কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে সোশাল মিডিয়াতে এরমধ্যে অনেকেই নিজের লেখা-গাওয়া গানের ভিডিও প্রকাশ করেছেন। এরমধ্যে হিপ হপ জনরার র্যাপ ঘরানার গানই বেশি। এছাড়া রক ও মেটালধর্মী কিছু গানও আছে।
ফেইসবুক, ইউটিউব এবং স্ট্রিমিং সাইট স্পটিফাইতে এখন পর্যন্ত ৩০টির মতো বাংলা র্যাপ নিয়ে আলোচনা চলছে।
র্যাপ সংগীত কী?
রিদম অ্যান্ড পোয়েট্রি সংক্ষেপে ইংরেজি বানানে আরএপি বা র্যাপ হয়ে ওঠে।
অ্যাফ্রো-আমেরিকান সংস্কৃতি হতে র্যাপ সংগীতের যাত্রা। সত্তরের দশকে আমেরিকার নিউইয়র্ক শহরে র্যাপ সংগীতের চল শুরু হয়।
অন্তমিল দিয়ে লেখা গীতিকবিতা আর হিপহপ মিউজিকের মিশেলে সৃষ্টি হয় একেকটি র্যাপ। র্যাপ গাওয়া হয় বাংলায় ছড়া পাঠের মতো করে।
ধীরে ধীরে র্যাপ ঘরানার আরও ডালাপালা জন্ম নিয়েছে। আশির দশকের মাঝামাঝি ছিল র্যাপ সংগীতের সুবর্ণ সময়।
বাংলা র্যাপ গান
বাংলাদেশেও র্যাপ কিংবা হিপহপ ঘরানার চর্চা হয়। কোটা সংস্কার আন্দোলন নিয়ে ছড়িয়ে দেওয়া গানগুলোকে র্যাপ গানের ‘আপরাইজ’ বলছেন অনেকে ফেইসবুকে।
এসব নিয়ে সকাল সন্ধ্যার সঙ্গে কথা বলেছেন গীতিকার লতিফুল ইসলাম শিবলী।
তিনি বলেন, “বাংলাদেশে র্যাপ সংগীত দেরি করে এলেও পৃথিবীতে এই ধারার উত্থান ঘটেছে বহু আগেই।
“বাংলাদেশে আমরা ৯০ দশকে প্রথম র্যাপ সংগীত শুনতে পাই। পলাশ এবং পার্থ দা মিলে একটা…(গীতিকার আশরাফ বাবু, রেকর্ডিস্ট আজম বাবু ও সোলস ব্যান্ডের পার্থ বড়ুয়া মিলে একটি ব্যান্ড গঠন করেন। যার নাম ছিল ত্রিরত্ন। ) যার নাম ‘ক্ষ্যাপা’। ওটা বেশ জনপ্রিয় হয়েছিল। কিন্তু সামহাউ আর কন্টিনিউ করেনি।”
গানের খুব কঠিন ধরন র্যাপ, বললেন লতিফুল ইসলাম শিবলী।
“র্যাপ সংগীত রচনা করতে অনেক স্কিল লাগে। এটা অনেকটা আমাদের প্রাচীন চারণ কবিদের মতো। আবার অনেকটা পালাগানের কবিদের মতো। ইন্সট্যান্ট গান বানিয়ে ফেলা, তারপর সমসাময়িক প্রেক্ষাপটে গান বানিয়ে ফেলা, র্যাপ আসলে ওই জাতীয় একটা সংগীত।”
কোটা সংস্কার আন্দোলনে ছয় শিক্ষার্থী নিহত হলে একে একে প্রকাশিত হতে থাকে গান।
হিপহপের ছন্দে র্যাপার সেজানের ‘কথা ক’ গানের লিরিকস হচ্ছে – “৫২ তে ২৪ -এ তফাত কই রে? কথা ক /দ্যাশটা বলে স্বাধীন তাইলে খ্যাচ টা কই রে? কথা ক / আমার ভাই বইন মরে রাস্তায় তর চেষ্টা কইরে? কথা ক /
কালসাপ ধরসে গলা পেঁচায়, বাইর কর সাপের মাথা কো?”
আরেক হিপহপ গায়ক হান্নানের ‘আওয়াজ উডা’ নিয়েও চর্চা চলছে বেশ। এই গানের লিরিকস হচ্ছে – “আওয়াজ উডা বাংলাদেশ / আওয়াজ উডা বাংলাদেশ / রাস্তায় এত রক্ত কাগো / আওয়াজ উডা আওয়াজ উডা বাংলাদেশ / আওয়াজ উডা বাংলাদেশ / রাস্তায় গুল্লি করলো কেডা আওয়াজ উডা বাংলাদেশ।”
এই গানের পর রাস্তায় গণতল্লাশির সময় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে আটক হন র্যাপার হান্নান হোসাইন শিমুল। বলা হয়, তার মোবাইল ফোনে আন্দোলনের তথ্য থাকার কারণেই এই আটক।
ফেইসবুকে অনেকেই বলছেন, আন্দোলনের পক্ষে গান গাওয়ার কারণেই হান্নানকে আটক করা হয়েছে।
হান্নানকে আটকের এই ঘটনা ‘নাড়া’ দিয়েছে গীতিকার লতিফুল ইসলাম শিবলীকে।
এই প্রসঙ্গে তিনি সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “হান্নানকে গ্রেপ্তার করে খুবই অন্যায় করেছে সরকার। হান্নান এমন সময় তার দায়িত্ব পালন করেছে যখন এদেশের সংগীত অঙ্গনের কেউই কোনো কথা বলছিল না।
“সংগীত তো অনেক বড় মাধ্যম নিজেকে প্রকাশ করার। এবং পৃথিবীর অনেক দেশে রেবেল সং বলে একটা ধারাই আছে। মুক্তিযুদ্ধের সময় স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের গান মুক্তিযোদ্ধাদের অনেক ইন্সপিরেশন দিয়েছিল।”
র্যাপ সংগীতের সূত্র ধরে ৯০ -এর এরশাদ বিরোধী আন্দোলনের কথা মনে করিয়ে দিলেন লতিফুল ইসলাম শিবলী।
র্যাপার হান্নানের প্রশংসা করে তিনি বলেন, “৯০ -এর স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনেও অনেক গান তৈরি হয়েছিল।
“আমাদের এই সময়ে এসে হান্নান যে কাজটি করেছে সেটা অত্যন্ত প্রশংসনীয়। এটা অনেক বিপ্লবী, আমি তো তার জন্য গর্ববোধ করছি।”
ক্ষোভ জানিয়ে শিবলী বলেন, আন্দোলন ঘিরে চলমান অস্থিতিশীলতায় শিল্পীদেরও দায়িত্ব আছে।
“এই সময় যখন গণদাবি নিয়ে কথা বলার দরকার ছিল, ঠিক তখন তারা খুব ঘৃণ্যভাবে নিশ্চুপ। ঠিক সেই সময় আমাদের একজন তরুণ বাংলাদেশকে যেভাবে জাগিয়ে তুলেছে… সংগীতাঙ্গনের একজন হিসেবে আমি তাকে নিয়ে গর্ববোধ করছি।”
‘শেফ আইকিউ’ ছদ্মনামে আরেক র্যাপারের গানও ঘুরে বেড়াচ্ছে ফেইসবুকে। তার ‘বাংলা মা’ র্যাপ শেয়ার দিচ্ছেন অনেকেই।
‘দেশ সংস্কার’, ‘বায়ান্ন’, ‘স্বাধীনতার গন্ধ’, ‘গদি ছাড়’, ‘দাম দে’, ‘স্লোগান’, ‘দেশ কারো বাপের না’, ‘ফ্রিডম’, ‘রণক্ষেত্র’ শিরোনামে আরও এক গুচ্ছ র্যাপ গানও শোনা যাচ্ছে।
কড়ে গুণে দেখা গেলো এমন হিপহপ গানের সংখ্যা সব মিলিয়ে ৩০ হবে।
অনলাইন অ্যাকটিভিস্টদের বড় অংশ আন্দোলনের উত্তাপ প্রকাশে এই মুহূর্তে র্যাপ গানকেই সঠিক মনে করছেন।
পাঠকদের সুবিধার্থে সবগুলো গানের লিংক দেওয়া হলো-
কথা ক
আওয়াজ উডা
বাংলা মা
দেশ সংস্কার
বায়ান্ন
স্বাধীনতার গন্ধ
ছাত্র
গদি ছাড়
দাম দে
স্লোগান
অধিকার
দেশ কার
আবু সাইদ
রক্ত
খোরাক
হিসাব দে
দেশ কারোর বাপের না
ফ্রিডম
রণক্ষেত্র
রাজাকার
শিক্ষা নাই
আর কত?
জবাব দে
এইডা আমার বাংলাদেশ
ফ্রিডম এই’নট্ ফ্রি
চব্বিশের গেরিলা
কতো খাবি
শকুনের চোখ
প্রতিরোধ
জয় বাংলা