Beta
বৃহস্পতিবার, ১৯ ডিসেম্বর, ২০২৪
Beta
বৃহস্পতিবার, ১৯ ডিসেম্বর, ২০২৪

আঁটোসাঁটো সোয়েটারে জড়িয়ে থাকে কোন আবেগ

আঁটোসাঁটো জাম্পারে জড়িয়ে থাকে কোন আবেগ
ছবি: উই আর নিটার্স
[publishpress_authors_box]

শীত এসে গেছে। হাড় কাঁপানো বাতাস শুরু হয় পড়ন্ত বিকালে; বাড়তে থাকে গাঢ় সন্ধ্যা নেমে আসতেই। তখন ঢলঢলে সোয়েটার গায়ে দিতে হাতড়ে খোঁজা শুরু করলেন মোয়া সারনার। ঠিক এরপর কী উপলব্ধি হলো সেসব নিয়ে তিনি লিখেছেন দ্য গার্ডিয়ানে। তার ভাষ্যেই প্রতিবেদনের ধারাবাহিকতা বজায় রাখা হলো।

ওয়াশিং মেশিনে জাম্পার খুঁজে পেয়ে আমার মনে হলো, ধোয়ার পরে এই জাম্পার অনেকখানি চেপে গেছে। মনে হচ্ছে আমার নয়, আমার পুতুলের গায়ে ঠিক মাপ মতো হবে। আমি নিজের ভুলের জন্য খুব বিরক্ত হলাম। যদিও এরপরই ভুল ভাঙ্গে আমার। একটু টানাটানি করে জাম্পার গায়ে চাপাতেই বুঝতে পারলাম এই পোশাক এখন একেবারে গায়ের মাপে খাপ খেয়ে গেছে।

চেপে আসার কারণে জাম্পারের বুনন এখন ঘন হয়েছে। তাতে করে বাইরের ঠান্ডা হাওয়া কম গায়ে লাগছে; গা গরম হচ্ছে ভালো ভাবে। এই জাম্পার পরার পর আলাদা করে কোট গায়ে চাপাতে লাগছে না আমার। গায়ে দেয়ার পর থেকেই মনে হচ্ছে জাম্পারটি যেন আমাকে জড়িয়ে ধরে আছে। শুধু একটাই সমস্যা, জাম্পারের ঘাড়ের দিকটাও চেপে এসেছে বলে আমি ঠিক মতো শ্বাস নিতে পারছি না।

আপনি হয়তো ভাবছেন, এসব কথা কেন বলছি? আসলে একটি চেপে আসা সোয়েটার থেকেও জীবনের অর্থ খুঁজে নেয়া যায়।

মাঝে মাঝে আমরা সুরক্ষা কিংবা সান্ত্বনার জন্য হাত বাড়িয়ে কোনো আস্থা খুঁজে নিতে চাই। আমাদের নিজেকে সেই রক্ষাকবচের মধ্যে নিরাপদ এবং উষ্ণ মনে হয়। কিন্তু তারপরেই কেমন হাসফাঁস লাগে ভেতর থেকে। যারা আমাদের প্রত্যাখান করবে তাদের থেকে দূরে থাকলে নিজেকে নিরাপদ মনে হয়। কিন্তু যারা ভালোবাসতে পারে তাদের কাছাকাছি হতেও অপারগ হই আমরা।

ঠান্ডা অথবা অন্ধকার বাইরে থেকে আসতে পারে, কিংবা নিজের ভেতর থেকেও; নিজেকে মুড়িয়ে নিতে চাওয়ার প্রবণতা নিয়ে ভাবার আছে। যদি একেবারে মোটা জামায় নিজেকে ঢেকে ফেলি তাহলে শেষ পর্যন্ত গরম ও ঘামে নিজেই অস্থির হয়ে উঠবো।

কখনও কখনও আমরা শীতনিদ্রায় যাওয়ার মতো নিজেকে এক ঘরে করে ফেলি। দরজা আটকে রাখি, অফিস পার্টিও এড়িয়ে চলি, মাসের পর মাস শুধু সিনেমা দেখে এবং চকলেট খেয়ে কাটিয়ে দিতে পারি। এক সময় আমাদের মনে হয়, আমরা বুঝি আর কখনই বাড়ির বাইরে যেতে চাই না।

ভালোবাসার মানুষ অথবা বন্ধুর সঙ্গে বিচ্ছেদ হওয়ার পর মনের দরজা বন্ধ করে দিয়ে থাকার প্রবণতাও রয়েছে আমাদের। যেন সেই মানুষেরা আমাদের আর কোনো ক্ষতি করতে না পারে। এভাবে একাকিত্বের মুখোমুখি হয়ে পড়ি আমরা। এই পরিস্থিতি সম্পর্কের ভাঙ্গনের চেয়েও বেশি যন্ত্রণাদায়ক। এই চক্রে একবার ঢুকে গেলে এখান থেকে বেরিয়ে আসাও কঠিন হয়ে ওঠে।

আমি প্রায়ই ভাবি, আমাদের গায়ে চেপে বসে থাকা পোশাকে সঙ্গে আমাদের মনস্তাত্ত্বিক অর্থ কী? স্কিনি জিনস, স্কিনটাইন টি-শার্ট অথবা কিম কার্দাশিয়ানের শরীরের কাঠামোর মতো দেখাবে এমন সব পোশাক পরে আমাদের কেমন লাগে? অর্থ্যাৎ এসব পোশাকে কেমন লাগছে দেখতে তার চেয়েও বড় কথা আমাদের মনের মধ্যে কী চলে তখন? আমরা হয়তো শরীরকে সুরক্ষিত রাখবে এমন বেষ্টনির ভেতরে রাখতে চাই নিজেদের।

আমি যত গভীরে মনোবিশ্লেষণ করেছি ততই আমার পোশাকগুলো আলগা হতে থাকে। গায়ে চেপে বসা নয়, একটু গায়ের মাপে পোশাকে বরং শ্বাস নেয়ার জন্য বেশি জায়গা মেলে।

কেউ কেউ টিপ্পনি কাটতে পারেন; সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ফ্যাশন এগিয়ে গেছে, কিন্তু বয়স বেড়ে চলার কারণে আমার মধ্যে আরেক রকম পরিবর্তন এসেছে। তাই হয়তো চাপা জিনসের বদলে এখন আমার ঢোলা জিনস ভালো লাগছে।

আমার মনে হয়, এমন কথা একেবারে ফেলে দেয়ার মতোও নয়। আমার কাছে আরো মনে হয়, বড় হওয়া মানে অনেক ঘটনায় একই সঙ্গে একাধিক সঠিক দিক চোখে ধরা পড়ে। আমার বিশ্লেষণ অবশ্য আরেক ভাবে আমাকে সুরক্ষা দিয়েছে। এতে আমার মনের ত্বক আরো পুরু হয়েছে।

যতই ঘাড়ের কাছে চেপে বসুক না কেন, এরপর আমি আবার সেই জাম্পারে ফিরে আসি। ওটা চাপা জিনসের মতো কখনও আরামদায়ক, আবার কখনও অস্বস্তিকর। আমার পছন্দের সোয়েটারগুলো নিজের হাতে নষ্ট করে ফেলার দুঃখ এখনও কাটিয়ে উঠতে পারিনি আমি। হয়তো এ কারণেই জাম্পারের প্রতি আমার এমন টান।

এসবের মধ্যে দিয়ে আমার উপলব্ধি হলো, আপনাকে ছাড় দেয়া শিখতে হবে।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত