Beta
রবিবার, ৭ জুলাই, ২০২৪
Beta
রবিবার, ৭ জুলাই, ২০২৪

ট্রাম্প-বাইডেন প্রথম বিতর্কে জিতল কে

ডোনাল্ড ট্রাম্প ও জো বাইডেন।
ডোনাল্ড ট্রাম্প ও জো বাইডেন।
Picture of সকাল সন্ধ্যা ডেস্ক

সকাল সন্ধ্যা ডেস্ক

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হবে আগামী নভেম্বরে। কে হতে যাচ্ছেন দেশটির পরবর্তী প্রেসিডেন্ট, এনিয়ে এখন থেকেই শুরু হয়েছে জল্পনা কল্পনা। আর দেশটি যেহেতু যুক্তরাষ্ট্র, তাই এই নির্বাচনের দিকে নজর সবার।

নির্বাচনকে সামনে রেখে বছরের প্রথম প্রেসিডেন্সিয়াল বিতর্ক হয় বৃহস্পতিবার রাতে। বিতর্কের আগেই আমেরিকান জনগণের মধ্যে বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের দক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তৈরি হয়েছিল। বাইডেন ট্রাম্পকে সামলাতে পারবেন কিনা, এমন সংশয়তো ছিলই।

বৃহস্পতিবার রাতে সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মুখোমুখি হওয়ার পর সেই সংশয় যেন পূর্ণতা পেল। পর্যবেক্ষকরা বলছেন, বিতর্কে ট্রাম্পের স্থির ও ধারালো বক্তব্যের সামনে দাড়াতে পারেননি বাইডেন। নিজের অবস্থান টেকাতে বাইডেনকে উত্তেজিত আচরণ ও ব্যক্তিগত আক্রমণও করতে দেখা যায়।

বিশ্লেষক ও রাজনৈতিক কৌশলবিদদের অনেকেই মনে করছেন, প্রথম বিতর্কে বাইডেনের হার মানে নভেম্বরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে হেরে যাওয়া। খোদ ডেমোক্রেট শিবিরের অধিকাংশই বাইডেনে আর আস্থা রাখতে পারছেন না।

বাইডেন ও ট্রাম্পের প্রথম বিতর্কের কেন্দ্রে ছিল মূল্যস্ফীতি, কর, ইউক্রেন যুদ্ধ ও গণতন্ত্রের ভবিষ্যত প্রসঙ্গ। প্রসঙ্গগুলো নিয়ে কথা বলার সময় বাইডেনকে প্রায়শই উত্তেজিত হতে দেখা যায়। তার বিপরীতে ট্রাম্প ছিলেন তুলনামূলক স্থির।

বাইডেনের উত্তেজিত কথার জবাব বেশ মেপে মেপেই দিচ্ছিলেন ট্রাম্প। ফলে দেশটির প্রেসিডেন্ট হিসেবে বাইডেনের সম্ভাবনা নিয়ে ডেমোক্রেটদের মধ্যে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে।

বিবিসি জানিয়েছে, বক্তব্যের শুরুতে বাইডেনের কণ্ঠস্বর ছিল ম্রিয়মান। মনে হচ্ছিল তার ঠান্ডা লেগেছে। বিতর্কের পুরো ৯০ মিনিটই বাইডেন পাল্টা আক্রমণের বদলে জবাব দিয়েই সময় কাটান। ট্রাম্প যতই স্থির হয়ে কথা বলছিলেন, ততই যেন উত্তেজিত হয়ে উঠছিলেন বাইডেন।

নীতিগত আলোচনার পরিবর্তে ব্যক্তিগত আক্রমণে পূর্ণ ছিল বিতর্ক। প্রার্থীরা নিজেদের গলফ খেলার দক্ষতা, মানসিক ক্ষমতা ও আইনি জটিলতা নিয়ে একে অপরের সঙ্গে তর্ক করেন।

বিতর্কে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে বাইডেন পেরে উঠবেন কিনা এনিয়ে কেবল নিউজ ও সোশাল মিডিয়াতে ডেমোক্রেট ও রিপাবলিকান কৌশলবিদরা সংশয়ে ছিলেন। অধিকাংশ ডেমোক্রেটই বাইডেনের কর্মক্ষমতা নিয়ে নেতিবাচক মনোভাব পোষণ করেন।

বাইডেনের সাবেক হোয়াইট হাউস কমিউনিকেশন প্রধান কেন বেডিংফিল্ড সিএনএনকে বলেন, “বিতর্কে জো বাইডেনের পারফরম্যান্স ছিল বেশ হতাশাজনক। আমার মনে হয়, এটিকে অন্য কোনওভাবে ব্যাখ্যা করা যাবে না। তার সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল আমেরিকান জনগণকে প্রমাণ করা যে, তার শক্তি, সহনশীলতা ও মানসিক দৃঢ়তা রয়েছে প্রেসিডেন্টের পদে দায়িত্ব পালনের জন্য। কিন্তু তিনি সেটা করতে পারেননি।”

রিপাবলিকান কৌশলবিদ ও সাউথ ক্যারোলিনার সেনেটর টিম স্কটের জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা ম্যান গোরম্যান বলেন, “গর্ভপাত ও ৬ জানুয়ারির মতো সহজ ইস্যুগুলো নিয়েই চিৎকার করেছেন বাইডেন। আমি আসলে বলতে চাচ্ছি… ব্যাপারটা কেমন হলো!”

২০২০ সালে ডেমোক্রেট শিবির থেকে প্রেসিডেন্ট পদে দাড়াতে চেয়েছিলেন অ্যান্ড্রু ইয়াং। তিনি সোশাল মিডিয়া এক্সে #সোয়াপজোআউট ট্যাগ দিয়ে বলেন, “২০২০ সালে জো বাইডেনের সঙ্গে আমি সাতবার বিতর্কে অংশগ্রহণ করি। কিন্তু ২০২৪ সালের বাইডেন সম্পূর্ণ ভিন্ন ব্যক্তি।”

পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ভেদা পার্টনার্সের অর্থনৈতিক নীতি গবেষণা পরিচালক ও ব্যবস্থাপনা অংশীদার হলেন হেনরিয়েটা ট্রেজ।

তিনি বলেন, “সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বিতর্কের সময় একাধিক ভুল তথ্য দিয়েছেন। কিন্তু প্রেসিডেন্ট বাইডেন সেগুলো বিশ্বাসযোগ্য উপায়ে প্রতিহত করতে ব্যর্থ হয়েছেন।”

সমালোচনা করতে ছাড়েননি ডেমোক্রেটিক কৌশলবিদ ও সাবেক বাণিজ্য উপদেষ্টা ক্রাটলিন লেগাকি।

তিনি বলেন, “ট্রাম্প বিতর্কের রাতে এক মেট্রিক টন সমস্যাযুক্ত শব্দ ব্যবহার করেছেন। আমরা আশা করতে পারি, এসব শব্দ আগামী চার মাসে বিভিন্ন মাধ্যমে বিজ্ঞাপনে ব্যবহার করা হবে। আমেরিকার প্রত্যেক নারী টেলিভিশন, মোবাইল ও মেইলে বিজ্ঞাপনে সেসব শব্দের ব্যবহার দেখতে পাবেন। আর এসব বিজ্ঞাপন তাদের মনে করিয়ে দেবে যে, ট্রাম্প রো বনাম ওয়েডকে উল্টে দেওয়ার কৃতিত্ব নিয়েছেন।”

সাবেক রিপাবলিকান কৌশলবিদ স্টিভ শ্মিট ছিলেন ট্রাম্পবিরোধী লিঙ্কন প্রকল্পের সহ-প্রতিষ্ঠাতা। তিনিও বাইডেনের আচরণে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানান।

তিনি বলেন, “আজ রাতে বাইডেন দেশ হারিয়েছে। তিনি আর এটি ফিরে পাবেন না। ট্রাম্প যদি হুমকি হন এবং গণতন্ত্র সঠিক পথে চলে, তাহলে বাইডেনকে অবশ্যই সরে দাড়াতে হবে। তার দায়িত্ব, শপথ ও উত্তরাধিকারের জন্য নম্রতা ও নিঃস্বার্থ আচরণের প্রয়োজন।”

যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ রাজনৈতিক পরামর্শক ফ্রাঙ্ক লুন্টজের মতে, নীতির চেয়েও কর্মদক্ষতা প্রশ্নে বিতর্কে বাইডেন ভালো করতে পারেননি।

ট্রাম্পের আমলে ট্রেজারি বিভাগের কর্মকর্তা মনিকা ক্রাউলি মনে করেন, প্রেসিডেন্সিয়াল বিতর্কগুলো মূলত জনগণের সামনে নিজেকে তুলে ধরার মুহূর্তে। আর এই সময় কাজে লাগাতে পারেননি বাইডেন। তাকে দ্বিধাগ্রস্ত মনে হয়েছে পুরো সময়। আর একই সময় ট্রাম্প ছিলেন আধিপত্য বিস্তার করে। নীতি থেকে কর্মদক্ষতার প্রশ্নে তিনি বাইডেনকে হারিয়ে দিয়েছেন।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

ad

সর্বাধিক পঠিত