দেশের বিভিন্ন নগরে উন্নয়নকাজের যে সমন্বয়হীনতা চোখে পড়ে, তার কারণ হিসেবে সিটি মেয়ররা বরাবরই রাষ্ট্রীয় অন্যান্য সেবাসংস্থার জবাবদিহিতা না থাকা বা তাদের হাতে নিয়ন্ত্রণ না থাকার কথা বলে আসছেন। সেজন্য নির্বাচিত হওয়ার পরই দায়িত্ব পালনে ‘সিটি গভর্নমেন্ট’ বা ‘নগর সরকার’ পদ্ধতি চান তারা।
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সব মেয়রই এমন দাবি তুলেছেন। যদিও কোনও সরকারই তাতে সায় দেয়নি। ফলে সেই দাবি বরাবরই আলোচনাতেই সীমাবদ্ধ ছিল।
এবার একই দাবি তুললেন আদালতের রায়ে নির্বাচিত চট্টগ্রাম সিটির নতুন মেয়র বিএনপি নেতা ডা. শাহাদাত হোসেন। রবিবার ঢাকায় শপথ নেওয়ার পরপরই স্থানীয় সরকার উপদেষ্টার সামনে এই দাবি তুললেও তাতে সাড়া পাননি মেয়র শাহাদাত।
তিনি তার পূর্বসূরি মেয়রদের প্রস্তাবিত নগর সরকারের পথেই হাঁটলেন কেন, তা নিয়ে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে।
কীভাবে এল এই প্রস্তাব
১৯৮৯ থেকে ১৯৯৩ সাল পর্যন্ত চট্টগ্রামে যারা সিটি মেয়রের দায়িত্বে ছিলেন তারা সেবাসংস্থাগুলোর সঙ্গে সমন্বয় নিশ্চিতে আইনগতভাবে ক্ষমতাপ্রাপ্ত ছিলেন। ওই সময় সিটি করপোরেশন পরিচালিত হতো ‘অর্ডিন্যান্স অব সিটি কর্পোরেশন-১৯৮২’র আলোকে।
আইনটির আওতায় প্রথমে সাতটি এবং পরে রেলওয়েসহ অন্যান্য সংস্থাগুলোকে সিটি মেয়রের কাছে জবাবদিহি করতে হতো। এমনকি ভূমি অধিগ্রহণসহ গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে পারতেন তৎকালীন মেয়ররা। ফলে তৎকালীন প্রশাসক এবং মেয়র মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরী, পরে বিএনপির মেয়র মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন সেই ক্ষমতাবলেই সিটি করপোরেশন চালান।
১৯৯৩ সালে বিএনপি সরকার আইনটি রহিত করলে এতে কার্যত ক্ষমতাহীন হন সিটি মেয়র।
১৯৮৮-১৯৯০ সালে প্রথমে প্রশাসক এবং পরে মেয়র হন মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরী। তিনি বলেন, “আমি মেয়র থাকাকালে সিটি গভর্ন্যান্সের প্রধান ছিলাম। তখন সমস্ত সেবাসংস্থাকে সমন্বয় করতাম। সকল সেবাসংস্থার প্রধানদের তাদের কাজের বিষয়ে জবাবদিহি বাধ্যতামূলক ছিল।
“সেবা ও উন্নয়ন সংস্থার প্রধানগণ চসিকের সভায় ‘অফিশিয়াল কমিশনার’ হিসেবে বাধ্যতামূলক উপস্থিত থাকার বিধান ছিল। তখন শহরে কী কাজ হবে, কোথায় হবে, কীভাবে হবে—সবকিছুর সিদ্ধান্ত দেওয়ার ক্ষমতা মেয়রের কাছে ছিল। ১৯৯৩ সালে বিএনপি সরকার আইন করে এ ক্ষমতা বাদ দিলে এরপর থেকে সিটি করপোরেশন অনেকটা ক্ষমতাহীন হয়ে পড়ে।”
এমন প্রেক্ষাপটে ১৯৯৪ সালে মেয়র নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগ নেতা এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী। ওই সময়েই সিটি গভর্নমেন্টের প্রথম প্রস্তাবটি আসে।
দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে সিটি করপোরেশনের বেশ সমন্বয়হীনতার প্রমান পান মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী। ফলে উন্নয়ন পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে গিয়ে তিনি বেশ জটিলতায় পড়েন; পদে পদে বাধাপ্রাপ্ত হন। এরপরই মূলত তিনি নগর সরকারের দাবিটি তোলেন।
১৯৯৪ সাল থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত টানা তিনবার সিটি মেয়রের দায়িত্ব পালন করার সময় মহিউদ্দিন চৌধুরী সেই দাবি বারবার তুললেও বাস্তবায়নে সরকার সাড়া দেয়নি।
নগর সরকারের দাবি কেন
চট্টগ্রাম নগরীর ৭০ লাখ মানুষকে সেবা দেওয়ার ইশতেহার দিয়ে দায়িত্ব নেন সিটি মেয়ররা। কিন্তু মেয়াদ শেষে দেখা যায় জনগণকে দেওয়া অধিকাংশ প্রতিশ্রুতিই বাস্তবায়ন হয়নি।
মূলত নির্বাচিত হওয়ার আগে মেয়ররা যেসব প্রতিশ্রুতি দেন, সবগুলো বাস্তবায়নে সিটি করপোরেশনের নিয়ন্ত্রণ থাকে না। একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে গিয়ে সরকারের অনেকগুলো দপ্তরের অনুমোদন-সমন্বয়ের প্রয়োজন হয়। তবে মেয়রের কাছে সরকারের সব দপ্তর দায়বদ্ধ না।
ফলে প্রতিটি দপ্তর নিজেদের মতো করে প্রকল্প নেয়, বাস্তবায়ন করে। কিন্তু কাজগুলো বাস্তবায়িত হয় সিটি করপোরেশন এলাকায়। আর এই কাজ করতে গিয়ে ব্যাপক সমন্বয়হীনতা দেখা দেয়।
অনুমোদন জটিলতায় বছরের পর বছর আটকে থাকে প্রকল্প। আবার অনুমোদন শেষে প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে গিয়েও নানা ঝক্কি-ঝামেলা পোহাতে হয়। এতে সরকারের টাকা অপচয় হয় ঠিকই, কিন্তু দুর্ভোগে পড়েন নগরবাসী।
মূলত সিটি করপোরেশনে থাকা সরকারের সব দপ্তরকে সমন্বয় করতেই এই সিটি গভর্নমেন্টের দাবি।
মহিউদ্দিন চৌধুরী তার রূপরেখায় ‘সিডিএ, বন্দর, ওয়াসা, রেলওয়ে, পানি উন্নয়নবোর্ডসহ অন্য সেবাসংস্থাগুলোর কর্ম পদ্ধতিতে সমন্বয় সৃষ্টি করে নগরবাসীর সর্বোচ্চ নাগরিক সেবা নিশ্চিত করার’ জন্য ‘চট্টগ্রাম সিটি গভর্নমেন্ট’ ব্যবস্থা চালুর প্রস্তাব করেন।
এ ব্যবস্থা চালুর পেছনে সুনির্দিষ্ট পাঁচটি উদ্দেশ্যও তুলে ধরা হয় ওই রূপরেখায়। সেখানে সিটি গভর্নমেন্টের বৈশিষ্ট্য, ক্ষমতা ও দায়িত্ব, আয়ের উৎস, প্রশাসনিক কাঠামো তুলে ধরা হয়। এতে বিভিন্ন সংস্থাকে নিয়ন্ত্রণসহ নয়টি ক্ষেত্রে সিটি গভর্নমেন্টের জন্য বিশেষ ক্ষমতার প্রস্তাব করা হয়।
সিটি গভর্নমেন্টকে ‘সমন্বিত নগর ব্যবস্থাপনাগত নীতিমালা’ উল্লেখ করে ওই রূপরেখায় বলা হয়, ‘চট্টগ্রাম মহানগরীর পরিকল্পিত ও সমন্বিত উন্নয়নের স্বার্থে যথাযথ নাগরিক সেবা সম্প্রসারণ ও জনসাধারণের সামগ্রিক নাগরিক সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিতে সিটি গভর্নমেন্ট ব্যবস্থা অপরিহার্য।
মহিউদ্দিন চৌধুরীর দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা সিটি করপোরেশনের মেয়র মোহাম্মদ হানিফ একমত পোষণ করে সরকারের কাছে একই দাবি জানান।
এই অবস্থায় নগর সরকারের বদলে আওয়ামী লীগ সরকার ২০১৬ সালে একটি প্রজ্ঞাপন দিয়ে স্থানীয় সরকার মন্ত্রীকে প্রধান করে একটি সমন্বয় কমিটি গঠন করে দেয়। যেখানে সিটি করপোরেশনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সরকারের দপ্তরের প্রতিনিধিকে সদস্য করা হয়। কিন্তু কার্যত সেই কমিটির সুফল মেলেনি। এর মূল কারণ সংস্থাগুলোর জবাবদিহিতা নিশ্চিত না থাকা।
মহিউদ্দিন চৌধুরীর পর আরেক সিটি মেয়র এম মনজুর আলম সিটি গভর্নমেন্ট নিয়ে দাবি তোলেন, কিন্তু সেটি ছিল খুবই দুর্বল। এরপর মেয়র নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগের আ জ ম নাছির উদ্দিন। তিনি সেসময় মহানগর আয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং দল ক্ষমতায় থাকায় বেশ দাপটের সঙ্গে সমন্বয়ের কাজটি শুরু করেন। কিন্তু পরে আর সেই ধারাবাহিকতা থাকেনি। ফলে সমন্বয়হীনতার কারণেই মুক্তি মেলেনি নগরবাসীর। উন্নয়নকাজে সমন্বয়হীনতার অসংখ্য উদাহরণ এখন নগরজুড়েই চোখে পড়ে।
