Beta
সোমবার, ৬ জানুয়ারি, ২০২৫
Beta
সোমবার, ৬ জানুয়ারি, ২০২৫

দক্ষিণ কোরিয়ার অভিশংসিত প্রেসিডেন্টকে গ্রেপ্তারে কেন এত ঝঞ্ঝা

Yoon Suk Yeol
[publishpress_authors_box]

দক্ষিণ কোরিয়ার অভিশংসিত প্রেসিডেন্ট উন সুক ইয়েলকে গ্রেপ্তার করতে গিয়েছিলেন তদন্তকারী কর্মকর্তারা। তাদের সঙ্গে ছিল একশর বেশি পুলিশ। কিন্তু টানা ছয় ঘণ্টা চেষ্টার পরেও উনের বাড়িতে ঢুকে তাকে গ্রেপ্তার করা যায়নি।

দেশটির সংবাদমাধ্যমগুলোর খবর অনুসারে, উনের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা সদস্যরা ছয় ঘণ্টা ধরে মানবপ্রাচীর তৈরি করে থাকে। এসময় তারা প্রাচীর হিসেবে একাধিক গাড়িও ব্যবহার করে। ফলে উনকে গ্রেপ্তার করা যায়নি।

দক্ষিণ কোরিয়ার রাজনীতিতে এক মাস ধরেই সঙ্কটময় পরিস্থিতি চলছে। এমনটা এর আগে দেশটির জনগণ এমন পরিস্থিতি দেখতে পায়নি। হঠাৎ করে স্বল্পমেয়াদী মার্শাল ল জারি করে বিতর্কের মুখে পড়া উনকে শেষমেষ অভিশংসনের মুখে পড়তে হয়।

এরপরই তার বিরুদ্ধে শুরু হয় ফৌজদারি তদন্ত। অবশ্য জিজ্ঞাসাবাদের জন্য কর্মকর্তাদের মুখোমুখি হতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন উন। ফলে এই সপ্তাহের শুরুতে তদন্তকারীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে দেশটির এক আদালত।

ডানপন্থী নেতা উনের সমর্থক কিন্তু কম নেই দক্ষিণ কোরিয়ায়। গত শুক্রবার তার বাড়ির সামনে কয়েক হাজার সমর্থক হাজির হয় গ্রেপ্তার ঠেকাতে।

তবে দেশটির অনেকের মতে, উন এখন একজন কলঙ্কিত নেতা। পার্লামেন্ট তাকে অভিশংসিত করেছে এবং তার পদ স্থগিত করা হয়েছে। বর্তমানে তিনি সাংবিধানিক আদালতের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছেন। এই আদালতের রায়ই বলে দেবে, তিনি প্রেসিডেন্ট পদ থেকে চূড়ান্তভাবে অপসারিত হবেন কি না।

তাহলে তাকে গ্রেপ্তার করতে পুলিশকে কেন এতটা কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হচ্ছে?

প্রেসিডেন্টের নিরাপত্তা কর্মীরা

পার্লামেন্টে অভিশংসন প্রস্তাব পাস হওয়ার পর উন আর এখন প্রেসিডেন্ট নেই। কিন্তু এখনও তিনি নিরাপত্তা বাহিনীর মাধ্যমে নিরাপত্তা পাওয়ার অধিকার রাখেন। আর এই নিরাপত্তা রক্ষীরাই শুক্রবার তার গ্রেপ্তার ঠেকাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন।

সিউলের হানকুক ইউনিভার্সিটি অব ফরেন স্টাডিজের সহযোগী অধ্যাপক ম্যাসন রিচি মনে করেন, প্রেসিডেন্টের নিরাপত্তা বাহিনী (পিএসএস) হয়তো উনের প্রতি আনুগত্যের কারণে বা তাদের আইনগত ও সাংবিধানিক দায়িত্বের ভুল ব্যাখ্যার ভিত্তিতে কাজ করছে।

রিচি বলেন, “উনকে বরখাস্ত করার কারণে পিএসএস এর উচিৎ ছিল ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট চই সাং মক থেকে নির্দেশ গ্রহণ করা। তারা হয় চইয়ের পক্ষ থেকে অব্যাহতি নেওয়ার নির্দেশ পাননি, অথবা তার আদেশ অমান্য করছেন।”

বিশেষজ্ঞদের কয়েকজন মনে করেন, নিরাপত্তা রক্ষীরা প্রেসিডেন্ট উনের প্রতি ‘অপরিবর্তনীয় আনুগত্য’ দেখাচ্ছেন, দপ্তরের প্রতি নয়। তারা উল্লেখ করেন, উন গত সেপ্টেম্বরে পিএসএস প্রধান পার্ক জং জুনকে ওই পদে নিয়োগ দিয়েছিলেন।

জুনের পূর্বসূরি ছিলেন সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী কিম ইয়ং হ্যুন। উনকে সামরিক আইন (মার্শাল ল) আরোপের পরামর্শ দেওয়ার অভিযোগে তাকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। তিনি বর্তমানে উনের বিরুদ্ধে চলমান ফৌজদারি তদন্তের অংশ হিসেবে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক আছেন।

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক আইনজীবী ও কোরিয়া বিশেষজ্ঞ ক্রিস্টোফার জুমিন লি বলেন, “এমনটা হতে পারে যে, উন এই পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুতি হিসেবে তার সবচেয়ে অনুগতদের বিভিন্ন পদে নিয়োগ দিয়েছেন।”

ক্রমবর্ধমান ঝুঁকি

তবে লি’র মতে, সবচেয়ে সহজ সমাধান হলো ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট চইয়ের মাধ্যমে পিএসএসকে সাময়িকভাবে অব্যাহতি দেওয়ার নির্দেশ জারি করা। আর এটি তিনি না করতে চাইলে, পার্লামেন্ট তার বিরুদ্ধেও অভিশংসন প্রস্তাব আনতে পারে।

উনের প্রথম উত্তরসূরি প্রধানমন্ত্রী হান ডাক সুকে অভিশংসিত করার পর দেশের নেতৃত্বে আসেন চই সাং মক। তিনি এই দায়িত্ব নেওয়ার আগ পর্যন্ত ছিলেন অর্থমন্ত্রী।

দক্ষিণ কোরিয়ার এই রাজনৈতিক অচলাবস্থা দেশটির রাজনীতির বিভাজনকে আরও স্পষ্ট করে তুলছে। কারণ দেশটিতে কেউ উন ও তার মার্শাল ল জারির সিদ্ধান্তের পক্ষে, আবার কেউ তার বিপক্ষে। এই ভিন্নতা শুধু এখানেই শেষ না।

নিউ আমেরিকান সিকিউরিটি সেন্টারের সহকারী সিনিয়র ফেলো দুওয়িওন কিম বলেন, “দক্ষিণ কোরিয়ার বিশাল সংখ্যক মানুষ মনে করেন, গত ৩ ডিসেম্বর উনের মার্শাল ল ঘোষণা ভুল ছিল। এজন্য তাকে জবাবদিহি করা যেতে পারে। তবে এই জবাবদিহি কেমন হবে, তা নিয়ে তারা একমত নন।

“যারা এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত, তাদের মধ্যে বিচারিক প্রক্রিয়া, পদ্ধতি ও আইনি ভিত্তি নিয়ে মতভেদ রয়েছে। বর্তমান রাজনীতিকরা রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা বাড়াচ্ছে।”

এই উত্তেজনা জাতীয় পর্যায়েও বাড়ছে। শুক্রবার প্রেসিডেন্টের বাসভবনের ভেতর ও বাইরের ঘটনাই এর প্রতিফলন। উনের সমর্থকরা কয়েকদিন ধরেই সেখানে অবস্থান করছেন। উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় ছাড়াও পুলিশের সঙ্গে সংঘাতেও জড়িয়েছেন তারা।

এমন অবস্থায় তদন্তকারীরা আরও পুলিশ নিয়ে যেতে পারেন উনকে গ্রেপ্তার করতে। তবে এতে পরিস্থিতি বিপজ্জনক মোড় নিতে পারে বলে সতর্ক করেন অধ্যাপক ম্যাসন।

পিএসএস ভারী অস্ত্রে সজ্জিত। তাই উনকে গ্রেপ্তার করতে যাওয়া পুলিশ চাইবে উত্তেজনা না বাড়াতে।

ঠিক এমন পরিস্থিতির কথা চিন্তা করেই ম্যাসন প্রশ্ন করেন, “পুলিশ অতিরিক্ত পরোয়ানা নিয়ে গিয়ে পিএসএস সদস্যদের গ্রেপ্তার করতে গেলে, পিএসএস যদি পরোয়ানা অমান্য করে অস্ত্র প্রদর্শন করে, তখন কী হবে?”

পুলিশ এখন পিএসএস পরিচালক ও তার সহকারীদের বিরুদ্ধে তাদের কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগে তদন্ত করছে। ফলে পিএসএস এর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হতে পারে। আর এতে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারে দেশটির দুর্নীতি তদন্ত দপ্তর (সিআইও)। কারণ এই সংস্থাটিই উনের বিরুদ্ধে তদন্ত পরিচালনা করছে।

এই সংস্থার বয়স মাত্র চার বছর। সাবেক প্রেসিডেন্ট পার্ক গুন হাইয়ের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তদন্তের স্বার্থেই সংস্থাটির জন্ম হয়েছিল। তখন পার্ককে অভিশংসিত ও পদচ্যুত করা হয়। পরে তাকে দুর্নীতির অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় জেলেও পাঠানো হয়।

৬ জানুয়ারির মধ্যে উনকে গ্রেপ্তারে বাধ্যবাধকতা আছে তদন্তকারীদের। এরপর আর উনকে গ্রেপ্তার করা যাবে না। ফলে সময় শেষ হওয়ার আগেই উনকে গ্রেপ্তারে আরেকবার চেষ্টা হতে পারে। অবশ্য উনের সমর্থকরা যদি সংখ্যায় আরও অধিক হয়ে গ্রেপ্তার ঠেকাতে চায়, সেক্ষেত্রে আদালত নতুন করে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করতে পারে।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত