যুক্তরাষ্ট্র তার সব বিদেশি সহায়তা ৯০ দিনের জন্য স্থগিত করেছে। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে এক অভ্যন্তরীণ নোটের মাধ্যমে বিষয়টি বিভিন্ন কর্মকর্তা ও বিদেশে যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসগুলোতে পাঠানো হয়েছে।
ফাঁস হওয়া গুরুত্বপূর্ণ ওই নোটটি বিবিসির হাতে এসেছে।
বিবিসি জানিয়েছে, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের এক নির্বাহী আদেশের পরিপ্রেক্ষিতেই এমন নোট পাঠানো হয়েছে। এতে ৯০ দিনের জন্য সব বিদেশি উন্নয়ন সহায়তা বন্ধ রাখার কথা বলা হয়েছে। এই সময়ের মধ্যে নিজস্ব সহায়তা কার্যক্রমের দক্ষতা ও পররাষ্ট্রনীতি অনুযায়ী সামঞ্জস্য পর্যালোচনা করা হবে।
বিশ্বের সবচেয়ে বড় আন্তর্জাতিক সহায়তাকারী দেশ যুক্তরাষ্ট্র। সরকারি তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে দেশটি ৬৮ বিলিয়ন ডলার ব্যয় করেছে সহায়তার ক্ষেত্রে।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, সহায়তা বন্ধের বিষয়টি উন্নয়ন খাত থেকে শুরু করে সামরিক সহায়তা পর্যন্ত বিস্তৃত।
তবে জরুরি খাদ্য সহায়তা এবং ইসরায়েল ও মিশরের সামরিক তহবিল এই স্থগিতাদেশের বাইরে থাকবে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নোটে বলা হয়, “প্রস্তাবিত নতুন অনুদান বা বিদ্যমান অনুদানের মেয়াদ বাড়ানোর প্রতিটি প্রস্তাব পর্যালোচনা ও অনুমোদনের আগে নতুন কোনও তহবিল বরাদ্দ করা যাবে না।”
নোটে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তাদের সংশ্লিষ্ট চুক্তির শর্ত অনুযায়ী “অবিলম্বে কাজ বন্ধের নির্দেশ জারি করতে হবে। এটি পর্যালোচনার পর মন্ত্রীর সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কার্যকর থাকবে।”
নোটে আরও বলা হয়েছে, সব বিদেশি সাহায্যের একটি বিস্তারিত পর্যালোচনা ৮৫ দিনের মধ্যে শেষ করতে হবে। এই পর্যালোচনার লক্ষ্য হলো, সাহায্য যেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের পররাষ্ট্রনীতির লক্ষ্যের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়- তা নিশ্চিত করা।
যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ কূটনীতিক ও বর্তমান পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও এর আগে জানিয়েছিলেন, বিদেশে যুক্তরাষ্ট্রের তখনই ব্যয় করা উচিত, যখন তা দেশকে ‘শক্তিশালী’, ‘নিরাপদ’ ও ‘সমৃদ্ধ’ করে তোলে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক সাবেক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বিবিসিকে জানিয়েছেন, এই বিজ্ঞপ্তি যুক্তরাষ্ট্রের অর্থায়নে পরিচালিত বিদেশি সাহায়তা কর্মসূচিগুলোর ওপর ‘সম্ভাব্য বড় ধরনের’ প্রভাব ফেলতে পারে।
২০২৩ সালের শেষ পর্যন্ত পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে অস্ত্র স্থানান্তরের কংগ্রেসীয় সম্পর্ক তদারকি করতেন জশ পল।
তিনি বলেন, “বিশ্বব্যাপী মানবিক মাইন অপসারণ কর্মসূচি হঠাৎ বন্ধ করতে বলা হলে তার প্রভাব কল্পনা করা সহজ। এটি একটি বড় বিষয়।”
মধ্যপ্রাচ্যে ইউএসএআইডির সাবেক মিশন পরিচালক ডেভ হার্ডেন ট্রাম্প প্রশাসনের এই পদক্ষেপকে ‘খুবই গুরুত্বপূর্ণ’ হিসেবে দেখছেন।
তিনি মনে করছেন, পর্যালোচনার সময় বিশ্বব্যাপী যুক্তরাষ্ট্রের অর্থায়নে পরিচালিত মানবিক ও উন্নয়ন কর্মসূচি স্থগিত হতে পারে। বিষয়টি পানি, স্যানিটেশন ও আশ্রয়সহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়ন প্রকল্পকে প্রভাবিত করতে পারে।
বিবিসিকে হার্ডেন বলেন, “থোক বরাদ্দ বন্ধ করা উচিত। তবে প্রকল্পের বাস্তবায়নকারী অংশীদার বা এনজিওকর্মীদের বেতন দেওয়া যেতে পারে। আমি পশ্চিম তীর ও গাজা মিশন পরিচালক হিসেবে অনেকবার সাহায্য স্থগিত দেখেছি, তবে তা ছিল সেই নির্দিষ্ট একাউন্টের জন্য। এটি এখন বিশ্বব্যাপী। এটি শুধু সাহায্য স্থগিত করে না, বরং ইতোমধ্যেই তহবিল পাওয়া এবং চলমান চুক্তিগুলোর ওপর ‘কাজ বন্ধের’ নির্দেশও দেয়।”
সংবাদ সংস্থা এএফপি জানিয়েছে, তহবিল স্থগিত করা ইউক্রেনকেও প্রভাবিত করতে পারে। ট্রাম্পের পূর্বসূরি জো বাইডেনের আমলে দেশটি বিপুল পরিমাণ অস্ত্র সহায়তা পেয়েছিল।
তহবিল বন্ধের যুক্তিতে নোটে বলা হয়েছে, নতুন প্রশাসনের পক্ষে এটি মূল্যায়ন করা অসম্ভব যে বিদ্যমান বিদেশি সাহায্য প্রতিশ্রুতিগুলো আগের মতো নয়। প্রতিশ্রতিগুলোর কার্যকারিতা আছে কি না এবং সেগুলো প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের পররাষ্ট্রনীতির সঙ্গে যায় কি না- সে মূল্যায়নও নতুন প্রশাসনের পক্ষে করা সম্ভব নয়।
নোট অনুযায়ী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও জরুরি খাদ্য সহায়তায় ছাড় দিয়েছেন।
এতে আরও বলা হয়েছে, রুবিও এখন পর্যন্ত ইসরায়েল ও মিশরের জন্য বিদেশি সামরিক তহবিল এবং ওই তহবিল পরিচালনায় প্রয়োজনীয় প্রশাসনিক খরচ, বেতন ছাড় অনুমোদন করেছেন।
নোটের বিষয়ে বিবিসি যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করেও কোনও মন্তব্য পায়নি।