Beta
বৃহস্পতিবার, ২ জানুয়ারি, ২০২৫
Beta
বৃহস্পতিবার, ২ জানুয়ারি, ২০২৫

কেন বিধ্বস্ত হলো দক্ষিণ কোরিয়ার উড়োজাহাজটি

south-korea-plane-crash-291224-03
[publishpress_authors_box]

দক্ষিণ কোরিয়ার মুয়ানে জেজু এয়ারের উড়োজাহাজ দুর্ঘটনায় শতাধিক যাত্রীর মৃত্যু হয়েছে। বোয়িং ৭৩৭-৮০০ এয়ারক্র্যাফটটি বেলি ল্যান্ডিং করার চেষ্টার পরপরই রানওয়েতে বিধ্বস্ত হয়।

সোশাল মিডিয়ায় প্রকাশিত ভিডিওতে দেখা যায়, দুর্ঘটনার ঠিক আগ মুহূর্তে উড়োজাহাজটি কীভাবে দেয়ালে আছড়ে পড়ে।

ব্যাংকক থেকে মুয়ানগামী এই উড়োজাহাজে মোট ১৮১ জন যাত্রী ছিল। দক্ষিণ কোরিয়ার জাতীয় দমকল সংস্থা জানিয়েছে, তারা দুর্ঘটনাস্থল থেকে দুইজনকে জীবিত উদ্ধার করেছে। বাকি সবাই মৃত বলে ধারণা করা হচ্ছে।

দুর্ঘটনার ভিডিওগুলোতে দেখা যায়, উড়োজাহাজটি তার তলদেশ হেঁচড়ে যাচ্ছিল, তারপর দেয়ালে আছড়ে পড়ে এবং আগুন ধরে যায়। পাইলটরা ল্যান্ডিং গিয়ার ভেঙে যাওয়ার কারণে বেলি ল্যান্ডিংয়ের চেষ্টা করেন।

দক্ষিণ কোরিয়ার সংবাদমাধ্যম ইয়োনহাপের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, পাইলটরা একটি সাধারণ ল্যান্ডিংয়ের চেষ্টা করে ব্যর্থ হলে বেলি ল্যান্ডিং করার চেষ্টা করেন। এটি সম্ভবত পাখির আঘাতের কারণে ঘটতে পারে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, উড়োজাহাজটির ল্যান্ডিং গিয়ার যেমন টায়ার সক্রিয় ছিল না। ফলে ক্র্যাশ ল্যান্ডিং করা যায়নি। পাখির সংঘর্ষকে এই বিপর্যয়ের কারণ হিসেবে ধারণা করা হচ্ছে।

তবে উড়োজাহাজটির দুর্ঘটনা নিয়ে সোশাল মিডিয়ায় অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন। এদের মধ্যে কয়েকজন সাবেক পাইলটও রয়েছেন।

তাদের মতে, উড়োজাহাজটি কেন ৩ কিলোমিটারের কম দৈর্ঘ্যের রানওয়েতে খুব দ্রুত চলছিল? অন্যরা জানতে চেয়েছেন, যদি এটি একটি পরিকল্পিত বেলি ল্যান্ডিং হত, তবে কেন ফায়ারফাইটাররা রানওয়ের কাছে অবস্থান নেননি? আরেকটি প্রশ্ন হলো, বিমানটির গতিপথ দেখাচ্ছে যে এটি বেলি ল্যান্ডিংয়ের চেষ্টা করার আগে চকবকর কেটে আসেনি। সাধারণত যান্ত্রিক সমস্যা হওয়া উড়োজাহাজগুলো বিমানবন্দরের চারপাশে চক্কর দিয়ে চলে, যাতে পাইলটরা সমস্যার সমাধান খুঁজে বের করতে পারেন। কিন্তু এক্ষেত্রে তা করা হয়নি।

মুয়ান ফায়ার স্টেশনের প্রধান লি জেওং-হিউন অবশ্য মিডিয়াকে জানিয়েছেন, খারাপ আবহাওয়ার কারণেই দুর্ঘটনাটি ঘটেছে। তিনি বলেন, “দুর্ঘটনার কারণ সম্ভবত পাখির আঘাত ও খারাপ আবহাওয়ার সংমিশ্রণ। তবে সঠিক কারণ একটি যৌথ তদন্তের পর জানানো হবে।”

জেজু এয়ার এরইমধ্যে দুর্ঘটনার জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছে এবং সহায়তার জন্য সব কিছু করবে বলে জানিয়েছে। সোশাল মিডিয়ায় এক বিবৃতিতে প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে, “জেজু এয়ার এই দুর্ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় ক্ষমতার সব কিছু করবে। আমরা আন্তরিকভাবে দুঃখিত।”

দক্ষিণ কোরিয়ার ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট চোই সাং-মোক বলেছেন, “আমি বিশ্বাস করি, এই দুঃখজনক ঘটনার শিকার পরিবারগুলোর জন্য কোনো সান্তনার শব্দ যথেষ্ট নয়। সরকার দুর্ঘটনার পরবর্তী পরিস্থিতি মোকাবিলায় কাজ করছে। পাশাপাশি শোকসন্তপ্ত পরিবারগুলোর জন্য পূর্ণ সহায়তা নিশ্চিতের চেষ্টা করছে।”

সিএনএন দক্ষিণ কোরিয়ার ভূমি মন্ত্রণালয়ের উদ্ধৃতি দিয়ে জানিয়েছে, উড়োজাহাজটি ১ নম্বর রানওয়েতে অবতরণের চেষ্টা করেছিল। তখন নিয়ন্ত্রণ টাওয়ারের পক্ষ থেকে ল্যান্ডিংয়ে পাখি থাকার বিষয়ে সতর্ক করা হয়েছিল। ওই সতর্কবার্তা পাওয়ার পরেই মেডে কল করে উড়োজাহাজটি।

মেডে কল করার পর নিয়ন্ত্রণ টাওয়ার পাইলটকে ১৯ নম্বর রানওয়ের বিপরীত দিক থেকে অবতরণের নির্দেশ দেয়। পাইলট নির্দেশনা অনুসরণ করে অবতরণের চেষ্টার সময় নেভিগেশন যন্ত্রপাতির সঙ্গে ধাক্কা লেগে দেওয়ালে আছড়ে পড়ে।

জানা যায়, মেডে কলের প্রায় দুই মিনিট পর উড়োজাহাজটি অবতরণের চেষ্টা করে। কেন এমনটা হয়েছে, তা নিয়ে তদন্ত চলছে।

তদন্ত দল এরইমধ্যে উড়োজাহাজটির ‘ব্ল্যাক বক্স’ উদ্ধার করেছে। তবে ভয়েস রেকর্ডিং ডিভাইসটি এখনও পাওয়া যায়নি।

এভিয়েশন বিশেষজ্ঞরা সিএনএনকে জানিয়েছেন, উড়োজাহাজটি দুর্ঘটনার সঠিক কারণ চিহ্নিত করতে আরও তথ্য-প্রমাণের প্রয়োজন।

দেশটির ফেডারেল এভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের সাবেক সেফটি ইন্সপেক্টর ডেভিড সোসির মতে, তথ্য-প্রমাণের বাইরে ধারণা করা তদন্তকারীদের সবচেয়ে বড় শত্রু।

এভিয়েশন শিল্প পরামর্শক স্কট হ্যামিলটনও সোসির বক্তব্যের সঙ্গে একমত। তিনি দক্ষিণ কোরিয়ার কর্তৃপক্ষকে এখনই ‘বিবৃতি দেওয়া বন্ধ করতে’ অনুরোধ করেছেন।

তার মতে, “এখনই এই দুর্ঘটনার কারণ জানা সম্ভব নয়। ফ্লাইট ডেটা রেকর্ডার ও ককপিট ভয়েস রেকর্ডার উভয়ই বিমানটির লেজে থাকে। সেগুলো তুলনামূলকভাবে অক্ষত আছে। কারণ লেজের অংশে আগুনের তীব্রতা কম ছিল। ডেটাগুলো খুব জলদিই পড়া যাবে। ককপিটে উড়োজাহাজ যোগাযোগের রেকর্ডিং মিললে দুর্ঘটনার কারণ জানা যাবে।”

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত