জাতীয় সঙ্গীত নিয়ে চলমান বিতর্কের মধ্যেই একযোগে জাতীয় সঙ্গীত গেয়ে কর্মসূচি পালন করেছে বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী।
শুক্রবার সকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবের বিপরীত পাশের সড়কে একসঙ্গে জাতীয় সঙ্গীত ‘আমার সোনার বাংলা’ গাওয়ার কর্মসূচিতে অংশ নেয় উদীচী, জাতীয় খেলাঘর আসরসহ বিভিন্ন সংগঠন। ব্যক্তিপর্যায়েও অনেকে এতে যোগ দেন।
গত মঙ্গলবার এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীতকে ‘স্বাধীনতার অস্তিত্বের পরিপন্থি’ আখ্যা দিয়ে তা পরিবর্তনের দাবি জানান জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমির গোলাম আযমের ছেলে আব্দুল্লাহিল আমান আযমী।
তিনি প্রশ্ন তোলেন ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে শহীদের সংখ্যা নিয়েও। বাহাত্তরের সংবিধান ‘বৈধ নয়’ মন্তব্য করে নতুন সংবিধান প্রণয়ন করারও দাবি জানান সেনাবাহিনীর সাবেক এই ব্রিগেডিয়ার জেনারেল।
এমন বক্তব্যের প্রতিবাদে সোশাল মিডিয়ায় তুমুল প্রতিবাদ জানায় অনেকে। এরই প্রতিক্রিয়ায় সম্মিলিত কণ্ঠে জাতীয় সঙ্গীত গাওয়ার কর্মসূচি ঘোষণা করে উদীচী।
শুক্রবার সকালে দেশের সব জেলা ও বিদেশে উদীচীর শাখা সংসদের শিল্পী-কর্মীসহ সাধারণ মানুষ একত্রে এই জাতীয় সঙ্গীত কর্মসূচি পালন করেছে বলেও জানায় সংগঠনটি।
ঢাকায় কেন্দ্রীয় আয়োজনে সূচনা বক্তব্য দেন উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সভাপতি অধ্যাপক বদিউর রহমান। সঞ্চালনা করেন উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সাধারণ সম্পাদক অমিত রঞ্জন দে।
উদীচীর সভাপতি অধ্যাপক বদিউর রহমান বলেন, “আমরা দায়বদ্ধ মানুষের প্রতি। আমাদের অর্জন আমাদের মুক্তিযুদ্ধ। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে যখনই কোনও আঘাত আসবে, আমরা তার প্রতিবাদ করব। আমাদের জাতীয় সঙ্গীত, জাতীয় পতাকা কারও দানে পাওয়া নয়। লাখো শহীদের রক্তে পাওয়া এ আমাদের অর্জন। এই অর্জনকে কোনওভাবেই কলঙ্কিত করা যাবে না। যখনই কেউ মুক্তিযুদ্ধ, জাতীয় পতাকা এবং জাতীয় সঙ্গীতে আঘাত করবে। আমরা তার প্রতিবাদ করবই।”
উদীচীর সাধারণ সম্পাদক অমিত রঞ্জন দে বলেন, “প্রগতিশীল সব আন্দোলন-সংগ্রামে উদীচী সামনে থেকেছে। যখনই দেশের উপর, আমাদের মুক্তিযুদ্ধের উপর আঘাত এসেছে- আমরা প্রতিবাদ করেছি। এবারও জাতীয় সঙ্গীত গেয়ে এই কর্মসূচি, সেই ধারাবাহিক প্রতিবাদেরই অংশ।”
উদীচী লিখিত বক্তব্যে জানায়, ছাত্র-জনতার গণআন্দোলনে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর থেকে মহান মুক্তিযুদ্ধ, জাতীয় পতাকা, জাতীয় সঙ্গীতসহ এদেশের আপামর জনসাধারণের প্রাণের সব বিষয় নিয়ে নানা ধরনের ষড়যন্ত্র দেখা যাচ্ছে। একটি ধর্মান্ধ স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী ছাত্র-জনতার অভূতপূর্ব গণঅভ্যূত্থানের মূল সুরকে বিকৃত করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে। এরা মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত চেতনার বিরোধীতা করা থেকে শুরু করে জাতীয় সঙ্গীত, জাতীয় পতাকার উপর আঘাত হানতে শুরু করেছে।
পরে সমবেত কণ্ঠে জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন করেন সবাই। সাধারণ মানুষও শিল্পীদের সঙ্গে জাতীয় সঙ্গীতে কণ্ঠ মেলান। এসময় জাতীয় পতাকাও উত্তোলন করা হয়।
শিল্পীরা সম্মিলিত কণ্ঠে একে একে গেয়ে শোনান মুক্তিযুদ্ধে প্রেরণা যোগানো দেশাত্ববোধক গান ‘মাগো ভাবনা কেন’, ‘পূর্ব দিগন্তে সূর্য উঠেছে’, ‘তীর হারা এই ঢেউয়ের সাগর পাড়ি দেব রে’ গানগুলো। অনুষ্ঠানের সমাপ্তি টানা হয় জাতীয় সঙ্গীত ‘আমার সোনার বাংলা’ গাওয়ার মধ্য দিয়ে।