Beta
মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর, ২০২৪
Beta
মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর, ২০২৪

ইসমাইল হানিয়া : শরণার্থী শিবির থেকে প্রতিরোধ যোদ্ধা

ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস প্রধান ইসমাইল হানিয়া ইরানে গুপ্তহত্যার শিকার হয়েছেন। ছবি: রয়টার্স
ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস প্রধান ইসমাইল হানিয়া ইরানে গুপ্তহত্যার শিকার হয়েছেন। ছবি: রয়টার্স
[publishpress_authors_box]

ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের প্রধান ইসমাইল হানিয়া গুপ্তহত্যার শিকার হয়েছেন। ইরানের রাজধানী তেহরানে অবস্থানকালে ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় নিহত হন।

গত কয়েক বছর ধরে তিনি কাতারে বসবাস করছিলেন। ইরানের নতুন প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ানের অভিষেক অনুষ্ঠানে অংশ নিতে গিয়েছিলেন তেহরানে।

সেখানেই মঙ্গলবার মধ্যরাতের পর একটি বাড়িতে তার ওপর ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানো হয়। ধারণা করা হচ্ছে, ইরানের বাইরে থেকে ইসরায়েলি গুপ্তঘাতকরা এই ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে।

হামাসও এই হত্যাকাণ্ডের জন্য ইসরায়েলকে দায়ী করেছে। তবে এখনও কেউ এই হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করেনি।

ইসমাইল হানিয়া গত কয়েক দশক ধরে হামাসকে নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তিনি নির্বাসনে থেকে সংগঠনটির রাজনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনা করতেন।

১৯৬২ সালে ফিলিস্তিনের গাজা ভূখণ্ডের আল-শাতি শরণার্থী শিবিরে জন্মগ্রহণ করা ইসমাইল হানিয়া হামাসের রাজনৈতিক ব্যুরোর চেয়ারম্যান ছিলেন।

গাজায় ইসরায়েলের সঙ্গে চলমান যুদ্ধেও তিনি হামাসের অন্যতম সক্রিয় ও দৃশ্যমান নেতা ছিলেন। ইসরায়েল তার পরিবারের সদস্যদেরও হত্যা করে।

গাজা থেকে ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের ভূ-খণ্ডে হামাস যে নজিরবিহীন হামলা চালায়, তার অন্যতম পরিকল্পনাকারী ছিলেন ইসমাইল হানিয়া। এতে তিনি ও তার পরিবারের সদস্যরা ইসরায়েলের হামলার লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হন।

গাজায় যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর হানিয়ার ভাই ও ভাতিজা ইসরায়েলের হামলায় মারা যান। পরের মাসে নভেম্বরে তার এক নাতিকে হত্যা করে ইসরায়েল। এরপর গত ফেব্রুয়ারিতে ইসরায়েলি হামলায় আরেক ছেলেকে হারান হানিয়া।

সর্বশেষ গত এপ্রিলে ঈদুল ফিতরের দিনে ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলের বিমান হামলায় ইসমাইল হানিয়ার তিন ছেলে ও চার নাতি-নাতনি নিহত হয়। তাকে হত্যার আগে তার পরিবারের মোট ১১ জন সদস্য নিহত হন ইসরায়েলি হামলায়।

গাজায় বিধ্বংসী যুদ্ধের ফলে মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে। এমন সময়ে ইসমাইল হানিয়ার মৃত্যু হামাসের জন্য একটি বড় ধাক্কা হয়ে দেখা দিতে পারে।

তার মৃত্যুতে ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে আলোচনার ভবিষ্যৎ নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। কারণ ইসমাইল হানিয়া হামাসের রাজনৈতিক শাখার প্রধানের পদে থাকলেও তাকেই এই গোষ্ঠীর শীর্ষনেতা মনে করা হয়।

হামাসের রাজনৈতিক নেতা হিসেবে গাজায় ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে যুদ্ধবিরতি আলোচনার সময় তিনি আন্তর্জাতিক মধ্যস্থতাকারীদের সঙ্গে হামাসের প্রধান নেতা হিসেবে কথা বলেন।

ইসমাইল হানিয়া।

ইসমাইল হানিয়া কে

ইসমাইল হানিয়ার জন্ম গাজা শহরের কাছে একটি শরণার্থী শিবিরে। তার বাবা-মা ছিলেন ফিলিস্তিনের আসকালান অঞ্চল থেকে উচ্ছেদ হওয়া শরণার্থী। সেখানে বর্তমানে ইসরায়েলের অ্যাশকেলন শহর অবস্থিত।

১৯৮৩ সালে ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব গাজায় আরবি সাহিত্যে পড়াশোনা করার সময় তিনি একটি ইসলামি সংগঠনে সঙ্গে যুক্ত হন। ১৯৮০-র দশকের শেষদিকে তিনি ফিলিস্তিনের প্রথম ইন্তিফাদা বা গণ মুক্তি সংগ্রামের সময় হামাসে যোগ দেন।

হামাস গঠিত হয় ১৯৮৭ সালে ফিলিস্তিনিদের প্রথম ইন্তিফাদার সময়। হানিয়া ছিলেন হামাসের সামনের কাতারের নেতা এবং প্রতিষ্ঠাতাদের একজন। এজন্য ১৯৮৯ সালে তাকে বন্দি করে ইসরায়েল। টানা তিন বছর ইসরায়েলি কারাগারে ছিলেন তিনি।

সেখান থেকে ছাড়া পাওয়ার পর ১৯৯২ সালে ইসরায়েল ও লেবাননের মাঝে এক নোম্যান্সল্যান্ডে হামাসের অন্য নেতাদের সঙ্গে নির্বাসনে যান হানিয়া। এক বছর নির্বাসিত জীবন কাটিয়ে ১৯৯৩ সালে গাজায় ফেরেন তিনি।

১৯৯৭ সালে হামাসের প্রধান তাত্ত্বিক ও আধ্যাত্মিক নেতা শেখ আহমদ ইয়াসিনের কার্যালয়ের প্রধান হিসেবে নিয়োগ পান হানিয়া।

২০০৪ সালের ২২ মার্চ হামাসের প্রতিষ্ঠাতা প্রধান শেখ আহমেদ ইয়াসিনকে হত্যা করে ইসরায়েল। তার মৃত্যুর পর হামাস পরিচালনার জন্য শীর্ষনেতাদের নিয়ে একটি পরিষদ গঠিত হয়, তাদের একজন ছিলেন হানিয়া।

সেসময় ওই পরিষদের আরেক সদস্য খালেদ মেশালকে হামাসের রাজনৈতিক প্রধানের দায়িত্ব দেওয়া হয়। ২০১৭ সালে খালেদ মেশালের হাত থেকে হামাসের দায়িত্ব পান ইসমাইল হানিয়া।

২০০৫ সালের আগস্ট মাসে ইসরায়েল গাজা ভূখণ্ড থেকে সেনা প্রত্যাহার করলে হামাস নির্বাচনী রাজনীতিতে প্রবেশ করে। ১৯৬৭ সালে মিশরের কাছ থেকে গাজার নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর প্রায় ৩৮ বছর ইসরায়েল গাজা দখল করে রেখেছিল।

২০০৫ সালে হামাস গাজার স্থানীয় নির্বাচনে এবং পরের বছর জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেও বিজয় লাভ করে। ২০০৬ সালের পার্লামেন্ট নির্বাচনে হামাস ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা সংগ্রামের কিংবদন্তি নেতা ইয়াসির আরাফাতের দল ফাতাহকে বিশাল ব্যবধানে পরাজিত করে। ১৩২ আসনের মধ্যে হামাস পায় ৭৬টি, আর ফাতাহ পায় ৪৫টি আসন। সরকার গঠনের জন্য দরকার ছিল ৬৭টি আসন।

নির্বাচনে বিজয়ের পর হামাস নেতা ইসমাইল হানিয়াকে ফিলিস্তিনের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দেন ইসরায়েল স্বীকৃত ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের প্রেসিডেন্ট ফাতাহ নেতা মাহমুদ আব্বাস।

কিন্তু ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রসহ ইউরোপের দেশগুলো তাকে মেনে নেয়নি। ইয়াসির আরাফাতের দল ফাতাহ’র সদস্যরাও হামাসকে শাসক দল হিসেবে মেনে নিতে পারেনি।

২০০৭ সালের জুন মাসে গাজায় হামাস ও ফাতাহর মধ্যে সশস্ত্র লড়াই বেঁধে যায়। এতে সরকার ভেঙে দিয়ে হানিয়াকে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে সরিয়ে দেন আব্বাস। হামাস আব্বাসের ওই সিদ্ধান্ত না মেনে গাজা নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখে। আব্বাসের পদক্ষেপকে তারা ‘অসাংবিধানিক’ বলে আখ্যা দেয়। এতে আলাদা হয়ে যায় গাজা ও পশ্চিম তীরের সরকার।

ইসরায়েলও ২০০৭ সাল থেকে গাজা ভুখণ্ডের ওপর আকাশ, স্থল এবং সমুদ্র পথে সর্বাত্মক অবরোধ আরোপ করে। হামাস এবং এর সামরিক শাখা আল কাসসাম ব্রিগেডকে সন্ত্রাসী সংগঠন বলে ঘোষণা করে। যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং আরও কয়েকটি দেশসহ জাতিসংঘও হামাসকে সন্ত্রাসী তালিকাভুক্ত করে।

২০১৭ সালে হামাসের রাজনৈতিক ব্যুরোর প্রধান হিসেবে নির্বাচিত হন ইসমাইল হানিয়া। এরপর যুক্তরাষ্ট্র তাকে শীর্ষ বৈশ্বিক সন্ত্রাসী তকমা দিয়ে তার মাথার দাম ঘোষণা করে। সেবছরই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দেন।

ইসমাইল হানিয়ার দায়িত্ব নেওয়ার ৬ বছরের মাথায় গত বছর ইসরাইলে নজিরবিহীন হামলা করে হামাস। এই হামলা গাজা থেকে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে হামাসের সবচেয়ে বড় আন্তঃসীমান্ত অভিযান। এতে প্রায় ১২০০ ইসরায়েলি নাগরিক নিহত হয়।

ইসরায়েলের ওপর এমন হামলা এর আগে আর কখনও হয়নি। ইসরায়েল এই হামলাকে যুক্তরাষ্ট্রে নাইন-ইলেভেনের সন্ত্রাসী হামলার সঙ্গে তুলনা করে হামাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে। ইসরায়েলের হামলায় গাজায় ইতোমধ্যেই প্রায় ৪০ হাজার ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।

ঐক্য চুক্তির পরপরই হত্যা

ফাতাহ ফিলিস্তিনের সবচেয়ে পুরোনো রাজনৈতিক দল। ফিলিস্তিনি স্বাধীনতা সংগ্রামের বিশ্ববরেণ্য নেতা ইয়াসির আরাফাত দলটির প্রতিষ্ঠাতাদের একজন। হামাস ও ফাতাহর মধ্যে দ্বন্দ্বের প্রধান কারণ হল ইসরায়েল রাষ্ট্রের স্বীকৃতি। ফাতাহ ইসরায়েল রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেয়, কিন্তু হামাস দেয় না। ফাতাহ বিশ্বাস করে, ইসরায়েল রাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে ফিলিস্তিনিদের স্বাধীনতা ও অধিকার অর্জন করা সম্ভব। কিন্তু হামাস মনে করে, ইসরায়েল একটি অবৈধ রাষ্ট্র এবং এটিকে বলপূর্বক উৎখাত করতে হবে।

ফাতাহ জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে ১৯৬৭ সালে গৃহীত ২৪২ নম্বর প্রস্তাবের পক্ষে সম্মতি জানায়। ওই প্রস্তাবে ১৯৬৭ সালের তৃতীয় আরব-ইসরায়েল যুদ্ধের আগের সীমানা অনুযায়ী একটি স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার কথা বলা হয়। এই রাষ্ট্র হবে গাজা, পশ্চিমতীর এবং পূর্ব জেরুজালেমকে নিয়ে।

১৯৪৮ সালে প্রথম আরব ইসরায়েল যুদ্ধের সময় ইসরায়েল ফিলিস্তিনের ৭৭ শতাংশ ভূমি দখল করে নেয়। বাকী ছিল শুধু গাজা, পশ্চিম তীর ও পূর্ব জেরুজালেম। ১৯৬৭ সালের যুদ্ধের পর ইসরায়েল পুরো ফিলিস্তিন দখল করে নেয়।

ফাতাহও প্রথমদিকে হামাসের মতোই ইসরায়েলকে উৎখাত করে ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠাকেই নিজেদের রাজনৈতিক লক্ষ্য হিসেবে নির্ধারণ করেছিল। কিন্তু ১৯৯৩ সালে অসলো চুক্তির পর ফাতাহ সেই লক্ষ্য থেকে সরে আসে এবং ইসরায়েল রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেয়।

অসলো চুক্তিকে ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের মধ্যে অস্থায়ী শান্তি চুক্তি হিসেবে বিবেচনা করা হয়। যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় ইসরায়েল এবং প্যালেস্টাইন লিবারেশন অর্গানাইজেশনের (পিএলও) মধ্যে এই চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। পিএলও-র প্রধান রাজনৈতিক দল ফাতাহ।

এই চুক্তির মাধ্যমেই ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ গঠিত হয়। বর্তমানে যার সভাপতিত্ব করছেন ফাতাহ নেতা মাহমুদ আব্বাস। অসলো চুক্তিতে ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষকে ইসরায়েল-অধিকৃত পশ্চিম তীর এবং গাজা উপত্যকার কিছু অংশের উপর সীমিত কর্তৃত্ব দেওয়া হয়। অন্যদিকে, ইসরায়েলকে ফিলিস্তিনের পুরো অর্থনীতির উপর নিয়ন্ত্রণ দেওয়া হয়। পাশাপাশি পশ্চিম তীরের ৬০ শতাংশেরও বেশি বেসামরিক ও নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিষয়েও নিয়ন্ত্রণ পায় ইসরায়েল।

চুক্তিতে আরও বলা হয়, ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষকে অবশ্যই নিরাপত্তা ইস্যুতে ইসরায়েলকে সহায়তা করতে হবে। ইসরায়েলিদের বিরুদ্ধে পরিকল্পিত যেকোনোও সশস্ত্র হামলা প্রতিরোধেও ইসরায়েলি নিরাপত্তাবাহিনীর পাশে দাঁড়াতে হবে। এই ধারাকে অত্যন্ত বিতর্কিত হিসেবে দেখা হয়। হামাস সমর্থকরা একে ইসরায়েলি দখলদারত্বের সঙ্গে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের সহযোগিতা হিসেবে দেখে।

হামাস এই চুক্তির তীব্র বিরোধিতা করে বলে যে, এই চুক্তির মাধ্যমে ফাতাহ নেতাদের ব্যক্তিগত স্বার্থ রক্ষা করতে গিয়ে ফিলিস্তিনের জাতীয় স্বার্থকে বিক্রি করে দেয়া হয়েছে। এতে হামাস এবং ফাতাহর মধ্যে দ্বন্দ্ব আরও প্রকট হয়ে ওঠে।

ইসমাইল হানিয়ার মৃত্যুতে গাজার শান্তি প্রচেষ্টা ব্যাহত হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

হামাস ইসরায়েল রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেয় না। হামাস তাদের ১৯৮৮ সালের প্রতিষ্ঠাকালীন ইশতেহারে বর্তমান ইসরায়েল রাষ্ট্রের ভূখণ্ডসহ পুরো ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড মুক্ত করার কথা ঘোষণা করেছিল। তবে, ২০১৭ সালের একটি ঘোষণাপত্রে তারা ১৯৬৭ সালের যুদ্ধের আগের সীমানাকে আপাতত একটি ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের ভিত্তি হিসাবে স্বীকার করে নেয়। যার রাজধানী হবে জেরুজালেম। ২০১৭ সালে হামাস আরও ঘোষণা দেয় যে, হামাসের লড়াই সব ইহুদির বিরুদ্ধে নয়, শুধু “দখলদার ইহুদিবাদী হানাদারদের” বিরুদ্ধে।

দুটি রাজনৈতিক দলের লক্ষ্য একটি একক ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠন। কিন্তু তাদের দৃষ্টিভঙ্গি স্পষ্টতই ভিন্ন। ইসরায়েল স্বীকৃত ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের (পিএ) বৃহত্তম রাজনৈতিক দল ফাতাহ। এর বর্তমান নেতা মাহমুদ আব্বাসও ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট হিসেবে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত।

ফাতাহ নিজেদের একটি ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক ও সমাজতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল হিসেবে সংজ্ঞায়িত করে। একারণে তারা ইসরায়েলিদের সঙ্গে আলোচনা করতে পারে এবং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ফোরামেও অংশ নিতে পারে। তারা আলোচনাকেই ফিলিস্তিন সমস্যার সমাধানের উপায় হিসেবে গ্রহণ করে।

অন্যদিকে, হামাস কোনো ধরনের আলোচনা বা আপসের বিরোধিতা করে সশস্ত্র যুদ্ধকেই একমাত্র উপায় মনে করে। এছাড়া হামাস ইসলামি শরিয়াহ ভিত্তিক একটি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে চায়।

ইসরায়েলকে উৎখাতের আগে একটি স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে ২০১১ সালে হামাস ফাতাহর সঙ্গে ঐকমত্যে পৌঁছায়। এরপর ২০১৪ সালে তারা একটি জাতীয় ঐক্যের সরকার গঠনের চেষ্টা করে। কিন্তু গাজার শাসনভার হস্তান্তর নিয়ে বিরোধের জেরে তা ভেস্তে যায়।

২০১৭ সালে ফের একটি পুনর্মিলন চুক্তি করে হামাস ও ফাতাহ। ওই চুক্তি অনুযায়ী হামাস গাজার প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণ ফাতাহর হাতে হস্তান্তর করতে রাজি হয়। কিন্তু হামাস সদস্যদের নিরস্ত্রীকরণ নিয়ে বিরোধের জেরে সে চুক্তিও বাস্তবায়ন হয়নি। এরপর ২০২২ সালে হামাস-ফাতাহ সহ ১৪টি ফিলিস্তিনি সংগঠন আলজিয়ার্সে একটি নতুন পুনর্মিলন চুক্তিতে স্বাক্ষর করে। সেই চুক্তিও ভেস্তে যায়।

সর্বশেষ গত ২৩ জুলাই চীনের মধ্যস্থতায় হামাস ও ফাতাহ সহ ফিলিস্তিনের ১২টি সংগঠনের মধ্যে একটি ঐক্য চুক্তি হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে ফিলিস্তিনে অচিরেই একটি জাতীয় সরকার গঠিত হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছিল। তার এক সপ্তাহ না পেরোতেই হামাস প্রধান ইসমাইল হানিয়া এই গুপ্ত হত্যার শিকার হলেন।

ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ানের সঙ্গে বৈঠকে ইসমাইল হানিয়া।

যুদ্ধবিরতি চুক্তির ভবিষ্যত কী

গত কয়েক মাস ধরে হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে যুদ্ধবিরতি চুক্তির আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টায় ইসমাইল হানিয়া ছিলেন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি। ইসরায়েল গাজা থেকে সেনা প্রত্যাহার করলে তিনি একটি চুক্তিতে পৌঁছাতেও ইচ্ছুক ছিলেন।

কিন্তু ইসরায়েল হামাসকে ধ্বংস না করা পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেয়। এতে শান্তি আলোচনা স্থগিত হয়ে যায়।

সম্প্রতি জুলাইয়ের শুরুতে হানিয়া কাতার ও মিশরের মধ্যস্থতাকারীদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন। এতে ফের যুদ্ধবিরতির আশা জেগেছিল।

গাজা যুদ্ধের পুরোটা সময়জুড়েই ইসমাইল হানিয়া বিশ্বের শীর্ষ নেতা ও কূটনীতিকদের সঙ্গে বৈঠক চালিয়ে গেছেন। কিন্তু তার আকস্মিক মৃত্যুতে সেই আলোচনা এখন অনিশ্চিত হয়ে পড়ল।

তথ্যসূত্র : আল জাজিরা, সিএনএন, বিবিসি

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

ad

সর্বাধিক পঠিত