অর্থমন্ত্রী হিসাবে আরেক ধনকুবেরকে বেছে নিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। নাম তার স্কট বেসেন্ট।
যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বিলিওনেয়ার স্কট বেসেন্টকে তার নতুন প্রশাসনের অর্থমন্ত্রী হিসাবে মনোনীত করেছেন।
বিনিয়োগকারী বেসেন্ট দায়িত্ব নিলে তিনি হবেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম সমকামী অর্থমন্ত্রী।
দ্বিতীয়বার প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর ট্রাম্প কাদের কাদের মন্ত্রী করবেন, তা প্রায় গুছিয়ে এনেছেন। এরমধ্যেই শুক্রবার অর্থমন্ত্রী হিসাবে বেসেন্টের নাম ঘোষণা করেন।
বিবৃতিতে ট্রাম্প বলেন, “স্কট দীর্ঘদিন ধরে আমেরিকা ফার্স্ট এজেন্ডার একজন শক্তিশালী সমর্থক। আমাদের মহান দেশের ২৫০তম বার্ষিকীর প্রাক্কালে তিনি আমাকে যুক্তরাষ্ট্রের জন্য একটি নতুন স্বর্ণযুগের সূচনা করতে সাহায্য করবেন।
“যাতে আমরা বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় অর্থনীতি, উদ্ভাবন এবং উদ্যোক্তাবাদের কেন্দ্র, পুঁজির গন্তব্য হিসাবে আমাদের অবস্থান সুরক্ষিত এবং প্রশ্ন ছাড়াই ডলারকে বিশ্বের রিজার্ভ মুদ্রা হিসাবে বজায় রাখতে পারি।”
আগামী ২০ জানুয়ারি দায়িত্ব নিতে যাওয়া ট্রাম্প বলেন, “যুক্তরাষ্ট্রের পরবর্তী এবং সর্বশ্রেষ্ঠ অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে যেন কোনও আমেরিকান পিছিয়ে না থাকে, আমরা তা নিশ্চিত করব, যেটা অতীতের প্রশাসনগুলোর সময় হয়নি।
“স্কট আমার জন্য এবং যুক্তরাষ্ট্রের মহান জনগণের জন্য সেই প্রচেষ্টায় নেতৃত্ব দেবেন।”
সিএনএন জানিয়েছে, ৬২ বছর বয়সী বেসেন্ট নির্বাচনী প্রচারের সময় ট্রাম্পকে অর্থনৈতিক নীতি নিয়ে পরামর্শ দিতেন।
‘কি স্কয়ার ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্ট’ নামের হেজ ফান্ডের প্রতিষ্ঠাতা বেসেন্ট তার আগে ‘সোরোস ফান্ড ম্যানেজমেন্ট’র প্রধান বিনিয়োগ কর্মকর্তা পদে কাজ করেছেন। এই হেজ ফান্ডটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন ডেমোক্রেটিক পার্টির বড় ডোনারদের একজন জর্জ সোরোস।
সোরোস ফান্ডে বেসেন্ট একাধিক সফল উদ্যোগ নিয়েছিলেন, যার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটি লাখ লাখ ডলার মুনাফা করে। এসব উদ্যোগের মধ্যে ব্রিটিশ পাউন্ড ও জাপানি ইয়েনের বিপক্ষে বাজি ধরার মতো উদ্যোগও ছিল।
শুক্রবার নিজের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ট্রুথ সোশালে এক পোস্টে ট্রাম্প লিখেছেন, “বিশ্বের অন্যতম খ্যাতনামা আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারী এবং ভূরাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক কৌশলবিদ হিসাবে স্কটকে ব্যাপক সম্মান করা হয়।”
নির্বাচনী প্রচারের সময় বেসেন্ট বলেছিলেন, “ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের জন্য একটি নতুন স্বর্ণযুগের সূচনা করতে যাচ্ছেন। তা হবে নিয়ন্ত্রণমুক্ত, কম দামের জ্বালানির এবং নিম্ন কর হারের যুগ।”
অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের (এপি) প্রতিবেদন অনুযায়ী, বেসেন্ট হবেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম প্রকাশ্য সমকামী অর্থমন্ত্রী। পাশাপাশি রিপাবলিকান প্রশাসনের জন্য পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ সেনেটের অনুমোদনপ্রাপ্ত প্রথম এলজিবিটিকিউ সদস্য।
২০২১ সালে বাইডেন প্রশাসনের পরিবহনমন্ত্রী পিট বাটিজিগ ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম প্রকাশ্য সমকামী মন্ত্রী, সেনেট যার নিয়োগে অনুমোদন দিয়েছিল।
গত ৫ নভেম্বর অনুষ্ঠিত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ট্রাম্পের বিজয়ের পর থেকে যুক্তরাষ্ট্রের মুদ্রা ডলারের দাম বেড়ে চলতি বছরের সর্বোচ্চ স্তরে পৌঁছেছে।
বেসেন্ট বলছেন, ডলারের এই মূল্য বৃদ্ধি যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক নেতৃত্বে এবং ডলারের বিশ্ব মুদ্রা হিসেবে আস্থার একটি সংকেত।
গত ১০ নভেম্বর, দ্য ওয়াল স্ট্রিট জার্নালে প্রকাশিত একটি নিবন্ধে তিনি এই মন্তব্য করেন।
বেসেন্ট আরও বলেন, আর্থিক বাজারেও অনুরূপ উত্থান ঘটেছে। এই উত্থান থেকে ইঙ্গিত মিলছে যে, বিনিয়োগকারীরা ট্রাম্পের এজেন্ডা থেকে মূল্যস্ফীতিহীন প্রবৃদ্ধির আশা করছেন, যা ব্যক্তিগত বিনিয়োগ বাড়াবে।
তিনি ট্রাম্পকে নীতি নির্ধারণে সরকারি বিধি-নিষেধ এবং কর কমানো ছাড়াও ‘ঋণের বোঝা লাঘব করার’ পরামর্শ দেন। যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি ঋণের বোঝা বাড়ার জন্য তিনি গত চার বছরের ডেমোক্রেট শাসনকে দায়ী করেন।
তবে, প্রবন্ধে বেসেন্ট শুল্ক সম্পর্কিত কোনও আলোচনা করেননি। ট্রাম্প চীন থেকে আমদানি হওয়া পণ্যের ওপর ৬০ শতাংশ শুল্ক আরোপের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, পাশাপাশি অন্যান্য দেশ থেকে আমদানি হওয়া পণ্যের ওপর ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপের কথা বলেন।
সম্প্রতি ফিন্যান্সিয়াল টাইমস এবং সিএনবিসি-র সঙ্গে সাক্ষাৎকারে বেসেন্ট এমন শুল্ক প্রয়োগের ক্ষেত্রে একটি ধীরগতির পন্থা গ্রহণের পক্ষে সমর্থন জানান, যাতে সম্ভাব্য মুদ্রাস্ফীতির ঝুঁকি মোকাবেলা করা যায়, যা এসব শুল্ক আরোপের ফলস্বরূপ উদ্ভূত হতে পারে।