Beta
রবিবার, ৭ জুলাই, ২০২৪
Beta
রবিবার, ৭ জুলাই, ২০২৪

ভোলে বাবার ‘সৎসঙ্গে’ কেন পায়ের চাপায় এত প্রাণহানি   

ভারতের উত্তর প্রদেশে পদদলিত হয়ে নিহতদের মধ্যে নারীর সংখ্যাই বেশি।
ভারতের উত্তর প্রদেশে পদদলিত হয়ে নিহতদের মধ্যে নারীর সংখ্যাই বেশি।
Picture of সকাল সন্ধ্যা ডেস্ক

সকাল সন্ধ্যা ডেস্ক

হাথরস ভারতের প্রাচীন শহরগুলোর মধ্যে একটি। রংয়ের শহর হিসেবে পরিচিত শহরটির অবস্থান উত্তর প্রদেশে। মঙ্গলবার সেখানেই পায়ের চাপায় প্রাণ গেছে নারী-শিশুসহ ১২১ জনের, আহত অনেকে।

সেদিন হাথরস জেলার ফুলরাই গ্রামে আলোচিত সাধু নারায়ণ সাকর হরি ওরফে ভোলে বাবার কথা শুনতে, তাকে একনজর দেখতে, তার পদধূলি নিতে জড়ো হয়েছিল লক্ষাধিক ভক্ত। তারা জানতেন না, সৎসঙ্গের (প্রার্থনা সভা) মতো ধর্মীয় সভায় অংশ নিতে গিয়ে পদদলনের মতো ভয়াবহতার মুখোমুখি হতে হবে।

উত্তর প্রদেশের আলিগড় বিভাগ পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) শলাভ মাথুর সংবাদ সংস্থা পিটিআইকে জানিয়েছেন, নিহতদের অধিকাংশকেই শনাক্ত করা হয়েছে। তাদের প্রত্যেকের পরিবারকে দুই লাখ রুপি করে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। আহত প্রত্যেকের পরিবার পাবে ৫০ হাজার রুপি করে।

ঠিক কী কারণে ধর্মীয় অনুষ্ঠানে পায়ের চাপায় পিষ্ট হয়ে এত মানুষ প্রাণ হারাল, তা জানতে উত্তর প্রদেশের ফরেনসিক বিভাগ, ডগ স্কোয়াডের পাশাপাশি পুলিশের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন।           

প্রাথমিক তদন্তে এরই মধ্যে কিছু বিষয় উঠে এসেছে, যেগুলো মঙ্গলবার ভোলে বাবার ‘সৎসঙ্গে’ শতাধিক প্রাণহানির কারণ সম্পর্কে ধারণা দিচ্ছে। 

উপচেপড়া ভিড় 

পুলিশের প্রাথমিক তদন্ত বলছে, ‘সৎসঙ্গে’ পায়ের চাপায় পিষ্ট হয়ে ১২১ জনের মৃত্যুর একটি কারণ অতিরিক্ত জনসমাগম।     

উত্তর প্রদেশ রাজ্যের মুখ্য সচিব মনোজ কুমার সিং সাংবাদিকদের বলেছেন, মঙ্গলবার হাথরসের ফুলরাই গ্রামে ধর্মীয় সভায় পদদলিত হয়ে মৃত্যুর পেছনে দায়ী উপচেপড়া ভিড়।

তিনি বলেন, “সভা শেষে গাড়িতে চেপে বসেন ভোলে বাবা। সে সময় তার গাড়ির পেছন পেছন ছুটতে শুরু করে ভক্তরা। অনেকে তিনি যে পথ দিয়ে হেটে গেছেন সে পথের মাটি সংগ্রহ করছিল। একারণে অনেকে পড়ে যায়, ঘটে পদদলনের ঘটনা।

আধ্যাত্মিক গুরুর পা স্পর্শ করা এবং তার পদধূলি নেওয়ার প্রথা ভারতবর্ষে বহুকালের। এই পদধূলিকে আশীর্বাদ হিসেবে দেখা হয়।

স্বজন হারিয়ে স্তব্ধ এক ভক্ত।

মুখ্য সচিব মনোজ কুমার সিং ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে বলেন, “আমাকে জানানো হয়েছে, ভোলে বাবার পা ছুঁতে মানুষ হুড়োহুড়ি করে এবং যে পথে হেঁটে তিনি গাড়িতে ওঠেন, সে পথের ধুলা নেওয়ার চেষ্টা করেন তারা। এতে অনেক মানুষ পাশের একটি ড্রেনে পড়ে যায়।”

ভোলে বাবার ‘সৎসঙ্গে’ যোগ দেওয়া মানুষের সংখ্যা অনুমতির চেয়ে অনেক বেশি ছিল বলে জানান উত্তর প্রদেশের মুখ্য সচিব।

ভারতের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, স্থানীয় কর্তৃপক্ষ ৮০ হাজার মানুষকে ‘সৎসঙ্গে’ অংশ নেওয়ার অনুমতি দিয়েছিল। কিন্তু ঘটনার দিন সেখানে আড়াই লাখের বেশি মানুষ ছিল।

পদদলিত হয়ে এতো মৃত্যুর কারণ হিসেবে সাব ডিভিশনাল ম্যাজিস্ট্রেটের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভোলে বাবা যখন সভাস্থল ত্যাগ করে গাড়িতে করে রওনা দেন, সেসময় তার গাড়ির টায়ার থেকে উঠে আসা ধুলা সংগ্রহে হুমড়ি খেয়ে পড়ে ভক্তরা।

তখন ভোলে বাবার ব্যক্তিগত নিরাপত্তারক্ষীরা তাদের ঠেলে দূরে সরাতে শুরু করে। ভোলে বাবার দিকে না এগুতে লাঠি হাতে ভক্তদের নিরস্ত করতে থাকে তারা। সেসময় অনেক ভক্ত মাটিতে পড়ে যায় এবং পদদলিত হয়।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছে, আড়াই লাখের বেশি মানুষের নিরাপত্তা দিতে মাত্র ৪০ জন পুলিশ সদস্য মঙ্গলবার সভাস্থলে উপস্থিত ছিল।

বদ্ধ তাঁবু

পদদলনে এত মৃত্যুর কারণ হিসেবে বিরূপ আবহাওয়া এবং তাঁবুর ভেতরের বদ্ধ পরিবেশের কথাও বলা হচ্ছে।মঙ্গলবার উত্তর প্রদেশের আবহাওয়া ছিল গরম ও আর্দ্র।

আলিগড় বিভাগ পুলিশের আইজিপি শলাভ মাথুর বলেন, “পায়ের চাপে পিষ্ট হয়ে মৃত্যুর সঠিক কারণ অনুসন্ধান চলছে। তবে প্রাথমিক প্রতিবেদনগুলো বলছে, যে তাঁবুতে ‘সৎসঙ্গের’ আয়োজন করা হয়েছিল, তা চারদিক থেকে বদ্ধ ছিল। বের হওয়ার পথ ছিল না। এতে একপর্যায়ে তাঁবুতে থাকা ব্যক্তিদের শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। তারা এদিক-ওদিক ছুটতে গিয়ে পদদলনের শিকার হয়।”

এই যুক্তি সমর্থন করছেন উত্তর প্রদেশের আগ্রা বিভাগের পুলিশের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (এডিজি) অনুপম কুলশ্রেষ্ঠ।

তিনি বলেন, “ভোলে বাবার ‘সৎসঙ্গে’ অংশ নেওয়া বেশিরভাগ ভক্তই ছিল নারী। সভা শুরুর একপর্যায়ে তাদের নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হয়। তাড়াহুড়ো করে সভা ত্যাগ করতে শুরু করে তারা। তখন অনেকে পদদলিত হয়।

হতাহতদের খোঁজে হাসপাতালের বাইরে পরিবারের সদস্যদের ভিড়।

সভাস্থলে নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত এক পুলিশ সদস্য বলেন, “গরম ও আর্দ্র আবহাওয়ার মধ্যে তাঁবুতে গাদাগাদি করে অনেক মানুষ বসেছিল। একপর্যায়ে অস্বস্তি বোধ করায় তারা সভা ছেড়ে চলে যেতে চাইছিল। সেসময়ই পদদলনের ঘটনা ঘটে।”

ভোলে বাবার সভায় অংশ নেওয়া এক ব্যক্তি নিজের অভিজ্ঞতা হিন্দুস্তান টাইমসকে জানান।

তিনি বলেন, “অনেক মানুষ ‘সৎসঙ্গে’ যোগ দিয়েছিল। ‘সৎসঙ্গ’ শেষ হওয়ার পর সবাই তাড়াতাড়ি বদ্ধ তাঁবু থেকে বের হতে চাইছিল। কিন্তু বের হওয়ার পথ ছিল না। হট্টগোলের মধ্যে অনেকে একে ওপরের ওপর পড়ে পদদলিত হয়।

“আমি তাঁবু থেকে বের হওয়ার চেষ্টা করার সময় দেখি বাইরে অনেক মোটরসাইকেল পার্ক করা। সেসব মোটরসাইকেলও পথ আটকে ছিল। বের হতে না পেরে অনেকে জ্ঞান হারায়। শতাধিক মানুষ মৃত্যুবরণ করে।”     

মামলায় নেই ভোলে বাবার নাম

দুর্ঘটনার পরদিন ‘সৎসঙ্গ’ আয়োজকদের বিরুদ্ধে হাথরসের সিকানদারা রাও থানায় মামলা করেছে পুলিশ। পুলিশের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা পিটিআইকে জানিয়েছেন, ভোলে বাবার মুখ্য সেবক দেবপ্রকাশ মাধুকরসহ অন্য আয়োজকদের নাম আছে মামলায়। এতে ভোলে বাবার নাম নেই।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

ad

সর্বাধিক পঠিত