Beta
শুক্রবার, ২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫
Beta
শুক্রবার, ২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫

ইউক্রেনের খনিজ, যা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে এত বচসা

Ukraine Minarels
[publishpress_authors_box]

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করবেন। এই চুক্তির মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনের বিপুল পরিমাণ মূল্যবান ও বিরল খনিজ সম্পদ অনুসন্ধান, উত্তোলন বা ব্যবহারের অনুমতি পাবে।

জেলেনস্কি এরইমধ্যে চুক্তির প্রাথমিক শর্তে সম্মতি দিয়েছেন। ট্রাম্প বলেছেন, এই চুক্তির লক্ষ্য হলো রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধের সময় ইউক্রেনকে দেওয়া যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তার অর্থ ফেরত পাওয়া। রাশিয়া ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে ‘বিশেষ অভিযান’ শুরু করেছিল।

চুক্তি স্বাক্ষরের পর উভয় পক্ষ ইউক্রেন পুনর্গঠন বিনিয়োগ তহবিল নিয়ে আলোচনা শুরু করবে। এই আলোচনায় সম্পদের বণ্টন কিভাবে হবে তা নির্ধারণ করা হবে।

চুক্তির জানা শর্তগুলো

চুক্তিতে একটি প্রস্তাবনা উল্লেখ করা হয়েছে। এতে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউক্রেন একসঙ্গে একটি পরিকল্পনা তৈরি করবে। এই পরিকল্পনায় ইউক্রেনের বিরল ও গুরুত্বপূর্ণ খনিজ, তেল ও গ্যাস খাত থেকে ভবিষ্যৎ আয় ব্যবহারের বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত থাকবে।

একটি পুনর্গঠন বিনিয়োগ তহবিল গঠন করা হবে। এর লক্ষ্য হলো ইউক্রেনের প্রাকৃতিক সম্পদ থেকে প্রাপ্ত আয় পুনরায় ইউক্রেনের পুনর্গঠন ও উন্নয়ন প্রকল্পে বিনিয়োগ করা। এছাড়া, এই তহবিল অবকাঠামো উন্নয়ন ও রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্যও ব্যবহার করা হবে।

ইউক্রেন রাষ্ট্রায়ত্ত সম্পদ থেকে পাওয়া আয়ের ৫০ শতাংশ যৌথ তহবিলে প্রদান করবে। বাকি ৫০ শতাংশ অর্থ কোথা থেকে আসবে তা এখনও স্পষ্ট নয়। এছাড়া, তহবিলে যুক্তরাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণ কতটুকু হবে তা নিয়েও অনিশ্চয়তা রয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনের দীর্ঘমেয়াদি অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ও সমৃদ্ধি নিশ্চিত করতে সহায়তা করবে। যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনের স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টাকে সমর্থন করবে, তবে কোনো সরাসরি নিরাপত্তা নিশ্চয়তা দেবে না।

যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনকে কতটা সহায়তা দিয়েছে

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প আগে দাবি করেছিলেন, ইউক্রেনের প্রাকৃতিক সম্পদ ব্যবহার থেকে সম্ভাব্য ৫০০ বিলিয়ন ডলার আয়ের অধিকার যুক্তরাষ্ট্রের হওয়া উচিত, যেন ইউক্রেনকে দেওয়া সামরিক সহায়তা ও কিয়েভের সহায়তার ক্ষতিপূরণ দেওয়া যায়। তবে জেলেনস্কি এর বিরোধিতা করে বলেছিলেন, ইউক্রেনকে দেওয়া যুক্তরাষ্ট্রের প্রকৃত সহায়তা অনেক কম।

যুদ্ধ শুরুর পর থেকে ইউক্রেনকে সামরিক, আর্থিক ও মানবিক সহায়তা ট্র্যাক করছে কিল ইনস্টিটিউট ফর দ্য ওয়ার্ল্ড ইকোনমি। সংস্থাটির তথ্য অনুসারে, যুক্তরাষ্ট্র ১১৪ বিলিয়ন ইউরো (১১৮ বিলিয়ন ডলার) সহায়তা দিয়েছে ইউক্রেনকে।

তবে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এই পরিমাণটি প্রায় ১৮৩ বিলিয়ন ডলার বলে উল্লেখ করেছে। এর মধ্যে ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা স্টক (প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত সরঞ্জাম বা সামগ্রী, যেমন অস্ত্র, গোলাবারুদ, রসদ এবং অন্যান্য সামরিক উপকরণ) খরচও অন্তর্ভুক্ত।

ইউক্রেনের কী কী খনিজ রয়েছে

ইউক্রেনের অর্থ মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, দেশটি ইউরোপীয় ইউনিয়নের গুরুত্বপূর্ণ হিসাবে চিহ্নিত ৩৪টি খনিজের মধ্যে ২২টি খনিজের মজুদ রয়েছে।

ইউক্রেনের কাছে বিরল পৃথিবী উপাদানেরও (আরইইএস) মজুদ রয়েছে। এই ১৭টি ধাতু খনিজ উচ্চ প্রযুক্তির অ্যাপ্লিকেশনে ব্যবহৃত হয়, যেমন ইলেকট্রনিকস, প্রতিরক্ষা, মহাকাশ ও নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে। এর মধ্যে ল্যানথানাম, সেরিয়াম ও নিওডিমিয়াম অন্তর্ভুক্ত।

জাতিসংঘের রুশ ভাষার নিউজ সার্ভিস অনুযায়ী, ২০২২ সালের হিসাবে ইউক্রেনের গুরুত্বপূর্ণ খনিজের মজুদ বিশ্বব্যাপী সরবরাহের প্রায় ৫ শতাংশ ছিল। এর গুরুত্বপূর্ণ খনিজগুলোর মধ্যে রয়েছে মূল্যবান ধাতু ফেরোঅ্যালয়, টাইটানিয়াম, জিরকোনিয়াম, গ্রাফাইট ও লিথিয়াম।

ইউক্রেন বিশ্বব্যাপী টাইটানিয়াম উৎপাদনের ৭ শতাংশের জন্য দায়ী। দেশটির লিথিয়াম মজুদ ব্যাপকভাবে অব্যবহৃত এবং ইউরোপের সবচেয়ে বড় লিথিয়াম মজুদের মধ্যে একটি। এর পরিমাণ আনুমানিক ৫ লাখ টন।

খনিজগুলোর অবস্থান

বেলগ্রেড ও নিউইয়র্কে নিবন্ধিত পাবলিক পলিসি থিঙ্কট্যাংক সেন্টার ফর ইন্টারন্যাশনাল রিলেশনস অ্যান্ড সাস্টেইনেবল ডেভেলপমেন্টের (সিআইআরএসডি) তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালে রাশিয়ার আক্রমণের আগে ইউক্রেন ২০ হাজার খনিজ মজুদ নিবন্ধন করেছিল। এর মধ্যে ৮ হাজার ৭০০টি প্রমাণিত ছিল। এই মজুদগুলোর মধ্যে ১২০টি বিশ্বব্যাপী ব্যবহৃত খনিজ ও ধাতুর ১১৭টি অন্তর্ভুক্ত ছিল।

ইউক্রেনের কাছে কয়লা, গ্যাস, লোহা, ম্যাঙ্গানিজ, নিকেল, খনিজ, টাইটানিয়াম ও ইউরেনিয়ামের মজুদ রয়েছে। আর এই খনিজগুলোর বেশিরভাগ লুহানস্ক, দনেৎস্ক, ঝাপোরিজিয়া, দনিপ্রোপেট্রোভস্ক, কোভ্রোহাদ, পোলতাভা ও খারকিভ অঞ্চলে বিস্তৃত।

রাশিয়া এখন ইউক্রেনের প্রায় ২০ শতাংশ অঞ্চল নিয়ন্ত্রণ করছে। এর মধ্যে লুহানস্ক, দনেৎস্ক ও জাপোরিজিয়ার বড় অংশ রয়েছে। ইউক্রেনের খনিজ সম্পদের প্রায় ৪০ শতাংশই ওই অঞ্চলগুলোতে আছে বলে জানিয়েছে ইউক্রেনের থিঙ্কট্যাংক উই বিল্ড ইউক্রেন ও ন্যাশনাল ইনিস্টিটিউট অব স্ট্রাটেজিক স্টাডিজ।

ইউক্রেন জানিয়েছে, তার বিরল খনিজ উপাদানের একটি বড় অংশ দনেৎস্ক ও লুহানস্ক অঞ্চলে অবস্থিত। ইউক্রেনের সবচেয়ে বড় লিথিয়াম মজুদগুলোর একটি শেভচেঙ্কো লিথিয়াম খনিজ ক্ষেত্র। এটি দনেৎস্কের একটি গ্রামে অবস্থিত।

ইউক্রেনের প্রাকৃতিক সম্পদের মূল্য

ইউক্রেন ইনভেস্টের তথ্য অনুযায়ী, ইউক্রেনের সরকারি বিনিয়োগ প্রচার অফিস দেশটির খনিজ সম্পদের মূল্যমান নির্ধারণ করে। আর দপ্তরটির মতে, দেশটির প্রাকৃতিক সম্পদের মূল্য ট্রিলিয়ন ডলারেরও বেশি।

সবচেয়ে বেশি প্রাকৃতিক সম্পদসমৃদ্ধ অঞ্চলগুলি দেশের পূর্বে অবস্থিত, যা প্রধানত রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে।

এই সম্পদগুলোর প্রবেশাধিকার হারানো ইউক্রেনের অর্থনীতিকে প্রভাবিত করেছে এবং বৈশ্বিক সরবরাহ শৃঙ্খলকেও বিঘ্নিত করেছে। বিশেষ করে উচ্চ প্রযুক্তি ও প্রতিরক্ষা খাতে।

যুদ্ধ চলমান থাকার পরও ইউক্রেন ইনভেস্ট রিপোর্ট করেছে যে, খনির খাত এখনও অর্থনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে রয়েছে। নিরাপদ অঞ্চলে উৎপাদন অব্যাহত রয়েছে এবং দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগের সুযোগ নিরাপদ করতে আন্তর্জাতিক আগ্রহ বাড়ছে।

বিশ্বে সবচেয়ে বেশি বিরল খনিজ কোথায়

ইউএস জিওলজিকাল সার্ভে’র মিনারেল কমোডিটি সামারিজ ২০২৫ অনুযায়ী, চীনের ৪৪ মিলিয়ন মেট্রিক টন। দেশটি বিশ্বব্যাপী বিরল কনিজ উপাদান প্রক্রিয়াকরণের প্রায় ৭০ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ করে।

এরপরই ব্রাজিলের ২১, ভারত ৬ দশমিক ৯, অস্ট্রেলিয়া ৫ দশমিক ৭, রাশিয়া ৩ দশমিক ৮, ভিয়েতনাম ৩ দশমিক ৫, যুক্তরাষ্ট্র ১ দশমিক ৯, গ্রিনল্যান্ড ১ দশমিক ৫ মিলিয়ন, তানজানিয়া ৮ লাখ ৯০ হাজার, দক্ষিণ আফ্রিকা ৮ লাখ ৬০ হাজার, কানাডা ৮ লাখ ৩০ হাজার ও থাইল্যান্ডের সাড়ে চার হাজার মেট্রিন টন খনিজ সম্পদ রয়েছে।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত