শীত আসি আসি করতেই আলমারিতে তুলে রাখা লেপ আর কম্বল বার করে রোদে দেয়ার তুমুল ব্যস্ততা শুরু হয়ে যায় ঘরে ঘরে। এক সময় এই মৌসুমে কারিগররা ব্যস্ত হয়ে পড়ত নতুন লেপ সেলাই করতে। গত কয়েক বছর ধরে দেশে শীতের প্রকোপ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে লেপ-কম্পলের বদলে বাড়ছে কমফোর্টারের চাহিদা।
লেপ ও কম্বলের তুলনায় গায়ে দেয়ার পর কমফোর্টার দ্রুত ওম দেয়; আবার ওজনেও বেশ হালকা মনে হয়।
দেশের বাজারে এবং অনলাইনে এখন কমফোর্টারের রমরমা বেচাকেনা। কিন্তু দোকানে গিয়ে যে কোনো কমফোর্টার কিনে নিলেই কি হলো?
হাউজ বিউটিফুল ডটকম এই প্রশ্নের উত্তর দিতে ছয় মাস সময় নিয়েছে। এরমধ্যে তারা কয়েক ধরনের কমফোর্টার গায়ে দিয়ে দেখেছে, কোনটা ওজনে হালকা? কোনটা তাড়াতাড়ি ওম দেয় গায়ে?
এই বিশ্লেষণ কমফোর্টার কেনার কথা ভাবছেন এমন বাংলাদেশি ভোক্তাদেরও কাজে লাগবে বলে মনে করছে সকাল সন্ধ্যা।
‘ডাউন কমফোর্টার’ মানে হাঁসের গায়ের উপরের পালকের তলে থাকা পালক বেছে বানানো কমফোর্টার। এ কারণে ডাউন কমফোর্টার চড়া দামে বিক্রি হয় বলে জানাচ্ছে হাউজ বিউটিফুল ডটকম।
তবে যারা প্রাণিজ পণ্যের ভোক্তা হতে আগ্রহী নয় তারা নিশ্চিত হতে পারেন, অনেক ব্র্যান্ডই নৈতিক এবং টেকসই ভাবে কমফোর্টার বানানোর উপকরণ সংগ্রহ করে থাকে।
প্রাকৃতিক ফাইবার দিয়ে বানানো কমফোর্টার আপাদমস্তক মুড়ে নিলেও ঘুমানোর সময় দমবন্ধ বোধ করবেন না।
ব্রুকলিন ডাউন কমফোর্টারটি বছরখানেক আগে হাতে পান বলে জানালেন সিনিয়র কমার্স এডিটর মারিনা লিয়াও।
“যদিও আমার কাছে আরও কয়েকটি ব্র্যান্ডের কমফোর্টার ছিলই। এরপরও প্রায় সব মৌসুমে গায়ে দেয়ার মতো এই কমফোর্টার আমার কাছে প্রিয় হয়ে ওঠে।”
শীতকালেও এই সম্পাদকের বাসা খুব একটা শীতল হয়ে ওঠে না। তাই মোটা কমফোর্টার কেনার প্রয়োজন বোধ করেননি তিনি।
“ব্রুকলিনের এই কমফোর্টার ওজনে বেশ হালকা এবং বেশ ফোলা ফোলা। এ কারণে গায়ে দেয়ার পর আমার মনে হয় যেন মেঘ এসে জড়িয়ে ধরেছে আমাকে। আবার ওম ওম তাপও অনুভব করি।”
যারা ভারী কিছু গায়ে দিতে চান, তাদের জন্য এমন কমফোর্টার নয় বলে মন্তব্য করলেন মারিনা লিয়াও।
অ্যাসোসিয়েট শপিং এডিটর জেসিকা চেরনার এবারই প্রথম ডাউন কমফোর্টার গায়ে দিলেন।
এই অভিজ্ঞতা নিয়ে তিনি বলেন, “আমি বরাবর কম্বল ও লেপ গায়ে দিয়েছি। কিন্তু আমার সঙ্গী চাইছিল ডাউন কমফোর্টার ব্যবহার করতে। এ কারণেই কেনা হয়েছিল এই কমফোর্টার।
“আমি অর্ডার করতে গিয়ে দ্বিধায় ছিলাম। কারণ শত শত ডলার খরচ করে কমফোর্টার কেনা আমার কাছে অপচয় মনে হয়েছিল। এরপর আমি কুইন্স ব্র্যান্ডের কমফোর্টার দেখি এবং চট করে অ্যাড টু কার্ট করে ফেলি।”
“কমফোর্টারের দামটা তত বেশি মনে হয়নি। তখনই মনে হচ্ছিল, এই কমফোর্টারে কিছু একটা ঝামেলা তো আছেই, নাহলে এতো সস্তা কেন হবে?”
“আমি গত পাঁচ মাস এই কমফোর্টার গায়ে দিয়েছি। এখন আমি নিশ্চিতভাবেই বলতে পারি, এই দামে এমন কমফোর্টার আর পাওয়া যাবে না। এই কমফোর্টার উষ্ণতা আটকে ফেলতে পারে।”
ক্রেন অ্যান্ড ক্যানোপি সুপ্রিম গুজ ডাউন কমফোর্টার গায়ে দেয়ার অভিজ্ঞতা জানালেন ডেপুটি ফটো ডিরেক্টর ড্যাংগি ম্যাককয়।
এই কমফোর্টার আবার শতভাগ সুতি কাপড়ের কভার দিয়ে মোড়া, বললেন তিনি।
“আমার কাছে এই কমফোর্টার গায়ে দিয়ে একেবারে মোলায়েম মনে হয়েছে। এটি গায়ে দিলে মনে হয় বিছানায় মেঘ জড়িয়ে আছে। রাতে আমার বেশ শীত শীত লাগে, তখন এই কমফোর্টার খুবই উষ্ণ রাখে।”
এই কমফোর্টার শুধু মাত্র ড্রাই ক্লিনিং করিয়ে নিতে হবে বলে জানাচ্ছে হাউজ বিউটিফুল ডটকম।
কমফোর্টার কিনতে গিয়ে এর মান দেখতে পরামর্শ দিলেন ব্রুকলিনের ডিজাইন ডিরেক্টর কেটি এলকস।
“কারণ ভালো মানের কমফোর্টার দীর্ঘদিন টেকসই হয়।”
কমফোর্টারের ভেতরে কী উপকরণ ভরা আছে তা অবশ্যই জেনে নিতে হবে। একই সঙ্গে জানতে হবে, ‘ফিল পাওয়ার’ কেমন?
ফিল পাওয়ার ৬০০ হলে কমফোর্টার ওজনে হালকা হয়। খুব বেশি ঠান্ডা অনুভব হলে ফিল পাওয়ার ৯০০ দেখে কেনা যেতে পারে।
পালক দেয়া কমফোর্টারের সেলাই কমফোর্টার জুড়ে বাক্স বাক্স করে হলে ভালো। নয়তো এক সময় ভেতরের সব পালক এক দিকে সরে যেতে পারে। চারকোনা বাক্স বাক্স আকার সেলাই দিলে কমফোর্টারের ভেতরের উপকরণ সরে যায় না সাধারণত।
ঢাকার মালিবাগ রেলগেট, তেজগাঁও, গুলিস্তান, নিউমার্কেট, উত্তরা, বঙ্গবাজার মার্কেট, গুলিস্তানের সুন্দরবন মার্কেট, বংশাল মার্কেট, বায়তুল মোকাররমের দিকে গেলে ফুটপাতেও কমফোর্টারের দোকান পাওয়া যাবে। এছাড়াও কমফোর্টার কিনতে যেতে পারেন নবাবপুর ইলেকট্রিক্যাল মার্কেটে।
দুই হাজার থেকে ছয় হাজার টাকার মধ্যে শীতে আরামে কাটানোর মতো কমফোর্টার কেনা যাবে।