যুক্তরাষ্ট্রের মসনদে কে বসতে যাচ্ছেন, কমলা হ্যারিস নাকি ডোনাল্ড ট্রাম্প-এনিয়ে বিভক্ত প্রবাসী বাংলাদেশিরা। একাংশ মনে করছেন, ট্রাম্পই ফের প্রেসিডেন্ট হবেন, তো অন্য পক্ষ মনে করছেন, এবার যুক্তরাষ্ট্রের স্টিয়ারিং হুইলে হাত থাকবে কমলার।
আবার প্রবাসী বাংলাদেশিদের মধ্যে এমনও অনেকে আছেন, যারা দুজনের কাউকেই ক্ষমতায় দেখতে চান না। রিপাবলিকান পার্টির আগের শাসনামল আর ডেমোক্রেটিক পার্টির চলমান শাসন দেখতে দেখতে তারা ত্যক্ত-বিরক্ত। এই দুই দলের কেউই যুক্তরাষ্ট্রের সাধারণ জনগণ তথা বিশ্বের জন্য ইতিবাচক শক্তি বলে মনে করছেন না তারা।
তাই কমলা-ট্রাম্পের বাইরে নির্বাচনে দাঁড়ানো বাকি চার প্রার্থীকে ভোট দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তারা। এই চারজনের মধ্যে আছেন লিবেরটেরিয়ান পার্টির প্রার্থী চেইস অলিভার, কমিউনিস্ট দল পার্টি ফর সোশ্যালিজম অ্যান্ড লিবারেশনের প্রার্থী ক্লদিয়া দে লা ক্রু, গ্রিন পার্টি অব দ্য ইউনাইটেড স্টেটসের প্রার্থী জিল স্টাইন ও স্বতন্ত্র প্রার্থী করনেল ওয়েস্ট।
অনেক দিন ধরে যুক্তরাষ্ট্রে আছেন নাদিম মাহমুদ। তিনি ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া সান ডিয়াগোর নিউরোসায়েন্স বিভাগের গবেষক। তার মতে, প্রেসিডেন্ট রিপাবলিকান হোন বা ডেমোক্রেট, তাতে কিছু যায় আসে না। কারণ দু’দলের মধ্যে মৌলিক কিছু বিষয়ে অবস্থান একই।
নাদিম মাহমুদ বলেন, “ট্রাম্পকে প্রবাসী বাংলাদেশিরা চায় না। কারণ তিনি অভিবাসীদের ঘোরতরবিরোধী। নির্বাচিত হলে অভিবাসন নীতি কঠোর করবেন, এমন কথা তিনি সম্প্রতি বলেছেন। ট্রাম্পের ক্ষমতায় প্রত্যাবর্তন অনেকের জন্য স্বস্তির হলেও প্রবাসীদের জন্য দুশ্চিন্তার।”
কমলা হ্যারিস সম্পর্কে তিনি বলেন, “খুব অল্প সময়ের মধ্যে তিনি শক্তিশালী ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন। এখন দেখার বিষয়, আমেরিকানরা চিন্তার প্রতিবন্ধকতা ডিঙিয়ে একজন নারীকে প্রেসিডেন্ট পদে বসাবে কি না।”
২০১৬ সালে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ট্রাম্পের কাছে হিলারি ক্লিনটনের হেরে যাওয়ার প্রসঙ্গ টেনে নাদিম মাহমুদ বলেন, “নারী নেতৃত্বকে এখনও আমেরিকানরা সেভাবে গ্রহণ করতে পারেনি।
“এখানকার বড় বড় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে অফিস-আদালতে শীর্ষ পর্যায়ে নারীর নেতৃত্ব পুরুষের থেকে পিছিয়ে। দীর্ঘদিনের লালিত মানসিকতা থেকে আমেরিকানরা এবার কতটুকু নিজেদের বের করে আনতে পারবে, তা ৫ নভেম্বর স্পষ্ট হবে।”
তবে ডেমোক্রেটিক প্রার্থী নির্বাচিত হলে প্রবাসী বাংলাদেশিরা খুশি হবে বলে জানান এই গবেষক। কারণ, এমনটা হলে ধর্মীয় বিদ্বেষ থেকে তারা রেহাই পাবে। আবাসন সুবিধাও ভোগ করবে। তাছাড়া যুক্তরাষ্ট্রে তাদের স্থায়ী নাগরিকত্ব অনুমোদন সহজ হবে।
এদিকে, ডেমোক্রেট প্রার্থী কমলা হ্যারিসের প্রতি ডিপ স্টেটের (সামরিক বাহিনীর সদস্য, গোয়েন্দা সংস্থা, আমলা, কূটনীতিক, প্রভাবশালী ব্যবসায়ী) সমর্থন আছে বলে মনে করেন ইউনিভার্সিটি অব কলোরাডো বোল্ডারের পিএইচডি শিক্ষার্থী মুশফিক ওয়াদুদ।
তিনি বলেন, “কমলা হ্যারিসের প্রতি ডিপ স্টেটের সমর্থন আছে। এটি একটি বড় ফ্যাক্টর। তবে এটাও ঠিক, গাজায় ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধের কারণে অনেক মুসলিম ভোটার ডেমোক্রেটদের বিপক্ষে চলে গেছে। তারা যে আবার কমলাকে বাদ দিয়ে ট্রাম্পকে ভোট দেবে, তাও না। মুসলিমদের মধ্যে অনেকে এবার হয়তো ভোটকেন্দ্রেই যাবে না।”
কমলার নারী নেতৃত্বকে যুক্তরাষ্ট্রের মানুষ মেনে নেবে কি না, এ সংক্রান্ত প্রশ্নে আরেক গবেষক ওমর শেহাব বলেন, “আমাদের এখানে প্রবাসী বাংলাদেশিরা মূলত ডেমোক্রেটিক পার্টির সমর্থক। বারাক ওবামাকে ৯৬ শতাংশ, হিলারি ক্লিনটনকে ৯০ শতাংশ আর বাইডেনকে ৯১ শতাংশ প্রবাসী বাংলাদেশি ভোট দিয়েছিল। ধরে নিচ্ছি, এবারও তার ব্যতিক্রম ঘটবে না।”
তিনি বলেন, “এ মাসে করা ইউগভ জরিপে জানা গেছে, ৫৭ শতাংশ আমেরিকানের নারী রাষ্ট্রপতিতে কোনও আপত্তি নেই। তবে ২৩ শতাংশের সরাসরি আপত্তি আছে। আশা করি, এই ২৩ শতাংশের আপত্তি নির্বাচনের ফলে প্রভাব ফেলবে না।”
যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচন নিয়ে কথা হয় শামীমা ইয়াসমিনের সঙ্গে। ফ্লোরিডার এই বাসিন্দা সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “আমেরিকার দরিদ্র শ্রেণির মানুষ ট্রাম্পকে চায়। কারণ নির্বাচিত হলে তিনি তাদের জন্য কিছু করবেন বলে প্রচারণায় অঙ্গীকার করেছেন। যদিও আগের দুই নির্বাচনের প্রচারণার সময় একই প্রতিশ্রুতি দিয়ে তা রাখেননি তিনি।”
যুক্তরাষ্ট্রের এবারের নির্বাচনে ফিলিস্তিনের গাজায় এক বছরের বেশি সময় ধরে চলমান ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধ গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলবে বলে মনে করছেন শামীমাও। এই যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলকে কেবল সমর্থনই জোগাচ্ছে না, মারণাস্ত্র সরবরাহও অব্যাহত রেখেছে।
শামীমা বলেন, “যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও তার ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসের প্রতি আমেরিকার মুসলিমসহ অন্য দেশের মুসলিমরা নাখোশ। ফিলিস্তিন ইস্যুতে ডেমোক্রেটদের প্রতি তাদের ঘৃণাই কাজ করছে। সেই সঙ্গে ট্রাম্পের মুসলিমবিদ্বেষও তাদের মনে আছে।”
তাই নভেম্বরের ৫ তারিখে ডেমোক্রেটিক বা রিপাবলিকান প্রার্থীর কাউকেই ভোট দেবেন না বলে জানালেন শামীমা।
তিনি বলেন, “ট্রাম্প-হ্যারিস এই দুজনের কাউকেই ভোট দেব না। তবে অনেকেই দুজনের মধ্যে যিনি কম খারাপ, তাকে বেছে নেবেন।
“ট্রাম্প একজন ব্যবসায়ী, রাজনীতিক নন। অন্যদিকে কমলা ইসরায়েলপন্থী। এদের দিয়ে আমাদের কোনও উপকার হবে না। কমলা গত চার বছর ধরে ক্ষমতায় থেকে কিছু করেননি। বলা ভালো, করার চেষ্টাই করেননি। আগামী দিনে করবেন, সেই আস্থা কমলার ওপর আমার নেই।”
৫ নভেম্বর ট্রাম্প-কমলার বাইরে অন্য প্রার্থীকে ভোট দেবেন বলে জানান শামীমা। তবে কাকে ভোট দেবেন, তা নিয়ে খোলাসা করেননি।