Beta
মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর, ২০২৪
Beta
মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর, ২০২৪

আক্ষেপ নিয়ে তৃতীয় দিন শেষ করল বাংলাদেশ

লিটন ৪
Picture of ক্রীড়া প্রতিবেদক

ক্রীড়া প্রতিবেদক

[publishpress_authors_box]

ক্যারিয়ারের ৪৭তম টেস্ট খেলছেন লিটন দাস। মিরাজ অ্যান্টিগার এই টেস্ট দিয়ে ৫০ পূর্ণ করেছেন। মুমিনুল খেলছেন তার ৬৮তম টেস্ট। অথচ তাদের টেস্ট সেঞ্চুরির সংখ্যা যথাক্রমে ৪, ১ ও ১৩। মুমিনুল হক দেশের ইতিহাসের সর্বোচ্চ সংখ্যক সেঞ্চুরির মালিক। ১৩ সংখ্যায় পৌঁছতে তার লেগেছে ৬৫ টেস্ট।

অথচ অস্ট্রেলিয়ায় রবিবার মাত্র ২২ বছরের জশস্বি ক্যারিয়ারের চতুর্থ সেঞ্চুরি করলেন নিজের ১৫তম টেস্টে। ৪৭তম ম্যাচ খেলা লিটনেরও একই সংখ্যক সেঞ্চুরি আছে। জশস্বিদের সঙ্গে লিটনদের পার্থক্যটা ইনিংস বড় করতে না পারায়। ইনিংস বড় করার মানসিকতায়।

লিটনের ক্যারিয়ারে প্রথম সেঞ্চুরি পেয়েছেন অভিষেকের  ছয় বছর পর। আর ভারতের তরুণ ওপেনার শুরু থেকেই সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে চলেছেন। লিটনরা কেন পারেন না তার আরও একটি উদাহরণ অ্যান্টিগা টেস্ট।

দলের বিপদে হাল ধরে দারুণ একটি ইনিংস শুরু করেছিলেন এই ব্যাটার। ৭৬ বলে পৌঁছে যান ৪০ রানে। ১৮তম ফিফটির খুব কাছে গিয়ে অযথা ঝুঁকিপূর্ণ শট নিলেন। সোজা ব্যাটে খেলার বল ক্লরস ব্যাটে খেলতে চাইলেন। শটে আউট হয়ে ফিরলেন। ক্যারিয়ারে এমন অনেকবারই উচ্চাভিলাষী শট ইতি টেনেছে লিটনের সম্ভাবনাময় ইনিংসগুলোর।

লিটনের মতো এমন ভুল শটে উইন্ডিজের বিপক্ষে অ্যান্টিগা টেস্টে আরও একজনকে ফিরতে হয়েছে। দ্বিতীয় টেস্টে ফিফটি পাওয়া জাকের আলি। ৮৯ বলে ৫৩ রানের দুর্দান্ত ইনিংসটা শেষ করেছেন ছক্কা মারার আশায়।

মুমিনুল হকের ৫০ রানের ভালো ইনিংসটি লাঞ্চের পরপরই শেষ হয় এলবিডব্লিউতে। আর চা বিরতির পর ২৩ রান করা মিরাজ ফিরেছেন বাউন্সারে। বিরতির আগে বেশ ভালো খেলছিলেন এই ব্যাটাররা। বিরতিতে ধারাবাহিকতার ছেদ পড়ে। এরপর ইনিংসের শুরুটা আরও সতর্কতায় করা চাই সেটাও ভুলে যান বাংলাদেশ ব্যাটাররা।  

লিটন-জাকেরদের এমন বিদায়ের দিনে উইন্ডিজের করা প্রথম ইনিংসে ৪৫০ রানের জবাবে ৯ উইকেটে ২৬৯ রান করেছে বাংলাদেশ। তৃতীয় দিনের মতো খেলা শেষ হয়েছে আলোর স্বল্পতায়। ১ উইকেট হাতে নিয়ে উইন্ডিজের চেয়ে আরও ১৮১ রানে পিছিয়ে আছে বাংলাদেশ।

ফলোঅন এড়াতে হলে ১ উইকেট হাতে নিয়ে দলীয় তিনশো রান ছুঁতে হবে বাংলাদেশকে। অবশ্য ম্যাচের বর্তমান যা অবস্থা তাতে চতুর্থ দিন শুরুতেই বাংলাদেশের প্রথম ইনিংস গুটিয়ে দিলেও ফলোঅন করানোর সাহস দেখাবে না স্বাগতিকরা।

হতাশা ছড়িয়ে থামলেন জাকির

এত ভালো ইনিংসের এমন সমাপ্তি হতাশার সর্বোচ্চটাই ছড়িয়ে দেয়। সংগ্রামী ইনিংসে দলকে দারুণ ভাবে এগিয়ে নিচ্ছিলেন জাকের। অহেতুক শটে আত্মাহুতি নিলেন।

আউটফিল্ড স্লো থাকয় জাকের বেশ কয়েকটি চার থেকে বঞ্চিত হন। তবে সেই সব শট থেকে তিন রান এসেছে। এছাড়া দুই ও সিঙ্গেলে আর মাঝে-মাঝে কিছু বাউন্ডারীতে দারুণ ইনিংস গড়ে তোলেন। পেয়েছেন ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় টেস্টে দ্বিতীয় ফিফটি।

অথচ এই ফিফটির পরই বড় শট নেওয়ার ইচ্ছা হলো জাকেরের। জাস্টিন গ্রিভসকে ডিপ ব্র্যাওয়ার্ড দিয়ে উড়িয়ে মারতে গিয়ে আউট হলেন। ৫৩ রানে থামল সেঞ্চুরির সম্ভাবনা ছড়ানো ইনিংসটি।

জাকেরের বিদায়ে ২৪৬ রানে অষ্টম উইকেট হারালো বাংলাদেশ। স্বীকৃত ব্যাটার ছাড়াই এখন ফলোঅন এড়াতে লড়তে হবে।

জুটি ভাঙল তাইজুলের বিদায়ে

বেশ ভালো জুটি গড়েছিলেন জাকের আলির সঙ্গে। শুধু সঙ্গ দিয়ে যাওয়োই নয়, তাইজুল নিজেও আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে খেলছিলেন।

তবে এ লড়াই আর এগোলো না। জুটি ভাঙল ৬৮ রানে। ৬৩ বলে ২৫ রান করে আলজেরি জোসেফের বলে বোল্ড হয়েছেন তাইজুল। সরাসরি স্ট্যাম্পে আসা বলটি একটু নিচু হয়ে যাওয়ায় বুঝতে অসুবিধা হয় তাইজুলের। বলের লাইন মিস করে তাই বোল্ড হলেন তিনি।

তাইজুল ফিরলেও অপরপ্রান্তে অপরাজিত আছেন জাকের। ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় টেস্টে দ্বিতীয় ফিফটি তুলে নিয়েছেন।

জাকের-তাইজুলের ভালো জুটি

কঠিন অবস্থা থেকে বাংলাদেশকে টেনে তুলছেন জাকের আলি ও তাইজুল ইসলাম। অবশ্য ফলোঅনের শঙ্কা এখনও কাটেনি। তিনশো রানের আগে গুটিয়ে গেলে উইন্ডিজ চাইলে বাংলাদেশকে দ্বিতীয় ইনিংসে আবার ব্যাট করতে পাঠাবে।

অবশ্য এই দিকটায় ক্যারিবিয়ানদের হতাশ করছেন জাকের-তাইজুল। সপ্তম উইকেটে ১০৪ বলে ৬৬ রানের উজ্জ্বল জুটি গড়ে এগিয়ে চলেছেন দুজনে। জাকের ৭২ বলে ৪২ ও তাইজুল ৫৯ বলে ২৫ রানে ব্যাট করছেন।

ক্যারিবিয়ানদের চেয়ে এখনও ২১৮ রানে পিছিয়ে বাংলাদেশ। তবে দারুণ জুটিতে টপঅর্ডার ব্যাটারদের শক্ত বার্তা দিলেন তাইজুল। ৮০ ওভারের পর উইন্ডিজ পেসারদের নতুন বল হাতে ছুটে আসা সামলেছেন তুনি। তাইজুলের ইনিংস দেখে শিক্ষা নিতে পারেন জয়-জাকিররা।

মিরাজও ইনিংস বড় করতে ব্যর্থ

ইনিংসের শুরু পেয়েও তা বড় করতে না পারার আরেক আক্ষেপ হয়ে ফিরলেন মেহেদি হাসান মিরাজও। চা বিরতির পর ২৩ রান করে শর্ট বলে শর্ট লেগে ক্যাচ দিয়ে ফিরেছেন বাংলাদেশ অধিনায়ক।

মিরাজের বিদায়ে ১৬৬ রানে ৬ উইকেট হারালো বাংলাদেশ। মিরাজের পর শেষ স্বীকৃত ব্যাটার জাকের আলি (২৩) তাইজুল ইসলামকে নিয়ে লড়ছেন। দুজনের ২৯ রানের জুটিতে বাংলাদেশ ১৯৫ রান তুলেছে। প্রথম ইনিংসে এখনও ২৫৫ রানে পিছিয়ে বাংলাদেশ।  

মিরাজের লড়েইয়ে চা বিরতিতে

উইন্ডিজের বিপক্ষে অ্যান্টিগা টেস্টের তৃতীয় দিন চা বিরতিতে ব্যাকফুটে থেকেই যেতে হলো বাংলাদেশকে। উইকেটের একপ্রান্ত আগলে লড়াই করছেন মেহেদি হাসান মিরাজ।

বাংলাদেশ অধিনায়কের ৬১ বলে অপরাজিত ২২ রানে ফলোঅনের শঙ্কা এড়িয়েছে বাংলাদেশ। চা বিরতি পর্যন্ত দলের রান ৫ উইকেটে ১৬৫। ৫ রান করা জাকের আলিকে নিয়ে ২০ রানের ছোট জুটি গড়েছেন মিরাজ।

বাংলাদেশের জন্য স্বীকৃত ব্যাটারদের এটাই শেষ জুটি। এ জুটি ভাঙলে বোলাররা ক্রিজে আসবেন। অবশ্য কেমার রোচের মতো ব্যাটারকে সঙ্গ দেওয়া ইনিংস খেলার ভরসা তাসকিন-তাইজুলদের ওপর করা যাচ্ছে না। আবার ছয় নম্বরে নামা জাস্টিন গ্রিভসের মতো সেঞ্চুরির আশাও করা যাচ্ছে না বাংলাদেশের ইনিংসে।   

উইকেট ছুড়ে এলেন লিটন

ভালো ইনিংস শুরু করে নিজের উইকেট বিলিয়ে দেওয়ার হতাশাজনক অতীত আছে লিটন দাসের। সেই অবস্থা থেকে বের হতে পারেননি। অ্যান্টিগায় আবারও দারুণ ইনিংসের সমাপ্তি ঘটালেন নিজের ভুলে।

শামার জোসেফের কোমড় সমান বাউন্স হওয়া বলটি সহজেই সোজা ব্যাটে খেলা যেত। ডিফেন্স করে অফ বা অন ড্রাইভ খেলতে পারতেন লিটন। কিন্তু কি ভূত চাপলো মাথায়! তিনি ওই বলে পুল খেলতে পেলেন ক্রস ব্যাটে।

মিড উইকেটের দিকে ঠেলে একটি রান নেওয়ার চেষ্টা ছিল হয়তো। রান করার সেই লোভে কাটা পড়লেন লিটন। ব্যাটের ভেতরের কানায় লেগে বল আঘাত করলো স্ট্যাম্পে। ৭৬ বলে ৪০ রানের ইনিংসের করুণ সমাপ্তি হলো।

লিটনের বিদায়ে ১৪৫ রানে ৫ উইকেটে পরিণত বাংলাদেশ। উইন্ডিাজের প্রথম ইনিংসের স্কোর থেকে আরও ৩০৫ রানে দূরে দাঁড়িয়ে ফলোঅনের শঙ্কায় আছে সফরকারীরা।

মুমিনুলের দারুণ ইনিংসের সমাপ্তি

টেস্টে বাংলাদেশের হয়ে সর্বোচ্চ ১৩টি সেঞ্চুরিয়ানের ব্যাটিং আজ দারুণ হচ্ছিল। কোন ভুল করেননি। এলবিডব্লিউয়ে কাটা পড়ার ভয়টাও কমিয়ে এনেছিলেন। পাশাপাশি ব্যাট-প্যাডের গ্যাপ দেখিয়ে বোল্ড হওয়ার শঙ্কাও কম দেখা যাচ্ছিল তার ব্যাটিংয়ে।

আত্মবিশ্বাসী এক ইনিংসে ১১৬ বলে পৌঁছে যান ২১তম টেস্ট ফিফটিতে। এই ইনিংস যে আরও বড় হবে সেই আশাও জাগিয়েছেন মুমিনুল তার সাবলীল ব্যাটিংয়ে। অথচ হঠাৎ ছন্দপতন। নিঁখুত একটি ইনিংসের সমাপ্তি হলো মনসংযো হারিয়ে।

জেডন সিলসের স্ট্যাম্পের বলটিতে একটু আয়েশি ভঙ্গিতে খেলতে গিয়ে বলের লাইন মিস করলেন মুমিনুল। সরাসরি এলবিডব্লিউয়ের আবেদনে সাড়া দেন আম্পায়ার। মুমিনুল রিভিউ নিয়েও সুবিধা করতে পারেননি।

দলীয় ১২৮ রানে ফিরলেন তিনি। থামল লিটন দাসের সঙ্গে ৬৪ রানের জুটি।

লাঞ্চ পর্যন্ত হাল ধরলেন মুমিনুল-লিটন

অ্যান্টিগা টেস্টের তৃতীয় দিন প্রথম সেশন মন্দের ভালো কাটল বাংলাদেশের। খুব বেশি রান আসেনি তবে একটি উইকেটের বেশি হারাতে হয়নি।

এই সেশনে শাহাদাত হোসেন দিপুর উইকেট হারিয়ে ৬৫ রান তুলেছে বাংলাদেশ। ব্যাটিং করছেন ৩৮ রান করা মুমিনুল হক ও ২১ রান করা লিটন দাস। দলের রান ৩ উইকেটে ১০৫। প্রথম ইনিংসে উইন্ডিজের চেয়ে এখনও ৩৪৫ রানে পিছিয়ে বাংলাদেশ।

দলীয় ৬৬ রানে শাহাদাত হোসেন দিপুর বিদায়ের পর দুজনে ৪৯ রানের জুটি গড়ে অবিচ্ছিন্ন আছেন। উইন্ডিজ অধিনায়ক ক্রেইগ ব্র্যাথওয়েট এখনও কোন স্পিনারকে আক্রমণে টানেননি। ৪৫ ওভার বল করেছেন দলটির পেসাররা।

তাদের বেশ স্বচ্ছন্দে সামলে চলেছেন মুমিনুল ও লিটন। শাহাদাতের বিদায়ের পর থেকে দুজনেই ক্যারিবিয়ান পেসারদের সামলেছেন স্বচ্ছন্দে ও আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে। স্টেডিয়ামের আউটফিল্ড স্লো না হলে মুমিনুল ও লিটন আরও কিছু বাউন্ডারী পেতেন। তাতে দলের ও নিজেদের রানটাও বাড়িয়ে নিতে পারতেন।

অবশ্য বাংলাদেশের জন্য এখন উইকেটে টিকে থেকে ইনিংস বড় করা জরুরী।

শাহাদাতের লড়াই থামল

প্রথম ঘন্টায় প্রথম উইকেট হারালো বাংলাদেশ। শাহাদাত হোসেন দিপুর লম্বা লড়াই আর এগোলো না। ৭১ বল খেলে ১৮ রানে প্রথম স্লিপে ক্যাচ দিলেন তিনি।

আগের দিন ১০ রানে শেষ করেছিলেন দিপু। তৃতীয় দিন ৮ রান যোগ করেছেন। উইকেটে সময় কাটানোর চেষ্টায় সফলও হয়েছিলেন। তবে কেমার রোচের অফস্ট্যাম্পের বাইরের বলটিতে ডিফেন্স করতে গিয়ে আউট সাইডএজ হন। ৬৭ রানে তৃতীয় উইকেট হারালো বাংলাদেশ।

মুমিনুল অপরাজিত আছেন ২৩ রানে। উইকেটে এসেছেন লিটন দাস।

প্রথম আধ ঘন্টা স্বস্তির

শুরুতেই উইকেট হারিয়ে দিনটি বিষাদময় করে তোলার যে ভয় তা কাটানো গেছে। অ্যান্টিগা টেস্টের তৃতীয় দিন শুরুর ৩০ মিনিটে কোন বিপদ হতে দেননি মুমিনুল হক ও শাহাদাত হোসে দিপু। দুজনে গত দিনের রানের সঙ্গে যোগ করেছেন আরও ২৪।

টেস্টের তৃতীয় দিন প্রথম আধ ঘন্টা শেষে ২ উইকেটে ৬৪ রান তুলেছে বাংলাদেশ। মুমিনুল হক অপরাজিত আছেন ২১ রানে আর শাহাদাত ১৮ রানে। ১০৬ বলে ৪৩ রানের জুটি গড়েছেন দুজনে। উইন্ডিজের চেয়ে প্রথম ইনিংসে আরও ৩৮৬ রানে পিছিয়ে বাংলাদেশ।

দিনের শুরু থেকে বেশ সতর্ক হয়েই খেলেছেন দুই ব্যাটার। শুরুর কয়েক ওভারে শুধু রক্ষণ করেই কাটিয়েছেন। বিশেষ করে শাহাদাত হোসেন দিপু বেশি সতর্ক আছেন। উইকেটে টিকে থাকার দিকে মনযোগ তার।

অন্যদিকে দুটো বাউন্ডারী এসেছে মুমিনুল হকের ব্যাট থেকে। শাহাদাতের চেয়ে উইকেটে বেশ স্বচ্ছন্দ মনে হয়েছে মুমিনুলকে।   

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত