Beta
মঙ্গলবার, ২ জুলাই, ২০২৪
Beta
মঙ্গলবার, ২ জুলাই, ২০২৪

সাক্ষাৎকার

পশ্চিমের মধ্যে ভাঙ্গন শুরু হয়েছে

ইমতিয়াজ আহমেদ

হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি মৃত্যু মধ্যপ্রাচ্য সংকটকে দিয়েছে আরেক মাত্রা। এদিকে চলমান গাজা যুদ্ধ ও গণহত্যার ঘটনায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রতিবাদ অব্যাহত আছে। মধ্যপ্রাচ্য সংকট, ইরান, ইসরায়েল, প্যালেস্টাইন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি এবং বিশ্ব রাজনীতির নানা দিক সম্পর্কে জানতে অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদের মুখোমুখি হয়েছিল সকাল সন্ধ্যা। মধ্যপ্রাচ্য ও গণহত্যা নিয়ে গবেষণা করা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদের সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আশফাকুর রহমান

পশ্চিমের মধ্যে ভাঙ্গন শুরু হয়েছে

ইমতিয়াজ আহমেদ

হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি মৃত্যু মধ্যপ্রাচ্য সংকটকে দিয়েছে আরেক মাত্রা। এদিকে চলমান গাজা যুদ্ধ ও গণহত্যার ঘটনায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রতিবাদ অব্যাহত আছে। মধ্যপ্রাচ্য সংকট, ইরান, ইসরায়েল, প্যালেস্টাইন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি এবং বিশ্ব রাজনীতির নানা দিক সম্পর্কে জানতে অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদের মুখোমুখি হয়েছিল সকাল সন্ধ্যা। মধ্যপ্রাচ্য ও গণহত্যা নিয়ে গবেষণা করা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদের সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আশফাকুর রহমান

সকাল সন্ধ্যা: হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসির মৃত্যুর পর দেশটিতে শোক পালন শেষ হয়েছে। নতুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করার তারিখও ঘোষণা করছে দেশটি। পশ্চিমা গণমাধ্যমে প্রকাশিত বিভিন্ন সংবাদ সূত্রে আমরা জানতে পেরেছি, দেশটিতে চলমান শাসন ব্যবস্থা নিয়ে মতভেদ আছে— বিভক্তি আছে। তাহলে দেশটির প্রেসিডেন্টের মৃত্যুর পর বিদ্যমান শাসন ব্যবস্থা কতটা ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে পারবে?

ইমতিয়াজ আহমেদ: ইরানে সরকারের যে কাঠামো সেখানে মূল ক্ষমতা কিন্তু আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির কাছে। দুর্ঘটনায় নিহত প্রেসিডেন্ট রাইসি যথেষ্ট জনপ্রিয় ছিলেন বিশেষ করে প্যালেস্টাইন বিষয়ে। ইসরায়েলকে আক্রমণের বিষয়ে তার বক্তব্যগুলো আমাদের সামনে আসছিল। এটা অস্বাভাবিকও কিছু নয়। কিন্তু ক্ষমতার কেন্দ্র কিন্তু খামেনিকে ঘিরেই।

এমন অবস্থায় দেশটির ক্ষমতা কাঠামোতে কোনও ঝামেলা হওয়ার কথা নয়। ইতিমধ্যে ইরানে অন্তর্বর্তীকালীন প্রেসিডেন্ট দায়িত্ব নিয়েছেন। অনেকে হয়তো বলবে, ইসরায়েল বা যুক্তরাষ্ট্র এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকতে পারে। তবে ইরানের পক্ষ থেকে এখনও কিছু বলা হয়নি। সর্বশেষ ইরানের সেনাবাহিনীর দেওয়া প্রতিবেদন থেকে জানা যাচ্ছে যে, এটা দুর্ঘটনা।

আগে কখনও যে দুর্ঘটনায় প্রেসিডেন্ট-প্রধানমন্ত্রীর মৃত্যু হয়নি তা নয়। বেশ কতগুলো দেশেই এমন ঘটনা ঘটেছে। ফলে ইরানের ইসরায়েল ও প্যালেস্টাইন নিয়ে যে অবস্থান সেখানে পরিবর্তন হওয়ার কোনও সুযোগ নেই। তাই দেশটির নির্বাচনে এমন কোনও প্রেসিডেন্টই নির্বাচিত হবেন যিনি রাইসির কাছাকাছি একজনই হবেন।

