সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলা ও উন্নয়নসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারকে সমর্থন দিয়ে যাবে যুক্তরাষ্ট্র।
সোমবার প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের সঙ্গে বৈঠকে আবারও এ অঙ্গীকার করেছেন ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্রের ভারপ্রাপ্ত মিশন প্রধান ট্রেসি অ্যান জ্যাকবসন।
তিনি এমন দিনে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি সমর্থনের কথা জানালেন যেদিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নিতে যাচ্ছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প।
যুক্তরাষ্ট্রের ৪৭তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে ট্রাম্প জয়ী হওয়ার পর বাংলাদেশের আওয়ামী লীগ সমর্থকদের আনন্দিত হতে দেখা গিয়েছিল। এমন গুঞ্জনও ওঠে যে, ট্রাম্প ক্ষমতায় এলে দেশে ফিরবেন শেখ হাসিনা। ফেইসবুকেও এ সংক্রান্ত প্রচার চলে।
বিবিসি বাংলা এ বিষয়ে প্রশ্ন করেছিল আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাতকে। তিনি বলেন, তারা মনে করছেন যুক্তরাষ্ট্রের বিদায়ী বাইডেন প্রশাসন বাংলাদেশের ক্ষেত্রে যাদের সমর্থন যুগিয়েছে, ট্রাম্প প্রশাসন সেটি করবে না বলেই তারা মনে করেন।
আর এটিই মূলত আওয়ামী শিবিরে উচ্ছ্বাসের কারণ।
তবে সোমবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় ট্রেসি অ্যান জ্যাকবসন প্রধান উপদেষ্টাকে বলেন, “আমরা জাতি হিসেবে আপনার সরকারকে বিভিন্ন বিষয়ে সমর্থন দিতে প্রস্তুত রয়েছি।”
এসময় প্রধান উপদেষ্টা বাংলাদেশের চলমান সংস্কার কার্যক্রম, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্রের ওপর রাজনৈতিক ঐক্যমত্য গঠনের প্রচেষ্টা এবং আগামী সাধারণ নির্বাচনের পরিকল্পনা সম্পর্কে আলোচনা করেন।
জুলাই ঘোষণাপত্রের বিষয়ে ড. ইউনূস বলেন, রাজনৈতিক দলগুলো ফেব্রুয়ারির শুরুতে এ বিষয়ে ঐকমত্য পৌঁছবে বলে তার আশা।
জুলাই ঘোষণাপত্রের বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোনও বিরোধী মত পাওয়া যায়নি জানিয়ে ড. ইউনূস বলেন, “প্রস্তাবিত ঘোষণাপত্রের মূল বিষয়বস্তু হলো ‘ঐক্য’। এই বিষয়ে রাজনৈতিক ঐক্যমত্য গঠন করা ‘কঠিন’ কাজ।”
জুলাই ঘোষণাপত্রের ব্যাপারে সরকার কেবল সহযোগীর ভূমিকা পালন করবে জানিয়ে তিনি বলেন, “আমার কাজ হলো ঐকমত্য গঠন। আমি কোনও ধারণা চাপিয়ে দিচ্ছি না।”
ড. ইউনূস জানান, রাজনৈতিক দলগুলো সংস্কার প্রস্তাবের বিষয়ে একমত হলে সরকার তাদের জুলাই সনদে স্বাক্ষরের জন্য অনুরোধ করবে।
মার্কিন এই কূটনীতিককে তিনি বলেন, “আমরা জানি না জুলাই ঘোষণাপত্রে অনেক বিষয় থাকবে, নাকি সীমিত কিছু বিষয় থাকবে।
“আমাদের এখানে বহু মতবাদ রয়েছে, তাই ঐকমত্য গঠনের কাজটা খুব কঠিন। তবে প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। একবার এটি স্বাক্ষর হয়ে গেলে আমাদের রাজনীতি জুলাই সনদের ভিত্তিতে এগোবে।”
যুক্তরাষ্ট্রের শার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স সাংবাদিকদের আটক এবং ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর সহিংসতার কিছু প্রতিবেদন নিয়ে উদ্বেগ জানান।
জবাবে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, তার সরকার সকল নাগরিকের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
ঘণ্টাব্যাপী বৈঠকে বাংলাদেশের সঙ্গে প্রতিবেশী দেশগুলোর সম্পর্ক, রোহিঙ্গা সংকট সমাধানের অগ্রগতি এবং মিয়ানমারের নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়।
বৈঠকে এসডিজি বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক লামিয়া মোরশেদ উপস্থিত ছিলেন।