Beta
রবিবার, ২৯ ডিসেম্বর, ২০২৪
Beta
রবিবার, ২৯ ডিসেম্বর, ২০২৪

চট্টগ্রামে জব্দ উড়োজাহাজ যাত্রী নিয়ে উড়ল কেন

প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি
[publishpress_authors_box]

সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই থেকে আসা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি উড়োজাহাজ বৃহস্পতিবার চট্টগ্রামের শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণের পর তাতে তল্লাশি চালিয়ে পাওয়া যায় আড়াই কোটি টাকারও বেশি মূল্যের সোনা।

এ ঘটনায় ওই ফ্লাইটের এক যাত্রীকে আটকের পাশাপাশি বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের বোয়িং ৭৭৭ মডেলের উড়োজাহাজটিও জব্দ করে চট্টগ্রামের কাস্টমস গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর।

এক দশক আগে ঢাকায় হজরত শাহজালাল আর্ন্তজাতিক বিমানবন্দরে চোরাচালানের সোনা বহন করায় দুটি উড়োজাহাজ জব্দের নজির থাকলেও চট্টগ্রাম শাহ আমানত আর্ন্তজাতিক বিমানবন্দরে উড়োজাহাজ জব্দের এটিই প্রথম ঘটনা।

তবে জব্দ করা হলেও সকাল ৯টার দিকে অবতরণ করা উড়োজাহাজটি ঘণ্টা দুই পর সকাল ১১টার দিকে আবার যাত্রী নিয়ে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা করে।

জব্দ করা উড়োজাহাজ আবার যাত্রী নিয়ে কেন উড়ল– এই প্রশ্নের উত্তর জানতে সকাল সন্ধ্যা যোগাযোগ করে চট্টগ্রাম কাস্টমস গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক মো. মিনহাজ উদ্দিনের সঙ্গে।

তিনি বলেন, “এটা আসলে অফিসিয়ালি আটক করা হয়েছে। অর্থাৎ বিমানটি আমাদের কাছেই জব্দ থাকবে, কিন্তু সেটি যাত্রী পরিবহন করতে পারবে।

“শর্ত হচ্ছে আমরা যখন তদন্ত করব তখন যেন সে আমাদের সহযোগিতা করে। সেই অঙ্গীকারনামা দিয়ে আমাদের কাছ থেকে বিমান কর্তৃপক্ষ উড়োজাহাজটি নিয়েছে। ফলে যাত্রী পরিবহনে কোনও বাধা নেই।”

বাংলাদেশ বিমানের উড়োজাহাজটি বৃহস্পতিবার সকাল ৯টার দিকে যাত্রী নিয়ে চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে অবতরণের পরই সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে এতে তল্লাশি চালান কাস্টমস গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা। এক পর্যায়ে উড়োজাহাজের ‘জে৯’ আসনের নিচে বিশেষ কায়দায় লুকানো ২০টি সোনার বার পাওয়া যায়।

কাস্টমস কর্মকর্তারা জানান, উদ্ধার করা সোনার বারগুলোর ওজন ২ কেজি ৩২০ গ্রাম, যার দাম প্রায় ২ কোটি ৬০ লাখ টাকা।

এ ঘটনায় ওই সিটের যাত্রীকে আটক করা হলেও প্রথম দিকে ‘তদন্তের স্বার্থে’ তার পরিচয় প্রকাশ করেনি কর্তৃপক্ষ। তবে ওই যাত্রী দুবাইয়ে একটি সোনার দোকানের বিক্রয়কর্মী ছিলেন বলে সে সময় জানা যায়।

উড়োজাহাজের সিটের নিচে লুকানো অবস্থায় সোনার বারগুলো পাওয়া যায়।

পরে কর্তৃপক্ষ জানায়, আটক যাত্রীর নাম আতিয়া সামিয়া। তার বাড়ি রাজশাহীর বোয়ালিয়া থানা এলাকায়। তার বিরুদ্ধে পতেঙ্গা থানায় মামলা দায়ের করা হবে।

