Beta
বুধবার, ৩ জুলাই, ২০২৪
Beta
বুধবার, ৩ জুলাই, ২০২৪

যুক্তরাজ্যে নির্বাচন : লড়ছে কারা কোন প্রতিশ্রুতি দিয়ে

ঋষি সুনাক, কেয়ার স্টারমার, কার্লা ডেনার, এড ডেভি।
ঋষি সুনাক, কেয়ার স্টারমার, কার্লা ডেনার, এড ডেভি।
Picture of সকাল সন্ধ্যা ডেস্ক

সকাল সন্ধ্যা ডেস্ক

সরকারের মেয়াদ শেষের ছয় মাস আগে সাধারণ নির্বাচন হতে যাচ্ছে যুক্তরাজ্যে। জনপ্রিয়তা তলানিতে ঠেকার প্রেক্ষাপটে ক্ষমতাসীন রক্ষণশীল সরকারের প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক গত ২২ মে আগাম নির্বাচনের ঘোষণা দেন।

যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ হাউজ অব কমন্সের ৬৫০ আসনে আগামী ৪ জুলাই এই নির্বাচন হবে। এই নির্বাচনে রক্ষণশীলরা ক্ষমতা হারাতে যাচ্ছে বলে জনমত জরিপগুলো আভাস দিচ্ছে।

নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে যাওয়া দলগুলো তাদের ইশতেহার প্রকাশ করেছে। তাতে দলগুলো অর্থনীতি, ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিস (এনএইচএস), অভিবাসন এবং ইউরোপের বাকি দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্কসহ বিভিন্ন বিষয়ে নিজেদের অবস্থান তুলে ধরেছে।

যুক্তরাজ্যে সর্বশেষ নির্বাচন হয়েছিল ২০১৯ সালের ডিসেম্বর মাসে। এবারও নভেম্বর বা ডিসেম্বরেই নির্বাচন হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা খারাপ হতে থাকায় দলের প্রতি জনসমর্থন আরও কমে যাওয়ার ভয়ে আগেভাগেই নির্বাচনের ঘোষণা দেন সুনাক।

গত ৩০ মে পার্লামেন্ট ভেঙে দেওয়ার পরদিন থেকেই দলগুলো নির্বাচনী প্রচার এবং তহবিল সংগ্রহ শুরু করে।

পার্লামেন্ট ভেঙে দেওয়ার পর দেশটি ‘পারদাহ’ (শব্দটি পর্দার ইংরেজি) নামে পরিচিত একটি সময়কালে প্রবেশ করে। একে প্রাক-নির্বাচন সময়কালও বলা হয়।

পুরনো পার্লামেন্ট ভেঙে দেওয়ার পর থেকে নতুন নির্বাচিত সরকার গঠনের মধ্যবর্তী সময়কাল পর্যন্ত এর মেয়াদ। পারদাহ শব্দটির সঙ্গে লিঙ্গবৈষম্যের বিষয়টি জড়িত থাকায় এই শব্দটির বদলে এখন প্রাক-নির্বাচন সময়কাল বা উচ্চতর সংবেদনশীলতার কাল ব্যবহার করা হয়।

যাই হোক, এই সময়ে বেসামরিক কর্মচারী এবং কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় সরকারগুলোকে অবশ্যই নতুন কোনও উদ্যোগ বা পরিকল্পনা সম্পর্কে কোনও ঘোষণা দেওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।

কারণ এই সময়ে এমন কোনও ঘোষণা বিশেষ কোনও ব্যক্তি বা দলের জন্য সুবিধাজনক বা সমর্থনবর্ধক হয়ে উঠতে পারে। তবে এই সময়কালে রাজনৈতিক প্রার্থীদের ভোটের প্রচারে কোনও বাধা নেই।

ইংল্যান্ড কিংবা গ্রেট ব্রিটেন (ইংল্যান্ড, স্কটল্যান্ড, ওয়েলস) নয়, গোটা যুক্তরাজ্যেই (গ্রেট ব্রিটেনের সঙ্গে উত্তর আয়ারল্যান্ড মিলিয়ে) এই নির্বাচনের মধ্যদিয়ে নতুন সরকার গঠন হবে।

লড়াইয়ে কোন কোন দল, কার কী প্রতিশ্রুতি

কনজারভেটিভ পার্টি

দলটি কনজারভেটিভ এবং ইউনিয়নিস্ট পার্টি বা অনানুষ্ঠানিকভাবে টোরি বা টোরি পার্টি নামেও পরিচিত।

রাজনৈতিক মতাদর্শ : মধ্য-ডান থেকে ডান।

গঠনকাল : ১৮৩৪ সাল।

ইশতেহারে প্রতিশ্রুতি : ধার এবং ঋণ কমানো, ২০২৯-৩০ সালের মধ্যে বছরে ১৭.২ বিলিয়ন পাউন্ড (২২ বিলিয়ন ডলার) করে কর কমিয়ে আনা। এনএইচএসে বরাদ্দ বাড়ানো এবং আরও ৯২ হাজার নার্স ও ২৮ হাজার চিকিৎসক নিয়োগ। প্রতিরক্ষা ব্যয় মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ২.৫ শতাংশে উন্নীত করা। ইউরোপের বাকি দেশগুলোর সঙ্গে ব্রেক্সিট-পরবর্তী সম্পর্ক গড়ে তোলা। বৈধভাবে অভিবাসন কমানো এবং অবৈধভাবে আসা আশ্রয়প্রার্থীদের রুয়ান্ডায় ফেরত পাঠানো।

বর্তমান নেতা : ঋষি সুনাক।

সর্বশেষ ক্ষমতায় : ২০১০ থেকে প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরনের অধীনে (লিবারেল ডেমোক্র্যাটদের সঙ্গে জোটের প্রথম পাঁচ বছর)। তারপরে টেরিজা মে, বরিস জনসন, লিজ ট্রাস এবং ঋষি সুনাকের অধীনে ২০২৪ সাল পর্যন্ত।

বিদায়ী পার্লামেন্টের হাউজ অফ কমন্সে আসন সংখ্যা : ৩৪৪।

সাম্প্রতিক জরিপে সমর্থনের হার : ব্রিটিশ জনমত ও ডেটা পর্যবেক্ষণ সংস্থা ইউগভ এর মতে, ১৮ জুন পর্যন্ত জরিপ করা ব্যক্তিদের মধ্যে ২০ শতাংশ বলেছেন, তারা রক্ষণশীলদেরকে ভোট দিতে চান। দলটি ২০১৯ সালের নির্বাচনে ৪৩ শতাংশ ভোট পেয়েছিল।

লেবার পার্টি

রাজনৈতিক মতাদর্শ : মধ্য-বাম।

গঠনকাল : ১৯০০ সাল।

ইশতেহারে প্রতিশ্রুতি : নতুন শিল্প কৌশল প্রবর্তন এবং কর বাড়ানোর পরিবর্তে সম্পদ সৃষ্টিতে মনোনিবেশ করা। প্রতি সপ্তাহে আরও ৪০ হাজার স্বাস্থ্য অ্যাপয়েন্টমেন্ট যোগ করে এনএইচএস সেবার জন্য অপেক্ষার সময় কমানো এবং ক্যান্সার স্ক্যানারের সংখ্যা দ্বিগুণ করা। আশ্রয়প্রার্থীদের রুয়ান্ডায় পাঠানোর সরকারের পরিকল্পনা বাতিল করা। অবৈধ অভিবাসন ঠেকাতে সীমান্ত নিরাপত্তা জোরদার এবং ইউরোপের বাকি দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক উন্নত করা।

বর্তমান নেতা : কেয়ার স্টারমার।

সর্বশেষ ক্ষমতায়: টনি ব্লেয়ার ও গর্ডন ব্রাউনের অধীনে ১৯৯৭ থেকে ২০১০ পর্যন্ত।

বিদায়ী পার্লামেন্টের হাউজ অফ কমন্সে আসন সংখ্যা : ২০৫।

সাম্প্রতিক জরিপগুলোতে সমর্থনের হার : ৩৬ শতাংশ। দলটি ২০১৯ সালে ৩২ শতাংশ ভোট পেয়েছিল।