চট্টগ্রামের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সড়ক পোর্ট কানেকটিং সড়কের কথাই ধরা যাক। সেখানে দেখা যাচ্ছে, ছয় লেনের এই সড়কটি নির্মাণ করেছে সিটি করপোরেশন এবং সড়ক জনপথ অধিদপ্তর। নির্মাণ শেষের মাস না যেতেই সেখানে প্রথম কোপ বসায় অপটিক্যাল ফাইবার কোম্পানি। এরপর চট্টগ্রাম ওয়াসা। মূলত পানি সরবরাহের পাইপলাইন টানতে ঝকঝকে তকতকে সড়কটি কেটে তছনছ করে ওয়াসা। সেটি শেষ না হতেই পয়ঃনিষ্কাশনের স্যুয়ারেজ লাইনের জন্য আবারেও সড়ক কাটা শুরু করেছে চট্টগ্রাম ওয়াসা। আবার দেখা যাচ্ছে সড়কের মাঝখানে বিশাল একটি ম্যানহোল বসিয়েছে ওয়াসা; যা সড়ক লেভেলের চেয়ে কয়েক ফুট উঁচু। এর ফলে গাড়ি চলাচলে দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়ছে।
উন্নয়নকাজের সমন্বয়হীনতার এ ধরনের অসংখ্য উদাহরণ চোখে পড়েছে উল্লেখ করে নগরীর আগ্রাবাদ সিডিএ আবাসিক এলাকার বাসিন্দা মিজান আলী মোরশেদ সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “আগ্রাবাদ মোড় পর্যন্ত যাবেন- একদিকে সড়ক কাটছে ওয়াসা, আরেকদিকে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের জন্য কেটে ফেলে রেখেছে সিডিএ। আর কাটার মাঝখানেই সড়কে দাঁড়িয়ে গাড়ির দীর্ঘ লাইন। এটা এমন না যে একদিন। মাসের পর মাস এভাবেই চলছে। কারেও দায়বদ্ধতা আছে বলে তো মনে হয় না।”
নগরীতে হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ করেছে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)। এখন নির্মাণ করছে উঠানামার জন্য র্যাম্প। এই কাজটি করতে গিয়ে জিইসি থেকে পতেঙ্গা পর্যন্ত সড়ক গুরুত্বপূর্ণ সড়ক কেটে তছনছ করেছে সিডিএ। প্রধান সড়কের এক তৃতীয়াংশ টিনের ঘেরা দিয়ে বন্ধ রেখে কাজ করছে। এর ফলে নগরজুড়ে দিনে-রাতে ভয়াবহ যানজট লেগেই আছে। কিন্তু সিডিএর সঙ্গে সিটি করপোরেশনের সমন্বয়হীনতার কারণে নগরবাসীকে প্রতিমুহূর্তেই দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে।
নগরজুড়ে ট্রাফিকের দায়িত্ব পালন করে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ। কিন্তু মেয়রের কাছে সেই প্রতিষ্ঠানের দায়বদ্ধতা নেই।
নগরীর কালুরঘাট থেকে কর্ণফুলী সেতু পর্যন্ত মেরিন ড্রাইভ নির্মাণ করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড, তাতে নিয়ন্ত্রণ নেই চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের। আবার হাজার কোটি টাকার জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্প সিটি করপোরেশনকে বাদ দিয়ে সেনাবাহিনীর মাধ্যমে বাস্তবায়ন করছে সিডিএ। এই দুই প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সমন্বয় না থাকায় প্রতিবছর বর্ষায় পানিতে ডুবছে নগরবাসী। খালগুলো খনন করে পরিস্কারের দায়িত্ব সিডিএর, কিন্তু নালা খননের দায়িত্ব সিটি করপোরেশনের। ফলে খাল ও নালা পরিস্কার নিয়ে টানাটানিতেই ডুবছে নগরবাসী। এই ধরনের অসংখ্য উদাহরণ নগরজুড়ে দেখা যায়।
নগর সরকারের সুফল কী
উন্নত নগর ব্যবস্থাপনা নিয়ে কাজ করেন প্রকৌশলী দেলোয়ার হোসেন মজুমদার। তিনি সচেতন নাগরিক কমিটি (টিআইবি) চট্টগ্রাম মহানগরের সাবেক আহ্বায়ক।
নগর সরকারের প্রয়োজনীয়তা ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে তিনি সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “গ্যাস সরবরাহে পাইপ বসাতে রাস্তা কাটার জন্য শিডিউল দিয়েছে কর্ণফুলী গ্যাস কর্তৃপক্ষ। একইসময়ে যদি পিডিবির বিদ্যুৎ খুঁটি বসানোর দরকার হয়, তখন সেই শিডিউলের মধ্যেই কাজ শেষ করার সময়সীমা বেঁধে দিতে পারে। আর টিএন্ডটি যদি অপটিক্যাল ফাইবার লাইন টানতে চায় একই শিডিউলেই যাতে সব কাজ হয়- তার বাধ্যবাধকতা দিতে পারে সিটি করপোরেশন। সব কাজ শেষেই যাতে সড়ক মেরামত কাজ শুরু করা যায়। অর্থ্যাৎ কাজের জন্য একটি নির্দিষ্ট সময় বেঁধে দেওয়া গেলে নগরবাসীর দুর্ভোগ কমে যায়।
“উন্নয়নকাজ সমন্বয় করতে এখন সিটি করপোরেশন নগরে থাকা সেবা সংস্থাগুলোর প্রধানদের বৈঠকে ডাকলে সেখানে দেখা যাচ্ছে প্রতিষ্ঠান প্রধান না গিয়ে প্রতিনিধি পাঠানো হচ্ছে। এতে বিষয়টি গৌণ হয়ে যাচ্ছে। আবার আইনি বাধ্যবাধকতা না থাকায় প্রতিষ্ঠান প্রধানের উপস্থিতি দায়সারা গোচের হয়। এতে করে উন্নয়নে সমন্বয়হীনতা দেখা দেয়। এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে নগর সরকার খুবই গুরুত্বপূর্ণ।”
দেলোয়ার হোসেন মজুমদার বলেন, “নগর সরকারের অধীনে থাকবে সরকারের সবগুলো সেবা সংস্থা। সেখানে প্রতিষ্ঠান প্রধানদের উপস্থিতি এবং জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে সিটি মেয়রকে। প্রকল্পের অনুমোদন মেয়রের কাছ থেকে নেওয়া বাধ্যতামূলক হতে হবে। বাস্তবায়ন সরকারের সেই সংস্থাই করবে, কিন্তু জবাবদিহি করতে হবে মেয়রকে। এর ফলে সমন্বয় নিশ্চিত হবে। সরকারের প্রকল্প ব্যয়ের তছরূপ অনেকটাই কমবে। অগ্রাধিকার ভিত্তিতে প্রকল্প নিয়ে বাস্তবায়ন করতে পারলে সুফল পাবে নগরবাসী।”
তবে সিটি মেয়রের সব দপ্তরের সমন্বয়ের সামর্থ্য-সক্ষমতা আছে কি না—এ প্রশ্নের জবাবে এই প্রকৌশলী বলেন, “শোনেন, নগরজুড়ে যত সংস্থা আছে সেখানে একমাত্র জনপ্রতিনিধি হচ্ছেন সিটি মেয়র। ফলে অন্য যেকোনো আমলার চেয়ে উনার দায়বদ্ধতা অনেক বেশি।
“কোন প্রকল্প অগ্রাধিকার দিলে জনগণ সুফল পাবে, সেটি তিনিই অন্যদের চেয়ে ভালো বুঝবেন। আর উনি ভালো না পারলে সেটি জনগণই ঠিক করবেন- তাকে পরবর্তীতে নির্বাচিত করবেন কিনা। একজন সরকারি সংস্থার প্রধান কখনোই তার চেয়ে ভালো পারবেন না।”
কী করা উচিত
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ড. মঈনুল ইসলাম মনে করেন, আইনি ব্যবস্থার মাধ্যমে সিটি করপোরেশনগুলোর আওতাভুক্ত এলাকার পানি, বিদ্যুৎ ও গ্যাস সরবরাহ এবং রাস্তাঘাট, নালা-নর্দমা নির্মাণ, মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণ, খাল খনন ও দখলদার মুক্তকরণ, ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ ইত্যাদি দায়িত্ব পালনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে নগর সরকারের সরাসরি নিয়ন্ত্রণে আনার ব্যবস্থা না করলে সিটি করপোরেশনগুলোর বর্তমান সংকুচিত ক্ষমতা ও পঙ্গুত্বের নিরসন হবে না।
এই অর্থনীতিবিদ বলেন, “যে প্রতিষ্ঠানগুলো নগর সরকারের বাইরে থাকবে, সেগুলোর সঙ্গে সমন্বয়ের দায়িত্বটি আইনগতভাবে প্রধানমন্ত্রী গ্রহণ করুক একনেকের মতো একটি কমিটির মাধ্যমে। এই কমিটি মাসে অন্তত একবার বৈঠকে বসে সিদ্ধান্ত নেবে। আর সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের কর্তৃপক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন মেয়র মহোদয়রা।”