Beta
মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর, ২০২৪
Beta
মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর, ২০২৪

বরফ ঠান্ডা পানিতে দিলে ডুব, উপকার হয় খুব?

কোল্ড প্লাঞ্জ বা বরফ স্নান’ এক ধরনের থেরাপি
ছবি: ভার্জিন অ্যাকটিভ ডটকম ডট এইউ
[publishpress_authors_box]

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আজকাল বরফের টুকরো ভরা বাথটাবে ডুব দেয়ার ভিডিও-রিল খুব দেখা যায়। দেশে শীতকাল এলে গোসল কমিয়ে দেয়া নিয়ে হাস্যরস হয়, আর বিদেশে শুরু হয়েছে ‘কোল্ড প্লাঞ্জ’ মানে হিম জলে ডুব দিয়ে ওঠার চর্চা।

নিছক দুঃসাহসিক মজার জন্য নয়; অনেকে বলছেন, কোল্ড প্লাঞ্জ শরীরের জন্য ভীষণ উপকারী। আসলেই কি তাই?

কোল্ড প্লাঞ্জ কী

বাংলায় বলা যেতে পারে ‘বরফ স্নান’, যা এক ধরনের থেরাপি। আজকাল বিদেশে বরফ স্নানের জন্য বাথটাবও কেনাবেচা হচ্ছে।   

বাথটাবের অর্ধেক পর্যন্ত ঠান্ডা পানি ঢালতে হবে। এতে তিনটি বড় ব্যাগ বরফ মেশাতে হবে। যেমন তাপমাত্রা ৫০ থেকে ৬০ ফারেনহাইটে থাকে।  

প্রথম বার বরফ স্নানের অভিজ্ঞতা নিতে চাইলে পরামর্শ হচ্ছে, অল্প সময়ের জন্য এই শীতল জলে নামতে হবে; যেমন ৩০ সেকেন্ড থেকে এক মিনিট। কয়েকবার এই অভিজ্ঞতা হওয়ার পর সময় বাড়ানো যেতে পারে পাঁচ থেকে ১০ মিনিট পর্যন্ত।

তাড়াহুড়া করে ডুব দিলে শরীর ঠান্ডার সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারবে না। তাই ধীরে ধীরে হিম জলে শরীর এলিয়ে দিতে হবে। পানির বেশি গভীরে যাওয়া ঠিক হবে না; ‘কোল্ড শক’ হলে খুব ভালো সাঁতারুর পক্ষেও ভেসে থাকা সক্ষমতা হ্রাস পায়।

মাথা অবশ্যই ঠান্ডা পানির উপরে রাখতে হবে।   

ডুব দেয়ার পর শুরুর দিকে শ্বাসপ্রশ্বাস অস্বাভাবিক মনে হতে পারে; যদিও তা দ্রুত ঠিক হয়ে যায়। যদি এরপরও ধড়ফড় লাগে লাগে, বুকে ব্যথা অনুভব হয় তাহলে পানি থেকে উঠে আসতে হবে। যদি পানিতে ডুবে বা গা ভিজিয়ে থাকার সময় হাত-পায়ের আঙুলের রঙ বদলে যেতে থাকে তাহলে দ্রুত বেরিয়ে এসে নিজেকে প্রথমে উষ্ণ করে নিতে হবে।

বরফ স্নান শেষ করে অবশ্যই শরীর মুছে শুকনো করে নিতে হবে।

লেক, ঝরনা, সমুদ্রের মতো প্রাকৃতিক পরিবেশে বরফ স্নানের সময় নিজের স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য কিছু বিষয়ে নজর দিতে হবে। যেমন- পানি পরিস্কার থাকা চাই, সাঁতার কাটা নিরাপদ হওয়া চাই। পানির তাপমাত্রাও মেপে নিতে হবে। বরফ স্নানে অভিজ্ঞ এমন কেউ সঙ্গে থাকলে খুব ভালো হয়।

হিম জলে ডুবে কী হয়

দ্য কাট ডট কমে এক লেখায় হান্না ফ্ল্যানাগান জানালেন, তিনি শীতেও বরফ স্নান করেন; তবে তা তিন থেকে পাঁচ মিনিটের মধ্যেই সীমিত রাখেন।  

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকেই দাবি করছেন, সকাল সকাল বরফ স্নানে তাদের সারাদিন  ভালো কাটে।   

কিম কার্দাশিয়ান এবং আরো অনেক তারকারাও বরফ দেয়া পানিতে ডুবে থাকছেন বলে জানাচ্ছেন।

নাইক ওয়েল কালেকটিভ প্রতিষ্ঠানের কোচ  লরেন স্রামের সঙ্গে এই কোল্ড প্লাঞ্জ নিয়ে কথা বলেন হান্না ফ্ল্যানাগান।লরেন স্রাম নিজে কোল্ড প্লাঞ্জ করে থাকেন। তিনি পেশাগতভাবেও একজন বরফ স্নান প্রশিক্ষক।

আইস কোল্ড ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা লরেন স্লাম ২০১৯ সালে বরফ স্নান বিষয়ে এক কর্মশালায় যোগ দিয়েছিলেন।

ঠান্ডা পানিতে ডুবে থাকার অভিজ্ঞতা ও উপকারীতা নিয়ে তিনি বলেন, “শারীরিক অনেক ধরনের অস্বস্তি কেটে যায় এতে।

“এই শীতল জলে নামার পর শরীরের তাপমাত্রা কমতে থাকে। এরপর যখন বেরিয়ে আসি তারপর পুরো শরীরে রক্ত চলাচল বেড়ে যায়।”

“শরীরে জুড়ে সুখী হরমোনগুলো ছুটোছুটি শুরু করে। বরফ স্নানে ওজনও কমে যায়। কারণ শরীর পুনরায় উষ্ণ হতে প্রচুর ক্যালরি পুড়ে যায়।”

কোনো কোনো গবেষণা বলছে, বরফ স্নানে পেশীশক্তি সবল হয়। এমনকি নিয়মিত কোল্ড প্লাঞ্জ থেকে টাইপ টু ডায়বেটিস থেকেও সুরক্ষা মিলবে।

ঠান্ডার সঙ্গে মানিয়ে নিতে নিতে হৃদযন্ত্রের কার্যকারিতা বাড়তে থাকে।

অনেকেই সতর্ক করে এও বলছেন, এসব নিয়ে আরও গবেষণা হওয়া দরকার।

উপকারীতার পাশাপাশি বরফ স্নানের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও ধরা পড়েছে।

বরফ স্নানের সময় শরীর অসাড় বোধ হতে পারে। এতে নিজের নড়াচড়ার উপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ডুবে যাওয়ার ভয় রয়েছে। অনেকের বেলায় হঠাৎ ঠান্ডা পানির সংস্পর্শে আসায় কোল্ড শক হতে পারে। আবার হৃদস্পন্দন অস্বাভাবিক বেড়ে যেতে পারে।

বরফ স্নান কাদের জন্য নয়?

যারা হৃদরোগী তাদের অবশ্যই এভাবে বরফ ও ঠান্ডা পানি ভরা বাথটাবে গোসল করা উচিত হবে না। যাদের রক্তচাপ কম বা রক্তশূন্যতা আছে তাদের বরফ স্নান করা ঠিক হবে না। কোল্ড প্লাঞ্জ করার আগে অবশ্যই চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলে নেয়া দরকার।  

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

ad

সর্বাধিক পঠিত