বাংলাদেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে যত দ্রুত সম্ভব নির্বাচন চায় যুক্তরাষ্ট্র।
বৃহস্পতিবার ভারতীয় সাংবাদিক সিদ্ধান্ত সিবালকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে একথা বলেছেন নয়াদিল্লির বিদায়ী মার্কিন রাষ্ট্রদূত এরিক গারসেটি।
এমন সময় তিনি একথা বললেন, যখন বিএনপির পক্ষ থেকে বারবার দ্রুত নির্বাচন দেওয়ার দাবি জানানো হচ্ছে।
যদিও অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনূসের জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া ভাষণ অনুযায়ী, চলতি বছরের শেষ থেকে ২০২৬ সালের প্রথম দিকে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে।
সিদ্ধান্ত সিবালের সঙ্গে আলোচনায় এরিক গারসেটি বলেছেন, তিনি মনে করেন বাংলাদেশের বিষয়ে ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র দুই দেশের ভাবনাই এক। তিনি এটাও বলেছেন যে, এ বিষয়ে ভারত-যুক্তরাষ্ট্র এর আগে এত ঘনিষ্ঠভাবে কখনও কাজ করেনি।
সাক্ষাৎকারটির চুম্বক অংশ বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যায় নিজের এক্স হ্যান্ডলে প্রকাশ করেছেন সিদ্ধান্ত সিবাল। যেখানে মূলত বাংলাদেশ, বাংলাদেশের নির্বাচন, গণতন্ত্র ইত্যাদি বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।
সিদ্ধান্ত সিবাল বিদায়ী রাষ্ট্রদূতকে প্রশ্ন করেছিলেন, “শেখ হাসিনার পতন ভারতের জন্য নেতিবাচক হয়েছে, এরই মধ্যে বাংলাদেশে জামায়াতের উত্থান ঘটেছে, দেশটির ওপর চীনের প্রভাবও বেড়েছে; এ বিষয়ে আপনার মত কী?”
জবাবে এরিক গারসেটি বলেন, আমরা (যুক্তরাষ্ট্র ও ভারত) উভয়ই একই নীতিতে বিশ্বাসী। আমরা উভয়েই শান্তিপূর্ণ ও গণতান্ত্রিক দক্ষিণ এশিয়া দেখতে চাই। এ বিষয়টি আমরা একসঙ্গে সমন্বয় করছি।
“আমরা স্পষ্ট করে বলেছি যে, বাংলাদেশ হোক বা অন্য কোনও দেশ, ধর্মীয় পরিচয় বা আচার পালন নিয়ে কাউকে যেন শঙ্কায় থাকতে না হয়। আমি মনে করি আমরা উভয়েই যত দ্রুত সম্ভব বাংলাদেশে গণতন্ত্র এবং গণতান্ত্রিক নির্বাচনের প্রতিষ্ঠা দেখতে চাই। আর এই নির্বাচনই বাংলাদেশকে তার পরবর্তী অধ্যায় শুরু করতে সাহায্য করবে।”
অতীতে কী হয়েছে তা নিয়ে আলোচনা না করে, সামনের দিনে দুই দেশ একত্রে কী করতে পারে তা নিয়ে আলোচনা করা উচিত বলে মনে করেন বিদায়ী রাষ্ট্রদূত। তিনি বলেন, “যুক্তরাষ্ট্র ও ভারত এর আগে কখনোই এত ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করেনি।”
তীব্র ছাত্র-গণআন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট পদত্যাগ করে ভারতে যান সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর তিন দিন কার্যত সরকারশূন্য ছিল বাংলাদেশ। এরপর ৮ আগস্ট সন্ধ্যায় দেশ পরিচালনার দায়িত্ব নেয় অন্তর্বর্তী সরকার। যার নেতৃত্ব দিচ্ছেন নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
শুরু থেকেই সরকারের পক্ষ থেকে জোর দেওয়া হচ্ছিল রাষ্ট্র সংস্কারের বিষয়ে। যাদের আন্দোলনের ফলাফল সরকার পতন, সেই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারাও বারবার রাষ্ট্রর সংস্কারের কথাই বলছিলেন। এজন্য ছয়টি সংস্কার কমিশন গঠনও করে সরকার। যার মধ্যে রয়েছে সংবিধান সংস্কার, নির্বাচন সংস্কারের মতো বড় বিষয়ও।
গত রবিবার ঢাকায় নিযুক্ত নরওয়ের রাষ্ট্রদূত হ্যাকন অ্যারাল্ড গুলব্র্যান্ডসনের সঙ্গে আলোচনায় প্রধান উপদেষ্টা বলেছিলেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে দেশের ইতিহাসের সেরা করার পরিকল্পনা করছে তার সরকার। তিনি বলেন, “আগামী নির্বাচন এমন হবে যাতে এটি গণতন্ত্রের জন্য ঐতিহাসিক দৃষ্টান্ত হয়ে থাকে।”
অন্তর্বর্তী সরকার রাষ্ট্র সংস্কারের পর নির্বাচনের বিষয়ে আগ্রহী হলেও দেশের অন্যতম রাজনৈতিক দল বিএনপি চায় যত দ্রুত সম্ভব নির্বাচন। বিএনপির নেতারা প্রথম থেকেই বলে আসছেন, রাষ্ট্র সংস্কারের কাজ জনগণের নির্বাচিত সরকারের। অন্তর্বর্তী সরকারের উচিত, প্রাথমিক কাজ শেষে যত দ্রুত সম্ভব অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যবস্থা করা।
বিজয় দিবস উপলক্ষে জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস জানান, ২০২৫ সালের শেষ থেকে ২০২৬ সালের প্রথম দিকে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে।
তবে এত দেরি করতে চায় না বিএনপি। দলটির নীতিনির্ধারণী পর্ষদ জাতীয় স্থায়ী কমিটি সোমবার রাতে বৈঠক করে সিদ্ধান্ত নেয় যে, চলতি বছরের মাঝামাঝিতেই জাতীয় সংসদ নির্বাচন চায় বিএনপি। নির্বাচনকেই গণতন্ত্রের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বলে মনে করছেন দলটির নেতারা।