আমাদের স্মৃতির সবটা পুরোপুরি নির্ভুল নয়। বরং অনেক স্মৃতি প্রতারণামূলকও। ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়ার নিওরোসায়েন্টিস্ট চরণ রঙ্গনাথ দাবি করছেন, সত্য-মিথ্যা যাই হোক, দুই ধরনের স্মৃতিই মস্তিষ্কের জন্য উপকারী।
সম্প্রতি তার লেখা বই ‘হোয়াই উই রিমেমবার’ প্রকাশ হয়েছে। বহুল বিক্রিত এই বইয়ে মানুষের স্মৃতিকে তিনি ‘অতীতের জমিয়ে রাখা ঘটনার’ চাইতেও বেশি কিছু বলে দাবি করেছেন। এ মনোবিজ্ঞানীর মতে, স্মৃতি হলো এমন এক আয়না, যাতে মানুষ নিজের পাশাপাশি অন্যদেরও দেখে।
গবেষক ও মনোবিজ্ঞানী রঙ্গনাথ গত ৩০ বছর ধরে মানুষের স্মরণশক্তি, মনে রাখা এবং ভুলে যাওয়া নিয়ে গবেষণা করছেন।
বিজ্ঞান লেখক ডেভিড রবসনকে দেওয়া নিজের বই নিয়ে একটি সাক্ষাৎকার দিয়েছেন রঙ্গনাথ চলতি মাসেই।
তার মতে, যখন কেউ স্মৃতির ওপর ভরসা করে কোন কাজ করার চেষ্টা করেন, তখন স্মৃতি তাকে পুরোপুরি সঠিক তথ্যটি দেয়না। মানুষের মস্তিষ্ক যখন কোনও স্মৃতি অতীত থেকে তুলে আনে, তখন এটার সত্যতা মূল ঘটনার সঙ্গে মিলিয়ে দেখে। এভাবে যাচাই-বাছাইয়ের মধ্য দিয়ে প্রক্রিয়াটি এগিয়ে যায়।
মোদ্দা কথা হলো, স্মৃতি থেকে মনে করে শেখার চেষ্টাই সবচেয়ে ভালো উপায়। কারণ এর মধ্য দিয়ে ভুল করার সুযোগ থাকে। এই কারণেই কোন কাজ করতে করতে শেখা, যেমন- গুগল ম্যাপ না দেখে গাড়ি চালানো এবং নাটকের স্ক্রিপ্ট মুখস্থ করার পরিবর্তে, সরাসরি রিহার্সাল অনেক বেশি কার্যকর।
রঙ্গনাথ বলেন, “…কিছুই ভুলে না গেলে আমাদের মস্তিষ্ক সব স্মৃতি মজুত করতো এবং তখন প্রয়োজনের সময় আপনার যে স্মৃতিটি দরকার সেটি খুঁজে পেতেন না।”
“এই মুহূর্তে আমি একটি হোটেলে রয়েছি এবং দুই সপ্তাহ পর এই রুমের নম্বর মনে রাখার কোনও প্রয়োজন নেই। ঠিক একইভাবে, রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে যত লোক দেখেন তাদের সবাইকে মনে রাখার কোন প্রয়োজন আদৌ কি আপনার রয়েছে ?”
কোন কোন গান আমাদের জীবনের বিশেষ বিশেষ সময়ের স্মৃতিদের উসকে দেয়। ছবি-পেক্সেলস
বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে ভুলে যাওয়ার রোগ বাড়ার সম্পর্ক ব্যাখ্যা করতে গিয়ে রঙ্গনাথ বলেন, “বৃদ্ধ হলে আমরা যে স্মৃতিভ্রষ্ট হই, ঠিক তা নয়। বরং এ সময় সঠিক তথ্যটির ওপর আমরা মনোযোগ দিতে পারিনা। খুব বিক্ষিপ্ত হয়ে পড়ি। এটি ঘটে স্পর্শকাতর কিছু ঘটনার ক্ষেত্রেও, যেগুলোর প্রতি আমরা দুর্বল। ফলে এই স্মৃতিগুলো আমরা যখন স্মরণের চেষ্টা করি, তখন সংশ্লিষ্ট তথ্যটি নির্ভুলভাবে খুঁজে পেতে কষ্ট হয়।”
স্মরণশক্তি বাড়াতে হলে ৩টি মৌলিক নীতি অনুসরণ করলে ভালো ফল দিবে বলে মনে করেন রঙ্গনাথ। একটি হলো ‘স্মৃতির স্বতন্ত্রতা’। আমাদের স্মৃতি একটি আরেকটির সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে টিকে থাকে, ফলে যেগুলো অনেক বেশি স্বতন্ত্র, সেগুলো টিকে যায়। উদ্ভাসিত যে স্মৃতিগুলো বিশেষ কিছু স্থান, শব্দ এবং অনুভূতির সঙ্গে সম্পর্কিত তারাই বেঁচে যায়। তাই কোন স্মৃতি মনে করার জন্য বেশি বেশি মাথা না খাঁটিয়ে, বরং অনুভূতির গভীরে ডুব দেওয়া স্মৃতিশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে।
দ্বিতীয় কৌশলটি হলো, স্মৃতিকে অর্থবহ করে তোলা। রঙ্গনাথ তার বইয়ে এ বিষয়ে লিখতে গিয়ে ‘মেমরি প্যালেস’ পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করেছেন। অর্থাৎ সেসব তথ্য ইতিমধ্যেই কারও স্মৃতিতে জমা হয়েছে, সেগুলোর সঙ্গে নতুন করে জানতে চাওয়া তথ্যের মেলবন্ধন তৈরি করা।
তৃতীয়ত, আমরা ইঙ্গিতের দ্বারস্থ হতে পারি। স্মৃতি খুঁজে বের করা যথেষ্ট শ্রমসাধ্য একটি ব্যাপার। তার চেয়ে স্মৃতি যদি নিজে থেকেই মাথায় উঁকি দেয় তাই বরং ভালো। ইঙ্গিতের ব্যবহার সেটি ঘটতে সাহায্য করে। যেমন- কোন কোন গান আমাদের জীবনের বিশেষ বিশেষ সময়ের স্মৃতি উসকে দেয়। প্রতিদিনের জীবনে এমন বহু ইঙ্গিত আছে, যেগুলো আপনাকে সহায়তা করবে।