আগে কখনও যে দুর্ঘটনায় প্রেসিডেন্ট-প্রধানমন্ত্রীর মৃত্যু হয়নি তা নয়। বেশ কতগুলো দেশেই এমন ঘটনা ঘটেছে। ফলে ইরানের ইসরায়েল ও প্যালেস্টাইন নিয়ে যে অবস্থান সেখানে পরিবর্তন হওয়ার কোনও সুযোগ নেই। তাই দেশটির নির্বাচনে এমন কোনও প্রেসিডেন্টই নির্বাচিত হবেন যিনি রাইসির কাছাকাছি একজনই হবেন।

সকাল সন্ধ্যা: কিন্তু আমরা যদি গত ১০ বছর ধরে দেখি, ইরানের সঙ্গে হামলা, সংঘাত, যুদ্ধ পরিস্থিতির মতো ঘটনা ঘটেছে। মধ্যপ্রাচ্যে আধিপত্যের যে রাজনীতি কিংবা পশ্চিমা বিশ্বের নানা হিসাবনিকাশের সঙ্গে ইরান যুক্ত। এ অবস্থায় খামেনির যে লক্ষ্য বা ইরানের যে ‘কট্টর’ অবস্থান সেটা আগামীতে কতটা প্রাসঙ্গিক থাকবে?

ইমতিয়াজ আহমেদ: ইসরায়েলের বিপক্ষে ইরান যে হামলাটি করল— এর মাধ্যমে কিন্তু পরিস্থিতির বড় একটা পরিবর্তন ঘটেছে। একটা হলো যে, ইরানের ক্ষমতা সে দেখাতে পেরেছে। তার প্রযুক্তির সক্ষমতাও দেখিয়েছে। কোন কোন দেশ ইসরায়েলের সঙ্গে থাকবে, কোন কোন দেশ থাকবে না সেটাও মোটামুটি পরিষ্কার হয়েছে। অল্প কয়েকটি দেশ ছাড়া বড় বড় দেশগুলো কিন্তু সেই হিসেবে ইসরায়েলের পক্ষে নেই। বিশেষ করে সাম্প্রতিককালে ইরানের হামলায় বড় দেশগুলো ইসরায়েলের দিকে যায়নি।

ইরান যেটা করতে পেরেছে, হয়ত রাশিয়া ও চীনের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক থাকার কারণেই এটা করতে পেরেছে। কিন্তু প্রযুক্তিগত যে উৎকর্ষতা তারা দেখাতে পেরেছে, সেখানে কোনও সাধারণ মানুষ এই হামলার শিকার হয়নি। এটাতো একটা বড় পরিবর্তন এনে দিয়েছে মধ্যপ্রাচ্য ও ইসরায়েল বিষয়ে। এই যে প্রযুক্তির মাধ্যমে হামলার কাঠামো তৈরি হলো সেটাও কিন্তু আমাদের দেখার বিষয়। এখন ইরানের কোনও বিষয় এড়িয়ে যাওয়ার উপায় নেই। ফলে ভবিষ্যতেও ইরান এমন যেকোনও বিষয়ে সোচ্চার হবে।

সকাল সন্ধ্যা: আপনি বললেন, ইরানের সঙ্গে রাশিয়া বা চীনের সম্পর্ক এখন ভালো অবস্থায় আছে। এই সম্পর্ককে কি পাশ্চাত্যবিরোধী জোট বলা যাবে? নাকি এটা অন্য একটি জোট যেটা নতুন একটা ক্ষমতা বলয় তৈরি করবে?

ইমতিয়াজ আহমেদ: দুটোই। পাশ্চাত্যবিরোধী জোটতো আছেই। যদিও পাশ্চাত্যজোট এই প্রথমবার কিছুটা ভাঙা শুরু করেছে। বিশেষ করে স্পেন, আয়ারল্যান্ড ও নরওয়ে প্যালেস্টাইন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিয়েছে। সেই হিসেবে প্রথমবার একটা বড় ধরনের পরিবর্তন হয়েছে মূল পশ্চিমা দেশগুলোর মধ্যে যেটা আগে কখনও ছিল না।

ঠিক একইভাবে আমি যদি বলি, যুক্তরাষ্ট্রে আইভি লীগ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যেভাবে তারা প্রতিবাদ করে যাচ্ছে— এখনও করছে— এমনকি প্রতিটি সমাবর্তনেও প্রতিবাদ করেছে। এটাতো একবারে নতুন মাত্রা নিয়ে এসেছে— এতেতো কোনও সন্দেহ নেই।

বোঝাই যাচ্ছিল যে, ইসরায়েলের পেছনে ইউরোপ-যুক্তরাষ্ট্র আছে। অন্যকথায় বললে, ‘সাদাদের আধিপত্য’ আছে। এর কারণ হচ্ছে যে, এটা হলো শেষ সেটেলার কলোনিয়ালিজম। এর মাধ্যমেই কানাডা দখল করল ইউরোপীয়রা। ঠিক একইভাবে মূল আমেরিকায়। দুটো দেশেই কিন্তু গণহত্যা হয়েছে। ঠিক একইভাবে অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড গণহত্যার মাধ্যমেইতো তারা প্রতিষ্ঠিত করল। স্থানীয় অধিবাসীদের বলল তারা অসভ্য— বর্বর। ‘জাতিগত নির্মূল’ করে তারা দখল করল। দক্ষিণ আফ্রিকাও সে চেষ্টা করেছিল।

ইসরায়েলের পেছনে ইউরোপ-যুক্তরাষ্ট্র আছে। অন্যকথায় বললে, ‘সাদাদের আধিপত্য’ আছে। এর কারণ হচ্ছে যে, এটা হলো শেষ সেটেলার কলোনিয়ালিজম। এর মাধ্যমেই কানাডা দখল করল ইউরোপীয়রা। ঠিক একইভাবে মূল আমেরিকায়। দুটো দেশেই কিন্তু গণহত্যা হয়েছে। ঠিক একইভাবে অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড গণহত্যার মাধ্যমেইতো তারা প্রতিষ্ঠিত করল। স্থানীয় অধিবাসীদের বলল তারা অসভ্য— বর্বর। ‘জাতিগত নির্মূল’ করে তারা দখল করল। দক্ষিণ আফ্রিকাও সে চেষ্টা করেছিল।

এই প্রত্যেকটি প্রক্রিয়ার মধ্যে একটি মজার মিল আছে। প্রথম থেকে এসব দেশগুলোতে বর্ণবাদী শাসন ছিল— স্থানীয় অধিবাসীদের অবনত করা। যার শেষ উদাহরণ হলো ইসরায়েল। এরপরতো আর সম্ভব নয়। কারণ বিউপনিবেশয়ান শুরু হয়েছে বিশ্বে। আর এমন উপনিবেশ করাও এখন আর সম্ভব হবে না।

এমন অবস্থায় ইরান কিংবা ফিলিস্তিনিরা এটা ভালো করে জানে, বিবাদ যা হচ্ছে সেটা পশ্চিমের সঙ্গে। কিন্তু মধ্যপ্রাচ্য ইস্যুতে পশ্চিমের মধ্যে ভাঙ্গনটা শুরু হয়েছে। সেটা আইভি লীগের প্রতিবাদ হোক কিংবা ইউরোপের তিনটি দেশ প্যালেস্টাইন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিয়েই হোক। এখন দেখা যাক, এটা কোনদিকে যায়?

আরেকটি বিষয় হলো যে, রাশিয়া ও চীনের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রেও ইরান শক্তিশালী হচ্ছে। কিন্তু এটাও খেয়াল রাখতে হবে যে, বিশ্বও এখন মাল্টিপোলারের দিকে যাচ্ছে। এই কারণে ২০ বছর আগের চীনের সঙ্গে এখনকার চীনের মৌলিক পার্থক্য হয়ে গিয়েছে। এমনকি এই যুদ্ধের কারণে রাশিয়াও আরও শক্তিশালী হয়ে গেল। মাল্টিপোলার এই বিশ্বের কারণে ইরানেরও সুযোগ আরও অনেক বেড়ে গেল। এর ফলে রাশিয়া ও চীনের সঙ্গে ইরানের সম্পর্ক অনেক এগিয়েছে।

সকাল সন্ধ্যা: কিন্তু ইরানি প্রেসিডেন্টের দুর্ঘটনায় মৃত্যুর পর দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমসে সম্প্রতি প্রকাশিত এক বিশ্লেষণ বলছে যে, ইরানে কট্টরপন্থীদের অবস্থান আরও শক্তিশালী হবে। এ কথার সূত্র ধরে বলা যায়, পশ্চিমা ধারণায় উদারতা বিষয়টি নানাভাবে প্রাধান্য পায়। ইরানতো এমন রাষ্ট্র নয়। যদিও আপনি বলেছেন, আমাদের রাষ্ট্রগুলো বিউপনিবেশায়নের দিকে যাচ্ছে…

ইমতিয়াজ আহমেদ: এগুলো কিছুটা পশ্চিমা ধারণারই অংশ। যদিও কেউ পশ্চিমা দেশের সঙ্গে থাকে সে হয়ে যায় উদারতাবাদী। যদি সে না থাকে তাহলে তাকে কট্টর, কর্তৃত্ববাদী, রক্ষণশীল, একনায়তান্ত্রিক, ফ্যাসিবাদী এ ধরনের শব্দ দিয়ে তাদের আখ্যায়িত করা হয়। বহু বছর ধরেই এটা আমরা দেখছি।

কিন্তু আমরা যদি যুক্তরাষ্ট্রকে দেখি, তারা এখন উদারতাবাদী না কর্তৃত্ববাদী? যেখানে প্যালেস্টাইন নিয়ে কথা বলা যাবে না। যারা প্যালেস্টাইন নিয়ে কথা বলছিল— শান্তিপূর্ণ মিছিল করছিল— আমরা দেখলাম যে, হার্ভাড বিশ্ববিদ্যালয়ই ১৩ জনকে স্নাতক ডিগ্রি দিল না। তাহলে আমরা কাকে কর্তৃত্ববাদী বলছি?

যুক্তরাষ্ট্রের গণমাধ্যম যদি দেখা যায়, তারা একতরফাভাবে প্যালেস্টাইনের ঘটনাকে জেনোসাইড বলছে না। এমনকি জেনোসাইড কেন বলা যাবে না— সেটা নিয়েও তারা বার্তা দিয়েছে— কোনও গণমাধ্যম-পত্রিকায় যেন জেনোসাইড শব্দটি ব্যবহার না করা হয়। তাহলে আমরা কাকে কর্তৃত্ববাদী বলছি?

এই যে আমরা একটা বাইনারি তৈরি করেছি— কর্তৃত্ববাদী শাসন বা সরকার বলতেই চীন, রাশিয়া, ইরানকে ধরে নিচ্ছি, আর উদারতাবাদ বলতেই আমরা ধরে নিচ্ছি—যেখানে সব ধরনের ‘পোশাক’ পরা যাবে। এটা নিয়ে যদি আমরা গভীরে যাই তাহলে দেখি— কর্তৃত্ববাদী কাঠামো বিভিন্নভাবে তৈরি হয়েছে।

পশ্চিমা দেশে হয়ত অনেকে সাহস করে রাস্তায় নামতে চায় না। তাকে হয়ত রাজনৈতিক অপরাধে পাকড়াও করবে না। কিন্তু রাস্তা পার হতে গিয়ে অপরাধ করেছ— রাস্তায় গাড়ি থামিয়েছে এমন অপরাধে গ্রেপ্তার করা হতে পারে। এর মধ্য দিয়ে যাকে এ অপরাধে গ্রেপ্তার করা হবে তার জীবন অসহনীয় হয়ে উঠবে।

যুক্তরাষ্ট্রে এক তৃতীয়াংশ নাগরিক ভোট দিতে পারে না। এর মধ্যে ৮০ শতাংশই হলো কালোরা। এটাকে আমরা কীভাবে ব্যাখ্যা করব? একটা উদারতাবাদী বিশ্ব যেভাবে ‘জেনোসাইড’কে ‘সমর্থন’ করে যাচ্ছে, যেখানে ৩৫ হাজার মানুষ মারা গেল— যার অধিকাংশই নারী ও শিশু। এ কারণে যুক্তরাষ্ট্রের ছাত্ররা জেগে উঠল। আমি তাহলে কাকে কর্তৃত্ববাদী বলব? এই বাইনারি চিন্তারও বিনির্মাণ করার সময় এসেছে— দরকারও।

ইরান— যাকে আমরা রক্ষণশীল বলছি— এটা কিন্তু ঠিক নয়। আজকাল ভিডিওতেই সব দেখা যায়। তাদের মতো করে তাদের একটা জীবন আছে। চীনের বিষয়ে একই কথা— পশ্চিমারা চীনকে যেভাবে উপস্থাপন করে আমরা সেইভাবে দেখি। চীনে এক বিলিয়ন মানুষ। তাদের মতো জীবন আছে, যেটা আমরা ঠিকভাবে দেখতে পাই না। স্বাধীনতা শুধু পশ্চিমা বিশ্বে— এই মিথ বোধ হয় এবার ভেঙ্গেছে। যেহেতু তথাকথিত উদারবাদী পশ্চিমা বিশ্ব একটা জেনোসাইডকে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে।

যুক্তরাষ্ট্রে এক তৃতীয়াংশ নাগরিক ভোট দিতে পারে না। এর মধ্যে ৮০ শতাংশই হলো কালোরা। এটাকে আমরা কীভাবে ব্যাখ্যা করব? একটা উদারতাবাদী বিশ্ব যেভাবে ‘জেনোসাইড’কে ‘সমর্থন’ করে যাচ্ছে, যেখানে ৩৫ হাজার মানুষ মারা গেল— যার অধিকাংশই নারী ও শিশু। এ কারণে যুক্তরাষ্ট্রের ছাত্ররা জেগে উঠল। আমি তাহলে কাকে কর্তৃত্ববাদী বলব? এই বাইনারি চিন্তারও বিনির্মাণ করার সময় এসেছে— দরকারও।

সকাল সন্ধ্যা: পশ্চিম জেনোসাইডকে সমর্থন দিচ্ছে। আবার সেই পশ্চিমেই এই সমর্থনের বিপক্ষে প্রতিবাদ জানানো হচ্ছে। এর মধ্য দিয়ে মধ্যপ্রাচ্যে কতটা পরিবর্তন আমরা আশা করতে পারি?

ইমতিয়াজ আহমেদ: ৩৫ হাজার মানুষকে হত্যা করার ঘটনার প্রতিবাদে ছাত্ররা জেগে উঠেছে। এটা কতদূর যাবে সেটা আমরা জানি না। কিন্তু যতদূর এসেছে সেজন্য আমরা তাদের ধন্যবাদ দিতে পারি।

এখানে যে বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ, যারা বিশ্বের সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকা একদম শুরুর দিকে আছে সেইসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা জেনোসাইড বিষয়টি নিয়ে কথা বলছে— তারা সোচ্চার হচ্ছে। তারা বলছে, তাদের আয় আসছে জেনোসাইড থেকে। এটাতো কোনওভাবে হতে পারে না। মধ্যপ্রাচ্যকেও বিষয়টি তাকে বুঝে নিতে হবে।

সকাল সন্ধ্যা: তাহলে মধ্যপ্রাচ্যের এই সংকটে ইরানের যে অবস্থান, ইসরায়েলের যে অবস্থান, এরমধ্যেই প্যালেনস্টাইনের স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠার সুযোগ আছে কী?

ইমতিয়াজ আহমেদ: এটা যুক্তরাষ্ট্রের জনগণ, ইউরোপের জনগণ ও ইসরায়েলর জনগণের ওপর নির্ভর করবে। এই তিনটি এলাকার জনগণ যখন জেগে উঠবে তখনই সম্ভব হবে। ইউরোপের জনগণ জেগে উঠেছে। যদিও ছয় মাস সময় লেগেছে। দেরি করে হলেওতো জেগে উঠেছে।

গত বছরের ৯ অক্টোবর এক পত্রিকাকে এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলাম, ‘‘ইসরায়েল যা করছে এটা জেনোসাইড’’। ৩৫ হাজার মানুষ মারা গিয়েছে। লন্ডনে ১০ লাখ মানুষের শোভাযাত্রা হয়েছে। আমাদের পত্র-পত্রিকায় এ খবর প্রকাশিত হয় না— হয়তো ভয় পায়। মূলত ওই তিনটি এলাকার জনগণের ওপর প্যালেস্টাইনের ভবিষ্যত তৈরি হবে।

সকাল সন্ধ্যা: তাহলে মধ্যপ্রাচ্য সংকট নিরসনে বা এমন অবস্থায় ইরান কতটা ভূমিকা রাখতে পারে?

ইমতিয়াজ আহমেদ: এত নিষেধাজ্ঞার মধ্যেও ইরান কিন্তু টিকে আছে। কোনও কোনও দিক থেকে এটা তাদের জন্য আশীর্বাদ। কারণ এত সীমাবদ্ধতার মধ্যে দেশটি নতুন নতুন প্রযুক্তি তৈরি করছে। ইরান এখন নতুন শক্তি হিসেবে আমাদের কাছে পরিচিত হচ্ছে।

আমার মনে হয়, যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল রাষ্ট্র হিসেবে বিশ্বে স্থিতিশীলতা চায় না। কারণ অস্থিতিশীল পরিস্থিতি হলে তাদের লাভ। কিন্তু ইরানের অর্থনীতি সমরাস্ত্র বিক্রি করে চলে না। কিন্তু এর মধ্যেও এই বিষয়ে তারা নানাভাবে প্রযুক্তিতে ও সমরাস্ত্রে উৎকর্ষতার স্বাক্ষর রেখে যাচ্ছে। যা আমরা ইতিমধ্যে দেখেছি। ফলে ভবিষ্যতই তার অবস্থান নির্ধারণ করবে।  

সকাল সন্ধ্যা: আপনাকে ধন্যবাদ।
ইমতিয়াজ আহমেদ: আপনাকেও ধন্যবাদ।

ad

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত