বিশ্রাম মানবদেহের জন্য অপরিহার্য। তবে বেশিরভাগ মানুষ বিশ্রাম বলতে কেবল সারাদিন শুয়ে বসে কাটানোকেই বুঝে থাকে।
তাহলে বিশ্রাম কী? বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিশ্রামের আছে নানান রকমফের।
ভারতীয় ক্লিনিকাল সাইকোলজিস্ট এবং সাইকোথেরাপিস্ট চেতনা লুথরার মতে নানান ধরনের বিশ্রামের মধ্যে ঘুম কেবল একটি। তার মতে, ৭ ধরনের বিশ্রাম মানবশরীরের জন্য জরুরি।
শারীরিক বিশ্রাম
শারীরিক বিশ্রামের মধ্যে ঘুম একটি। অস্ট্রেলিয়ার গোল্ড কোস্ট লাঞ্জ অ্যান্ড স্লিপ সেন্টারের ডিরেক্টর চিকিৎসক হিমাংশু গার্গের মতে, ঘুমের ক্ষেত্রে দুটো বিষয় গুরুত্বপূর্ণ। একটি হলো গড়ে ৮ ঘণ্টা ঘুম। আর আরেকটি হলো গভীর ঘুম।
তিনি বলেন, “১০ ঘণ্টা ঘুমালেও কোন কাজ হবেনা যদি না সে ঘুম ‘স্বপ্নময়’ বা ঘুমে আরইএম স্লিপ (REM sleep) না থাকে। তাহলে ঘুমিয়েও মনে হবে ঘুমটা ঠিকঠাক হলো না”।
কিন্তু আরইএম স্লিপ আবার কী?
আরইএম বা (REM sleep) র্যাপিড আই মুভমেন্ট স্লিপ হলো ঘুমের একটি পর্যায়। ঘুমের এই পর্যায়ে মানুষ স্বপ্ন দেখে এবং স্বপ্ন দেখার সময় চোখ খুব দ্রুত এদিক-ওদিক নড়তে থাকে।
মজার ব্যাপার হলো, আরইএম স্লিপের সময় মানব মস্তিষ্ক পুরোপুরি জেগে থাকা মানুষের মতোই থাকে সজাগ। অথচ ঘুমের এই বিশেষ পর্যায়টি মানবদেহের জন্য খুবই দরকারি। আর ঘুমের অন্তত ২৫ শতাংশ হলো এই আরইএম। ফলে ‘তুমি আমার ঘুম, তবু তোমায় নিয়ে স্বপ্ন দেখিনা’ গানটি গাওয়ার জন্য ভালো হলেও শরীরের জন্য নয়।
তবে ঘুম ছাড়াও শারীরিক বিশ্রামের আছে আরও কিছু ধরন।
যেমন- মেডিটেশন, বডি ম্যাসাজ এবং ড্যান্সিং।
তাই বলে হাত-পা ছুড়ে নাচানাচি?
হ্যাঁ, বিশেষজ্ঞরা বলছেন এটাও একধরনের বিশ্রাম।
মানসিক বিশ্রাম
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, বিশ্বে প্রতি ৮ জনের ১ জন অর্থাৎ ৯৭ কোটির মতো মানুষ মানসিক রোগে আক্রান্ত। বিশেষজ্ঞদের মতে, মানসিক ব্যধি থেকে আরোগ্যের একটি উপায় হলো মানসিক বিশ্রাম, মনকে সব ধরনের ঝুট-ঝামেলা থেকে সাময়িক চিন্তা মুক্ত রাখা।
সাইকোথেরাপিস্ট চেতনা লুথরার মতে এই ‘গতিময়’ পৃথিবী থেকে মনকে সরিয়ে কিছুক্ষণের জন্য ধীরগতির করাই মানসিক বিশ্রাম।
মানসিক বিশ্রামের ধরন রয়েছে। একটি হলো- নিরবতা, যা বিশৃংখলা দূর করে স্বচ্ছভাবে চিন্তা করতে সহায়তা করে।
এধরনের আরেকটি বিশ্রাম হচ্ছে গান। মনকে শান্ত করতে গানের জুড়ি মেলা ভার।
অনেকেরই রয়েছে নানা ধরনের শখ। মনকে দুশ্চিন্তামুক্ত রাখতে শখের কাজে যুক্ত হওয়ার বিকল্প খুব কমই আছে।
সামাজিক বিশ্রাম
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মানুষ সামাজিক প্রাণী হলেও তার দরকার সামাজিক বিশ্রাম।
তাদের মতে, কিছুটা সময় একা কাটানো আত্মউপলব্ধি তৈরিতে কাজে দেয়। প্রকৃতিতে একাকি ঘুরে বেড়ানো কিংবা নিজের পোষা প্রাণীর সঙ্গে সময় কাটানোর মাধ্যমে হতে পারে এমন কিছু।
অনুভূতির বিশ্রাম
অনুভূতিকে উত্তেজিত করে রাখে এমন কিছু থেকে সাময়িক বিরতি নেওয়াই হলো অনুভূতি বা সংবেদনের বিশ্রাম।
অনেক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের মতে, নাগরিক অনেক উপাদান আমাদের অনুভূতিকে তার জঞ্জালের ভেতর আচ্ছন্ন করে রাখে। সোজা ভাষায়- বন্দি করে রাখে।
তাই ‘এই নরকের অনেক দূরে’ কোথাও, প্রকৃতির সান্নিধ্যে আপন অনুভূতিকে কিছুটা বিশ্রাম কমাতে পারে নাগরিক চাপ। অবশ্য সাইকোলজিস্ট লুথরা বলছেন, ফোন কিংবা যাবতীয় ডিজিটাল গেজেট থেকে সাময়িক বিরতির মাধ্যমেও পাওয়া যাবে এই উপকার।
আধ্যাত্মিক বিশ্রাম
আধ্যাত্মিক বিশ্রাম মানুষের আধ্যাত্মিক সুস্থতার জন্য জরুরি। প্রার্থনা কিংবা মেডিটেশন এ ধরনের বিশ্রামের মধ্যে পড়ে।
আবেগীয় বিশ্রাম
নিজের আবেগ দমিয়ে রাখলে মনে আর শরীরে বাসা বাঁধে নানা অসুখ। তাই সঠিকভাবে আবেগ প্রকাশ করতে পারাটা ভীষণ জরুরী । কর্মক্ষেত্রে তো বটেই, অনেক সময় বন্ধু কিংবা আত্মীয়স্বজনের নানা উটকো আবদার অনেকেই ফেলতে পারেন না। অথচ এইসব উটকো আবদার মেটানোর কোনও ইচ্ছাই হয়তো তাদের থাকেনা। কিন্তু ইচ্ছার বিরুদ্ধে এইসব আবদার মেটাতে যাওয়ায় মনের ওপর বাড়ে চাপ ।
তাই, ‘না’ বলতে শিখতে হবে। বলছেন মনোবিজ্ঞানীরা।
সৃষ্টিশীল বিশ্রাম
কখনো কখনো ছুটি নিতে হয় নিজের পেশাগত কাজ থেকেও।
দিনের একটা বড় সময় যাদের চলে যায় ৯টা-৫টা অফিস করে তাদের জন্য এ কথা ভীষণভাবে সত্যি। কারণ রুটি-রুজির কাজে নিরন্তর বুদ হয়ে থাকলেও মনে আসে একঘেয়েমি।
তাই, কাজ থেকে সাময়িক বিরতি নিয়ে সৃষ্টিশীল কোন কাজে মগ্ন হলে কেটে যাবে একঘেঁয়েমি। কাজে বাড়বে মনোযোগ।
কী হতে পারে এমন সৃষ্টিশীল কাজ? ছবি আঁকা, সঙ্গীত চর্চা অথবা পছন্দের কোন বাদ্যযন্ত্র বাজানো শেখা হতে পারে এমন ‘সৃষ্টিশীল বিশ্রাম’।