লিবারেল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি

রাজনৈতিক মতাদর্শ : মধ্য থেকে মধ্য-বাম।

গঠনকাল : ১৮৫৯ সাল। তবে লিবারেল পার্টি ও সোশাল ডেমোক্রেটিক পার্টির মিলনের মধ্য দিয়ে ১৯৮৮ সালে লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি হিসাবে চলছে। ১৯ এবং ২০ শতকের প্রথম দিকে লিবারেল পার্টি একটি শক্তিশালী দল ছিল।

ইশতেহারে প্রতিশ্রুতি : ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়ন। নবায়নযোগ্য শক্তির উৎপাদন বাড়ানো। চিকিৎসকের সংখ্যা এবং স্বাস্থ্যসেবা কর্মীদের বেতন বাড়ানো। প্রতি বছর প্রতিরক্ষা ব্যয় জিডিপির কমপক্ষে ২.৫ শতাংশে উন্নীত করা। রুয়ান্ডা স্কিম বাতিল এবং আশ্রয়প্রার্থীদের কাজ করার ওপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া। ২০৪৫ সালের মধ্যে গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন হ্রাস করা, প্রতিটি স্কুলে একজন মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ নিয়োগ।

বর্তমান নেতা : এড ডেভি।

সর্বশেষ ক্ষমতায় : ২০১০ থেকে ২০১৫ পর্যন্ত ডেভিড ক্যামেরনের অধীনে রক্ষণশীলদের সঙ্গে জোটের মাধ্যমে। সেসময় লিবারেল ডেমোক্রেট নেতা নিক ক্লেগ উপ-প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন।

বিদায়ী পার্লামেন্টের হাউজ অব কমন্সে আসন সংখ্যা : ১৫।

সর্বশেষ জরিপে সমর্থনের হার : ১৪ শতাংশ। ২০১৯ সালের নির্বাচনে দলটি ১২ শতাংশ ভোট পেয়েছিল।

গ্রিন পার্টি

রাজনৈতিক মতাদর্শ : বামপন্থি পরিবেশবাদী।

গঠনকাল : ১৯৯০ সাল।

ইশতেহারে প্রতিশ্রুতি : ধনীদের উপর কর বাড়ানো। রেলওয়ে, পানি ও জ্বালানি কোম্পানিগুলোকে রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণে আনা। এনএইচএসের বাজেট বাড়ানো। যুক্তরাজ্যের পারমাণবিক প্রতিরোধ কর্মসূচি ট্রাইডেন্ট বাতিল করা। অভিবাসীদের ‘শেকড় গাঁড়তে সহায়তা এবং কর্ম ভিসাধারীদের স্বামী-স্ত্রীদের যুক্তরাজ্যে নিয়ে আসার জন্য ন্যূনতম আয়ের প্রয়োজনীয়তা বাতিল করা। ইউরোপীয় ইউনিয়নে পুনরায় যোগদান। সমস্ত নতুন জীবাশ্ম জ্বালানি উত্তোলন বন্ধ এবং বায়ু ও সৌর শক্তির উপর নির্ভর করা। বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক পর্যায়ের শিক্ষা ফি বাতিল।

বর্তমান নেতা : কার্লা ডেনার ও অ্যাড্রিয়ান রামসে।

বিদায়ী পার্লামেন্টের হাউস অব কমন্সে আসন সংখ্যা : ১।

সর্বশেষ জরিপে সমর্থনের হার : ৭ শতাংশ, যা দলটির ইতিহাসে সর্বোচ্চ। দলটি ২০১৯ সালে মাত্র ১ শতাংশ ভোট পেয়েছিল।

