ভারতীয় ধনকুবের গৌতম আদানির বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে। মামলায় তার বিরুদ্ধে ২৫ কোটি ডলার ঘুষ দেওয়ার পরিকল্পনা সাজানোর এবং যুক্তরাষ্ট্রে বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে অর্থ সংগ্রহের জন্য তা গোপন করার অভিযোগ আনা হয়েছে।
বুধবার যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কে আদানির বিরুদ্ধে ফৌজদারি অভিযোগটি দায়ের করা হয় বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে বিবিসি।
ভারতের বিতর্কিত শিল্পপতি আদানির ব্যবসায়িক সাম্রাজ্য বন্দর, এয়ারপোর্ট থেকে শুরু করে নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতেও বিস্তৃত।
বিদ্যুৎ আমদানির জন্য গৌতম আদানির মালিকানাধীন কোম্পানি আদানি পাওয়ারের সঙ্গে চুক্তি আছে বাংলাদেশেরও। ভারতের ঝাড়খণ্ডের গড্ডায় নির্মিত আদানি গ্রুপের বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ১ হাজার ৪৯৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেনার জন্য ২৫ বছরের চুক্তিটি করে বিগত আওয়ামী লীগ সরকার।
সর্বোচ্চ গোপনীয়তা অনুসরণ করে করা এই চুক্তির আওতায় আদানি গ্রুপের কোম্পানির কাছ থেক বাজারদরের চেয়ে বেশি দামে বিদ্যুৎ কেনার অভিযোগ রয়েছে। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনে বাংলাদেশের রাষ্ট্রক্ষমতার পট পরিবর্তনের পর দায়িত্ব নেওয়া অন্তর্বর্তী সরকার এই অভিযোগ খতিয়ে দেখছে।
আদানি গ্রুপের কাছ থেকে বিদ্যুৎ আমদানি চুক্তিতে শুল্ক সংক্রান্ত বিষয়গুলো কীভাবে সম্পাদন করা হয়েছে, তাতে কোনও ত্রুটি ছিল কি না, শুল্ক পরিহার বা প্রত্যাহারের বিষয় রয়েছে কি না; এমন আরও প্রশ্ন সামনে রেখে তদন্তে নামছে বাংলাদেশের কাস্টমস গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরও।
নিউ ইয়র্কের প্রসিকিউটররা দাবি করেছেন, ভারতের শীর্ষস্থানীয় শিল্পপতি আদানি ও তার অন্য শীর্ষ নির্বাহীরা তার নবায়নযোগ্য জ্বালানি কোম্পানির জন্য কাজ পেতে চুক্তির জন্য রাজি করাতে ভারতীয় কর্মকর্তাদের ঘুষ দিতে সম্মত হয়েছিল।
রয়টার্স জানিয়েছে, চুক্তিটি করা গেলে আদানির কোম্পানি ভারতের সবচেয়ে বড় সৌর বিদ্যুৎ প্রকল্প নির্মাণের কাজ পেত, যা থেকে ২০ বছরে তাদের ২০০ কোটি ডলার লাভ হত। আর আদানিসহ আরও যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে, তাদের মধ্যে তার ভাতিজা সাগর আদানিও রয়েছে।
এ বিষয়ে মন্তব্য জানতে আদানি গ্রুপের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও সাড়া পায়নি বিবিসি।
২০২৩ সালে যু্ক্তরাষ্ট্রের একটি হাই-প্রোফাইল কোম্পানি আদানির বিরুদ্ধে জালিয়াতির অভিযোগ তুলে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল। যদিও আদানি সেই অভিযোগ অস্বীকার করেছিলেন, তবে সে সময় তার কোম্পানির শেয়ারদরে ব্যাপক পতন হওয়ায় বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছিলেন তিনি। এরপর থেকে যুক্তরাষ্ট্রে অনেকটা গোপনেই চলছিল আদানির ব্যবসায়িক কার্যক্রম।
আদানির বিরুদ্ধে এই ঘুষ কেলেঙ্কারির তদন্তের খবর কয়েক মাস ধরেই ঘুরছিল। প্রসিকিউটররা জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্র ২০২২ সালে কোম্পানিটির বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করে এবং বাধার মুখে তা বন্ধ হয়ে যায়।
তারা অভিযোগ করেন, নির্বাহীরা কোম্পানির ঘুষ বিরোধী নীতিমালা এবং তদন্ত সংক্রান্ত মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর বিবৃতি দিয়ে মার্কিন সংস্থাসহ বিভিন্ন উৎস থেকে ৩০০ কোটি ডলার ঋণ ও বন্ড সংগ্রহ করেন।
যুক্তরাষ্ট্রের অ্যাটর্নি ব্রিয়ন পিস এক বিবৃতিতে আদানির বিরুদ্ধে অভিযোগ ঘোষণা করে বলেন, “অভিযোগ অনুযায়ী, অভিযুক্তরা ভারতীয় সরকারি কর্মকর্তাদের ঘুষ দেওয়ার মাধ্যমে শত কোটি ডলারের চুক্তি পেতে পরিকল্পনা তৈরি করেছিলেন এবং… এই ঘুষ কেলেঙ্কারির তথ্য গোপন রেখে মার্কিন ও আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে পুঁজি সংগ্রহ করেছিলেন।”
তিনি আরও বলেন, “আন্তর্জাতিক বাজারে দুর্নীতি নির্মূল করতে এবং আমাদের আর্থিক বাজারের সততার বিনিময়ে নিজেদের সমৃদ্ধ করতে চাওয়া ব্যক্তিদের হাত থেকে বিনিয়োগকারীদের সুরক্ষা দিতে আমার দপ্তর প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।”
কর্মকর্তাদের বরাতে বিবিসি জানিয়েছে, ঘুষের প্রক্রিয়াটি এগিয়ে নিতে গৌতম আদানি ব্যক্তিগতভাবে কয়েকবার সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে দেখাও করেন।
গৌতম আদানি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর খুবই ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত। মোদীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার কারণে তিনি অনৈতিক ব্যবসায়িক সুবিধা পেয়ে আসছেন বলে দেশটির বিরোধীদলীয় রাজনীতিবিদেরা দীর্ঘদিন ধরেই অভিযোগ করে আসছে। অবশ্য আদানি বরাবরই এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
যুক্তরাষ্ট্রে অ্যাটর্নি পদে নিয়োগগুলো সাধারণত প্রেসিডেন্ট দিয়ে থাকেন। আদানির বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগটি এমন সময়ে উঠল যখন ডোনাল্ড ট্রাম্প মাত্র কয়েক সপ্তাহ আগে যুক্তরাষ্ট্রের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন এবং ক্ষমতা গ্রহণের পর দেশটির বিচার বিভাগে ব্যাপক সংস্কারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ায় গত সপ্তাহে সোশাল মিডিয়ায় ট্রাম্পকে অভিনন্দন জানিয়েছিলেন আদানি। একইসঙ্গে ট্রাম্পের পরবর্তী আমলে যুক্তরাষ্ট্রে ১০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতিও দেন তিনি।