রূপপুর পরমাণু বিদ্যুৎ প্রকল্প থেকে ৪০০ কোটি পাউন্ড আত্মসাতের অভিযোগ তদন্তের অংশ হিসেবে যুক্তরাজ্যের সিটি মিনিস্টার টিউলিপ সিদ্দিককে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে বলে কয়েকটি সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হচ্ছে, যিনি সম্পর্কে বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাগনি।
তবে টিউলিপ সিদ্দিক এ তথ্য নাকচ করে দিয়ে বলছেন, অভিযোগের বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোনও কর্তৃপক্ষ তার সঙ্গে যোগাযোগ করেনি।
যুক্তরাজ্যের সংবাদমাধ্যম দ্য টেলিগ্রাফ জানায়, টিউলিপের পাশাপাশি তার পরিবারের চার সদস্যও এই অর্থ আত্মসাতে জড়িত বলে অভিযোগ উঠেছে, যাদের মধ্যে তার মা শেখ রেহানা, খালা শেখ হাসিনার নামও রয়েছে।
তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ– রূপপুর পরমাণু বিদ্যুৎ প্রকল্প থেকে ভুয়া কোম্পানি এবং মালয়েশিয়ার ব্যাংক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রে ৪০০ কোটি পাউন্ড সরিয়েছেন তারা।
এই অভিযোগ খতিয়ে দেখতেই রবিবার যুক্তরাজ্যের মন্ত্রিপরিষদ দপ্তরের প্রোপ্রাইটি অ্যান্ড এথিকস টিমের কর্মকর্তারা রবিবার টিউলিপকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন।
এর আগে গত সপ্তাহে রূপপুর পরমাণু বিদ্যুৎ প্রকল্পে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের সদস্যদের দুর্নীতির অভিযোগ তদন্তে বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) নিষ্ক্রিয়তা নিয়ে হাইকোর্ট রুল জারি করে।
এরপর দুদক জানায়, রূপপুর প্রকল্পের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়, বোন শেখ রেহানা ও তার মেয়ে টিউলিপ সিদ্দিকের দুর্নীতির অভিযোগ খতিয়ে দেখবে তারা।
এদিকে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী স্যার কিয়ার স্টারমার নিজ দলের নির্বাচিত এমপি টিউলিপ সিদ্দিকের পক্ষে দাঁড়িয়েছেন, যিনি এই অভিযোগের সঙ্গে নিজের সম্পৃক্ততা এবং এ বিষয়ে তার সঙ্গে কারও যোগাযোগ করার কথা অস্বীকার করেছে বলে জানিয়েছে টেলিগ্রাফ।
টিউলিপের দল লেবার পার্টিও তাকে জড়িয়ে ওঠা অভিযোগকে ‘মিথ্যা’ বলে অভিহিত করেছে বলে জানিয়ে টেলিগ্রাম বলছে, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে শেখ হাসিনার বিরোধীপক্ষ এই অভিযোগ তুলেছে বলে লেবার পার্টির কর্মকর্তারা দাবি করেছেন।
ডেইলি মেইলের বরাত দিয়ে টেলিগ্রাফ জানিয়েছে, দুদকের পাঁচ তদন্তকারী টিউলিপ সিদ্দিক ও তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ‘দালিলক প্রমাণ’ সংগ্রহ করছেন এবং কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই এ বিষয়ে টিউলিপ ও অন্যদের জবাব চেয়ে চিঠি দেওয়া হতে পারে।
মেইলের প্রতিবেদন বলছে, দুদক ঢাকাস্থ ব্রিটিশ হাই কমিশনের মাধ্যমে টিউলিপ সিদ্দিককে চিঠি দিতে পারে পাঠাবে ব্রিটিশ হাইকমিশনের মাধ্যমে, যা বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় অবস্থিত। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কর্মকর্তারা মেইলকে জানিয়েছেন, চিঠির জবাব পাওয়ার পর তদন্তকারীরা এফআইআর করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন।
দুদকের একজন কর্মকর্তা ডেইলি মেইলকে বলেন, “তদন্ত এখনও প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। তদন্ত শেষ হলে আমরা সবার কাছে চিঠি পাঠাব। তাকে (টিউলিপ) উত্তর দেওয়ার জন্য ডাকা হবে।”
দুদকের পরিচালক (প্রতিরোধ) আখতার হোসেন বলেন, চিঠিগুলো টিউলিপ সিদ্দিক এবং তার পরিবারের সদস্যদের “আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ” দেবে। যদি টিউলিপ সিদ্দিক সহযোগিতা না করেন, তাহলে তিনি বাংলাদেশ প্রতি তার সরকারের সাম্প্রতিক অঙ্গীকারগুলোকে ক্ষতিগ্রস্ত করবেন। এসব অঙ্গীকারের মধ্যে রয়েছে শেখ হাসিনার সরকারের সদস্যদের পাচার করা অর্থ পুনরুদ্ধারে বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষকে সাহায্য করা।
গত জুলাইয়ে অনুষ্ঠিত যুক্তরাজ্যের সাধারণ নির্বাচনে লন্ডনের হ্যাম্পস্টেড অ্যান্ড হাইগেট আসন থেকে লেবার পার্টির এমপি নির্বাচিত হওয়া টিউলিপ সিদ্দিক বর্তমানে দেশটির ইকনোমিক সেক্রেটারি টু দ্য ট্রেজারি অ্যান্ড সিটি মিনিস্টার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন, যার মূল কাজ যুক্তরাজ্যের আর্থিক খাতে দুর্নীতি নির্মূল করা।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নাতনী ৪২ বছর বয়সী টিউলিপ ২০২১ সাল থেকে লন্ডনের ‘দ্য সিটি’ নামে লেবার পার্টির আর্থিক পরিসেবা শিল্পের নীতির প্রণয়নে নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন। এর আগে তিনি লেবার পার্টির ছায়া শিক্ষামন্ত্রী হিসেবে কাজ করেন।
১৬ বছর বয়সে লেবার পার্টিতে যুক্ত হওয়া টিউলিপ সিদ্দিক ২০১০ সালে প্রথম কাউন্সিলর নির্বাচিত হন। পরে ২০১৫ সালে হ্যাম্পস্টেড অ্যান্ড কিলবার্ন আসনের এমপি নির্বাচিত হন। সর্বশেষ গত ৪ জুলাই লন্ডনের হ্যাম্পস্টেড অ্যান্ড হাইগেট আসন থেকে কনজারভেটিভ পার্টির প্রার্থি ডন ইউলিয়ামসকে বড় ব্যবধানে হারিয়ে চতুর্থবারের মতো এমপি নির্বাচিত হন টিউলিপ।