বয়স বাড়লেও মনের অনেক ইচ্ছা থেকে যায়, আর সেগুলো পূরণ করার ইচ্ছে বা সামর্থ্যও হারায় না—এমন উদাহরণ তো অনেক আছে। শারীরিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়া বাবা-মায়ের হাত ধরে পাহাড়, সমুদ্র বা জঙ্গল ঘুরতে নিয়ে যাওয়া নিশ্চয়ই সম্ভব। তবে, বয়স্ক সদস্যদের সঙ্গে ভ্রমণে গেলে ভালোভাবে পরিকল্পনা করা জরুরি। এর পাশাপাশি, কিছু ছোটখাটো বিষয়ও মাথায় রাখা দরকার, যাতে ভ্রমণটা সবার জন্য সুখকর হয়।
পরিকল্পনা
অনেকেই কোনো পরিকল্পনা ছাড়াই ভ্রমণে বেরিয়ে পড়েন, গন্তব্যে পৌঁছে ঠিক করেন কোথায় থাকবেন। তবে যদি পরিবারের বয়স্ক সদস্যরা সঙ্গে থাকেন, তাহলে পরিকল্পনা ছাড়া যাত্রা শুরু করলে সমস্যায় পড়তে পারেন। প্রথমেই ঠিক করতে হবে কোথায় যাবেন। বয়স হয়েছে মানেই যে সমুদ্রেই যেতে হবে বা পাহাড়-জঙ্গলে যাওয়া যাবে না, তা কিন্তু নয়। প্রবীণ সদস্যের ইচ্ছা, শারীরিক সক্ষমতা, আর ধকল সহ্য করার ক্ষমতা বিবেচনা করে ভ্রমণের স্থান ঠিক করা দরকার। বয়স বাড়লে বেশি সিঁড়ি ভাঙা বা চড়াই-উতরাই পথে হাঁটতে কষ্ট হতে পারে। তাই পাহাড়ে গেলে এমন জায়গা বেছে নিন, যেখানে যাতায়াত ব্যবস্থা ভালো এবং এক জায়গা থেকে সহজেই গাড়ি করে আশেপাশের জায়গাগুলো ঘুরে দেখা যায়।
ধৈর্য
পরিবারের বয়স্ক সদস্যদের সঙ্গে ভ্রমণে গেলে ধৈর্য রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বয়স্কদের সঙ্গে ভ্রমণ করার সময়, গাড়িতে ওঠা-নামা, হাঁটা, ঘুরতে বেরোনোর প্রস্তুতি, এমনকি খাওয়া-দাওয়া—এসব ক্ষেত্রে তাদের কিছুটা বেশি সময় লাগতে পারে।
যদি গাড়িতে ওঠার বা নামার সময় একটু বেশি সময় লাগে, বা বের হবার সময় কিছুটা দেরি হয়, তবে বিরক্তি প্রকাশ না করে ধৈর্য ধরাটা জরুরি। তাদের সুবিধা ও আরামের জন্য ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করলে তাদের জন্য অনেক সহজ হয়ে যাবে। মনে রাখবেন, আপনার ধৈর্য তাদের ভ্রমণকে আরও আনন্দময় এবং নির্বিঘ্ন করবে।
রুম, গাড়ির আগাম বুকিং
যদি পরিবারের বয়স্ক সদস্যরা আপনার সঙ্গে থাকেন, তাহলে রুম এবং গাড়ি আগেই বুক করে নেওয়া ভালো। বয়স্কদের দীর্ঘ সময় বসে থাকা বেশ কঠিন হতে পারে। যদি গাড়িতে সামনে পা ছড়ানোর জায়গা না থাকে, তাহলে তাদের খুব অস্বস্তি হবে। তাই চেষ্টা করুন এমন গাড়ি বেছে নিতে যেখানে তারা আরাম করে বসতে পারেন এবং যাত্রাপথ যাতে খুব দীর্ঘ না হয়, সে বিষয়েও নজর রাখতে হবে। এতে করে পুরো ভ্রমণটা তাদের জন্য অনেক বেশি আরামদায়ক এবং আনন্দময় হবে।
জরুরি পরিস্থিতি
বয়স্ক মানুষদের হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই যেখানেই যাচ্ছেন, আশেপাশে কোথায় হাসপাতাল আছে তা আগে থেকেই জেনে রাখুন। পাশাপাশি প্রেসক্রিপশন সঙ্গে নেওয়া ভালো। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ওষুধও সঙ্গে রাখা উচিত, যাতে কোনো ধরনের সমস্যা হলে দ্রুত সাহায্য পাওয়া যায়।
থাকার জায়গা নির্বাচন
হোটেল বা রিসোর্টে উপরের তলায় থাকার কারণে ভালো দৃশ্য পাওয়া যায়, কিন্তু বয়স্ক সদস্যদের জন্য সিঁড়ি দিয়ে ওঠা-নামা করা কষ্টকর হতে পারে। তাই আগে থেকেই দেখে নিন তাঁরা সিঁড়ি দিয়ে উঠতে পারবেন কিনা। যদি সমস্যা হয়, তবে নিচে ঘর বুক করুন।
বয়স্কদের জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা ঘুরে বেড়ানো সম্ভব নাও হতে পারে, তাই এমন জায়গা বেছে নিন যেখানে তাঁরা শান্তিতে কিছু সময় কাটাতে পারেন। অনেক হোটেল বা রিসোর্ট থাকে যেখানে বড় বাগান বা সুন্দর জায়গা থাকে। এই ধরনের জায়গা হলে, তাঁরা প্রকৃতির মাঝে কিছুটা আরাম পাবেন এবং নিজের মতো করে সময় কাটাতে পারবেন।