যুক্তরাষ্ট্রে গত নভেম্বরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে দ্বিতীয়বারের মতো জয়ী হয়ে কানাডার পণ্যের ওপর অতিরিক্ত শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প।
তিনি বলেছিলেন, কানাডা ও মেক্সিকো সীমান্ত দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে মাদক ও অবৈধ অভিবাসী আসা বন্ধ না হলে এই দুই দেশের সব পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক বসানো হবে।
প্রেসিডেন্ট হিসেবে ২০ জানুয়ারি শপথ নেওয়ার পর প্রথম যেকটি নির্বাহী আদেশ তিনি দেবেন, তার মধ্যে এই অতিরিক্ত শুল্ক বসানোর আদেশ থাকবে বলেও জানান ট্রাম্প।
একই সঙ্গে কানাডাকে যুক্তরাষ্ট্রের ৫১তম অঙ্গরাজ্য করার কথাও ট্রাম্প জোর দিয়ে বলেছিলেন। কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোকে তিনি দেশটির ‘গর্ভনর’ হিসেবেও অভিহিত করেন।
ট্রাম্পের এসব হুমকি শুনে গত নভেম্বরের শেষের দিকে ফ্লোরিডায় ছুটে যান ট্রুডো। সেখানে ট্রাম্পের মার-এ-লাগো ক্লাবে তারা নৈশভোজে একত্র হন। সঙ্গে ছিলেন কানাডার জননিরাপত্তামন্ত্রী ডমিনিক লেব্লাঙ্ক।
লেব্লাঙ্ক পরে সাংবাদিকদের জানান, কানাডার পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক বসানোর কথা ট্রাম্প মজা করে বলেছিলেন। শুধু তাই নয়, কানাডাকে যুক্তরাষ্ট্রের ৫১তম অঙ্গরাজ্য করার কথাও তিনি ঠাট্টাচ্ছলে বলেন।
জননিরাপত্তামন্ত্রী লেব্লাঙ্কের মন্তব্যে সেসময় স্বস্তি পেয়েছিলেন কানাডার রাজনীতিক থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ।
তবে বেশিদিন তা স্থায়ী হলো না। কারণ মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্প আবারও কানাডাকে যুক্তরাষ্ট্রের অঙ্গরাজ্য করার ইচ্ছার কথা জানালেন।
এদিন কানাডাকে যুক্তরাষ্ট্রের অংশ করার বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে ট্রাম্প নির্দ্বিধায় বলেন, “যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার মধ্যে যে লাইন কৃত্রিমভাবে আঁকা হয়েছে, তা তুলে দিলে কেমন হয়? জাতীয় নিরাপত্তার জন্যও এই লাইন না থাকাই ভালো।
“আমাদের ভুললে চলবে না, কানাডাকে মূলত আমরাই রক্ষা করছি। কানাডিয়ানদের আমি ভালোবাসি। সেখানে অনেক বন্ধু আছে। তারা মানুষ ভালো। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, তাদের রক্ষা করতে গিয়ে আমাদের প্রতি বছর শত শত কোটি ডলার খরচ করতে হচ্ছে। বাণিজ্য ঘাটতি আমাদের ক্ষতিগ্রস্ত করছে।”
সাংবাদিকরা তখন ট্রাম্পকে জিজ্ঞেস করেন, কানাডাকে যুক্তরাষ্ট্রের অঙ্গরাজ্য করতে ট্রাম্প সামরিক শক্তি ব্যবহার করার কথা ভাবছেন কি না।
জবাবে ট্রাম্প বলেন, “না, সামরিক শক্তি নয়। কানাডাকে যুক্তরাষ্ট্রের অংশ করতে আমি অর্থনৈতিক শক্তি প্রয়োগের কথা ভাবছি।”
সাংবাদিকদের ট্রাম্প এসব কথা বলার পরপরই তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখান কানাডার প্রধানমন্ত্রী ট্রুডো।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে তিনি বলেন, “কানাডা যুক্তরাষ্ট্রের অংশ হওয়ার কোনও সম্ভাবনাই নেই।
“দু’দেশের শ্রমিক ও জনগণ পরস্পরের বৃহত্তম বাণিজ্যিক ও নিরাপত্তা অংশীদার হওয়ার ফলে উপকার পাচ্ছে।”
একই ধরনের উষ্মা দেখান কানাডার কনজারভেটিভ দলের নেতা পিয়ের পোইলিয়েভো।
তিনি বলেন, “কানাডা কখনোই যুক্তরাষ্ট্রের অঙ্গরাজ্য হবে না। এই কথার পর আর কোনও কথা নেই। কানাডা একটি স্বাধীন দেশ।”
মঙ্গলবারের সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্প কেবল কানাডা নয়, কথা বলেছেন ফিলিস্তিন, মেক্সিকো, পানামা খাল, গ্রিনল্যান্ড ও ন্যাটো নিয়েও।
গাজা
ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় হামাসের হাতে জিম্মি ইসরায়েলিদের অবিলম্বে মুক্তি দেওয়া না হলে পরিস্থিতি শোচনীয় হওয়ার হুমকি দেন ট্রাম্প।
তিনি বলেন, “২০ জানুয়ারি আমার শপথ নেওয়ার আগে জিম্মিরা যদি মুক্ত না হয়, তাহলে মধ্যপ্রাচ্যে ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে।
“ইসরায়েলি জিম্মিদের ছেড়ে না দিলে তা হামাসের জন্য ভালো হবে না। সত্যি কথা বলতে, কারোর জন্যই ভালো হবে না।”
মেক্সিকো
দেশটি নিয়ে ট্রাম্প বলেন, “আমরা মেক্সিকোকে অনেক সহায়তা করি। যদিও তাদের সঙ্গে আমাদের বাণিজ্য ঘাটতি বিস্তর। মূলত কয়েকটি গোষ্ঠী দেশটিকে পরিচালিত করে, যা আর হতে দেওয়া যাবে না।
“আমরা মেক্সিকো উপসাগরের নাম পরিবর্তন করে আমেরিকা উপসাগর রাখব। এ নামটি বেশ সুন্দর এবং যথার্থ। আমাদের দেশে লাখ লাখ মানুষ ঢোকানো মেক্সিকোকে বন্ধ করতে হবে।”
পানামা খাল, গ্রিনল্যান্ড
প্রেসিডেন্ট হিসেবে পুনর্নির্বাচিত হওয়ার পর গ্রিনল্যান্ড কেনা ও পানামার খালের নিয়ন্ত্রণ পুনরায় নেওয়ার কথা জানান ট্রাম্প।
তিনি বলেন, “পানামা খাল এবং গ্রিনল্যান্ড আমাদের অর্থনৈতিক নিরাপত্তার জন্য দরকার। পানামা খাল আমাদের দেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। চীন এখন এটি পরিচালনা করছে। আমরা খালটি পানামাকে উপহার দিয়েছিলাম, চীনকে নয়। তারা খালটির অপব্যবহার করেছে; আমাদের উপহারের অপব্যবহার করেছে। পানামা খালের নিয়ন্ত্রণ ছেড়ে দেওয়া ঠিক ছিল না।”
ন্যাটো
ন্যাটো সম্পর্কে ট্রাম্প বলেন, “ন্যাটোর ইউরোপীয় সদস্যদের এই জোটের পেছনে তাদের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ৫ শতাংশ ব্যয় করা উচিত।
“তারা বর্তমানে তাদের জিডিপির ২ শতাংশ ন্যাটোকে দিচ্ছে। এটি বাড়িয়ে ৫ শতাংশ করা উচিত বলে আমি মনে করি। এই সামর্থ্য সব ইউরোপীয় সদস্যের আছে।”