Beta
রবিবার, ৭ জুলাই, ২০২৪
Beta
রবিবার, ৭ জুলাই, ২০২৪
প্রত্যয় পেনশন স্কিমের বিরোধিতায় আন্দোলন

সরকারের সাড়া না পেয়ে হতাশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকরা

প্রত্যয় স্কিমে অন্তর্ভুক্তির বিরোধিতা করে ধর্মঘটী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা কলাভবনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করে যাচ্ছে।
প্রত্যয় স্কিমে অন্তর্ভুক্তির বিরোধিতা করে ধর্মঘটী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা কলাভবনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করে যাচ্ছে।
Picture of অনিক রায়

অনিক রায়

‘প্রত্যয়’ পেনশন স্কিমে নিজেদের অন্তর্ভুক্তির বিরোধিতায় ধর্মঘটের চতুর্থ দিনেও সরকারের কাছ থেকে আলোচনার ডাক না পেয়ে হতাশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকরা।

বৃহস্পতিবার আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ও সড়ক পরিবহনমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের দেখা পাবেন বলে আশা করছিল আন্দোলনকারী বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক ফেডারেশন।

কিন্তু ব্যস্ততার কারণে তিনি এদিন সময় দিতে পারেননি। কবে বৈঠকটি হতে পারে, তার কোনও দিনক্ষণও ঠিক হয়নি।

এদিকে আন্দোলন থেকে শিক্ষকদের পাঠদানে ফিরিয়ে নেওয়ার উদ্যোগটি কে নেবে, তাও স্পষ্ট না। শিক্ষা মন্ত্রণালয় দেখাচ্ছে অর্থ মন্ত্রণালয়কে। আবার অর্থমন্ত্রী শিক্ষকদের আন্দোলনকে ‘অযৌক্তিক’ বলে দিয়েছেন। পেনশন কর্তৃপক্ষও একটি ব্যাখ্যা দিয়েই নিজেদের দায়িত্ব সেরেছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও কর্মচারীদের পেনশন নতুন প্রত্যয়ে স্কিমে নেওয়ার সিদ্ধান্ত সরকার নেওয়ার পর থেকে তার বিরোধিতা করছেন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকরা।

সরকারের সিদ্ধান্ত বাতিলে ৩০ জুন পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়েছিল শিক্ষকরা। তাতে সাড়া না পেয়ে ১ জুলাই এই স্কিম কার্যকর হওয়ার পর ধর্মঘট শুরু করে দেশের ৩৫টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। বৃহস্পতিবার ছিল তাদের কর্মসূচির চতুর্থ দিন।

শিক্ষকরা বলছেন, এখন পর্যন্ত আনুষ্ঠানিকভাবে শিক্ষা মন্ত্রণালয় কিংবা অর্থ মন্ত্রণালয় কেউই কোনও উদ্যোগ নেয়নি। কেন কোনও উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে না, তাও বুঝতে পারছেন না তারা।

শিক্ষা মন্ত্রণালয় কিংবা অর্থ মন্ত্রণালয় কেউ উদ্যোগ না নিলেও কর্মবিরতির তৃতীয় দিনে ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে আলোচনার ডাকে কিছুটা স্বস্তি ফিরেছিল শিক্ষকদের মধ্যে। কিন্তু দুই দফায় সময় ঠিক হওয়ার পরও বৈঠকটি না হওয়ায় আবারও অনিশ্চিত হয়ে পড়ে আলোচনার ভবিষ্যৎ।

সরকারের পক্ষ থেকে ডাক না পেয়ে হতাশা প্রকাশ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক জিনাত হুদা।

তিনি সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “আমরা তো ধরুন একটি ধারায় আন্দোলন করছি। এখন তো নানামুখী আন্দোলন দেখতে পাচ্ছি। আমি খুবই শঙ্কিত।

“শিক্ষা ব্যবস্থাটা এত ভালো করে চলছিল, স্থিতিশীল ছিল। সেখানে যারা কনসার্ন অথরিটি আছে কেন বিষয়টিকে বুঝতে পারছেন না যে এটা দ্রুত সমাধান হওয়া দরকার। এটা আমার বোধগম্য হচ্ছে না।”

সরকারের কেউ এখন পর্যন্ত যোগাযোগ না করায় তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “আনুষ্ঠানিক বৈঠক অদ্যাবধি আমাদের সাথে বসা হয়নি। অর্থ মন্ত্রণালয় তো আমাদের কনর্সান না। আমার যতটুকু জানি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সাথে এখন পর্যন্ত আমাদের সাথে কোনও যোগাযোগ করা হয়নি।

“আমরা আশা করেছিলাম, আজকে (বৃহস্পতিবার) সকাল ১১টায় সভাটি হবে। কিন্তু সভাটি স্থগিত করা হবে। এটা খুব দ্রুত সমাধান হওয়া উচিৎ। এটা অতি জরুরি। কারণ, হাজার হাজার ছাত্রের ভবিষ্যৎ এটার সাথে জড়িত।”

ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে বৈঠকটি বৃহস্পতিবার না হলেও অচিরেই সরকারের সঙ্গে আলোচনা হবে বলে আশাবাদী বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক ফেডারেশনের মহাসচিব এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. নিজামুল হক ভূইয়া।

তিনি সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “সরকার গড়িমসি করছে, তা বলতে চাচ্ছি না। নিশ্চয়ই সরকার সবার সাথে কথা বলে আমাদের সাথে বসতে চাচ্ছে।”

তবে বৈঠকেটি দ্রুত হওয়ার ওপর জোর দিয়ে তিনি বলেন, “এটা দীর্ঘায়িত করা হলে শিক্ষা ব্যবস্থার জন্যই খারাপ হবে। তাই এটা দ্রুত সমাধান জরুরি।”

প্রত্যয় স্কিমে অন্তর্ভুক্তির বিরোধিতা করে ধর্মঘটী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সঙ্গে কর্মচারীরাও যোগ দিয়েছে।

নীল-সাদা মিলে আন্দোলনে

ওয়ান-ইলেভেনের পর এই প্রথম আওয়ামী লীগ ও বিএনপি সমর্থক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের একসঙ্গে আন্দোলনে দেখা যাচ্ছে। ১৬ বছর পর এক মঞ্চে বসেছেন নীল ও সাদা দলের শিক্ষকরা।

এবিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএনপি সমর্থক শিক্ষকদের সংগঠন সাদা দলের আহ্বায়ক লুৎফর রহমান সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “আমাদের আদর্শের ভিন্নতা থাকলেও এই আন্দোলন আমাদের বাঁচা-মরার আন্দোলন। এতে আমাদের জিততেই হবে। তা নাহলে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে দায়ী থেকে যাব।”

সমস্যা সমাধানে দ্রুত সরকারের পদক্ষেপ প্রত্যাশা করে তিনি বলেন, “সরকারের কালক্ষেপণ করা উচিৎ হবে না। এটি করলে এই আন্দোলনের আকার বড় হয়ে যাবে। সাধারণ মানুষও যুক্ত হবে আন্দোলনে।”

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জিনাত হুদা সাদাদের সঙ্গে আন্দোলনের প্রসঙ্গে বলেন, এই আন্দোলনকে দলীয় বিবেচনায় নেওয়া যাবে না।

“আগামী প্রজন্মের সুরক্ষার জন্য এই আন্দোলন। এটা আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা বাঁচানোর আন্দোলন। এজন্যই একত্রে আন্দোলন করছি।”

উদ্যোগ নেবে কে

শিক্ষকদের ধর্মঘটের দ্বিতীয় দিন ২ জুলাই জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষ একটি ব্যাখ্যা দেয় প্রত্যয় স্কিমের। তবে সেই ব্যাখ্যায় সন্তুষ্ট নয় শিক্ষকরা।

তারা বলছেন, প্রত্যয় স্কিমের প্রজ্ঞাপন প্রত্যাহার, সুপার গ্রেডে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের অন্তর্ভুক্তি এবং শিক্ষকদের জন্য স্বতন্ত্র বেতন স্কেল প্রবর্তন না করা পর্যন্ত তাদের এই কর্মবিরতি কর্মসূচি চলবে।

শিক্ষকদের আন্দোলন শিক্ষা মন্ত্রণালয় কোনও পদক্ষেপ নিচ্ছে না।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিশ্ববিদ্যালয় বিভাগের অতিরিক্ত সচিব খালেদা আক্তার সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “এটি আমাদের দেখার বিষয় না। এটা অর্থ মন্ত্রণালয়ের দেখার বিষয়। তারা যে সিদ্ধান্ত নেবে, সেটাই হবে।”

শিক্ষকদের সঙ্গে মন্ত্রণালয়ের যোগাযোগ আছে কি না- জানতে চাইলে তিনি বলেন, “শিক্ষকরা পাবলিকলি তাদের বক্তব্য দিচ্ছেন। আপনারা দেখছেন আমরাও দেখছি।”

এনিয়ে আর কোনও কথা বলতে চাননি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এই কর্মকর্তা।

অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী শিক্ষকদের আন্দোলনকে ‘অযৌক্তিক’ বলার পর অর্থ মন্ত্রণালয়ও এনিয়ে কোনও পদক্ষেপ নেয়নি।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা গাজী তৌহিদুল ইসলাম সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “এখন পর্যন্ত কোনও সভার সিদ্ধান্ত হয়নি। ভেতরে ভেতরে আলাপ-আলোচনা হতে পারে। কিন্তু আনুষ্ঠানিকভাবে এখনও কোনও সভার কথা ভাবছে না মন্ত্রণালয়।”

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

ad

সর্বাধিক পঠিত