Beta
বৃহস্পতিবার, ১২ ডিসেম্বর, ২০২৪
Beta
বৃহস্পতিবার, ১২ ডিসেম্বর, ২০২৪

‘জয় বাংলা’ জাতীয় স্লোগান ঘোষণার রায় স্থগিত

‘জয় বাংলা’ স্লোগান দিয়ে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হয়েছিল বাংলার মানুষ।
‘জয় বাংলা’ স্লোগান দিয়ে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হয়েছিল বাংলার মানুষ।
[publishpress_authors_box]

‘জয় বাংলা’কে জাতীয় স্লোগান ঘোষণা করে চার বছর আগে দেওয়া হাই কোর্টের রায় স্থগিত করেছে আপিল বিভাগ।

রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের এক আবেদন মঙ্গলবার শুনানি নিয়ে লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) মঞ্জুর করে এ আদেশ দিয়েছে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন আপিল বেঞ্চ।

আদেশের বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল অনিক আর হক বলেন, “হাই কোর্টের রায় স্থগিত হওয়ার ফলে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান এখন আর আমাদের বাধ্যতামূলকভাবে উচ্চারণ করতে হবে না।”

‘জয় বাংলা’কে জাতীয় স্লোগান করা সম্পূর্ণভাবে সরকারের নীতিগত বিষয়। এটি সংসদ থেকে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা ছিল উল্লেখ করে তিনি বলেন, “একটা কিছুকে জাতীয়ভাবে ঘোষণার আগে জনগণের সমর্থন নেওয়ার প্রয়োজন রয়েছে।

“কিন্তু জনস্বার্থের নামে একটি রিট পিটিশন করে কোনও প্রকার আইনগত ভিত্তি ছাড়া সেটিকে জাতীয় হিসেবে ঘোষণা করে দেওয়া আইনগতভাবে বৈধ নয়।”

১৯৭২ সালে সংবিধানপ্রণেতারা কোন বিষয়গুলো জাতীয় হবে, তা সংবিধানের ৪ অনুচ্ছেদে উল্লেখ করে দিয়েছেন জানিয়ে অনিক আর হক বলেন, “সেসময় জাতীয় বিষয়গুলোর মধ্যে ‘জয় বাংলা’ ছিল না। পরে অনুচ্ছেদের ৭ (ক) দিয়ে এ বিষয়ে কোনও প্রশ্ন, পরিবর্তন বা নতুন কিছু অন্তর্ভুক্ত করা যাবে না, সে সিদ্ধান্তও নেওয়া হয়।”

সংবিধানে এই সিদ্ধান্ত থাকার পরও আদালত জোর করে কারও ওপর জাতীয় কোনও বিষয় চাপিয়ে দেওয়ার এখতিয়ার রাখে না বলে জানান অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল।

‘জয় বাংলা’ একাত্তরে মুক্তিযোদ্ধাদের স্লোগান ছিল, পরে আওয়ামী লীগ এটি দলীয় স্বার্থে ব্যবহার করেছে কি না, সাংবাদিকদের এ প্রশ্নের জবাবে রাষ্ট্রপক্ষের এই আইনজীবী বলেন, “অবশ্যই মুক্তিযুদ্ধের সময়ে আমাদের মুক্তিযোদ্ধারা ‘জয় বাংলা’ ব্যবহার করেছেন। এটি আমাদের সবার কাছে অত্যন্ত পবিত্র বিষয়।

“কিন্তু পরে দেখেছি, আমাদের মুক্তিযোদ্ধাদের স্লোগান তারা (আওয়ামী লীগ) দলীয় স্লোগানে পরিণত করেছে। দলীয় স্লোগানটিকে যখন জাতীয়করণ করার চেষ্টা করা হয়েছে, সবার ওপর চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে এবং সংবিধানেও ঢুকিয়ে দেওয়া যাচ্ছে না, তখন আদালতের ঘাড়ে বন্দুক রেখে কাজটি করার চেষ্টা করা হয়েছে, যা সম্পূর্ণভাবে অবৈধ।”

২০১৭ সালে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ড. বশির আহমেদ ‘জয় বাংলা’কে জাতীয় স্লোগান হিসেবে ঘোষণা চেয়ে আদালতে রিট করেন। ওই রিটের শুনানি নিয়ে রুল জারি করে হাই কোর্ট।

রুলে ‘জয় বাংলা’কে কেন জাতীয় স্লোগান হিসেবে ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়েছিল উচ্চ আদালত।

এরপর ২০২০ সালের ১০ মার্চ সেই রুল নিষ্পত্তি করে বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের হাই কোর্ট বেঞ্চ ‘জয় বাংলা’কে জাতীয় স্লোগান ঘোষণা করে রায় দেয়।

আদালতে রিট আবেদনের পক্ষে আবেদনকারী আইনজীবী ড. বশির আহমেদ নিজেই শুনানিতে ছিলেন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন তৎকালীন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ বি এম আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার।

ওই রায়ে আদালতের পর্যবেক্ষণে বলা হয়, জয় বাংলা জাতীয় ঐক্যের স্লোগান। এটি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রিয় স্লোগান এবং ৭ মার্চের ভাষণের সঙ্গে জয় বাংলা সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

দুই বছর পর ২০২২ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি মন্ত্রিসভার বৈঠকে ‘জয় বাংলা’কে জাতীয় স্লোগান ঘোষণা করার অনুমোদন দেওয়া হয় এবং ২ মার্চ এটিকে জাতীয় স্লোগান ঘোষণা করে প্রজ্ঞাপন জারি করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।

৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন বিষয়ে পরিবর্তন আনার উদ্যোগ নেয় বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।

এরই অংশ হিসেবে গত ১৭ অক্টোবর ঐতিহাসিক ৭ মার্চ, ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবসসহ ৮টি জাতীয় দিবস পালন না করার আদেশ জারি করে এই সরকার।

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের আদেশটিতে ৭ মার্চ ও ১৫ আগস্ট ছাড়াও ১৭ মার্চ জাতির পিতার জন্মদিবস ও জাতীয় শিশু দিবস, ৫ আগস্ট শহীদ ক্যাপ্টেন শেখ কামালের জন্মবার্ষিকী, ৮ আগস্ট বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের জন্মবার্ষিকী, ১৮ অক্টোবর শেখ রাসেল দিবস, ৪ নভেম্বর জাতীয় সংবিধান দিবস ও ১২ ডিসেম্বর স্মার্ট বাংলাদেশ দিবস পালন না করার কথা বলা হয়।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত