শুরুতে জুলাই-আগস্টের আন্দোলনের আহতদের দুটি ক্যাটাগরিতে মাসিক ভাতা দেওয়ার কথা জানিয়েছিল অন্তর্বর্তী সরকার। এখন তিনটি ক্যাটাগরিতেই ভাতা পাবেন আন্দোলনে আহতরা। ভাতা পাবেন নিহতদের পরিবারের সদস্যরা।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বৃহস্পতিবার ঢাকার ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত এক ব্রিফিংয়ে একথা জানান।
দাবি পূরণে বেশ কিছুদিন থেকেই আন্দোলন করছিল জুলাই গণঅভ্যুত্থানের আহত ও শহীদ পরিবারের সদস্যরা। সর্বশেষ বুধবার সকাল ৯টা থেকে নিজেদের দাবি দাওয়া নিয়ে ঢাকার তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নেন তারা।
তাদের তিন দাবির মধ্যে ছিল- আহতদের ক্যাটাগরি তিনটির পরিবর্তে দুটি করতে হবে, শহীদ পরিবার ও আহতদের সুরক্ষার জন্য একটি আইন করতে হবে এবং জুলাই আন্দোলনে প্রত্যন্ত অঞ্চলে যারা আহত হয়েছেন, তাদের সেবা নিশ্চিত করতে হটলাইন নম্বর চালু করতে হবে।
দাবির মুখে সরকারের পক্ষ থেকে শফিকুল আলম জানান তিন ক্যাটাগরিতে কারা কেমন সুবিধা পাবেন। দাবি পূরণের আশ্বাস পেয়ে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে আহতরা চিকিৎসাধীন নিজ নিজ হাসপাতালে চলে যান।
গত ২৪ ফেব্রুয়ারি এসব নিয়ে হওয়া বৈঠকের কথা উল্লেখ করে শফিকুল আলম বলেন, “বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আহত ও শহীদ পরিবারের সবাই মাসিক ভাতা পাবেন।
“আন্দোলনে শহীদদের পরিবার এককালীন ৩০ লাখ টাকা পাবে। এই অর্থবছরে তারা সঞ্চয়পত্রের মাধ্যমে ১০ লাখ টাকা পাবে। আগামী অর্থবছরে পাবে আরও ২০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র। নিহতদের পরিবারের সক্ষম সদস্যরা সরকারি ও আধা-সরকারি চাকরিতে অগ্রাধিকার পাবেন এবং ২০ হাজার টাকা ভাতা পাবেন প্রতি মাসে।”
ভাতার প্রসঙ্গে আহতদের তিনটি ক্যাটাগরির কথা মনে করিয়ে বলেন, “ক্যাটাগরি এ-তে (অতি গুরুতর আহত) ৪৯৩ জন জুলাইযোদ্ধা তালিকাভুক্ত হয়েছেন। চিকিৎসার পরও তারা অন্যের সহায়তা ছাড়া জীবনযাপনে অক্ষম। এই ক্যাটাগরিতে এককালীন পাঁচ লাখ টাকা দেওয়া হবে। এর মধ্যে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে নগদ (ব্যাংক চেকের মাধ্যমে) দুই লাখ এবং ২০২৫-২৬ অর্থবছরে নগদ (ব্যাংক চেকের মাধ্যমে) তিন লাখ টাকা দেওয়া হবে। এছাড়া তারা মাসিক ২০ হাজার টাকা ভাতা পাবেন।”
এই ক্যাটাগরির আহতরা বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে আজীবন চিকিৎসা সুবিধা পাবেন। তাছাড়া উপযুক্ত মেডিক্যাল বোর্ডের সুপারিশে দেশি-বিদেশি হাসপাতালে চিকিৎসা সেবাও পাবেন। পাবেন কর্মসহায়ক প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ।
এরপর ক্যাটাগরি বি নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব জানান, ক্যাটাগরি বিতে (গুরুতর আহত) ১০৮ জন তালিকাভুক্ত হয়েছেন। তারা পর্যাপ্ত চিকিৎসার পর অন্যের আংশিক সহায়তায় জীবনযাপনে সক্ষম।
তিনি বলেন, “এই ক্যাটাগরিতে এককালীন তিন লাখ টাকা দেওয়া হবে। এর মধ্যে ২০২৪-২৫ অর্থ বছরে নগদ (বাংক চেকের মাধ্যমে) এক লাখ টাকা এবং ২০২৫-২৬ অর্থ বছরে নগদ (ব্যাংক চেকের মাধ্যমে) দুই লাখ টাকা দেওয়া হবে। এছাড়া মাসিক ১৫ হাজার টাকা ভাতা দেওয়া হবে। এছাড়া কর্মসহায়ক প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ পাবেন তারা।”
এরপর রয়েছে ক্যাটাগরি সি। এই ক্যাটাগরিতে ১০ হাজার ৬৪৮ জনকে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। তারা চিকিৎসার পর বর্তমানে সুস্থ।
শফিকুল আলম বলেন, “তারা এককালীন এক লাখ টাকা পাবেন এবং মাসিক ভিত্তিতে পাবেন ১০ হাজার টাকা করে পাবেন।”
তিনটি ক্যাটাগরিতে তালিকাভুক্তরাই পুনর্বাসন সুবিধা, পরিচয়পত্র এবং পরিচয়পত্র দেখিয়ে সরকারি বিভিন্ন সুবিধা পাবেন।
ব্রিফিংয়ে এসব ভাতা মার্চ মাস থেকে দেওয়া শুরু করার চেষ্টা করা হবে বলে জানান ডেপুটি প্রেস সেক্রেটারি আবুল কালাম আজাদ মজুমদার।
ছয় মাস অক্লান্ত পরিশ্রমে আহত ও শহীদের তালিকা করা হয়েছে জানিয়ে শফিকুল আলম বলেন, “প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা নিয়ে বিতর্ক ৫২ বছর ধরেই আছে। আমাদের লক্ষ্য ছিল, আহতদের নাম-পরিচয় পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে নথিভুক্ত করা। সেজন্য জেলা প্রশাসন থেকে শুরু করে সবাইকে নিয়োজিত করা হয়েছে।”
গণআন্দোলনে নিহতদের জুলাই শহীদ ও আহতদের জুলাই যোদ্ধা নামে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। রাষ্ট্র তাদের এ নামে অভিহিত করবে বলেও জানান তিনি।