যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গত সপ্তাহে যখন প্যারিসে পুনর্নির্মিত নটর-ডেম ক্যাথেড্রালের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশ্বনেতাদের সঙ্গে বসেছিলেন, ঠিক সেই সময়েই সিরিয়ার সশস্ত্র ইসলামপন্থী যোদ্ধারা আসাদ সরকারের পতন নিশ্চিত করতে জিপে চেপে দামেস্কের দিকে যাচ্ছিল।
ওই মুহূর্তে ফরাসি প্রেসিডেন্ট দম্পতির পাশে বসে থাকলেও ট্রাম্প বিভিন্ন ডিসপ্লেতে প্রচারিত হতে থাকা মধ্যপ্রাচ্যের এই চমকপ্রদ ঘটনাপ্রবাহের ওপর ঠিকই নজর রাখছিলেন।
পরে সেদিনই তিনি নিজের সোশাল নেটওয়ার্ক ‘ট্রুথ সোশাল’-এ দেওয়া এক পোস্টে লেখেন, “সিরিয়া একটি গোলমালপূর্ণ জায়গা, কিন্তু এটি আমাদের বন্ধু নয়।”
তিনি আরও লেখেন, “আমেরিকার এই ঘটনার সঙ্গে কোনও সম্পর্ক থাকা উচিৎ নয়। এটা আমাদের লড়াই নয়। যা ঘটার ঘটুক। এতে জড়ানো যাবে না।”
এই পোস্ট এবং পরের দিন দেওয়া তার আরেকটি পোস্ট ভিনদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করার বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্টের জোরালো অবস্থানই ফুটে ওঠে।
তবে প্রশ্ন উঠেছে, প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের পতন এবং সিরিয়ার যুদ্ধ যেভাবে আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক শক্তিগুলোর ওপর প্রভাব ফেলেছে, তাতে ট্রাম্পের নতুন প্রশাসন কি সত্যিই সিরিয়া থেকে দূরে থাকতে পারবে?
ট্রাম্প কি সিরিয়া থেকে সেনা প্রত্যাহার করবেন
ট্রাম্পের নীতি কি বর্তমান প্রেসিডেন্ট বাইডেনের নীতি থেকে পুরোপুরি ভিন্ন? যদি তাই হয়, তাহলে ট্রাম্পের দায়িত্ব গ্রহণের পাঁচ সপ্তাহ আগে হোয়াইট হাউস কি কোনও পদক্ষেপ নেবে? নিলেও সেটা কতটা ফলপ্রসূ হবে? উঠছে এমন নানা প্রশ্ন।
বাইডেন প্রশাসন আসাদের পতন এবং সিরিয়ার ইসলামি সশস্ত্র গোষ্ঠী হায়াত তাহরির আল-শামের (এইচটিএস) ক্ষমতা দখলের প্রতিক্রিয়ায় কূটনৈতিক তৎপরতা শুরু করেছে। এইচটিএসকে যুক্তরাষ্ট্র সন্ত্রাসী সংগঠন হিসাবে বিবেচনা করে।
বিবিসি নিউজের যুক্তরাষ্ট্র পররাষ্ট্র দপ্তর সংবাদদাতা টম বেইটম্যান জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন এখন জর্ডান ও তুরস্কের মধ্যে দৌড়ঝাঁপ করছেন। তার উদ্দেশ্য- মধ্যপ্রাচ্য অঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ আরব ও মুসলিম দেশগুলোকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবিত শর্তাবলী মেনে নিতে রাজি করানো।
যুক্তরাষ্ট্রের শর্তগুলো হলো:
- সিরিয়ার ভবিষ্যৎ সরকারকে স্বচ্ছ এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক হতে হবে।
- দেশটি সন্ত্রাসবাদের আখড়া হতে পারবে না।
- প্রতিবেশীদের জন্য হুমকি সৃষ্টি করতে পারবে না।
- সকল রাসায়নিক এবং জীবাণু অস্ত্রের মজুদ ধ্বংস করতে হবে।
মাইক ওয়াল্টজের পররাষ্ট্রনীতি সম্পর্কিত বক্তব্য
ট্রাম্পের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা হিসাবে মনোনীত মাইক ওয়াল্টজ বলেছেন, তার পররাষ্ট্রনীতির একটি মূলনীতি রয়েছে। যদিও মাইক এখনও তার পদের জন্য সিনেটের অনুমোদন পাননি।
মাইক গত সপ্তাহে ফক্স নিউজকে বলেন, “প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প জনগণের বিপুল সমর্থন নিয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তার অন্যতম প্রতিশ্রুতি ছিল যুক্তরাষ্ট্রকে মধ্যপ্রাচ্যের নতুন কোনও যুদ্ধে জড়ানো থেকে বিরত রাখা।”
মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান চিন্তার বিষয় হিসাবে মাইক ইসলামিক স্টেট (আইএস), ইসরায়েল ও উপসাগরীয় আরব মিত্রদের কথা উল্লেখ করেন।
ট্রাম্প সিরিয়াকে মধ্যপ্রাচ্যে তার বৃহত্তর আঞ্চলিক নীতিগত কৌশলের একটি ছোট অংশ হিসাবে দেখেন। মাইক ওয়াল্টজের মন্তব্যেও সেটারই বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে।
মধ্যপ্রাচ্যে ট্রাম্পের লক্ষ্য হলো:
- আইএস-এর অবশিষ্টাংশ নিয়ন্ত্রণে রাখা।
- সিরিয়ার ভবিষ্যৎ সরকার যেন যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ আঞ্চলিক মিত্র ইসরায়েলের জন্য হুমকি না হয়, তা নিশ্চিত করা।
- ইসরায়েল ও সৌদি আরবের মধ্যে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার জন্য একটি ঐতিহাসিক কূটনৈতিক ও বাণিজ্য চুক্তি করা।
এই চুক্তিকে ট্রাম্প মধ্যপ্রাচ্যের জন্য বৃহত্তম পুরস্কার হিসাবে দেখেন। ট্রাম্পের বিশ্বাস, এর মধ্য দিয়ে ইরানকে আরও দুর্বল এবং অপমান করা যাবে।
ট্রাম্পের সিরিয়া সম্পর্কিত দৃষ্টিভঙ্গি
আগামী ২০ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নিতে যাওয়া ডোনাল্ড ট্রাম্প মনে করেন, সিরিয়ার বাকি সমস্যা তাদের নিজেদেরই সমাধান করতে হবে।
ট্রাম্প তার প্রথম মেয়াদে সিরিয়া নিয়ে যেভাবে কথা বলেছিলেন, তার সঙ্গেও তার বর্তমান মন্তব্যের মিল রয়েছে। তিনি তখন সিরিয়াকে ‘বালু আর মৃত্যু’র দেশ বলে উপহাস করেছিলেন, যদিও দেশটির হাজার বছরের প্রাচীন সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য রয়েছে।
বারাক ওবামার অধীনে ২০১১-১৪ সালে সিরিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছিরেন রবার্ট ফোর্ড। তিনি বলেন, “ট্রাম্প তার ক্ষমতার প্রথম মেয়াদে নিজে থেকে সিরিয়ায় খুব কমই জড়াতে চেয়েছিলেন।”
রবার্ট সিরিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের আরও হস্তক্ষেপ এবং আসাদ সরকারের নিষ্ঠুর দমন নীতির বিরুদ্ধে সিরিয়ার মধ্যপন্থী বিরোধী গোষ্ঠীগুলোকে সমর্থন দেওয়ার পক্ষে ছিলেন।
রবার্ট বিবিসিকে বলেন, “তবে ট্রাম্পের আশেপাশে এমন ব্যক্তিরাও আছেন, যারা সন্ত্রাসবাদ প্রতিরোধে অনেক বেশি উদ্বিগ্ন।”
সিরিয়ায় বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় ৯০০ সেনা মোতায়েন রয়েছে। তারা ইউফ্রেটিস নদীর পূর্বে এবং ইরাক ও জর্ডান সীমান্তে ৫৫ কিলোমিটারের একটি ‘সংঘাতমুক্ত’ অঞ্চলে অবস্থান করছে।
মার্কিন সেনাদের দায়িত্ব এবং ট্রাম্প প্রশাসনের ভবিষ্যৎ
যুক্তরাষ্ট্রের ওই সেনাদের আনুষ্ঠানিক দায়িত্ব হলো ইসলামিক স্টেট (আইএস) গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করা। বর্তমানে আইএস অনেক দুর্বল হয়ে গেছে এবং মরুভূমির ক্যাম্পগুলোতে আটকা পড়েছে।
এ ছাড়াও যুক্তরাষ্ট্রের সেনারা কুর্দি ও আরব বিদ্রোহীদের সমন্বয়ে গঠিত সিরিয়ান ডেমোক্রেটিক ফোর্সেস (এসডিএফ)-কে সামরিক প্রশিক্ষণ ও সরঞ্জাম সরবরাহ করে।
এসডিএফও আইএস যোদ্ধা এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের আটকে রাখা ক্যাম্পগুলোর ওপর নজরদারির দায়িত্ব পালন করে।
বাস্তবে যুক্তরাষ্ট্রের সেনাদের ভূমিকা এর চেয়েও বড়। তারা সিরিয়ার মাটি ব্যবহার করে ইরানের অস্ত্র সরবরাহের সম্ভাব্য রুট বন্ধ রাখতেও কাজ করছে। ইরান এই রুটটি ব্যবহার করে তার মিত্র লেবাননের শিয়া সংগঠন হিজবুল্লাহকে অস্ত্র সরবরাহ করে।
অন্যান্য বিশ্লেষকদের মতো রবার্ট ফোর্ডও বিশ্বাস করেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ট্রাম্পের বিচ্ছিন্নতাবাদী দৃষ্টিভঙ্গি জনপ্রিয় হলেও মাঠের বাস্তবতা ভিন্ন। এ ছাড়া তার প্রশাসনের সদস্যদের মতামতও ট্রাম্পের নীতিকে আরও মধ্যপন্থী করে তুলতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের সিরিয়া বিষয়ক সাবেক উপদেষ্টা ওয়ায়েল আলজায়াতও এই দৃষ্টিভঙ্গি সমর্থন করেন।
তিনি বিবিসিকে বলেন, “ট্রাম্প তার প্রশাসনে মধ্যপ্রাচ্য নীতি পরিচালনার জন্য দক্ষ ব্যক্তিদের নিয়োগ করছেন।” বিশেষ করে পররাষ্ট্র মন্ত্রী পদে মনোনীত সিনেটর মার্কো রুবিওর বিষয়ে ওয়ায়েল বলেন, “তিনি একজন অভিজ্ঞ পররাষ্ট্রনীতি বিশেষজ্ঞ।”
ট্রাম্পের বিচ্ছিন্নতাবাদী আদর্শ বনাম আঞ্চলিক লক্ষ্য
ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদেও পররাষ্ট্রনীতিতে তার বিচ্ছিন্নতাবাদী আদর্শ এবং যুক্তরাষ্ট্রের আঞ্চলিক লক্ষ্যগুলোর মধ্যে বিরোধ তৈরি হয়েছিল। ২০১৯ সালে তিনি উত্তর সিরিয়া থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনী প্রত্যাহারের নির্দেশ দেন এবং সিআইএ-র মাধ্যমে কিছু ‘মধ্যপন্থী’ বিদ্রোহীদের দেওয়া অর্থ সহাজ্যও বন্ধ করে দেন।
ওই সময় ওয়াল্টজ এই সিদ্ধান্তকে ‘কৌশলগত ভুল’ বলে অভিহিত করেন। আইএসের পুনরুত্থানের আশঙ্কায় ট্রাম্পের কর্মকর্তারাও পরে তার এই সিদ্ধান্ত আংশিকভাবে পরিবর্তন করেন।
২০১৭ সালেও ট্রাম্প তার অ-হস্তক্ষেপ নীতির বিপরীতে কাজ করেন, যখন সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট আসাদ বেসামরিক নাগরিকদের ওপর রাসায়নিক হামলা চালানোর আদেশ দেন। ওই হামলার পর ট্রাম্প একটি সিরিয়ান বিমান ঘাঁটিতে ৫৯টি ক্রুজ মিসাইল নিক্ষেপের আদেশ দেন।
ট্রাম্প সিরিয়ার রাষ্ট্রীয় নেতৃত্বের ওপর থাকা নিষেধাজ্ঞাও দ্বিগুন কঠোর করেন।
ট্রাম্পের ‘এটি আমাদের লড়াই নয়’ নীতির অস্পষ্টতা সম্পর্কে ওয়াল্টজ বলেন, “এর অর্থ এই নয় যে, তিনি প্রয়োজন হলেও হস্তক্ষেপ করবেন না।”
ওয়াল্টজ আরও বলেন, “আমেরিকার নিরাপত্তা যদি কোনোভাবে হুমকির মুখে পড়ে, তাহলে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তা মোকাবেলায় দ্রুত এবং কঠোর পদক্ষেপ নিতে দ্বিধা করবেন না।”
আরও অনেকেই এই মিশন শেষ করতে চান
ট্রাম্প তার জাতীয় গোয়েন্দা পরিচালক হিসাবে তুলসি গ্যাবার্ডকে মনোনীত করেছেন, যিনি একজন বিতর্কিত রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। গ্যাবার্ড একসময় ডেমোক্রেট রাজনীতিবিদ ছিলেন এবং ২০১৭ সালে সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট আসাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছিলেন। ওই সময় তিনি ‘বাস্তব তথ্য অনুসন্ধানের’ অংশ হিসাবে সিরিয়া সফর করেছিলেন এবং ট্রাম্পের নীতিরও সমালোচনা করেন।
গ্যাবার্ডের মনোনয়ন সিনেটের সদস্যদের কঠোর পর্যবেক্ষণের মুখে পড়তে পারে। তার বিরুদ্ধে আসাদ ও রাশিয়ার প্রতি পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ রয়েছে। যদিও তিনি তা অস্বীকার করেছেন।
সিরিয়ায় চলমান মিশন নিয়ে উদ্বেগ কেবল ট্রাম্পের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। অন্যদের মধ্যেও এই মিশন শেষ করার ইচ্ছা রয়েছে।
এ বছরের জানুয়ারিতে জর্ডানের একটি সেনা ঘাঁটিতে ইরান-সমর্থিত মিলিশিয়াদের ড্রোন হামলায় তিনজন আমেরিকান সেনা নিহত হন। সিরিয়া ও ইরাক থেকে পরিচালিত ওই মিলিশিয়ারা হামাস-ইসরায়েল যুদ্ধের উত্তেজনা মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি সৃষ্টি করেছিল।
এই হামলা এবং আরও কিছু ঘটনা বাইডেন প্রশাসনের কাছে সিরিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের সেনাদের উপস্থিতির মাত্রা এবং তাদের ঝুঁকি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।
বাইডেন ও ট্রাম্প প্রশাসনের সিরিয়া নীতি: সাদৃশ্য ও ভিন্নতা
প্রকৃতপক্ষে বিদায়ী বাইডেন প্রশাসন ও আসন্ন ট্রাম্প প্রশাসনের সিরিয়া নীতিতে ভিন্নতার চেয়ে মিলই বেশি।
ভাষার ধরন ও বক্তৃতার মধ্যে পার্থক্য সত্ত্বেও দুই নেতাই চান সিরিয়ার রাজধানী দামেস্ক এমন একটি সরকারের অধীনে থাকুক, যা যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থবান্ধব।
বাইডেন ও ট্রাম্প উভয়ই সিরিয়ায় ইরান ও রাশিয়ার পরাজয়ের ওপর ভিত্তি করে তাদের লক্ষ্য সামনে এগিয়ে নিতে চান।
ট্রাম্পের বক্তব্য, “এটি আমাদের লড়াই নয়। যা ঘটার ঘটুক। এতে জড়ানো যাবে না”, অনেকটা বাইডেন প্রশাসনের এই বক্তব্যের মতোই— “এটি এমন একটি প্রক্রিয়া, যা সিরীয়দের নেতৃত্বেই চলা উচিৎ, যুক্তরাষ্ট্রের নয়।”
তবে সবচেয়ে বড় পার্থক্যটি হলো সিরিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনী এবং সিরিয়ান ডেমোক্রেটিক ফোর্সেস (এসডিএফ)-এর প্রতি সমর্থন নিয়ে ট্রাম্পের দৃষ্টিভঙ্গি। এটিকে বাইডেন প্রশাসনের সমর্থকদের মধ্যে উদ্বেগের প্রধান কারণ বলে মনে করেন সাবেক সিরীয় কূটনীতিক এবং ওয়াশিংটনে অবস্থানরত আসাদ-বিরোধী নেতা বাসাম বারাবান্দিও।
বাসাম বারাবান্দি বলেন, “বাইডেন কুর্দিদের প্রতি বেশি সহানুভূতি, সংযোগ এবং আবেগ অনুভব করেন। কারণ ঐতিহাসিকভাবে তিনি ছিলেন প্রথম সেনেটরদের একজন যারা সাদ্দাম হোসেনের কুয়েত আক্রমণের পর উত্তর ইরাকের কুর্দি অঞ্চলে গিয়েছিলেন।
“কিন্তু ট্রাম্প এবং তার লোকেরা এ ব্যাপারে অতোটা পরোয়া করেন না। তারাও যুক্তরাষ্ট্রের মিত্রদের একা ফেলে না আসার ব্যাপারে সতর্ক থাকে। তবে তাদের বাস্তবায়নের পদ্ধতি আলাদা।”
বাসাম ট্রাম্পের ভিনদেশে হস্তক্ষেপ-বিরোধী নীতির সমর্থক। তিনি মনে করেন, ট্রাম্প সিরিয়া থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সেনাদের প্রত্যাহার করবেন। তবে তা ধীরে ধীরে এবং স্পষ্ট পরিকল্পনার মাধ্যমে হবে।
তিনি বলেন, “এটা আফগানিস্তানের মতো ২৪ ঘণ্টার মধ্যে হবে না। ট্রাম্প এর জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়ে অন্তত ছয় মাসের একটি সময়সীমা বেধে দেবেন।”
আর এই বিষয়ে ট্রাম্প হয়তো তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রেসেপ তায়িপ এরদোয়ানের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেবেন। এরদোয়ানের সঙ্গে ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক আছে বলে মনে করা হয়।
তুরস্কের সঙ্গে উত্তেজনা
এসডিএফের প্রতি সমর্থনের কারণে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তুরস্কের দীর্ঘদিন ধরে উত্তেজনা বিরাজ করছে। কারণ তুরস্ক এসডিএফ জোটের অংশ পিপলস ডিফেন্স ইউনিটস (ওয়াইপিজে)-কে একটি সন্ত্রাসী সংগঠন হিসাবে দেখে। কুর্দিদের সংগঠন ওয়াইপিজে এসডিএফ-এর সামরিক মেরুদণ্ড।
আসাদের পতনের পর কৌশলগত এলাকা থেকে কুর্দি যোদ্ধাদের তাড়িয়ে দিতে তুরস্ক বিমান হামলা চালাচ্ছে, যার মধ্যে মানবিজ শহরও রয়েছে।
ট্রাম্প তার বন্ধু এরদোয়ানের সঙ্গে একটি সমঝোতা চুক্তির মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের সেনাদের সিরিয়া সরিয়ে আনতে পারেন। এতে তুরস্কের প্রভাব আরও বাড়তে পারে।
তবে তুরস্ক-সমর্থিত গোষ্ঠীগুলোর কিছু এলাকা দখল করে নেওয়ার সম্ভাবনায় অনেকেই উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তাদের একজন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের সাবেক সিরিয়া বিশেষজ্ঞ ওয়ায়েল আলজায়াত।
তিনি বলেন, “আপনি একটি দেশের ভেতরে বিভিন্ন গোষ্ঠীকে বিভিন্ন অংশ চালাতে দিতে পারেন না এবং বিভিন্ন সম্পদ নিয়ন্ত্রণ করতে দিতে পারেন না।
“আমি মনে করি, রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই এর সমাধান হতে হবে। আর যুক্তরাষ্ট্রকে সেই প্রক্রিয়ায় একটি সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে হবে। আর নয়তো পরিস্থিতি আরও খারাপ রুপ ধারণ করতে পারে। আমি আশা করি, যুক্তরাষ্ট্র সেই খারাপ পরিণতি এড়ানোর চেষ্টা করবে।”