প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ট্রানজিশন টিম যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র নীতিতে দ্রুত পরিবর্তন আনতে চাইছে। এরই অংশ হিসেবে তারা একাধিক জ্যেষ্ঠ কূটনীতিককে তাদের পদ থেকে অবিলম্বে সরে যেতে বলেছে।
এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত দুই কর্মকর্তা রয়টার্সকে জানিয়েছে, ট্রাম্প সরকারের নতুন কূটনৈতিক দল গঠনের অংশ হিসেবেই বাইডেন জামানার কূটনীতিকদের সরে যেতে বলা হচ্ছে।
সোমবার ডোনাল্ড ট্রাম্পের শপথ গ্রহণের সময়ই কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তা পদত্যাগ করেন। এদের মধ্যে ছিলেন এশিয়া, ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যের নীতি বিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি জন ব্যাস। তার পদত্যাগের খবর প্রথম প্রকাশ করে ওয়াশিংটন পোস্ট।
রয়টার্সকে একটি সূত্র জানায়, পররাষ্ট্রমন্ত্রীর অধীনে থাকা সব আন্ডার সেক্রেটারি এবং অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি পর্যায়ের কর্মকর্তাদের পদত্যাগ করতে বলা হয়েছে।
যাদের পদত্যাগ করতে বলা হয়েছে, তাদের মধ্যে রয়েছেন জিওফ্রি পাইয়াট। তিনি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এনার্জি অ্যান্ড ন্যাচারাল রিসোর্সেস ব্যুরোর অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি ছিলেন। তার কূটনৈতিক ক্যারিয়ার তিন দশকের বেশি সময়ের। প্রথম ট্রাম্প প্রশাসনে তিনি গ্রিসে ওয়াশিংটনের রাষ্ট্রদূত ছিলেন।
আর পূর্ব এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় বিষয়ক অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি এবং কার্যত পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ এশিয়া কূটনীতিক ড্যানিয়েল কৃতেনব্রিঙ্ক এই মাসের শেষে পদত্যাগ করে অবসর নেবেন।
রয়টার্স গত সপ্তাহেই এক প্রতিবেদনে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তিন জ্যেষ্ঠ পেশাদার কূটনীতিককে তাদের পদ থেকে সরে যেতে বলার খবরটি জানিয়েছিল। এই কর্মকর্তারা মন্ত্রণালয়ের কর্মী ও অভ্যন্তরীণ সমন্বয়ের দায়িত্বে ছিলেন।
ট্রাম্প ‘ডিপ স্টেট’ পরিষ্কার করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। অর্থাৎ তার দৃষ্টিতে অনুগত নয় এমন কর্মকর্তাদের বরখাস্ত করবেন তিনি। কর্মী পরিবর্তনের এই পদক্ষেপ আধুনিক কোনো প্রেসিডেন্টের তুলনায় ফেডারেল সরকারের ওপর অধিক নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার বৃহত্তর প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
তবে এনিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বা ট্রাম্পের ট্রানজিশন টিম কোনো মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে।
সোমবার ট্রাম্পের শপথ গ্রহণের পরপরই হোয়াইট হাউস একটি বিবৃতি প্রকাশ করে। এতে নতুন প্রেসিডেন্টের প্রথম দিকের অগ্রাধিকারগুলোর তালিকা দেওয়া হয়। এর মধ্যে সরকারি কর্মকর্তাদের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত ছিল।
হোয়াইট হাউস জানায়, “প্রেসিডেন্টের নির্দেশনায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আমেরিকা-প্রথম নীতিতে পরিচালিত হবে।”
ট্রাম্প শক্তিশালী পররাষ্ট্রনীতি গ্রহণ করতে পারেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। তিনি ইউক্রেন ও রাশিয়ার মধ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠার এবং ইসরায়েলের প্রতি আরও সমর্থন দেওয়ার অঙ্গীকার করেছেন। এছাড়াও তিনি গ্রিনল্যান্ডকে যুক্তরাষ্ট্রের অংশ করার প্রচেষ্টা এবং ন্যাটো মিত্রদের প্রতিরক্ষা ব্যয় বৃদ্ধি করার আহ্বানের মতো ব্যতিক্রমী নীতির পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ট্রাম্প এমন একটি কূটনৈতিক দল চান, যারা মনোযোগ সহকারে কর্তব্য পালন করবেন এবং প্রতিবাদ করবেন না। এমনটা হলে তার লক্ষ্য অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী পদে মার্কো রুবিওকে মনোনিত করেছেন ট্রাম্প। গত সপ্তাহে প্রার্থিতা নিশ্চিত করার শুনানিতে তিনি বলেন, “পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ‘অবহেলিত’। মন্ত্রণালয়ের কর্মীদের পররাষ্ট্র নীতি নির্ধারণ ও বাস্তবায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করা উচিত।”
যারা তাদের পদ থেকে সরে যাচ্ছেন, তারা এখনও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা হিসেবে রয়েছেন। তবে তাদের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত। তাদের অবসর নেওয়ার বিকল্প রয়েছে। তারা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে থাকতে চাইলে তাদের সেখানেই নতুন চাকরি খুঁজে নিতে হবে এবং পুনরায় নিয়োগ পেতে হবে। আর এটি নতুন নেতৃত্বের ওপর নির্ভর করবে।
রাজনৈতিক পদে নিয়োগপ্রাপ্তরা সাধারণত নতুন প্রেসিডেন্ট ক্ষমতায় আসার সময় তাদের পদত্যাগপত্র জমা দেন। তবে, বেশিরভাগ পেশাদার কূটনীতিক এক প্রশাসন থেকে অন্য প্রশাসনে কাজ করে যান। যদিও নতুন প্রেসিডেন্ট ওই পদগুলোতে নতুন কর্মকর্তাদের নিয়োগ দেওয়ার অধিকার রাখেন।
যাদের পদত্যাগ করতে বলা হয়েছে, তাদের অনেকেই ডেমোক্র্যাটিক ও রিপাবলিকান উভয় প্রশাসনেই কাজ করেছেন।
সেনেট ফরেন রিলেশনস কমিটির শীর্ষ ডেমোক্র্যাট সদস্য সেনেটর জিন শেহীন গত ১৯ জানুয়ারি সোশাল মিডিয়া এক্সে বলেন, “শপথ গ্রহণের আগেই জ্যেষ্ঠ কূটনীতিকদের তাদের পদ থেকে সরে যেতে বলার বিষয় সংক্রান্ত খবর নজরদারি করা হচ্ছে। এই পক্ষপাতহীন সরকারি কর্মকর্তাদের রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাট উভয় দলের অধীনে কাজ করার কয়েক দশকের অভিজ্ঞতা রয়েছে। তারা যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।”
ট্রাম্পের ট্রানজিশন টিম এরই মধ্যে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের গুরুত্বপূর্ণ পদে তাদের লোক বসাতে শুরু করেছে। এ সংক্রান্ত খবর প্রথম প্রকাশ করেছে ফক্স নিউজ।
মাইক পম্পেওর অধীনে নির্বাহী সচিব হিসেবে কাজ করতেন লিসা কেন্না। ট্রাম্পের ট্রানজিশন টিম তাকে জন ব্যাসের জায়গায় দায়িত্ব পালন করতে বলেছে। অচিরেই তাকে নিয়োগ দেওয়া হবে।
লিসা কেন্না বাইডেনের সময় পেরুতে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত হিসেবে কাজ করেছেন। এছাড়াও সর্বশেষ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বুরো অব ইনটেলিজেন্স অ্যান্ড রিসার্চে প্রধান ডেপুটি অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি হিসেবে কাজ করেছেন।
ইয়েমেনে যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ দূত হিসেবে কাজ করা টিম লেন্ডারকিংকে নিয়ার ইস্ট অ্যাফেয়ার্স ব্যুরোর দায়িত্ব দেওয়া হবে। পাশাপাশি তিনি মধ্যপ্রাচ্যের জন্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অন্তর্বর্তীকালীন শীর্ষ কর্মকর্তা হিসেবে কাজ করবেন।