Beta
বুধবার, ২৯ জানুয়ারি, ২০২৫
Beta
বুধবার, ২৯ জানুয়ারি, ২০২৫

কলম্বিয়ার ওপর শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত থেকে সরলেন ট্রাম্প

হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, কলম্বিয়ায় ফেরত পাঠানো অভিবাসীদের শর্ত ছাড়াই গ্রহণ করতে রাজি হয়েছে দেশটির প্রশাসন।
হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, কলম্বিয়ায় ফেরত পাঠানো অভিবাসীদের শর্ত ছাড়াই গ্রহণ করতে রাজি হয়েছে দেশটির প্রশাসন।
[publishpress_authors_box]

কথা ছিল কলম্বিয়ার আমদানি পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করবেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।

কিন্তু হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, কলম্বিয়ায় ফেরত পাঠানো অভিবাসীদের শর্ত ছাড়াই গ্রহণ করতে রাজি হয়েছে দেশটির প্রশাসন। তাই যুক্তরাষ্ট্র এখন কলম্বিয়ার ওপর শুল্ক আরোপ করবে না।

পূর্বঘোষণা ছাড়াই গতকাল রবিবার হঠাৎ কলম্বিয়ার ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক ও নিষেধাজ্ঞা আরোপের ঘোষণা দেন ট্রাম্প। প্রতিক্রিয়া হিসেবে কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট গুস্তাভো পেত্রোও যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যের ওপর পাল্টা ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছিলেন।

এ নিয়ে সোশাল মিডিয়ায় ব্যাপক সমালোচনা শুরু হয়। এরই মধ্যে উভয় দেশের কূটনীতিকদের মধ্যে চলে আলোচনা।

এক পর্যায়ে রবিবার রাতে হোয়াইট হাউসের প্রেস সচিব ক্যারোলিন লেভিট ঘোষণা করেন, কলম্বিয়া ‘অবাধভাবে’ অভিবাসীদের গ্রহণে সম্মত হয়েছে এবং সামরিক বিমানসহ কোনও বাধা বা বিলম্ব ছাড়াই যুক্তরাষ্ট্র অভিবাসীদের কলম্বিয়ায় ফেরত পাঠাবে। এ নিয়ে উভয় পক্ষের মধ্যে চুক্তি হয়েছে।

লেভিট আরও জানান, কলম্বিয়া চুক্তি পালন করলে যুক্তরাষ্ট্র ট্রাম্পের নির্দেশিত শুল্ক বা অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করবে না।

হোয়াইট হাউসের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, কলম্বিয়া এখন যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বিমানে আগত অভিবাসীদের ‘কোনও বাধা বা বিলম্ব ছাড়াই‘ গ্রহণ করতে রাজি হয়েছে। কলম্বিয়া জানিয়েছে, ‘আমাদের নাগরিকদের মর্যাদা’ নিশ্চিত করতে সংলাপ অব্যাহত থাকবে।

শুল্ক ও আর্থিক নিষেধাজ্ঞা স্থগিত থাকলেও ট্রাম্পের নির্দেশে কলম্বিয়ার কর্মকর্তাদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা থাকবে। দেশটির নাগরিক ও পণ্যবাহী জাহাজগুলোর ওপর কাস্টমস তল্লাশি চলবে। প্রথম দফায় কলম্বিয়ার অভিবাসীদের সফলভাবে ফেরত পাঠানোর পর ভিসা নিষেধাজ্ঞা ও তল্লাশি শিথিল হবে।

কলম্বিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী লুইস গিলবার্টো মুরিলো রবিবার রাতে হোয়াইট হাউসের বিবৃতির কিছু সময় পর নিশ্চিত করেন, যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাসন ফ্লাইট আবার শুরু হয়েছে।

হোয়াইট হাউস কলম্বিয়ার সঙ্গে হওয়া চুক্তিকে ট্রাম্পের কঠোর নীতির জয় হিসেবে দেখছে।

পুরো ঘটনার শুরু অভিবাসীভর্তি দুটি সামরিক বিমান কলম্বিয়ায় অবতরণ নিয়ে। যুক্তরাষ্ট্র চাইছিল অভিবাসীদের ফেরত পাঠাতে। আর কলম্বিয়ার দাবি ছিল, যুক্তরাষ্ট্র যেন অপরাধীর মতো সামরিক বিমানে না পাঠিয়ে সাধারণ বিমানে অভিবাসীদের পাঠায়। তাই তারা সামরিক বিমান দুটিকে নামতে দেয়নি।

যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা বিবিসির অংশীদার সিবিএস নিউজকে জানিয়েছেন, সান ডিয়েগো থেকে দুটি সামরিক বিমান রবিবার কলম্বিয়ায় অভিবাসীদের ফেরত পাঠাতে যাচ্ছিল। তবে জটিলতার কারণে ওই পরিকল্পনা বাতিল করা হয়।