রিফর্ম ইউকে পার্টি

রাজনৈতিক মতাদর্শ : ডানপন্থি।

গঠনকাল : ২০১৯ সাল (ব্রেক্সিট পার্টি হিসাবে)।

ইশতেহারে প্রতিশ্রুতি: অবকাঠামো প্রকল্পের গতি বাড়ানো। কর্মসংস্থান আইন বাতিল করে আমলাতন্ত্রকে অপসারণ, যাতে নিয়োগকর্তারা সহজেই কর্মীদের নিয়োগ ও চাকরিচ্যুত করতে পারেন। সম্পত্তি কেনার উপর কর কমানো। এনএইচএসের প্রথম সারির কর্মী এবং সামাজিক সেবা কর্মীদের কর কমানো। ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যসেবা খাতে কর রেয়াত। ৩০ হাজার নতুন সেনা কর্মী নিয়োগ করা এবং প্রতিরক্ষা ব্যয় বাড়ানো। অবৈধ অভিবাসীদের আটক এবং নির্বাসন। ব্রেক্সিটের পরেও যুক্তরাজ্য যে ৬ হাজার ৭০০টিরও বেশি ইইউ প্রবিধান বজায় রেখেছে, সেগুলো বাতিল করা। স্কুলে ‘ট্রান্সজেন্ডার মতাদর্শ’ নিষিদ্ধ করা।

বর্তমান নেতা : নাইজেল ফারাজ।

বিদায়ী পার্লামেন্টের হাউজ অফ কমন্সে আসন সংখ্যা : ১।

সর্বশেষ জরিপে সমর্থনের হার : ১৮ শতাংশ। ব্রেক্সিট পার্টিটি ২০১৯ সালে ২ শতাংশ ভোট পেয়েছিল।

স্কটিশ ন্যাশনাল পার্টি

রাজনৈতিক মতাদর্শ : মধ্য-বাম।

গঠনকাল : ১৯৩৪ সাল।

ইশতেহারে প্রতিশ্রুতি : যুক্তরাজ্য থেকে স্কটল্যান্ডের জন্য স্বাধীনতা অর্জন। এনএইচএসকে বেসরকারিকরণ। হাসপাতাল, স্কুল, রেল ও সড়ক অবকাঠামোতে বিনিয়োগ বাড়ানো। ট্রাইডেন্ট বাতিল। মাতৃত্বকালীন বেতন বাড়ানো। পুনরায় ইউরোপীয় ইউনিয়নে যোগদান। রুয়ান্ডা স্কিম বাতিল। গাজায় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির পক্ষে অবস্থান।

বর্তমান নেতা : জন সুইনি।

বিদায়ী পার্লামেন্টের হাউজ অফ কমন্সে আসন সংখ্যা : ৪৩।

সর্বশেষ জরিপে সমর্থনের হার : ৩ শতাংশ। দলটি ২০১৯ সালে ৪ শতাংশ ভোট পায়।

প্লেইড সিমরু পার্টি

রাজনৈতিক মতাদর্শ : মধ্য-বাম থেকে বাম।

গঠনকাল : ১৯২৫ সাল।

ইশতেহারে প্রতিশ্রুতি : ওয়েলসের স্বাধীনতা অর্জন। ওয়েলসের জন্য ন্যায্য তহবিল। আরও ৫০০ জন সাধারণ চিকিৎসক নিয়োগ। সাপ্তাহিক ২০ পাউন্ড (২৫ ডলার) করে শিশু বেনিফিট পেমেন্ট বাড়ানো। ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং যৌথ বাজারে পুনরায় যোগদান করা।

বর্তমান নেতা : রুনআপ ইওয়ার্থ।

বিদায়ী পার্লামেন্টের হাউজ অব কমন্সে আসন সংখ্যা : ৩।

সর্বশেষ জনমত জরিপে সমর্থনের হার : ১ শতাংশ। দলটি ২০১৯ সালে ০.৫ শতাংশ ভোট পায়।

তথ্যসূত্র : আল জাজিরা

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

ad

সর্বাধিক পঠিত