উড়োজাহাজটি ‘৯জে’ সিটের যাত্রী আতিয়া সামিয়াকে কেন আটক করা হলো জানতে চাইলে মিনহাজ উদ্দিন বলেন, “প্রথমে আমরা তাকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করি। তখন তিনি আমাদের কাছে স্বীকার করেন– তিনি অনলাইনে সোনা বিক্রিতে জড়িত। এই ধরনের একটি ভিজিটিং কার্ডও তিনি আমাদের দিয়েছেন। ফলে তার সম্পৃক্ততা নিশ্চিত। কিন্তু তার সাথে চক্রে কে ছিলেন সেটি বের করাই বড় প্রশ্ন।”

উড়োজাহাজ কেন জব্দ করা হলো

উড়োজাহাজের সিটের নিচ থেকে সোনা উদ্ধারের পর বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে চট্টগ্রাম শাহ আমানত বিমানবন্দরের পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন শেখ আব্দুল্লাহ আলমগীর বলেন, “কাস্টমস গোয়েন্দা তদন্ত দল বাংলাদেশ বিমানের উড়োজাহাজটি আটক করে। মূলত বিমানের ভেতর কোনও যাত্রীর পক্ষেই বিশেষভাবে লুকিয়ে এই ধরনের সোনার বার আনা সম্ভব নয়। এখানে বিমানের কেউ জড়িত বলে সন্দেহ করছেন কাস্টমস গোয়েন্দা দল। তাই তাদেরকে জবাবদিহিতার আওতায় আনতেই কাগজে-কলমে উড়োজাহাজটি জব্দ করা হয়েছে।”

উড়োজাহাজটি জব্দের কারণ ব্যাখ্যা করেছেন চট্টগ্রাম কাস্টমস গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক মো. মিনহাজ উদ্দিনও।

তিনি বলেন, “চোরাচালানকৃত স্বর্ণ যদি এমনভাবে পাওয়া যায় যেখানে মনে হবে সেই উড়োজাহাজের কেউ ছাড়া যাত্রীর পক্ষে সেটি একা করা সম্ভব না, সেই ধারাতেই আমরা উড়োজাহাজটি আটক করেছি।

“আমাদের কাছে মনে হয়েছে সিটের নিচে যেভাবে বিশেষ কৌশলে সোনা লুকানো হয়েছে, তাতে কোনোভাবেই বিমানের কারও সংশ্লিষ্টতা ছাড়া সেটি করা সম্ভব না।”

এ বিষয়ে তদন্তের জন্য গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সকে চিঠি দেওয়া হবে জানিয়ে তিনি বলেন, “আমরা এ বিষয়ে তদন্তের জন্য বিমানকে চিঠি দেব। এরপর তারা সিসিটিভি ফুটেজ দেবে, সেদিন বিমানে অনবোর্ড কারা ছিলেন, ক্যাপ্টেন-কেবিন ক্রু কারা ছিলেন– সবই তদন্তে উঠে আসবে।

“ফলে এর মাধ্যমে আমরা একটা বার্তা চোরাচালানকারি এবং তাদের সাথে জড়িত চক্রকে দিতে চাই যে, তোমরা সাবধান হও নইলে ছাড় নয়। ইতোমধ্যে আমরা আরব আমিরাত থেকে ফোনে প্রচুর প্রবাসীর প্রশংসা পাচ্ছি।”

আগে কেন উড়োজাহাজ জব্দ হয়নি

এর আগে কাস্টমস গোয়েন্দা দল, এনএসআই ও কাস্টমস কর্মকর্তারা বিভিন্ন সময়ে চট্টগ্রামের শাহ আমানাত বিমানবন্দরে বিভিন্ন এয়ারলাইন্সের উড়োজাহাজের সিটের নিচে বিশেষ কৌশলে লুকানো অনেক সোনা উদ্ধার করলেও এবারই সেখানে প্রথমবারের মতো উড়োজাহাজ জব্দ করা হলো।

কিন্তু আগের ঘটনাগুলোতে একই কায়দায় সোনা উদ্ধার হলেও তখন কেন উড়োজাহাজ জব্দ করা হয়নি– জানতে চাইলে এর দায় তৎকালীন কর্তৃপক্ষের ওপর চাপান মিনহাজ উদ্দিন।

“আগে কেন আটক হয়নি সেটি তারাই ভালো বলতে পারবেন। আমাদের এবং কর্তৃপক্ষের কাছে মনে হয়েছে এই ধরনের একটি কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া দরকার। সেটিই আমরা করতে পেরেছি।”

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত