অন্যকে জানতে শুরু করে। কিন্তু ততক্ষণে তো বিয়ে হয়েই গেছে দুজনের। বরং আগে একবার ঘুরে এলে বিয়ে নিয়ে আর দুর্ভাবনা থাকে না।
তবে শুধু বাজিয়ে দেখার চেয়ে ভবিষ্যতের সম্পর্কের খাতিরে একে অন্যকে গভীর ভাবে জানায় মনোযোগ দেওয়া দরকার দুজনেরই।
এক সঙ্গে ঘুরতে যাওয়ার এমন ধারণা অনেকের ভ্রু কুঁচকে দিতে পারে অবশ্য। উপরন্তু অনভিপ্রেত কোনো অভিজ্ঞতার কথাও ভাবা দরকার। আর তাই ভ্রমণে যাওয়ার আগে অবশ্যই বন্ধু বা পরিবারের কাউকে সব কিছু জানিয়ে রাখা ভালো।