উইন্ডিজ সিরিজের আগে একসঙ্গে ইনজুরিতে পড়েছিলেন মুশফিকুর রহিম ও নাজমুল হোসেন শান্ত। দুজনই নির্ভরযোগ্য ব্যাটার, একাদশে অটোমেটিক চয়েজ। তাদের অনুপস্থিতিতে তৈরি ব্যাটার আর খুঁজে পায় না বিসিবি। বাধ্য হয়ে এক বছর জাতীয় দলের বাইরে থাকা আফিফ হোসেনকে ফেরানো হলো। অথচ এই এক বছরে ব্যাট হাতে বলার মতো পারফরম নেই আফিফের।
তার মতো যুব দলের অনেক ব্যটারই এভাবে সিনিয়র দলে যাওয়া-আসার মধ্যেই আছেন। যুব দলের ব্যাটিং ঝলকের পুজি দিয়ে তারা সিনিয়র দলে রাঙাতে পারছেন না নিজেদের। অথচ যুব দলের পারফরম্যন্সকেই বিসিবি বেশি গুরুত্ব দেয় সিনিয়র দলে প্রমোশনের জন্য।
যুব ক্রিকেটারদের অভিষেকে শীর্ষে বাংলাদেশ
গত ১০ বছরে (২০১৪ থেকে) যুব বিশ্বকাপ খেলা ক্রিকেটারদের মধ্যে অন্তত দুই বছরে সিনিয়র দলে সুযোগ পেয়েছেন অনেকেই। যুব বিশ্বকাপে ভাল খেলেছেন, সুবাদে তারা প্রতিভাবান। কিন্তু তাদের কেউই সাকিব আল হাসান, তামিম ইকবাল, মুশফিকুর রহিম ও মাহমুদউল্লাহ’র মতো আলো ছড়াতে পারেননি।
গত ১০ বছরে যুব বিশ্বকাপে খেলা মোট ২৭ বাংলাদেশি ক্রিকেটারের অভিষেক হয়েছে সিনিয়র দলে। সংখ্যাটা অন্য যে কোনও দেশের চেয়ে বেশি। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ তালিকায় আছে ভারত, তারা যুব দল থেকে ১৬ জনকে নিয়ে গেছে সিনিয়র দলে। অস্ট্রেলিয়ার ৯ জন, দক্ষিণ আফ্রিকার ৬ জন, ইংল্যান্ড ও নিউজিল্যান্ডের ৫ জন করে।
২৭ বাংলাদেশি ক্রিকেটারের মধ্যে ১৫ জন স্পেশালিস্ট ব্যাটার এবং ৩ অলরাউন্ডার মেহেদী হাসান মিরাজ, মোসাদ্দেক হোসেন ও মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন। বাকি ৯ জন বোলার।
যুব দল থেকে জাতীয় দলে প্রমোশন পাওয়া বোলাররা ভালো করেছেন। পারফরম্যান্স দিয়ে নিজেদের জায়গা তৈরি করেছেন। কিন্তু ব্যাটারদের ব্যাটে রানখরা, তারা পারেননি নিজেদের প্রমাণ করতে।
ব্যর্থ ব্যাটাররা
মোট ১৫ ব্যাটারের মধ্যে লিটন দাস, নাজমুল হোসেন শান্ত, মেহেদি হাসান মিরাজ লম্বা সময় জাতীয় দলে খেলছেন। তা-ও পারফরম্যান্স খুব ধারবাহিক নয়। ২০২০ সালে যুব বিশ্বকাপ জয়ীদের মধ্যে সিনিয়র দলে নিয়মিত খেলছেন মাহমুদুল হাসান জয়, তানজিদ হাসান তামিম ও তাওহিদ হৃদয়। তাদের পারফরম্যান্স নিয়েও প্রশ্ন তোলা যায়। এই ছয়জন ছাড়া বাকি ১০ ব্যাটাররা দল থেকে বাদ পড়েছেন, নয়তো আসা-যাওয়ার মধ্যে আছেন।
দলে অনিয়মিত হয়ে পড়া ব্যাটারদের মধ্যে প্রতিভার দিক থেকে সবচেয়ে এগিয়ে ছিলেন আফিফ হোসেন। ক্যারিয়ারের শুরুতে টি-টোয়েন্টিতে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ২৬ বলে ৫২ ও ওয়ানডেতে ১১৫ বলে অপরাজিত ৯৩, দুটো ম্যাচ জেতানো ইনিংস ছিল এই বাঁহাতির।
ওই দুটো ইনিংসে দলের মিডলঅর্ডারে তাকে নতুন ভরসা হিসাবে ভাবা হয়েছিল। কিন্তু আফিফ সেই বিশ্বাসের প্রতিদান দিতে ব্যর্থ হন। টানা রান খরায় ৩৪ ওয়ানডেতে করেছেন মাত্র ৬৬৭ রান। টি-টোয়েন্টিতে ৭০ ম্যাচ সুযেগা পেলেও মাত্র ২০ গড়ে তার রান ছিল ১১১৭। আফিফের জায়গাতেই ২০২৩ সালে সুযোগ পেয়ে যান তাওহিদ হৃদয়।
যুব বিশ্বকাপের এক-দুই বছরের মধ্যে অভিষেক
ক্রিকেটার | যুব বিশ্বকাপ | জাতীয় দলে অভিষেক |
মেহেদী হাসান মিরাজ | ২০১৪ | ২০১৬ |
লিটন দাস | ২০১৪ | ২০১৫ |
মোসাদ্দেক হোসেন | ২০১৪ | ২০১৬ |
মোস্তাফিজুর রহমান | ২০১৪ | ২০১৫ |
মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন | ২০১৬ | ২০১৭ |
আফিফ হোসেন | ২০১৮ | ২০১৮ |
হাসান মাহমুদ | ২০১৮ | ২০২০ |
নাঈম শেখ | ২০১৮ | ২০১৯ |
আমিনুল ইসলাম বিপ্লব | ২০১৮ | ২০১৯ |
নাঈম হাসান | ২০১৮ | ২০১৮ |
পারভেজ হোসেন ইমন | ২০২০ | ২০২২ |
মাহমুদুল হাসান জয় | ২০২০ | ২০২১ |
শামীম হোসেন | ২০২০ | ২০২১ |
শরিফুল ইসলাম | ২০২০ | ২০২১ |
২০১৮ সালে যুব বিশ্বকাপ খেলা নাঈম শেখ ২০১৯ ভারত সফরে জাতীয় দলে সুযোগ পেয়েছিলেন। ওই সফরে ৪৮ বলে ৮১ রানের দুর্দান্ত ইনিংস খেলেছিলেন শেষ টি-টোয়েন্টিতে। দল থেকে বাদ পড়ার আগে-পরের ৩২ ইনিংসে তার ব্যাট থেকে এসেছে মাত্র তিনটি ফিফটি।
তামিম ইকবালের ছায়া হিসেবে দেখা হয়েছিল নাঈমকে। কিন্তু ২০২৩ বিশ্বকাপের আগে ছোট তামিমের (তানজিদ হাসান তামিম) সঙ্গে পেরে ওঠেননি প্রতিযোগিতায়।
অনেক সুযোগ পেয়েছেন মোসাদ্দেক হোসেন সৈকতও। লোয়ার মিডলঅর্ডারে তাকে ফিনিশারের ভূমিকায় তৈরি করার চেষ্টা ছিল বিসিবির। কিন্তু মোসাদ্দেকও ফর্মহীনতার উজ্জ্বল নজির গড়েছেন।
২০১৬ থেকে ২০২৩ পর্যন্ত লম্বা সময় মোসাদ্দেককে সুযোগ দিয়েছেন নির্বাচকরা। কিন্তু অধারাবাহিকতায় ৪ টেস্টে মাত্র ১৭৩, ৪৩ ওয়ানডেতে মাত্র ৬৩৪ ও ৩৩ টি-টোয়েন্টিতে মাত্র ৩৮৯ রান পুঁজি মোসাদ্দেকের। শামীম হোসেন, জাকের আলিরা দলে সুযোগ পাওয়ায় এক প্রকার হারিয়ে গেছেন মোসাদ্দেক।
এই তিনজন ছাড়া ব্যাটারদের মধ্যে ইয়াসির আলি, সাইফ হাসান, মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন, পারভেজ হোসেন ইমন, শাহাদাত হোসেন দিপু ও সাদমান ইসলামরা এখনও নিজেদের প্রমাণ করতে পারেননি। আছেন জাতীয় দলে যাওয়া-আসার মধ্যেই।
২০১৪ যুব বিশ্বকাপ
দল | ক্রিকেটার | জাতীয় দলে অভিষেক (যথাক্রমে) |
বাংলাদেশ | মেহেদী হাসান মিরাজ, লিটন দাস, নাজমুল হোসেন শান্ত, মোসাদ্দেক হোসেন, মোস্তাফিজুর রহমান, সাদমান ইসলাম, ইয়াসির আলি, জাকির হাসান | ২০১৬, ২০১৫, ২০১৭, ২০১৬, ২০১৫, ২০১৮, ২০২১, ২০১৮ |
অস্ট্রেলিয়া | বেন ম্যাকডরমট, ম্যাথু শর্ট, বিলি স্ট্যানলেক | ২০২১, ২০২৩, ২০১৭ |
দক্ষিণ আফ্রিকা | এইডেন মারক্রাম, কাগিসো রাবাদা | ২০১৭, ২০১৫ |
নিউজিল্যান্ড | কাইল জেমিসন, টিম সেইফার্ট | ২০২০, ২০১৮ |
ইংল্যান্ড | বেন ডাকেট | ২০১৬ |
ভারত | সঞ্জু স্যামসন, কুলদীপ যাদব, সরফরাজ খান, শ্রেয়াস আইয়ার, আভেশ খান | ২০১৫, ২০১৭, ২০২৪, ২০১৭, ২০২২ |
কোচ নাভিদ নাওয়াজ কী বলছেন
২০২০ সালে বাংলাদেশ প্রথম যুব বিশ্বকাপ ক্রিকেট জেতে। তার কারিগর কোচ নাভিদ নাওয়াজ। এই লঙ্কান কোচের তত্ত্বাবধানে বাংলাদেশ গত ডিসেম্বরে জেতে যুব এশিয়া শিরোপা। যুবাদের নিয়ে তার ব্যাপক অভিজ্ঞতা আছে। তরুণ ক্রিকেটারদের নিয়ে সাফল্যের রেসিপিটা তিনি ভালোভাবেই জানেন।
এই নাভিদের বিশ্লেষণে যুব ক্রিকেটের তুলনায় সর্বোচ্চ পর্যায়ে খেলাটা বেশ কঠিন, “যুব বিশ্বকাপ সাফল্য একজন তরুণ ক্রিকেটারের জন্য সব নয়। আধুনিক ক্রিকেট খুবই ডাটা নির্ভর। যখনই একজন ভালো উঠতি ক্রিকেটার আসবে, তার সবকিছুই প্রতিপক্ষ দলের জন্য গবেষণার বিষয় হয়। তারা খুব দ্রুত ওই ক্রিকেটারের দুর্বল দিক বের করে ফেলে। এই দুর্বলতাগুলো কাটিয়ে ওঠার তরিকা জানতে হবে ক্রিকেটারদের।”
এই কোচ জোর দিচ্ছেন ঘরোয়া ক্রিকেটের ওপর, “আমাদের শুধু অনূর্ধ্ব-১৯ সিস্টেমের ওপর নির্ভর করা উচিত না। মূল পাইপলাইন হওয়া উচিত ঘরোয়া ক্রিকেট। কারণ সেখানেই সিংহ ভাগ ক্রিকেটাররা খেলেন। ঘরোয়া ক্রিকেট আসলে ক্রিকেটার তুলে আনার মূল প্রক্রিয়া হওয়া উচিত।”
নাভিদ নাওয়াজ ব্যাটারদের টেকনিক্যাল ডেভেলপমেন্টের দরকার আছে বলে মনে করেন, “আধুনিক ক্রিকেটে ৪০ এর বেশি ব্যাটিং গড়কে ভালো বলা হয়। আমাদের (বাংলাদেশ) এই দিকটায় অনেক ঘাটতি আছে। এই কারণে আসলে দলের ব্যাটিং সমস্যা কাটানো সম্ভব হচ্ছে না। শুরুর ৬ ব্যাটারকে ব্যাটিং গড় বাড়াতেই হবে। পাশাপাশি কোচদের অনেক ভূমিকা রাখতে হবে তরুণ ব্যাটারদের নিয়মিত উন্নতি ও টেকনিক্যাল ডেভেলপমেন্টের জন্য।”
খালেদ মাহমুদ দুষছেন ক্রিকেট সংস্কৃতিকে
সাবেক ক্রিকেট তারকা খালেদ মাহমুদের হাত ধরে দেশে অনেক ক্রিকেটারের উত্থান হয়েছে। বিসিবিতে তিনি দীর্ঘ সময় ছিলেন গেম ডেভেলপমেন্টের প্রধান হিসাবে। বিসিবি ছেড়ে তিনি এখন বাংলা ট্র্যাক ক্রিকেট একাডেমির প্রধান কোচের ভূমিকায়।
২০১৬ যুব বিশ্বকাপ
দল | ক্রিকেটার | জাতীয় দলে অভিষেক (যথাক্রমে) |
বাংলাদেশ | মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন, জাকের আলি, সাইফ হাসান | ২০১৭, ২০২৩, ২০২০ |
দক্ষিণ আফ্রিকা | টনি ডি জর্জি, উইয়ান মুল্ডার, কাইল ভেরেইনা | ২০২৩, ২০১৭, ২০২০ |
নিউজিল্যান্ড | ফিন অ্যালেন, গ্লেন ফিলিপস, রাচিন রবীন্দ্র | ২০২১, ২০১৭, ২০২১ |
ইংল্যান্ড | স্যাম কারেন, ড্যান লরেন্স | ২০১৮, ২০২১ |
ভারত | ইশান কিশান, ঋষভ পন্ত, ওয়াশিংটন সুন্দর | ২০২১, ২০১৭, ২০১৭ |
- এই বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়া খেলেনি
খালেদ মাহমুদ প্রশ্ন তুলেছেন দেশের ঘরোয়া ক্রিকেট সংস্কৃতি নিয়ে, “ঘরোয়া ক্রিকেটের কালচারের কারণে ব্যাটাররা জাতীয় দলে বেশিদিন স্থায়ী হতে পারে না। যুব দলে থাকলে ছেলেরা একটা ক্যাম্পে থাকে। টাইগারস বা এইচপিতে থাকলেও হয়। কিন্তু যখন একটা ক্রিকেটার এই রকম প্রোগ্রাম থেকে বাদ পড়লে তার অনুশীলন করার সুযোগ থাকে না। ঘরোয়া ক্রিকেট না থাকলে কোনও ক্রিকেটারের নিজেকে নিয়ে কাজ করার কোন সুবিধাই নেই। জাতীয় দল বা প্রোগ্রামের বাইরের ক্রিকেটারদের ইনডোরে প্র্যাকটিস করার সুযোগ কই।”
তিনি এখানে অনুশীলন সুবিধার বড় ঘাটতি দেখেন, “ঘরোয়া অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড এর কথা যদি বলা হয়, ইংল্যান্ডের সারে কাউন্টির একজন ক্রিকেটার জাতীয় দল থেকে বাদ পড়ল। সে কিন্তু সারে-তে এসে আবার জাতীয় দলের মতোই অনুশীলন সুবিধা পাচ্ছে। তার জন্য নিজেকে নিয়ে কাজ করা তাই অনেক সহজ। আবার ভারতেও এখন অনুশীলন সুবিধা অনেক উন্নত।”
এছাড়া খালেদ মাহমুদ ঘরোয়া ক্রিকেটে কম্পিউটার অ্যানালিস্টের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন, “জাতীয় দলের ব্যাটার যেমন তাওহিদ হৃদয় এখন খারাপ করছে। তার দুর্বলতা অন্য দলগুলো ধরে ফেলেছে। তাহলে অ্যানালিস্টের বিশ্লেষণ অনুযায়ী তার ব্যাটিং নিয়ে কাজ করতে হবে। কিন্তু জাতীয় দল ছাড়া সেই অ্যানালিস্ট কোথায় পাবে।”
সাবেক বিসিবি পরিচালক প্রশ্ন তুলেছেন, “এতদিন পর আফিফকে দলে নিলেন। তাহলে আফিফকে বাদ দিয়েছিলেন কেন? আফিফ মাঝের এই সময়ে কি করেছে যে সে আবার দলে ফিরল? কিছুই তো করতে দেখলাম না। তাহলে নেওয়া হলো কেন? কারণ আমাদের তৈরি ক্রিকেটার নেই। আসলে ক্রিকেটারদের দোষ দিয়ে লাভ নেই। বরং ওদের জন্য জাতীয় দল থেকে কি পরিকল্পনা দেওয়া হয় বা হয়-না, সেটা নিয়ে প্রশ্ন তোলা যায় “
২০১৮ যুব বিশ্বকাপ
দল | ক্রিকেটার | জাতীয় দলে অভিষেক (যথাক্রমে) |
বাংলাদেশ | আফিফ হোসেন, তাওহিদ হৃদয়, হাসান মাহমুদ, নাঈম শেখ, আমিনুল ইসলাম বিপ্লব, নাঈম হাসান | ২০১৮, ২০২৩, ২০২০, ২০১৯, ২০১৯, ২০১৮ |
অস্ট্রেলিয়া | উইল সাদারল্যান্ড, জাভিয়ের বার্টলেট, অ্যারন হার্ডি | ২০২৪, ২০২৪, ২০২৩ |
দক্ষিণ আফ্রিকা | জেরাল্ড কোয়েৎজে | ২০২৩ |
ইংল্যান্ড | হ্যারি ব্রুক, উইল জ্যাকস | ২০২২, ২০২২ |
ভারত | পৃথ্বি শ, শুবমান গিল, অভিষেক শর্মা, আর্শদ্বীপ সিং | ২০১৮, ২০১৯, ২০২৪, ২০২২ |
- এই বিশ্বকাপে খেলা নিউজিল্যান্ডের কারও এখন পর্যন্ত জাতীয় দলে অভিষেক হয়নি
বিসিবির ক্রিকেট অপারেশনস ম্যানেজারের দাবি
সাবেক ক্রিকেটার শাহরিয়ার নাফীস এখন বিসিবির ক্রিকেট অপারেশন্স ম্যানেজার। বছর জুড়ে বিসিবির দলগুলো কি কি ব্যস্ততায় থাকবে তা দেখতে হয় নাফীসকে। তার দাবি বিসিবি সঠিক পথে আছে।
ক্রিকেটারদের যথেষ্ট অনুশীলন সুবিধা দিয়ে আসছে বিসিবি। ক্রিকেটারদের ফর্ম ধরে রাখতে নানা কার্যক্রমও আছে বোর্ডের, “ক্রিকেটারদের জাতীয় দল, বাংলা টাইগার্স, এইচপি এবং যুব দল চারটা প্রোগ্রামে ব্যস্ত রাখা হয়। এখানে এক দলে গড়ে ২০ জন করে ক্রিকেটার থাকলে মোট ৮০ জন। তারা বছর জুড়ে উন্নত প্রশিক্ষণ পায়। এছাড়া জাতীয় লিগের ৮ দলে আরও ১২০ জন ক্রিকেটাররাও আছেন। শুধু প্রিমিয়ার লিগের দুই মাসে ক্রিকেটাররা ক্লাবের অধীনে থাকে।”
নাফীস মানছেন দেশ জুড়ে অনুশীলন সুবিধা অপ্রতুল। প্রথম শ্রেণিতে খেলা ক্রিকেটাররা এমন অভিযোগ করলে মেনে নেবেন। কিন্তু বিসিবির অধীনে থাকা ক্রিকেটারদের এই অভিযোগ মানতে নারাজ নাফীস।
তার মতে নিজেকে সেরা অবস্থানে রাখার দায়িত্ব ক্রিকেটারের, “এখন আমি বিশ্বের সেরা ক্রিকেটার হতে চাই তার ওই ইচ্ছা বা চেষ্টা থাকতে হবে। গত ৭-৮ বছরে যারা জাতীয় দলে থিতু হতে পারেনি তারা কিন্তু জাতীয় দলের বিভিন্ন প্রোগ্রামে ছিল। এখন কেউ কিন্তু কারও মধ্যে ইচ্ছা শক্তি বুনে দিতে পারে না। সাকিব-তামিম-মুশফিক-মাহমুদউল্লাহরা বিশ্বের সেরা হতে চেয়েছিল বলেই হয়েছে বা কাছাকাছি গিয়েছে।”
২০২০ যুব বিশ্বকাপ
দল | ক্রিকেটার | জাতীয় দলে অভিষেক (যথাক্রমে) |
বাংলাদেশ | মৃত্যুঞ্জয় চৌধুরী, পারভেজ হোসেন ইমন, রাকিবুল হাসান, তানজিদ হাসান তামিম, মাহমুদুল হাসান জয়, শামীম হোসেন, শাহাদাত হোসেন, শরিফুল ইসলাম, হাসান মুরাদ, তানজিম হাসান সাকিব | ২০২৩, ২০২২, ২০২৩, ২০২৩, ২০২১, ২০২১, ২০২৩, ২০২১, ২০২৩, ২০২৩ |
অস্ট্রেলিয়া | জ্যাক ফ্রেশার-ম্যাকগার্ক, টড মারফি, তানভীর সাঙ্গা | ২০২৪, ২০২৩, ২০২৩ |
নিউজিল্যান্ড | উইলিয়াম ও’রোর্কি | ২০২৩ |
ভারত | ধ্রুব জুরেল, রবি বিষ্ণুই, যশস্বী জয়সওয়াল, তিলক ভার্মা | ২০২৪, ২০২২, ২০২৩, ২০২৩ |
- এই বিশ্বকাপে খেলা দক্ষিণ আফ্রিকা ও ইংল্যান্ডের কোনও খেলোয়াড়ের এখন পর্যন্ত জাতীয় দলে অভিষেক হয়নি।
নাফীস উল্টো প্রশ্ন ছুঁড়েছেন বাদ পড়া ক্রিকেটারদের দিকে, “সাকিব-মাহমুদউল্লাহরা খারাপ করলে যেভাবে ফিরে আসে অন্যরা কি সেই পরিশ্রম, একাগ্রতা দেখাতে পেরেছে? একজন ক্রিকেটারকে যদি সেরা হতে হয় তাহলে তার মধ্যে পরিশ্রম, ইচ্ছা শক্তি, স্বপ্ন ও পরিকল্পনা এই চারটা জিনিস থাকতে হবে। যেটা বাইরে থেকে কেউ কারও মধ্যে দিয়ে দেওয়া যায় না।”
পরিশেষে
যুব দল থেকে জাতীয় দলে ডাক পাওয়া বোলাররা বেশিরভাগই ভালো করেছেন। ২০১৫ সালে সুযোগ পাওয়া মোস্তাফিজ এখনও ছোট ফরম্যাটে অপরিহার্য। ২০১৮ তে অভিষেক হওয়া অফস্পিনার নাঈম হাসান এখনও টেস্টে সুযোগ পেলে উইকেটের খাতায় নাম তোলেন।
দুর্ভাগ্য হলো, কয়েকজন বাদে বাকি ব্যাটাররা ব্যর্থ। যুব দলের প্রতিভাকে তারা সিনিয়র দলে রূপান্তর করতে পারেন না।