এর প্রতিক্রিয়ায় ট্রাম্প তার নিজের সোশাল মিডিয়া প্লাটফর্ম ট্রুথসোশালে এক পোস্টে ‘তাৎক্ষণিক ও কঠোর পাল্টা ব্যবস্থা’ নেওয়ার ঘোষণা দেন। কলম্বিয়া থেকে যুক্তরাষ্ট্রে আমদানি করা সব পণ্যের ওপর তাৎক্ষণিকভাবে শুল্ক আরোপের কথা বলেন। এক সপ্তাহের মধ্যে এই শুল্ক ২৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৫০ শতাংশ করা হবে বলে হুমকিও দেন।

এসব পদক্ষেপকে কেবল শুরু বলে ট্রাম্প আরও জানান, তার প্রশাসন কলম্বিয়া সরকারকে তাদের আইনি বাধ্যবাধকতা লঙ্ঘন করতে দেবে না। বিশেষ করে যেসব অপরাধীকে তারা যুক্তরাষ্ট্রে পাঠিয়েছে, তাদের গ্রহণ ও ফেরত নেওয়ার ক্ষেত্রে।

কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্টও সোশাল মিডিয়া এক্সে প্রতিক্রিয়া হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের ওপর পাল্টা শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেন এবং কলম্বিয়ার ঐতিহ্য ও সাহসিকতার প্রশংসা করেন।

গুস্তাভো বলেন, “আপনার অবরোধে আমি ভীত নই। কারণ কলম্বিয়া কেবল সৌন্দর্যের দেশ নয়, এটি বিশ্বের হৃদয়।”

যুক্তরাষ্ট্র কলম্বিয়ার যেসব অভিবাসীকে ফেরত পাঠাতে চাইছে, তাদের মর্যাদাপূর্ণভাবে আনার জন্য গুস্তাভো তার প্রেসিডেন্টিয়াল বিমান দেওয়ার প্রস্তাবও দেন।

কলম্বিয়ায় বর্তমানে ১৫ হাজার ৬৬৬ আমেরিকান অবৈধভাবে বাস করছেন জানিয়ে গুস্তাভো তখন জানান, তিনি কখনও অবৈধ আমেরিকান অভিবাসীদের ফেরত পাঠাতে ‘রেইড’ দেবেন না।

যুক্তরাষ্ট্র তার মোট কফি আমদানির ২০ শতাংশই আনে কলম্বিয়া থেকে। এর বাজার মূল্য প্রায় ২ বিলিয়ন ডলার। এছাড়া কলম্বিয়া থেকে আমদানি হয় কলা, অপরিশোধিত তেল, অ্যাভোকাডো ও ফুল।

শুল্ক আরোপের ফলে এসব পণ্য আমদানি করা আরও ব্যয়বহুল হবে। আর এই ব্যয় গ্রাহকের ওপর চাপানো হলে কফির দাম বাড়তে পারে।

আমদানিকারকরা এই সমস্যা এড়াতে অন্য উৎস থেকে পণ্য আমদানি করতে পারেন। ফলে কলম্বিয়ার উৎপাদকরা একটি গুরুত্বপূর্ণ বাজার হারাতে পারেন।

গুস্তাভো পেত্রো ট্রাম্পকে পছন্দ করেন না। তিনি আগেও ট্রাম্পের অভিবাসন ও পরিবেশ নীতির কঠোর সমালোচনা করেছেন।

কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট বলেন, “লোভের কারণে ট্রাম্প মানবজাতিকে নিশ্চিহ্ন করে ফেলবেন। তিনি কলম্বিয়ানদের নিচু জাতি মনে করেন। তিনি অর্থনৈতিক শক্তি ও অহংকার নিয়ে অভ্যুত্থানের চেষ্টা করলেও তার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলা হবে। আজ থেকে কলম্বিয়া সারা বিশ্বের জন্য উন্মুক্ত।”

প্রতি বছর হাজার হাজার অভিবাসী যুক্তরাষ্ট্রে যেতে কলম্বিয়া হয়ে যাত্রা শুরু করেন। সাম্প্রতিক পরিস্থিতি ট্রাম্প প্রশাসনের জন্য কলম্বিয়ার সঙ্গে এই সমস্যা মোকাবিলা আরও কঠিন করে তুলবে।

ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হিসেবে তার মেয়াদের প্রথম দিনেই অভিবাসন সংক্রান্ত একাধিক নির্বাহী আদেশে সাক্ষর করেন। এসব আদেশের উদ্দেশ্য যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধ অভিবাসীদের আটক ও গ্রেপ্তারে ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্টের (আইসিই) ক্ষমতা বাড়ানো।

আইসিই ২০২৪ সালে ১ লাখ ৪৯ হাজার ৭০০ অভিবাসীকে আটক করেছে। অর্থাৎ প্রতিদিন গড়ে ৪০৯ জনকে আটক করা হয়েছে।

এর মধ্যে শুধু গত বৃহস্পতিবারই ৫৩৮ জনকে আটক করেছে আইসিই।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত