প্রাপ্ত বয়স্কদের ভোটের ভিত্তিতে সংসদ গঠিত হবে, এটা লেখা আছে সংবিধানে। প্রাপ্ত বয়স্ক বলে বোঝানো আছে, বয়স হতে হবে ১৮ বছর।
পরিপূর্ণ মানস গঠনের জন্য ১৮ বছর সময় প্রয়োজন বলে বৈজ্ঞানিক গবেষণায় দেখা গেছে। শিশুদের নিয়ে আন্তর্জাতিক সব সনদের ভিত্তিতে বাংলাদেশের শিশু আইনেও ১৮ বছর বয়স পর্যন্ত নাগরিকদের শিশু হিসাবে ধরা হয়েছে।
এখন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস ১৭ বছর বয়সেই ভোটাধিকার দেওয়ার সুপারিশ করেছেন।
আগামী দেড় বছরের মধ্যে পরবর্তী সাধারণ নির্বাচনের প্রতিশ্রুতি দেওয়ার পর শুক্রবার এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, “তরুণরা সংখ্যায় যেহেতু বেশি এবং দেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে আগ্রহী, তাই ভবিষ্যৎ সম্পর্কে তাদের মতামত নিতে আমি মনে করি, ভোটার হওয়ার বয়স ১৭ বছর হওয়া উচিৎ।”
এই বিষয়ে একটি জাতীয় ঐকমত্যের প্রয়োজন বলে উল্লেখ করলেও নিজের অবস্থান ১৭ বছরের পক্ষে বলেই জানিয়ে দিয়েছেন তিনি।
তার এই প্রস্তাব কার্যকর করতে গেলে সংবিধানসহ কিছু আইন সংশোধন করতে হবে। তার মধ্যে ভোটার তালিকা আইনও রয়েছে। ২০০৯ সালে প্রণীত এই আইনেও ভোটার হওয়ার যোগ্যতা ১৮ বছর বয়স।
এই প্রেক্ষাপটে দেখা যাক, বিশ্বের কোন দেশে ভোটার হওয়ার বয়স কত?
উপমহাদেশে বাংলাদেশের প্রতিবেশী সব দেশেই ভোটার হওয়ার বয়স ১৮ বছর। ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, নেপাল, ভুটান ও মালদ্বীপে ১৮ বছরের আগে কেউ ভোট দিতে পারে না।
এশিয়ায় চীন, জাপান, থাইল্যান্ড, দক্ষিণ কোরিয়া ও মালয়েশিয়ায় ১৮ বছর হলেই কেউ ভোটাধিকার পেয়ে থাকে। তবে সিঙ্গাপুরে ভোট দিতে হলে আরও কয়েকটা বছর অপেক্ষা করা লাগে। সেখানে ২১ বছরে নিচে ভোট দেওয়া যায় না।
যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা (সিআইএ) প্রণীত রেফারেন্স রিসোর্স ‘দ্য ওয়ার্ল্ড ফ্যাক্টবুক’ বলছে, ইন্দোনেশিয়া, উত্তর কোরিয়া, সুদান ও গ্রিসে ১৭ বছরে পা পড়লেই একজন ভোট দেওয়ার যোগ্য হয়।
ইসরায়েলের স্থানীয় নির্বাচনে ১৭ বছর বয়সী তরুণরা ভোট দিতে পারে। জাতীয় নির্বাচনে সেখানে ভোট দেওয়ার সর্বনিম্ন বয়স বাংলাদেশের মতোই, ১৮।
১৭ বছরের কম বয়সেও ভোট দেওয়া যায়, এমন সুযোগ আছে কয়েকটি দেশে। তার মধ্যে রয়েছে লাতিন আমেরিকার কিউবা, আর্জেন্টিনা, ব্রাজিল ও ইকুয়েডর। সেখানে ১৬ বছরের যেকেউ ভোট দিতে পারে।
ইউরোপের কয়েকটি দেশ যেমন বেলজিয়াম ও অস্ট্রিয়ায় ভোটারদের সর্বনিম্ন বয়স নির্ধারণ করা আছে ১৬ বছর। হাঙ্গেরিতে সাধারণত ১৮ বছর বয়সীরা ভোট দেওয়ার অধিকার পেলেও ১৬ বছর বয়সের বিবাহিতরা স্থানীয় নির্বাচনে অংশ নিতে পারে।
জার্মানির কয়েকটি প্রদেশের পাশাপাশি পৌরসভা নির্বাচনেও ১৬ বছর বয়সীরা ভোট দিতে পারে। বাকি প্রদেশ ও জাতীয় নির্বাচনে ভোট দেওয়ার সর্বনিম্ন বয়স ১৮ বছর।
প্রায় একই চিত্র দেখা যায় এস্তোনিয়াতেও। সেখানকার ১৬ বছর বয়সী তরুণরা স্থানীয় নির্বাচনে অংশ নিতে পারেন। আর জাতীয় নির্বাচনে ভোট দিতে বয়স ১৮ হতে হয়।
ইউরোপের অন্যান্য দেশ যেমন যুক্তরাজ্য, নরওয়ে, ফ্রান্স, ডেনমার্ক, ইতালি, স্পেন ও নেদারল্যান্ডসে ভোটার হওয়ার সর্বনিম্ন বয়স ১৮ বছর।
যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও অস্ট্রেলিয়ায় ভোট দিতে হলে বয়স কমপক্ষে ১৮ বছর হতে হয়। তবে যুক্তরাষ্ট্রের কয়েকটি রাজ্যে এর ব্যতিক্রম রয়েছে। সেগুলোতে ১৭ বছরেও ভোট দেওয়া যায়।
এবার তাকানো যাক মধ্যপ্রাচ্যের দিকে। সৌদি আরব, ইরাক, ইরান, লিবিয়া ও সিরিয়ায় ভোটার হওয়া বয়স ১৮ বছর।
লেবাননে আবার ভোট দেওয়ার সর্বনিম্ন বয়স সিঙ্গাপুরের মতো। সেখানেও ২১ বছর না হলে কেউ ভোটকেন্দ্রে যাওয়ার সুযোগ পায় না।
অন্যদিকে কুয়েতে কারও বয়স ২১ হলেই চলবে না, কমপক্ষে ২০ বছরের নাগরিকত্ব তার থাকা লাগবে। তবেই কেউ জাতীয় নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে।
আফ্রিকা মহাদেশের দেশগুলোর মধ্যে মিসর, উগান্ডা, তিউনিসিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকায় ভোট দেওয়ার সর্বনিম্ন সীমা ১৮ বছর। তবে সুদানের জনগণ এক বছর আগে অর্থাৎ ১৭ বছরে ভোট দিতে পারে।