Beta
শুক্রবার, ১৭ জানুয়ারি, ২০২৫
Beta
শুক্রবার, ১৭ জানুয়ারি, ২০২৫

পদত্যাগ করতেই হলো টিউলিপকে

টিউলিপ সিদ্দিক মন্ত্রী হওয়ার আট মাসের মাথায় করতে হলো পদত্যাগ।
টিউলিপ সিদ্দিক মন্ত্রী হওয়ার আট মাসের মাথায় করতে হলো পদত্যাগ।
[publishpress_authors_box]

ফ্ল্যাট কেলেঙ্কারি নিয়ে সমালোচনার মুখে শেষ পর্যন্ত পদত্যাগই করতে হলো যুক্তরাজ্যের সিটি মিনিস্টার টিউলিপ সিদ্দিককে।

তার এই পদত্যাগ ঘটল বাংলাদেশে তার খালা শেখ হাসিনা সরকার অভ্যুত্থানে উৎখাত হওয়ার ছয় মাসের মধ্যে।

মূলত স্বৈরাচারের তকমা নিয়ে গত বছরের আগস্টে শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর লন্ডনে তার ভাগ্নি বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ আসতে থাকে। আর তাতে শেখ হাসিনার দল আওয়ামী লীগের প্রবাসী নেতাদের সংশ্লিষ্টতাও তুলে আনে যুক্তরাজ্যের সংবাদমাধ্যমগুলো।

৪২ বছর বয়সী এমপি টিউলিপ নিজেকে নির্দোষই দাবি করে আসছিলেন। তবে সমালোচনার মুখে তিনি নিজেকে সপে দেন যুক্তরাজ্যের সরকারকে দায়িত্বশীল রাখার দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি (প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা) লরি ম্যৗাগনেসের কাছে।

কিন্তু রক্ষণশীল দলের প্রধান নেতা কেমি বেডেনক থেকে শুরু করে বিরোধী দলের এমপিরা টিউলিপের পদত্যাগের দাবিতে কণ্ঠ উঁচু করতে থাকেন।

আট মাস আগে সরকার গঠনকারী েলবার পার্টির নেতা কিয়ার স্টারমার তার দীর্ঘদিনের বন্ধু টিউলিপের পক্ষে আওয়াজ তুলে গেলেও গত কয়েক দিন ধরে তার নরম হওয়ার আঁচ পাওয়া যাচ্ছিল। কারণ আওয়ামী লীগকে নিরে অভিযোগের তীর তার দিকেও আসতে শুরু করেছিল।

এই পরিস্থিতিতে মঙ্গলবার টিউলিপ সিটি মিনিস্টারের দায়িত্ব ছাড়েন বলে বিবিসিসহ যুক্তরাজ্যের প্রতিটি সংবাদ মাধ্যমে খবর এসেছে।

গত কিছু দিন ধরেই টিউলিপের খবরে ভরা থাকছিল দেশটির সংবাদপত্রগুলো; তাই পদত্যাগের খবরটিও ফলাও করে ছাপা হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারকে পাঠানো পদত্যাগপত্রে টিউলিপ লিখেছেন, যদিও তিনি মন্ত্রীর আচরণবিধি লঙ্ঘন করেননি, তবুও তার এই পদ ধরে রাখা সরকারের কাজের গতিতে প্রতিবন্ধকতা হবে। তাই তার পদত্যাগের সিদ্ধান্ত।

টিউলিপ পদত্যাগের কারণ ব্যাখ্যা করে এক্স হ্যান্ডেলে লিখেছেন। পাশাপাশি সেখানে নিজের পদত্যাপত্রটিও জুড়ে দিয়েছেন।

লন্ডনের হ্যাম্পস্টেড অ্যান্ড কিলবার্ন আসন থেকে লেবার পার্টির প্রার্থী হয়ে ২০১৫ সালে প্রথম এমপি নির্বাচিত হন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নাতনি টিউলিপ।

রুশনারা আলীর পর তিনি ও রূপা হকই বাংলাদেশি বংশোদ্ভুত হিসাবে যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্ট বা হাউজ কমন্সে যাওয়ার সুযোগ পান। এরপর টানা চারবার এমপি নির্বাচিত হন টিউলিপ। বিরোধী দলের ছায়া মন্ত্রিসভায়ও দায়িত্ব পালন করেন।

গত বছরের জুনে নির্বাচনের মধ্য দিয়ে ১৪ বছর পর যুক্তরাজ্যে ক্ষমতায় ফেরে লেবার পার্টি। দলটির প্রধান স্টারমার মন্ত্রিসভা গঠনের সময় তার পুরনো বন্ধু টিউলিপকে করেন সিটি মিনিস্টার বা ইকোনমিক সেক্রেটারি।

সর্বশেষ নির্বাচনে টিউলিপ হ্যাম্পস্টেড অ্যান্ড হাইগেট আসন থেকে নির্বাচিত হয়েছিলেন। অভিজাত ব্যক্তিদের বাসস্থল লন্ডনের এই আসন। এর পাশের আসনটির এমপি প্রধানমন্ত্রী স্টারমার।

সিটি মিনিস্টার হিসাবে টিউলিপের দায়িত্ব ছিল আর্থিক খাতের দুর্নীতি প্রতিরোধ। কিন্তু তিনি নিজেই সেই অভিযোগ বিদ্ধ হয়ে  আট মাসের মধ্যেই বিদায় নিলেন।

টিউলিপের পদত্যাগপত্র গ্রহণ করার কথা জানালেও স্টারমার বলেছেন, তিনি এই ঘটনায় বেদনাহত।

তিনি বলেন, “আমি এখানে এটা স্পষ্ট করতে চাই, স্যার লরি ম্যাগনাস একজন স্বাধীন উপদেষ্টা হিসাবে আমাকে আশ্বস্ত করেছেন যে তিনি তার তদন্তে টিউলিপের বিরুদ্ধে মন্ত্রী হিসাবে আচরণবিধি ভঙ্গ কিংবা তার আর্থিক কোনও অনিয়মের প্রমাণ পাননি তিনি।”

প্রধানমন্ত্রীর স্টারমারকে লেখা এক চিঠিতে লরি ম্যাগনাস বলেছেন, বাংলাদেশে তার পরিবারের কারণে টিউলিপ সম্মানহানির ঝুঁকিতে রয়েছেন।

টিউলিপকে বাংলাদেশের মানুষ চেনে বঙ্গবন্ধুর নাতনি, শেখ হাসিনার ভাগ্নি, শেখ রেহানার মেয়ে হিসাবে। আর সেই সম্পর্কই এখন তার পতনের কারণ হয়ে দাঁড়াল।

মন্ত্রীর দায়িত্ব ছাড়লেও লেবার পার্টির এমপি হিসাবে কাজ করে যাবেন টিউলিপ।

শেখ হাসিনার সূত্রে অভিযোগ

গত জুন মাসে টিউলিপ যুক্তরাজ্যে মন্ত্রী হওয়ার পর বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের উচ্ছ্বাস ছিল দেখার মতো। পরের মাসেই আন্দোলনে চাপে পড়ে আওয়ামী লীগ, তার পরের মাসে সরকারের পতন। তার আট মাস পর টিউলিপের মন্ত্রিত্ব হারানো।

বাংলাদেশে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকে লন্ডনে টিউলিপের বিরুদ্ধে বাড়ি সংক্রান্ত দুর্নীতির একের পর এক অভিযোগ উঠতে থাকে।

টিউলিপের বিরুদ্ধে প্রথম অভিযোগ ওঠে একটি বাড়ির ভাড়ার তথ্য গোপনের। সেটা জুলাই মাসেই উঠেছিল। তবে তা নিয়ে জল বেশি ঘোলা হয়নি।

তার বিরুদ্ধে মূল অভিযোগ মোট তিনটি। সেগুলো হলো-

১. নর্থ লন্ডনের ফিঞ্চেলিতে তিনি ২১ লাখ পাউন্ডের যে বাড়িতে এখন ভাড়া থাকেন স্বামী-সন্তানকে নিয়ে, সেই বাড়ির মালিক আব্দুল করিম তার কাছ থেকে ভাড়া নেন না। এই আব্দুল করিম আবার যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের নেতা। এই ব্যবসায়ীকে বাংলাদেশে সিআইপির মর্যাদা এবং একটি ব্যাংকের পরিচালক হওয়ঢার সুযোগ করে দেন শেখ হাসিনা।

২. কিংস ক্রসে যে ফ্ল্যাটির মালিক টিউলিপ, তা তাকে বিনামূল্যে দিয়েছিলেন আব্দুল মোতালিফ নামে এক ব্যবসায়ী। তিনিও যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের নেতা। আগে টিউলিপ দাবি করতেন, এই বাড়িটি তিনি তার বাবা-মার কাছ থেকে পেয়েছিলেন।

৩. টিউলিপের ছোট বোন আজমিনা সিদ্দিকও হ্যাম্পস্টেডের একটি ফ্ল্যাটের মালিক, তাও তিনি মুফতে পান মোমিন গণি নামে একজন আইনজীবীর কাছ থেকে। এই আইনজীবীও শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ।

২০১৩ সালে মস্কোয় রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে শেখ হাসিনা ও টিউলিপ সিদ্দিকসহ তাদের পরিবারের অন্য সদস্যরা।

বাংলাদেশেও অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়া্র পর দুদকের অনুসন্ধানে রূপপুর পরমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের ৪০০ কোটি পাউন্ড আত্মসাতে জড়িত থাকার অভিযোগও ওঠে টিউলিপের বিরুদ্ধে।

বাংলাদেশে দুদকে অভিযোগ জমা হওয়ার পর তা ফলাও করে ছাপা হয় যুক্তরাজ্যের সংবাদপত্রগুলোতেও। চুক্তি সইয়ের দিন পশ্চিমাদের চক্ষুশূল রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে টিউলিপের ছবিও আসে প্রতিবেদনে।

এছাড়া ঢাকার পাশে পূর্বাচলে মা শেখ রেহানা, ভাই রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববি, বোন আজমিনা সিদ্দিক রূপন্তীর নামে নিয়ম ভেঙে প্লট নেওয়ার অভিযোগে যে তিনটি মামলা হয়েছে, সবগুলোতেই টিউলিপ আসামি।

মামলায় অভিযোগ করা হয়, টিউলিপ ব্রিটিশ এমপি হিসাবে প্রভাব খাটিয়ে এবং তার খালা তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে চাপ দিয়ে মা, ভাই ও বোনের নামে প্লটগুলো নেন।

শেখ রেহানা ও রাদওয়ান বাংলাদেশেই থাকতেন। তবে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর তারা এখন বিদেশে রয়েছেন। রাদওয়ান বিয়েও করেছেন ইউরোপে। টিউলিপ ও আজমিনা যুক্তরাজ্যেই থাকেন।

টিউলিপে বাবা শফিক সিদ্দিক একজন অধ্যাপক। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েও শিক্ষকতা করতেন। টিউলিপ ২০১৩ সালে বিয়ে করেন ক্রিস পার্সিকে। এই স্কটিশ এক সময় সরকারি চাকরি করলেও পরে তা ছেড়ে এখন ব্যবস্থাপনা পরামর্শক হিসাবে কাজ করেন।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত