Beta
বৃহস্পতিবার, ৩০ জানুয়ারি, ২০২৫
Beta
বৃহস্পতিবার, ৩০ জানুয়ারি, ২০২৫

ওয়াশিংটনের আকাশে কীভাবে ঘটল এই দুর্ঘটনা

ওয়াশিংটনে বিমান-হেলিকপ্টার সংঘর্ষের পর পটোম্যাক নদীতে চলছে উদ্ধার অভিযান।
ওয়াশিংটনে বিমান-হেলিকপ্টার সংঘর্ষের পর পোটোম্যাক নদীতে চলছে উদ্ধার অভিযান।
[publishpress_authors_box]

যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিতে রাতের আকাশে ঘটল ভয়াবহ এক দুর্ঘটনা। যাত্রীবাহী একটি বিমানের সঙ্গে ঘংঘর্ষ হলো একটি সামরিক হেলিকপ্টারের। তাতে হতাহত হয়েছে অনেকে।

আমেরিকান এয়ারলাইন্সের বিমানটিতে যাত্রী ও ক্রু মিলিয়ে মোট ৬৪ জন ছিলেন। অন্যদিকে প্রশিক্ষণ উড্ডয়নে থাকা ব্ল্যাক হক হেলিকপ্টারে ছিলেন তিনজন সৈন্য।

বুধবার রাত ৯টার দিকের এই সংঘর্ষের পর বিমানটি ভেঙে গিয়ে পড়ে পোটোম্যাক নদীতে। সেখান থেকে ১৯টি লাশ উদ্ধারের খবর দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে বিবিসির অংশীদার বিবিএস টিভি।

বিমান ও হেলিপক্টারের কোনও আরোহী বেঁচে নেই বলে ধারণা করা হচ্ছে। উদ্ধার অভিযান এখনও চলছে। তবে শীতের এই সময়ে নদী পানির তাপমাত্রা হিমাঙ্কের নিচে থাকায় উদ্ধারকর্মীদের বেশ বেগ পেতে হচ্ছে।

কীভাবে সংঘর্ষ?

যাত্রীবাহী বিমানটি আসছিল ক্যানসাস থেকে; এটি নামার কথা ওয়াশিংটন রোনাল্ড রেগান বিমানবন্দরে। সামরিক বাহিনীর প্রশিক্ষণ হেলিকপ্টারটি ওড়ে ভার্জিনিয়া ঘাঁটি থেকে, এটিরও গন্তব্য ছিল রোনাল্ড রেগান বিমানবন্দর।

রাত ৯টার দিকে বিমানবন্দরের রানওয়েতে যখন বিমানটি নামার প্রস্তুতি নিচ্ছিল, তখনই সংঘর্ষ হয় বলে যুক্তরাষ্ট্রের বিমান পরিচালনা কর্তৃপক্ষ এফএএ জানিয়েছে।

আমেরিকান এয়ারলাইন্স কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, যাত্রীবাহী বিমানটি ছিল একটি বোম্বারডিয়ার উড়োজাহাজ। এটি ক্যানসারের উইচিতা থেকে ৬০ জন যাত্রী নিয়ে ওয়াশিংটন আসছিল। বিমানে ক্রু ছিলেন চারজন।

সিবিএস টিভি সামরিক সূত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে জানিয়েছে, প্রশিক্ষণ হেলিকপ্টারটি উড়েছিল ভার্জিনিয়ার ফোর্ট বেলভোর থেকে। তিন জন্য সৈন্য ছিল সেখানে, তবে উচ্চপদস্থ কোনও কর্মকর্তা ছিলেন কি না, তা জানা যায়নি।

বিমানবন্দরের তথ্যে দেখা যাচ্ছে, রাত ৯টার সময় উড়োজাহাজটির অবতরণের কথা ছিল। পুলিশ জানিয়েছে, তারা তার ৭ মিনিট আগে খবর পান যে বিমানটি পোটোম্যাক নদীতে বিধ্বস্ত হয়েছে।

ওয়াশিংটনে বিমান-হেলিকপ্টার সংঘর্ষের পর পেবাটোম্যাক নদীতে চলছে উদ্ধার অভিযান।
ওয়াশিংটনে বিমান-হেলিকপ্টার সংঘর্ষের পর পোটোম্যাক নদীতে চলছে উদ্ধার অভিযান।

প্রত্যক্ষদর্শীর বর্ণনায়

অ্যারি শুলমান নামে একজন প্রত্যক্ষদর্শী এনবিসি ওয়াশিংটন টিভিকে বলেন, বিমানবন্দর লাগোয়া জর্জ ওয়াশিংটন পার্কওয়ের ঠিক ওপরে সংঘর্ষটি ঘটে।

শুলমানের প্রথমে দেখে মনে হয়েছিল যে বিমানটি ঠিকঠাক মতোই রানওয়ের দিকে যাচ্ছে। কিন্তু যখন উড়োজাহাজটি ডান দিকে বেঁকে যাচ্ছিল এবং পেটের দিকে আগুন জ্বলছিল, তখন বোঝেন যে কিছু গড়বড় হয়েছে।

বিমান অবতরণের সময় এমনটা ঘটে না বলেই দেখে আসছেন শুলমান। তবে ঠিক কী হয়েছে, তা তিনি বুঝতে পারছিলেন না অন্ধকারের কারণে।

তিনি বলেন, মাঝে মধ্যেই স্ফূলিঙ্গ হচ্ছিল, এক পর্যায়ে বিমানটিকে মনে হচ্ছিল, বিশাল এক মোমবাতির মতো।

জিমি মাজেও নামে আরেক ব্যক্তি ঠিক সেই সময় বিমানবন্দরের কাছেই একটি পার্কে ছিলেন। তিনি বলেন, বিমানটিকে একটি আতশবাজির মতো মনে হচ্ছিল।

বিমানটিকে বিমানবন্দরের দিকে এলোমেলোভাবে চলতে দেখার কথা জানান তিনি। তবে মাজেও তখনও বুঝতে পারেননি আসলে কী হয়েছে, উদ্ধারকারী দলের সাইরেন শুনে তিনি বুঝতে পারেন, এটি দুর্ঘটনার কবলে পড়েছে।

একটি ভিডিওতে দেখা গেছে, সংঘর্ষের সময় বিস্ফোরণের মতো শব্দের সঙ্গে আলোকিত হয়ে উঠেছিল আকাশ। প্রত্যক্ষদর্শী আরও অনেকেও বিকট শব্দ ও আলোর কথা বলেন।

দুর্ঘটনার পর ওয়াশিংটনের রোনাল্ড রেগান বিমানবন্দরে উড়োজাহাজ ওঠা-নামা বন্ধ করে দেওয়া হয়।

হতাহত কত?

উদ্ধার অভিযান চললেও এই দুর্ঘটনায় ঠিক কতজন হতাহত হয়েছে, সে বিষয়ে কর্তৃপক্ষ এখনও কিছু জানায়নি।

তবে নদী থেকে ১৯টি লাশ উদ্ধারের কথা পুলিশ সূত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে জানিয়েছে সিবিএস টিভি।

বিমান ও হেলিকপ্টারের আরোহীদের যে তথ্য পাওয়া গেছে, তাতে ধারণা পাওয়া যায় যে এই দুর্ঘটনায় পড়া মানুষের সংখ্যা অন্তত ৬৭ জন।

যুক্তরাষ্ট্রের অগ্নি নির্বাপক বাহিনীর প্রধান জন ডনেলি সাংবাদিকদের প্রশ্নে বলেছেন, জীবিত কাউকে উদ্ধারের খবর তার কাছে নেই।

প্রত্যক্ষদর্শীদের বয়ানে স্থানীয় সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, বোম্বারডিয়ার উড়োজাহাজটি সংঘর্ষের পর দুই টুকরা হয়ে নদীতে পড়ে। অন্যদিকে হেলিকপ্টারটিও নদীতে পড়ে ডুবে যায়।

রোনাল রেগান বিমানবন্দরের কাছের সেই নদীতে পুলিশ ও উদ্ধারকর্মীরা তল্লাশি চালিয়ে যাচ্ছে। পোটোম্যাক নদীর গড় গভীরতা ২৪ ফুট।

কর্তৃপক্ষ কী বলছে?

দুর্ঘটনার খবর সঙ্গে সঙ্গেই জানানো হয় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে।

ভয়াবহ এই দুর্ঘটনার পর কর্তৃপক্ষের কার্যক্রম তিনি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন বলে হোয়াইট হাউস জানিয়েছে। উদ্ধারকর্মী দল দ্রুত সাড়া দেওয়ায় তিনি তাদের ধন্যবাদও জানান।

প্রতিরক্ষামন্ত্রী পেট হেগসেথ এবং পরিবহনমন্ত্রী শন ডাফি পরিস্থিতির ওপর নজর রাখছেন।

আমেরিকান এয়ারলাইন্সের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ভয়াবহ এই দুর্ঘটনায় গভীর দুঃখ প্রকাশ করেছেন।

এফএএ জানিয়েছে, কীভাবে এই দুর্ঘটনা ঘটল, তা তদন্ত করা হচ্ছে। এতে ন্যাশনাল ট্রান্সপোর্ট সেইফটি অথরিটির সঙ্গে এফবিআইসহ অন্য সংস্থাগুলোও কাজ করছে।

এই দুর্ঘটনার সঙ্গে সঙ্গে রোনান্ড রেগান বিমানবন্দরে সব উড়োজাহাজের ওঠানামা বন্ধ করে দেওয়া হয়। এটি যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে ব্যস্ত বিমানবন্দরগুলোর একটি।

তথ্য সূত্র : বিবিসি, সিএনএন

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত