জুলাই-আগস্টের গণআন্দোলনে ঢাকার আশুলিয়ায় ছয় জনকে হত্যার পর লাশ পোড়ানোর ঘটনায় করা মামলায় পাঁচ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। অবিলম্বে তাদের গ্রেপ্তার করতে পুলিশকে নির্দেশও দেওয়া হয়েছে।
সোমবার প্রসিকিউশনের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন দুই সদস্যের ট্রাইব্যুনাল এই আদেশ দেয়।
এই পাঁচ জনের মধ্যে চার জনই পুলিশ কর্মকর্তা। যদিও তাদের নাম তাৎক্ষণিকভাবে জানাতে পারেনি প্রসিকিউশন। অন্যজন হলেন ঢাকা-১৯ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য সাইফুল ইসলাম।
আদালতে আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম ও প্রসিকিউটর গাজী এম এইচ তামিম। এসময় উপস্থিত ছিলেন প্রসিকিউটর বিএম সুলতান মাহমুদ, এস এম মইনুল করিম ও শাইখ মাহদী।
পরোয়ানা জারির আবেদনে ট্রাইব্যুনালের প্রধান কৌঁসুলি তাজুল ইসলাম উল্লেখ করেন, গত ৫ অগাস্ট আশুলিয়ায় ৬ ছাত্রকে গুলি করে হত্যা করা হয়। এরপর তাদের লাশ ‘চ্যাংদোলা’ করে ভ্যানে উঠিয়ে আগুনে পোড়ানো হয়। যেন কেউ বুঝতে না পারে সেজন্য লাশ দেওয়া হয়।
পরে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, “এ ঘটনায় অভিযুক্ত রাষ্ট্রের শীর্ষ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়েছে। এখন তদন্ত করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বেশ কিছু কর্মকর্তার নাম পাওয়া গেছে।”
তদন্ত এখনো চলছে জানিয়ে তিনি বলেন, “এ ঘটনায় জড়িত আর কারো নাম পাওয়া গেলে তাদের বিরুদ্ধেও গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির আবেদন করা হবে।”
আশুলিয়ায় ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গুলি করে হত্যার পর লাশ পুড়িয়ে দেওয়ার ঘটনায় গত ১১ সেপ্টেম্বর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে দুটি অভিযোগ করা হয়। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ৩০ জনকে সেখানে আসামি করা হয়।
নিহত দুজনের পরিবারের পক্ষে সুপ্রিম কোর্টের অ্যাডভোকেট হুজ্জাতুল ইসলাম খান অভিযোগ দুটি দায়ের করেন।
ওইদিন হুজ্জাতুল ইসলাম খান বলেছিলেন, আসামিদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন, ১৯৭৩ এর ৩(২) ও ৪(১)/৪(২) ধারা অনুযায়ী গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছে।
তিনি জানান, নিহত আস-সাবুরের ভাই মো. রিজওয়ানুল ইসলাম ৩০ জনের বিরুদ্ধে এবং নিহত সাজ্জাদ হোসেন সজলের মা মোছা. শাহীনা বেগম ৪০ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দুটি করেছেন। দুই মামলার অভিযোগ অভিন্ন।
অভিযোগে বলা হয়েছে, “সাত আসামির নির্দেশে ও পরিকল্পনায় অন্য আসামিরা আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে নির্বিচারে গুলিবর্ষণ করে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকারী সাধারণ নিরস্ত্র ছাত্র জনতাদের হত্যা করে তাদের লাশ আগুনে পুড়িয়ে তাদের সমূলে বা আংশিক নির্মূল করার উদ্দেশ্যে গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছে।”
মামলাদুটির আসামির তালিকায় আরও যাদের নাম রয়েছে তারা হলেন, সাবেক মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, সাবেক আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন, ঢাকার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আব্দুল্লাহিল কাফি, বেক্সিমকো লিমিটেডের সিকিউরিটি ইনচার্জ মনতাজউদ্দিন মণ্ডল, গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের ২ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর শরীফ ব্যাপারী, কাশিমপুর থানা স্বেচ্ছাসেবক লীগ সভাপতি মোস্তাক আহমদ, কাশিমপুর থানা ছাত্রলীগ সভাপতি সাবের আহমেদ সজীব এবং আশুলিয়া থানা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মো. নাদিম হোসেন।