জুলাই অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার তিন মাস পর বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে যুক্তরাজ্যের অল-পার্টি পার্লামেন্টারি গ্রুপ (এপিপিজি)। এটি দেশটির পার্লামেন্টের একটি টেকনিক্যাল গ্রুপ, তবে সেখানে এর কোনও প্রাতিষ্ঠানিক স্বীকৃতি নেই।
গত নভেম্বরে প্রকাশিত ‘দ্য অনগোয়িং সিচুয়েশন ইন বাংলাদেশ’ শিরোনামে প্রতিবেদনটি শেখ হাসিনা পরবর্তী বাংলাদেশে ড. মুহাম্মদ ইউনূস নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের কর্মকাণ্ড নিয়ে লেখা।
সম্প্রতি এপিপিজির এই প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে কয়েকটি অভিযোগ ওঠার পর তা থেকে নিজেদের প্রত্যাহার করেছেন যুক্তরাজ্যের একদল এমপি। তাদের মধ্যে আছেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ক্ষমতাসীন লেবার পার্টির টানা চার বারের এমপি রূপা হক।
এই এমপিদের ভাষ্য, প্রতিবেদনটিতে দেওয়া তথ্য সঠিক নয় এবং এটি বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের প্রতি ‘পক্ষপাতদুষ্ট’।
দ্য গার্ডিয়ানে রবিবার প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, এপিপিজি তাদের প্রতিবেদনে শান্তিতে নোবেলজয়ী ড. ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি অভিযোগ এনেছিল।
তাতে বলা হয়, আইনকে ‘রাজনৈতিক হাতিয়ার’ হিসেবে ব্যবহার করছে ড. ইউনূসের প্রশাসন এবং কট্টর ইসলামিস্টদের তারা বাংলাদেশে শক্তিশালী করছেন।
প্রধানত নয়াদিল্লিভিত্তিক গবেষণা সংস্থা রাইটস অ্যান্ড রিস্ক অ্যানালাইসিসের দেওয়া তথ্যের ওপর ভিত্তি করে এপিপিজির প্রতিবেদনে বলা হয়, “আমরা প্রমাণ পেয়েছি, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের বেশ কয়েকজন মন্ত্রী, সংসদ সদস্য, বিচারক, আইনজীবী, বিশেষজ্ঞ ও সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলার অভিযোগ এনেছে অন্তর্বর্তী সরকার, যা তাদের বিশ্বাসযোগ্যতাকে প্রশ্নের সামনে দাঁড় করিয়েছে।”
অন্যদিকে, ব্রিটিশ বিশেষজ্ঞরা এই প্রতিবেদনের সমালোচনা করে বলেছেন, এটিতে জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে নিহতদের সংখ্যা কম করে বলা হয়েছে। এতে বলা হয়, গণঅভ্যুত্থানে সংঘটিত হত্যাকাণ্ডগুলোর বেশিরভাগই শেখ হাসিনা ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় পুলিশ ও সশস্ত্র বাহিনীর হাতে হয়নি।
বরং ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে যাওয়ার পর যখন লাখ লাখ মানুষ পুলিশের দমন-পীড়নের বিরুদ্ধে রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করে এবং সদ্য ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনা সরকারের সমর্থকদের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নিতে যায়, তখনই হতাহতের ঘটনা ঘটে।
এই বয়ান নিয়ে দ্বিমত পোষণ করে গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রতিবেদনের এই অংশের বক্তব্যের সঙ্গে গত আগস্টে জাতিসংঘের মানবাধিকার সংস্থা (ওএইচসিএইচআর) প্রকাশিত প্রতিবেদনের মিল নেই।
সেখানে বলা হয়েছে, গণঅভ্যুত্থানে সহিংসতার জন্য দায়ী শেখ হাসিনার নিরাপত্তা বাহিনী ও তার দল আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ।
গত সপ্তাহে যুক্তরাজ্যের ক্ষমতাসীন লেবার পার্টির এমপি রূপা হক হাউস অব কমন্সে এপিপিজির প্রতিবেদনের সমালোচনা করেন।
তিনি পার্লামেন্টকে জানান, সম্প্রতি তিনি বাংলাদেশ সফর করেছেন। সেসময় বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস এপিপিজির প্রতিবেদনটি নিয়ে তাকে প্রশ্ন করেন।
ইউনূস জানতে চেয়েছিলেন, “পার্লামেন্টের নামে প্রতিবেদনটিতে যে মিথ্যা কথা বলা হয়েছে, এনিয়ে আপনার সরকার কী করছে?”
শেখ হাসিনার বোনের মেয়ে টিউলিপ সিদ্দিকও যুক্তরাজ্য পার্লামেন্টের সদস্য। রূপা হকের মতো তিনিও এনিয়ে চার বার নির্বাচিত হলেন। গত জুন মাসে লেবার পার্টি ক্ষমতায় যাওয়ার পর তাকে মন্ত্রীও করা হয়। তবে বাংলাদেশে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর তার সংশ্লিষ্টদের কাছ থেকে ফ্ল্যাট উপহার নেওয়া নিয়ে সমালোচনার মুখে সম্প্রতি পদত্যাগ করেন।
এদিকে পার্লামেন্টে রূপা হক অভিযোগ তোলার পর এপিপিজি সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, তারা ওই প্রতিবেদন পুনঃমূল্যায়ন করবেন।